০৮:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাসিনা-মোদি বৈঠকে তিস্তা প্রসঙ্গ তুলবে ঢাকা

  • সবুজ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৯:৪৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • 146

নিজস্ব প্রতিবেদক
দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তির দ্রুত সুরাহার বিষয়টি উত্থাপন করবে ঢাকা। গতকাল রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতিসংঘে পানি নিয়ে বাংলাদেশের অঙ্গীকার বিষয়ক এক আলোচনা সভা শেষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এ কথা বলেন। তিনি বলেন, তিস্তা পানি চুক্তি অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী উত্থাপন করবেন। এছাড়া অন্যান্য বিষয়ও রয়েছে। আমাদের ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। গঙ্গা পানি চুক্তির মেয়াদও সামনে শেষ হবে। সুতরাং সব বিষয়ে আলাদা করে যৌথ নদী কমিশন আলোচনা করছে। তবে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক স্তরে তিস্তা নিয়ে আমরা আলোচনা করে এসেছি বা রেখেছি। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান বলেন, ডেল্টা প্ল্যানের অধীনে ৫৭টি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছি। এরমধ্যে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে এবং আরো কিছু চলমান রয়েছে।
চলতি বছরের মার্চে তিস্তার পানি প্রত্যাহারে পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে দুটি খাল খননের বিষয়ে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে নয়া দিল্লির কাছে জানতে চেয়েছে ঢাকা। এরপর প্রায় পাঁচ মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এ বিষয়ে নয়া দিল্লির কোনো বার্তা পাওয়া গেছে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, এখনো পাইনি। ভবিষ্যতে পানি সমস্যা সমাধানে আগাম সচেতনতার বার্তা দেন পররাষ্ট্রসচিব। তিনি বলেন, আমাদের অনেক পানি আছে। এটা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। কিন্তু আগামী পাঁচ বছর বা দশ বছর পর হয়ত আমাদের পানি নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ আসতে পারে। সেজন্য বৈজ্ঞানিকভাবে আমাদের বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে হবে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা আরো বাড়াতে হবে। আমাদের যে পানি আছে, সেটিকে কিভাবে আরো ভালোভাবে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমাদের যে আন্তর্জাতিক কমিটমেন্ট এবং এনগেজমেন্ট আছে, সেটি নিয়ে কিভাবে একসঙ্গে কাজ করতে পারি। রিসোর্স মবিলাইজেশনের ব্যাপার আছে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা সম্পর্কিত তহবিল আছে, সেটিকে কিভাবে ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারি…অনেক কাজ আছে সামনে।
উল্লেখ্য, ভারত ও বাংলাদেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর মধ্যে কয়েক বছর ধরে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। আজ থেকে প্রায় ৪৯ বছর আগে ১৯৭৪ সালে তিস্তা প্রকল্প শুরু হয়। প্রায় এক দশক পর ১৯৮৩ সালে একটি অন্তরবর্তী ব্যবস্থার মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তিস্তার পানির ৩৯ শতাংশ ভারত এবং ৩৬ শতাংশ বাংলাদেশ পাবে। ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ের জন্য ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ পানি ধরে রেখে ভারত ২০১১ সালে বাংলাদেশকে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ পানি দিতে সম্মত হয়েছিলো। তবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ক্ষমতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার আসার পর বিষয়টি ঝুলে যায়। বিশেষ করে মমতা সরকারের বিরোধিতার কারণে চুক্তিটি হয়নি। তখন থেকে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একধরনের অস্বস্তি আছে। এই অস্বস্তি কখনো কমেছে, আবার কখনো বেড়েছে। আসন্ন জি-২০ সম্মেলনকে সামনে রেখে তিস্তা প্রসঙ্গ আবার সামনে এলো। আগামী ৯-১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। জি-২০ বা গ্রুপ অফ টুয়েন্টি হলো একটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার ফোরাম। ১৯৯৯ সালে এশিয়ায় আর্থিক সংকট দেখা দেয়ার পর, ১৯টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও আর্থিক সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য এই ফোরাম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো। ২০০৭-এ সারা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষিতে জি২০ গোষ্ঠী রাষ্ট্রপ্রধান স্তরে উন্নীত হয়েছিলো। অর্থাৎ, শীর্ষস্তরের বৈঠক শুরু হয়। ২০০৯-এ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রধান ফোরামে পরিণত হয় এই গোষ্ঠী। ২০২২-এর ১ ডিসেম্বর থেকে এই গোষ্ঠীর সভাপতিত্বের দায়িত্বে আছে ভারত।

জনপ্রিয় সংবাদ

বিচার না হওয়া পর্যন্ত, আমরা রাজপথ ছাড়ব না: জুমা

হাসিনা-মোদি বৈঠকে তিস্তা প্রসঙ্গ তুলবে ঢাকা

আপডেট সময় : ০৯:৪৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক
দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তির দ্রুত সুরাহার বিষয়টি উত্থাপন করবে ঢাকা। গতকাল রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতিসংঘে পানি নিয়ে বাংলাদেশের অঙ্গীকার বিষয়ক এক আলোচনা সভা শেষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এ কথা বলেন। তিনি বলেন, তিস্তা পানি চুক্তি অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী উত্থাপন করবেন। এছাড়া অন্যান্য বিষয়ও রয়েছে। আমাদের ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। গঙ্গা পানি চুক্তির মেয়াদও সামনে শেষ হবে। সুতরাং সব বিষয়ে আলাদা করে যৌথ নদী কমিশন আলোচনা করছে। তবে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক স্তরে তিস্তা নিয়ে আমরা আলোচনা করে এসেছি বা রেখেছি। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান বলেন, ডেল্টা প্ল্যানের অধীনে ৫৭টি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছি। এরমধ্যে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে এবং আরো কিছু চলমান রয়েছে।
চলতি বছরের মার্চে তিস্তার পানি প্রত্যাহারে পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে দুটি খাল খননের বিষয়ে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে নয়া দিল্লির কাছে জানতে চেয়েছে ঢাকা। এরপর প্রায় পাঁচ মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এ বিষয়ে নয়া দিল্লির কোনো বার্তা পাওয়া গেছে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, এখনো পাইনি। ভবিষ্যতে পানি সমস্যা সমাধানে আগাম সচেতনতার বার্তা দেন পররাষ্ট্রসচিব। তিনি বলেন, আমাদের অনেক পানি আছে। এটা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। কিন্তু আগামী পাঁচ বছর বা দশ বছর পর হয়ত আমাদের পানি নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ আসতে পারে। সেজন্য বৈজ্ঞানিকভাবে আমাদের বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে হবে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা আরো বাড়াতে হবে। আমাদের যে পানি আছে, সেটিকে কিভাবে আরো ভালোভাবে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমাদের যে আন্তর্জাতিক কমিটমেন্ট এবং এনগেজমেন্ট আছে, সেটি নিয়ে কিভাবে একসঙ্গে কাজ করতে পারি। রিসোর্স মবিলাইজেশনের ব্যাপার আছে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা সম্পর্কিত তহবিল আছে, সেটিকে কিভাবে ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারি…অনেক কাজ আছে সামনে।
উল্লেখ্য, ভারত ও বাংলাদেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর মধ্যে কয়েক বছর ধরে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। আজ থেকে প্রায় ৪৯ বছর আগে ১৯৭৪ সালে তিস্তা প্রকল্প শুরু হয়। প্রায় এক দশক পর ১৯৮৩ সালে একটি অন্তরবর্তী ব্যবস্থার মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তিস্তার পানির ৩৯ শতাংশ ভারত এবং ৩৬ শতাংশ বাংলাদেশ পাবে। ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ের জন্য ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ পানি ধরে রেখে ভারত ২০১১ সালে বাংলাদেশকে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ পানি দিতে সম্মত হয়েছিলো। তবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ক্ষমতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার আসার পর বিষয়টি ঝুলে যায়। বিশেষ করে মমতা সরকারের বিরোধিতার কারণে চুক্তিটি হয়নি। তখন থেকে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একধরনের অস্বস্তি আছে। এই অস্বস্তি কখনো কমেছে, আবার কখনো বেড়েছে। আসন্ন জি-২০ সম্মেলনকে সামনে রেখে তিস্তা প্রসঙ্গ আবার সামনে এলো। আগামী ৯-১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। জি-২০ বা গ্রুপ অফ টুয়েন্টি হলো একটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার ফোরাম। ১৯৯৯ সালে এশিয়ায় আর্থিক সংকট দেখা দেয়ার পর, ১৯টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও আর্থিক সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য এই ফোরাম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো। ২০০৭-এ সারা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষিতে জি২০ গোষ্ঠী রাষ্ট্রপ্রধান স্তরে উন্নীত হয়েছিলো। অর্থাৎ, শীর্ষস্তরের বৈঠক শুরু হয়। ২০০৯-এ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রধান ফোরামে পরিণত হয় এই গোষ্ঠী। ২০২২-এর ১ ডিসেম্বর থেকে এই গোষ্ঠীর সভাপতিত্বের দায়িত্বে আছে ভারত।