১১:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিএসএমএমইউ

অফিস সহকারীর রামরাজত্ব

➢ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডাক্তারের চেম্বারে বসেন অফিস সহকারী শাহানা পারভীন
➢ জটিল এক্সরে করছেন এমএলএসএস কর্মীরা, দুর্ভোগে রোগী
➢ বিব্রত চিকিৎসক, ভুল চিকিৎসার শঙ্কা
➢ নির্বিকার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চলছে অফিস সহকারীর রামরাজত্ব। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে হাসপাতালের ডেন্টাল অনুষদের পেডিয়াট্রিক ডেন্ট্রিস্ট্রি বিভাগে শীতাতপ নিয়ন্ত্রীত ৭০৬ নম্বর কক্ষটি একাই দখল করে রেখেছেন অফিস সহকারী শাহানা পারভীন। অথচ নন-এসি রুমে বসে রোগীর সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। অভিযোগ রয়েছে, পেডিয়াট্রিক ডেন্ট্রিস্ট্রি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের উদাসীনতায় জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের এক্সরে অভিজ্ঞ টেকনোলজিস্ট বা রেডিওগ্রাফার দিয়ে করানোর কথা থাকলেও তা করছেন ওই বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কয়েকজন কর্মচারি। এতে রোগ নির্ণয়ে যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র দিতে প্রতিনিয়তই বিব্রতবোধ করছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। এর ফলে রোগ ভালো হওয়া তো দূরের কথা, প্রতিনিয়তই দুর্ভোগে পড়ছেন রোগীরা। অপরদিকে মানবদেহে রেডিয়েশনের প্রতিক্রীয়া থাকা সত্বেও পেডিয়াট্রিক ডেন্ট্রিস্ট্রি বিভাগের ৭ ও ৮ তলায় ওটির খোলা কক্ষেই ঝুঁকিপূর্ণ এক্সরে প্রকাশ্যে করানো হচ্ছে। এটা যৌক্তিক কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতেও রহস্যজনকভাবে নির্বিকার রয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিজ্ঞ টেকনোলজিস্ট বা রেডিওগ্রাফার ছাড়া এমএলএসএস দিয়ে এক্সরেসহ অন্যান্য পরীক্ষা করানো হলে সঠিক রোগ নির্ণয় করা সম্ভব নয়। এতে ভুল চিকিৎসা ও রোগ নিরাময়ে রোগীর স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত দু’দিন হাসপাতালের ডেন্টাল অনুষদ ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিএসএমএমইউ হাসপাতালের সম্প্রসারিত নতুন ভবনের সাত তলা থেকে এগারো তলা পর্যন্ত ডেন্টাল অনুষদ বিস্তৃত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৫টি বিভাগ। এগুলো হচ্ছে- সাত তলায় পেডিয়াট্রিক ডেন্টিস্ট্রি, আট তলায় কনসারভেটিভ ডেন্টিস্ট্রি ও এন্ডোডন্টিকস্, নয় তলায় প্রস্থোডনটিকস্, দশ তলায় অর্থোডন্টিকস্ এবং এগারো তলায় ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারী বিভাগ। হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পাঁচটি বিভাগের মধ্যে বেশি অনিয়ম ঘটছে ডেন্টাল অনুষদের সাত তলার পেডিয়াট্রিক ডেন্টিস্ট্রি ও আট তলায় কনসারভেটিভ ডেন্টিস্ট্রি বিভাগে। প্রতিটি ফ্লোরে চিকিৎসা সেবা এবং শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়ার জন্য ১১টি কক্ষ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সাত তলার পেডিয়াট্রিক ডেন্টিস্ট্রি বিভাগের ৭০৬ নম্বর শীতাতপ নিয়ন্ত্রীত কক্ষটি একাই দখলে রেখেছেন ওই বিভাগের অফিস সহকারী শাহানা পারভীন। অথচ তার পাশের একটি নন-এসি কক্ষে গাদাগাদি করে নিয়মিত রোগীর সেবা দিচ্ছেন সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. কামাল আব্দুল্লাহ শান্ত ও ডা. মুহিউদ্দিন মাহমুদ গালিব। এছাড়া পেডিয়াট্রিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাজিয়া মেহনাজের জন্য ৭১১ নম্বর কক্ষটি বরাদ্দ থাকলেও তিনি ৭১০ ও ৭১১ নম্বর দুটি কক্ষ একাই ব্যবহার করছেন। যা বিধি বহির্ভূত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ৭০৬ নম্বর রুম ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে অফিস সহকারী শাহানা পারভীন কোনো সদোত্তর না দিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাকে সাংবাদিকরা কেন ফোন করবে? আমি কিছু বলবো না বলেই সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। ডেন্টাল অনুষদের প্রতিটি বিভাগেই রোগীর চাপ থাকলেও আট তলায় লিফট সংলগ্ন ৮১৬ নম্বর রুমে এক্স-রে করানোর জন্য সপ্তাহের ছয়দিন রোগীদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। বিধি মতে কর্তব্যরত ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী এক্স-রে করানোর জন্য ডেন্টাল টেকনোলজিস্ট বা রেডিওগ্রাফার থাকার কথা থাকলেও সেখানে ওই বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি মো. কফিল উদ্দিন ও মো. রাজ্জাক হোসেন সেই দায়িত্ব পালন করছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি মো. রাজ্জাক ফোন ধরেননি। তবে কর্মচারি কফিল উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে বাহির থেকে আমাদের ট্রেনিং করা আছে। সেই ট্রেনিংয়ের কাগজপত্র হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও বিভাগীয় প্রধানের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। তারাই আমাদের কাজ করার অনুমোদন বা নিয়োগ দিয়ে রেখেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে কফিল উদ্দিন বলেন, জনবল সংকট তো আছেই। এটা আমাদের কাজ না হলেও রোগীর সেবা দেওয়ার স্বার্থে এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই এ কাজ করতে বাধ্য হচ্ছি। একই চিত্র দেখা গেছে, সাত তলার ওটি রুমে রেডিওগ্রাফারের বিপরীতে এক্স-রে’র কাজ করছেন ডেন্টাল টেকনোলজিস্ট আরিফুর রহমান ও ফাতেমা ইসলাম এবং আট তলার ওটি রুমে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি মো. শাহিন ও ইসমাইল।

জানা যায়, এমন অনিয়ম প্রসঙ্গে ২০১৩ সালে জাতীয় একটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। এরপরই ডেন্টাল অনুষদের ১১ তলায় ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারী বিভাগে ওপিজি মেশিন বসিয়ে দুইজন টেকনোলজিস্ট ও রেডিওগ্রাফার তাৎক্ষণিক নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু এরপর এই হাসপাতালের ডেন্টাল অনুষদে আর কোনো পরিবর্তন-পরিবর্ধন হয়নি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জরুরি ও জটিল রোগীর ক্ষেত্রে আরভিজি এক্স-রে করাতে হলে দক্ষ ও অভিজ্ঞ টেকনোলজিস্ট বা রেডিওগ্রাফার প্রয়োজন রয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রেডিওগ্রাফার বা একজন টেকনোলজিস্ট যা সহজেই বুঝবে এবং ধরতে পারবে তা কিন্তু চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি দিয়ে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে এক্স-রে সঠিকভাবে নিরুপণ করা না গেলে যথাযথ রোগ নির্ণয় করাও সম্ভব হবে না। এর ফলে রোগীকেও সঠিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। রোগীর দুর্ভোগ আর স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কা থেকেই যাবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (ডেন্টাল) ডা. মাহমুদা বেগম বলেন, দাঁতের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এক্স-রেসহ অন্যান্য পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রায়ই শুনে আসছি, অনেক হাসপাতালেই পর্যাপ্ত টেকনোলজিস্ট বা রেডিওগ্রাফার থাকে না। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি দিয়ে এক্স-রে করানো কোনোমতেই ঠিক নয়। এতে রোগীকে সেবা দিতে চিকিৎসকদেরও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। বিএসএমএমইউতে এমন ঘটনা আমার জানা নেই। তবে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এমন অনিয়ম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএসএমএমইউ’র ডেন্টাল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. আলী আজগর মোড়ল ও পেডিয়াট্রিক ডেন্টিস্ট্রি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাজিয়া মেহনাজের অফিসে গিয়ে তাদের কাউকেই পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. আলী আজগর মোড়ল ফোন ধরেননি। কর্তব্যরত অন্যান্য চিকিৎসক এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে পেডিয়াট্রিক ডেন্টিস্ট্রি বিভাগের ডা. নাজিয়া মেহনাজ বলেন, এটা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবেন। পরে হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে ব্যস্ততা দেখিয়ে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কিছু জানাতে রাজি হননি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. রেজাউর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এমন তথ্য আপনাকে কে দিয়েছে? আপনি লিখিত অভিযোগ দেন, আমি তদন্ত করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব।

জনপ্রিয় সংবাদ

নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সামান্তা শারমিনের নতুন বার্তা

বিএসএমএমইউ

অফিস সহকারীর রামরাজত্ব

আপডেট সময় : ০৭:৫৭:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪

➢ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডাক্তারের চেম্বারে বসেন অফিস সহকারী শাহানা পারভীন
➢ জটিল এক্সরে করছেন এমএলএসএস কর্মীরা, দুর্ভোগে রোগী
➢ বিব্রত চিকিৎসক, ভুল চিকিৎসার শঙ্কা
➢ নির্বিকার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চলছে অফিস সহকারীর রামরাজত্ব। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে হাসপাতালের ডেন্টাল অনুষদের পেডিয়াট্রিক ডেন্ট্রিস্ট্রি বিভাগে শীতাতপ নিয়ন্ত্রীত ৭০৬ নম্বর কক্ষটি একাই দখল করে রেখেছেন অফিস সহকারী শাহানা পারভীন। অথচ নন-এসি রুমে বসে রোগীর সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। অভিযোগ রয়েছে, পেডিয়াট্রিক ডেন্ট্রিস্ট্রি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের উদাসীনতায় জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের এক্সরে অভিজ্ঞ টেকনোলজিস্ট বা রেডিওগ্রাফার দিয়ে করানোর কথা থাকলেও তা করছেন ওই বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কয়েকজন কর্মচারি। এতে রোগ নির্ণয়ে যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র দিতে প্রতিনিয়তই বিব্রতবোধ করছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। এর ফলে রোগ ভালো হওয়া তো দূরের কথা, প্রতিনিয়তই দুর্ভোগে পড়ছেন রোগীরা। অপরদিকে মানবদেহে রেডিয়েশনের প্রতিক্রীয়া থাকা সত্বেও পেডিয়াট্রিক ডেন্ট্রিস্ট্রি বিভাগের ৭ ও ৮ তলায় ওটির খোলা কক্ষেই ঝুঁকিপূর্ণ এক্সরে প্রকাশ্যে করানো হচ্ছে। এটা যৌক্তিক কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতেও রহস্যজনকভাবে নির্বিকার রয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিজ্ঞ টেকনোলজিস্ট বা রেডিওগ্রাফার ছাড়া এমএলএসএস দিয়ে এক্সরেসহ অন্যান্য পরীক্ষা করানো হলে সঠিক রোগ নির্ণয় করা সম্ভব নয়। এতে ভুল চিকিৎসা ও রোগ নিরাময়ে রোগীর স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত দু’দিন হাসপাতালের ডেন্টাল অনুষদ ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিএসএমএমইউ হাসপাতালের সম্প্রসারিত নতুন ভবনের সাত তলা থেকে এগারো তলা পর্যন্ত ডেন্টাল অনুষদ বিস্তৃত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৫টি বিভাগ। এগুলো হচ্ছে- সাত তলায় পেডিয়াট্রিক ডেন্টিস্ট্রি, আট তলায় কনসারভেটিভ ডেন্টিস্ট্রি ও এন্ডোডন্টিকস্, নয় তলায় প্রস্থোডনটিকস্, দশ তলায় অর্থোডন্টিকস্ এবং এগারো তলায় ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারী বিভাগ। হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পাঁচটি বিভাগের মধ্যে বেশি অনিয়ম ঘটছে ডেন্টাল অনুষদের সাত তলার পেডিয়াট্রিক ডেন্টিস্ট্রি ও আট তলায় কনসারভেটিভ ডেন্টিস্ট্রি বিভাগে। প্রতিটি ফ্লোরে চিকিৎসা সেবা এবং শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়ার জন্য ১১টি কক্ষ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সাত তলার পেডিয়াট্রিক ডেন্টিস্ট্রি বিভাগের ৭০৬ নম্বর শীতাতপ নিয়ন্ত্রীত কক্ষটি একাই দখলে রেখেছেন ওই বিভাগের অফিস সহকারী শাহানা পারভীন। অথচ তার পাশের একটি নন-এসি কক্ষে গাদাগাদি করে নিয়মিত রোগীর সেবা দিচ্ছেন সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. কামাল আব্দুল্লাহ শান্ত ও ডা. মুহিউদ্দিন মাহমুদ গালিব। এছাড়া পেডিয়াট্রিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাজিয়া মেহনাজের জন্য ৭১১ নম্বর কক্ষটি বরাদ্দ থাকলেও তিনি ৭১০ ও ৭১১ নম্বর দুটি কক্ষ একাই ব্যবহার করছেন। যা বিধি বহির্ভূত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ৭০৬ নম্বর রুম ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে অফিস সহকারী শাহানা পারভীন কোনো সদোত্তর না দিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাকে সাংবাদিকরা কেন ফোন করবে? আমি কিছু বলবো না বলেই সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। ডেন্টাল অনুষদের প্রতিটি বিভাগেই রোগীর চাপ থাকলেও আট তলায় লিফট সংলগ্ন ৮১৬ নম্বর রুমে এক্স-রে করানোর জন্য সপ্তাহের ছয়দিন রোগীদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। বিধি মতে কর্তব্যরত ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী এক্স-রে করানোর জন্য ডেন্টাল টেকনোলজিস্ট বা রেডিওগ্রাফার থাকার কথা থাকলেও সেখানে ওই বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি মো. কফিল উদ্দিন ও মো. রাজ্জাক হোসেন সেই দায়িত্ব পালন করছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি মো. রাজ্জাক ফোন ধরেননি। তবে কর্মচারি কফিল উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে বাহির থেকে আমাদের ট্রেনিং করা আছে। সেই ট্রেনিংয়ের কাগজপত্র হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও বিভাগীয় প্রধানের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। তারাই আমাদের কাজ করার অনুমোদন বা নিয়োগ দিয়ে রেখেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে কফিল উদ্দিন বলেন, জনবল সংকট তো আছেই। এটা আমাদের কাজ না হলেও রোগীর সেবা দেওয়ার স্বার্থে এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই এ কাজ করতে বাধ্য হচ্ছি। একই চিত্র দেখা গেছে, সাত তলার ওটি রুমে রেডিওগ্রাফারের বিপরীতে এক্স-রে’র কাজ করছেন ডেন্টাল টেকনোলজিস্ট আরিফুর রহমান ও ফাতেমা ইসলাম এবং আট তলার ওটি রুমে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি মো. শাহিন ও ইসমাইল।

জানা যায়, এমন অনিয়ম প্রসঙ্গে ২০১৩ সালে জাতীয় একটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। এরপরই ডেন্টাল অনুষদের ১১ তলায় ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারী বিভাগে ওপিজি মেশিন বসিয়ে দুইজন টেকনোলজিস্ট ও রেডিওগ্রাফার তাৎক্ষণিক নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু এরপর এই হাসপাতালের ডেন্টাল অনুষদে আর কোনো পরিবর্তন-পরিবর্ধন হয়নি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জরুরি ও জটিল রোগীর ক্ষেত্রে আরভিজি এক্স-রে করাতে হলে দক্ষ ও অভিজ্ঞ টেকনোলজিস্ট বা রেডিওগ্রাফার প্রয়োজন রয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রেডিওগ্রাফার বা একজন টেকনোলজিস্ট যা সহজেই বুঝবে এবং ধরতে পারবে তা কিন্তু চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি দিয়ে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে এক্স-রে সঠিকভাবে নিরুপণ করা না গেলে যথাযথ রোগ নির্ণয় করাও সম্ভব হবে না। এর ফলে রোগীকেও সঠিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। রোগীর দুর্ভোগ আর স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কা থেকেই যাবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (ডেন্টাল) ডা. মাহমুদা বেগম বলেন, দাঁতের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এক্স-রেসহ অন্যান্য পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রায়ই শুনে আসছি, অনেক হাসপাতালেই পর্যাপ্ত টেকনোলজিস্ট বা রেডিওগ্রাফার থাকে না। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি দিয়ে এক্স-রে করানো কোনোমতেই ঠিক নয়। এতে রোগীকে সেবা দিতে চিকিৎসকদেরও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। বিএসএমএমইউতে এমন ঘটনা আমার জানা নেই। তবে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এমন অনিয়ম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএসএমএমইউ’র ডেন্টাল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. আলী আজগর মোড়ল ও পেডিয়াট্রিক ডেন্টিস্ট্রি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাজিয়া মেহনাজের অফিসে গিয়ে তাদের কাউকেই পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. আলী আজগর মোড়ল ফোন ধরেননি। কর্তব্যরত অন্যান্য চিকিৎসক এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে পেডিয়াট্রিক ডেন্টিস্ট্রি বিভাগের ডা. নাজিয়া মেহনাজ বলেন, এটা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবেন। পরে হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে ব্যস্ততা দেখিয়ে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কিছু জানাতে রাজি হননি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. রেজাউর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এমন তথ্য আপনাকে কে দিয়েছে? আপনি লিখিত অভিযোগ দেন, আমি তদন্ত করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব।