০২:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সামাজিক নিরাপত্তা খাত

এবার বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা পাবে পৌনে ২৮ লাখ নারী

✦ এ বছরে ভাতার পরিমাণ ৫০ টাকা বেড়ে ৬০০ টাকা
✦ ১৯৯৮ সালে ১০০ টাকা ভাতা দিয়ে শুরু হয় কার্যক্রম
✦ পান-সুপারিতেই শেষ ৬০০ টাকা : আবিয়া বেগম
✦ এই টাকারও ভাগ নেয় কাউন্সেলর : সায়েরা বেগম
✦ বিধবা নারীর জন্য গ্রহণযোগ্য, সম্মানজনক এবং তার জীবনমানের উপযোগী ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে : সীমা মোসলেম
✦ সরকার নিজেই গরিব, সক্ষম নারীর ভাতা না বাড়িয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুক : পারভীন সুলতানা ঝুমা

দেশের বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সরকারিভাবে ভাতা প্রচলন করা হয়েছে। এ ভাতা চালু হয়েছে ১৯৯৮ সালে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫৫০ টাকা করে একজন নারী ভাতা পেয়েছে। কিন্তু এই দুর্মূল্যের বাজারে এই অল্পসংখ্যক ভাতা বিধবা নারীকে না দিচ্ছে সম্মান, না করছে তার জীবনমানের উন্নয়ন। এই ভাতাকে নারীর জন্য অসম্মানজনক বলছেন কেউ কেউ। তারা অতি বৃদ্ধ নারীর জীবনমানের উপযোগী, মোটামুটি চলাচলের জন্য সম্মানজনক ভাতার ব্যবস্থা করতে বলছেন। পাশাপাশি স্বামী নিগৃগীতা নারীর ভাতার প্রতি নির্ভরতা না বাড়িয়ে কর্মসংস্থানের দিকে মনোযোগী হোক সরকার, এমনটাই প্রত্যাশা বিশ্লেষকদের।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে। এই ভাতা প্রদানের উদ্দেশ্য হলো বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা বিধান, পরিবার ও সমাজে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি, আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে তাদের মনোবল জোরদার করা, চিকিৎসা সহায়তা ও পুষ্টি সরবরাহ বৃদ্ধিতে আর্থিক সহায়তা প্রদান। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের ভাতা প্রদান কর্মসূচি আওতায় -‘বিধবা’ বলতে তাদেরকেই বুঝানো হবে যাদের স্বামী মৃত। পাশাপাশি ‘স্বামী নিগৃহীতা’ বলতে তাদেরকেই বুঝানো হবে যারা স্বামী কর্তৃক তালাকপ্রাপ্তা বা অন্য যেকোনো কারণে অন্ততঃ দু’বছর যাবৎ স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বা একত্রে বসবাস করেন না ।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, সরকার যে ভাতা দিচ্ছে নারীদের এটার পরিমাণ অবশ্যই খুবই কম। সরকার বিধবা নারীদের ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে কিন্তু এই ভাতাটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য না। ৫৫০-৬০০ টাকা এটা আজকের দিনে একেবারেই গ্রহণযোগ্য কোনো টাকা না। এটা সম্মানজনক কোনো টাকা না। নারীর সম্মানজনক, চাহিদামোতাবেক তাকে আমি যদি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না করতে পারি, নামমাত্র এই টাকা দেওয়ার কোনো অর্থ নেই। বিধবা নারীকে তার প্রাপ্য সম্মানটা আমাকে দিতে হবে। বিধবা নারীর জন্য গ্রহণযোগ্য, সম্মানজনক এবং তার জীবনমানের উপযোগী ভাতা সরকারকে নির্ধারণ করে দিতে হবে।

বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সহ-সভাপতি পারভীন সুলতানা ঝুমা বলেন, যে নারীরা অতিবৃদ্ধ তাদের ভাতার পরিমাণ সরকার বাড়াক। এটি বাড়িয়ে একটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসুক যেন তার নিজের চিকিৎসা খরচ, তার ওষুধ, তার পোশাক, পান-সুপারি খাওয়ার টাকা হয়ে যায়। এই নারীদের সবাইকেই দেখা যায়, নিজেদের ছেলেমেয়ের কাছে থাকে। এদের প্রতি সরকারের সহানুভূতিশীল দৃষ্টি থাকা দরকার। পাশাপাশি বলব, যে নারীর স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু নারীর বয়স অল্প সেই নারী কেন সরকারের এই ৫০০-৬০০ টাকার দিকে তাকিয়ে থাকবে। সরকার তাকে এমনভাবে প্রশিক্ষিত করুক যেন সে নিজের আয়ে নিজে চলতে পারে। আমাদের দেশের সরকার তো নিজেই গরিব। সে স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়া নারীদের কত টাকা আর ভাতা দিতে পারবে? তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুক যেন এই নারীরা নিজেদের জীবন নিজেরাই গড়ে তুলতে পারে।

বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা প্রদান প্রসঙ্গে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল বলেন, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীদের ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থা মেনে চলা হয়। কেউ মারা গেলে তার ভাতাটা নতুন কেউ পায়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। সেই কমিটি কারা ভাতা পাবে তা নির্ধারণ করে দেয়। এ বছর বিধবা ভাতার ক্ষেত্রে ৫০ টাকা করে ভাতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভাতা প্রতি বছর দুইভাবে বৃদ্ধি পায়। কোনো কোনো ভাতার পরিমাণ বাড়ে। আবার কোনো কোনো ভাতা গ্রহীতার সংখ্যা বাড়ে। এবার বিধবা ভাতার ক্ষেত্রে ৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিধবা ভাতা পান, রাজধানীর লালবাগের বাসিন্দা সায়েরা বেগমের মা। সায়েরা বলেন, আমার মা গ্রামে থাকে। এলাকার মেম্বারের মাধ্যমে এই ভাতা কার্ড করে পেয়েছে। সেই কার্ড করার কারণে মেম্বারকে বাড়তি টাকা দিতে হয়েছে। শুধু আমার মায়ের না অন্য ভাতা কার্ডধারীদের কাছ থেকেও মেম্বাররা টাকা নিয়েছে। এই বিষয়গুলো বন্ধ হওয়া দরকার।
রাজধানীর কামরাঙ্গির চরের বাসিন্দা আবিয়া বেগম বলেন, এলাকায় এই ভাতা কার্ড করেছি। গত তিন বছর ধরে এই ভাতা পাই। এখন মোবাইলে টাকা আসে তাই কষ্ট করতে হয় না। কিন্তু এই টাকা দিয়ে শুধু পান-সুপারির খরচটা হয়। আর কিছুই হয় না। তিনি বলেন, ‘শেখের বেটি গরিবের দুঃখু দেখবে তখন একটু ভালো করেই দেখুক।’
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভাতা গ্রহীতা নির্বাচনের মানদণ্ড হচ্ছে প্রার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে। বয়স অবশ্যই ১৮ (আঠার) বছরের ঊর্ধ্বে হতে হবে। তবে সর্বোচ্চ বয়স্ক মহিলাকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে। যিনি শারীরিকভাবে অক্ষম অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে কর্মক্ষমতাহীন তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। আর্থিক অবস্থার ক্ষেত্রে: নিঃস্ব, উদ্বাস্তু ও ভূমিহীনকে ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার দিতে হবে। নিঃসন্তান, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদেরকে ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ভূমিহীন প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বসতবাড়ী ব্যতিত কোনো ব্যক্তির জমির পরিমাণ ০.৫০ একর বা তার কম হলে তিনি ভূমিহীন বলে গণ্য হবেন।

ভাতা প্রাপকের যোগ্যতা ও শর্তাবলি হচ্ছে তাকে সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে, জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচিতি নম্বর থাকতে হবে, বয়ঃবৃদ্ধা অসহায় ও দুঃস্থ বিধবা বা স্বামী নিগৃহীতা মহিলাকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে, যিনি দুঃস্থ, অসহায়, প্রায় ভূমিহীন, বিধবা বা স্বামী নিগৃহিতা এবং যার ১৬ বছর বয়সের নিচে, ২টি সন্তান রয়েছে তিনি ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন, দুঃস্থ, দরিদ্র, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতাদের মধ্যে যারা প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ তারা ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন, প্রার্থীর বার্ষিক গড় আয় অনূর্ধ্ব ১২ হাজার টাকা হতে হবে এবং তাকে অবশ্যই বাছাই কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত হতে হবে।
১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে জনপ্রতি মাসিক ১০০ টাকা হারে ১ মাস পরীক্ষামূলকভাবে এই ভাতা কার্যক্রম চালু হয়। এসময় ভাতাভোগী ছিলেন ৪.০৩ লক্ষ জন। মোট ভাতার পরিমাণ ছিল ৪০.৩১ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জনপ্রতি মাসে ৫০০ টাকা হারে সারা বছর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই ভাতা কার্যক্রম চালু হয়। এ সময় মোট ভাতার পরিমাণ ছিল ৩৪৪৪.৫৪ কোটি টাকা। ভাতাভোগী ছিল ২৪ লাখ ৭৫ হাজার জন। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ২৫ লাখ ৭৫ হাজার জনের জন্য জনপ্রতি মাসিক ৫৫০ টাকা হারে মোট ১ হাজার ৭১১ দশমিক ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ ভাতার পরিমাণ ৫০ টাকা বেড়ে ৬০০ টাকা হয়েছে। ভাতাপ্রাপ্ত নারীর সংখ্যা ২৫ লাখ ৭৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২৭ লাখ ৭৫ হাজার করা হয়েছে। আর এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা।
কোনো নারী ভাতা পেতে ব্যর্থ হলে পরবর্তী প্রতিকারকারী কর্মকর্তারা হচ্ছেন- সংশ্লিষ্ট উপজেলার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সংশ্লিষ্ট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক, জেলা প্রশাসক বা পাবর্ত্য জেলা চেয়ারম্যান, সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক পরিচালক।

জনপ্রিয় সংবাদ

সামাজিক নিরাপত্তা খাত

এবার বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা পাবে পৌনে ২৮ লাখ নারী

আপডেট সময় : ০৭:২২:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪

✦ এ বছরে ভাতার পরিমাণ ৫০ টাকা বেড়ে ৬০০ টাকা
✦ ১৯৯৮ সালে ১০০ টাকা ভাতা দিয়ে শুরু হয় কার্যক্রম
✦ পান-সুপারিতেই শেষ ৬০০ টাকা : আবিয়া বেগম
✦ এই টাকারও ভাগ নেয় কাউন্সেলর : সায়েরা বেগম
✦ বিধবা নারীর জন্য গ্রহণযোগ্য, সম্মানজনক এবং তার জীবনমানের উপযোগী ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে : সীমা মোসলেম
✦ সরকার নিজেই গরিব, সক্ষম নারীর ভাতা না বাড়িয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুক : পারভীন সুলতানা ঝুমা

দেশের বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সরকারিভাবে ভাতা প্রচলন করা হয়েছে। এ ভাতা চালু হয়েছে ১৯৯৮ সালে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫৫০ টাকা করে একজন নারী ভাতা পেয়েছে। কিন্তু এই দুর্মূল্যের বাজারে এই অল্পসংখ্যক ভাতা বিধবা নারীকে না দিচ্ছে সম্মান, না করছে তার জীবনমানের উন্নয়ন। এই ভাতাকে নারীর জন্য অসম্মানজনক বলছেন কেউ কেউ। তারা অতি বৃদ্ধ নারীর জীবনমানের উপযোগী, মোটামুটি চলাচলের জন্য সম্মানজনক ভাতার ব্যবস্থা করতে বলছেন। পাশাপাশি স্বামী নিগৃগীতা নারীর ভাতার প্রতি নির্ভরতা না বাড়িয়ে কর্মসংস্থানের দিকে মনোযোগী হোক সরকার, এমনটাই প্রত্যাশা বিশ্লেষকদের।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে। এই ভাতা প্রদানের উদ্দেশ্য হলো বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা বিধান, পরিবার ও সমাজে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি, আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে তাদের মনোবল জোরদার করা, চিকিৎসা সহায়তা ও পুষ্টি সরবরাহ বৃদ্ধিতে আর্থিক সহায়তা প্রদান। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের ভাতা প্রদান কর্মসূচি আওতায় -‘বিধবা’ বলতে তাদেরকেই বুঝানো হবে যাদের স্বামী মৃত। পাশাপাশি ‘স্বামী নিগৃহীতা’ বলতে তাদেরকেই বুঝানো হবে যারা স্বামী কর্তৃক তালাকপ্রাপ্তা বা অন্য যেকোনো কারণে অন্ততঃ দু’বছর যাবৎ স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বা একত্রে বসবাস করেন না ।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, সরকার যে ভাতা দিচ্ছে নারীদের এটার পরিমাণ অবশ্যই খুবই কম। সরকার বিধবা নারীদের ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে কিন্তু এই ভাতাটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য না। ৫৫০-৬০০ টাকা এটা আজকের দিনে একেবারেই গ্রহণযোগ্য কোনো টাকা না। এটা সম্মানজনক কোনো টাকা না। নারীর সম্মানজনক, চাহিদামোতাবেক তাকে আমি যদি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না করতে পারি, নামমাত্র এই টাকা দেওয়ার কোনো অর্থ নেই। বিধবা নারীকে তার প্রাপ্য সম্মানটা আমাকে দিতে হবে। বিধবা নারীর জন্য গ্রহণযোগ্য, সম্মানজনক এবং তার জীবনমানের উপযোগী ভাতা সরকারকে নির্ধারণ করে দিতে হবে।

বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সহ-সভাপতি পারভীন সুলতানা ঝুমা বলেন, যে নারীরা অতিবৃদ্ধ তাদের ভাতার পরিমাণ সরকার বাড়াক। এটি বাড়িয়ে একটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসুক যেন তার নিজের চিকিৎসা খরচ, তার ওষুধ, তার পোশাক, পান-সুপারি খাওয়ার টাকা হয়ে যায়। এই নারীদের সবাইকেই দেখা যায়, নিজেদের ছেলেমেয়ের কাছে থাকে। এদের প্রতি সরকারের সহানুভূতিশীল দৃষ্টি থাকা দরকার। পাশাপাশি বলব, যে নারীর স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু নারীর বয়স অল্প সেই নারী কেন সরকারের এই ৫০০-৬০০ টাকার দিকে তাকিয়ে থাকবে। সরকার তাকে এমনভাবে প্রশিক্ষিত করুক যেন সে নিজের আয়ে নিজে চলতে পারে। আমাদের দেশের সরকার তো নিজেই গরিব। সে স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়া নারীদের কত টাকা আর ভাতা দিতে পারবে? তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুক যেন এই নারীরা নিজেদের জীবন নিজেরাই গড়ে তুলতে পারে।

বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা প্রদান প্রসঙ্গে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল বলেন, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীদের ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থা মেনে চলা হয়। কেউ মারা গেলে তার ভাতাটা নতুন কেউ পায়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। সেই কমিটি কারা ভাতা পাবে তা নির্ধারণ করে দেয়। এ বছর বিধবা ভাতার ক্ষেত্রে ৫০ টাকা করে ভাতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভাতা প্রতি বছর দুইভাবে বৃদ্ধি পায়। কোনো কোনো ভাতার পরিমাণ বাড়ে। আবার কোনো কোনো ভাতা গ্রহীতার সংখ্যা বাড়ে। এবার বিধবা ভাতার ক্ষেত্রে ৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিধবা ভাতা পান, রাজধানীর লালবাগের বাসিন্দা সায়েরা বেগমের মা। সায়েরা বলেন, আমার মা গ্রামে থাকে। এলাকার মেম্বারের মাধ্যমে এই ভাতা কার্ড করে পেয়েছে। সেই কার্ড করার কারণে মেম্বারকে বাড়তি টাকা দিতে হয়েছে। শুধু আমার মায়ের না অন্য ভাতা কার্ডধারীদের কাছ থেকেও মেম্বাররা টাকা নিয়েছে। এই বিষয়গুলো বন্ধ হওয়া দরকার।
রাজধানীর কামরাঙ্গির চরের বাসিন্দা আবিয়া বেগম বলেন, এলাকায় এই ভাতা কার্ড করেছি। গত তিন বছর ধরে এই ভাতা পাই। এখন মোবাইলে টাকা আসে তাই কষ্ট করতে হয় না। কিন্তু এই টাকা দিয়ে শুধু পান-সুপারির খরচটা হয়। আর কিছুই হয় না। তিনি বলেন, ‘শেখের বেটি গরিবের দুঃখু দেখবে তখন একটু ভালো করেই দেখুক।’
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভাতা গ্রহীতা নির্বাচনের মানদণ্ড হচ্ছে প্রার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে। বয়স অবশ্যই ১৮ (আঠার) বছরের ঊর্ধ্বে হতে হবে। তবে সর্বোচ্চ বয়স্ক মহিলাকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে। যিনি শারীরিকভাবে অক্ষম অর্থাৎ সম্পূর্ণরূপে কর্মক্ষমতাহীন তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। আর্থিক অবস্থার ক্ষেত্রে: নিঃস্ব, উদ্বাস্তু ও ভূমিহীনকে ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার দিতে হবে। নিঃসন্তান, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদেরকে ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ভূমিহীন প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বসতবাড়ী ব্যতিত কোনো ব্যক্তির জমির পরিমাণ ০.৫০ একর বা তার কম হলে তিনি ভূমিহীন বলে গণ্য হবেন।

ভাতা প্রাপকের যোগ্যতা ও শর্তাবলি হচ্ছে তাকে সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে, জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচিতি নম্বর থাকতে হবে, বয়ঃবৃদ্ধা অসহায় ও দুঃস্থ বিধবা বা স্বামী নিগৃহীতা মহিলাকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে, যিনি দুঃস্থ, অসহায়, প্রায় ভূমিহীন, বিধবা বা স্বামী নিগৃহিতা এবং যার ১৬ বছর বয়সের নিচে, ২টি সন্তান রয়েছে তিনি ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন, দুঃস্থ, দরিদ্র, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতাদের মধ্যে যারা প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ তারা ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন, প্রার্থীর বার্ষিক গড় আয় অনূর্ধ্ব ১২ হাজার টাকা হতে হবে এবং তাকে অবশ্যই বাছাই কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত হতে হবে।
১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে জনপ্রতি মাসিক ১০০ টাকা হারে ১ মাস পরীক্ষামূলকভাবে এই ভাতা কার্যক্রম চালু হয়। এসময় ভাতাভোগী ছিলেন ৪.০৩ লক্ষ জন। মোট ভাতার পরিমাণ ছিল ৪০.৩১ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জনপ্রতি মাসে ৫০০ টাকা হারে সারা বছর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই ভাতা কার্যক্রম চালু হয়। এ সময় মোট ভাতার পরিমাণ ছিল ৩৪৪৪.৫৪ কোটি টাকা। ভাতাভোগী ছিল ২৪ লাখ ৭৫ হাজার জন। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ২৫ লাখ ৭৫ হাজার জনের জন্য জনপ্রতি মাসিক ৫৫০ টাকা হারে মোট ১ হাজার ৭১১ দশমিক ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ ভাতার পরিমাণ ৫০ টাকা বেড়ে ৬০০ টাকা হয়েছে। ভাতাপ্রাপ্ত নারীর সংখ্যা ২৫ লাখ ৭৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২৭ লাখ ৭৫ হাজার করা হয়েছে। আর এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা।
কোনো নারী ভাতা পেতে ব্যর্থ হলে পরবর্তী প্রতিকারকারী কর্মকর্তারা হচ্ছেন- সংশ্লিষ্ট উপজেলার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সংশ্লিষ্ট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক, জেলা প্রশাসক বা পাবর্ত্য জেলা চেয়ারম্যান, সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক পরিচালক।