টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনি ইশতেহার দিয়েছিল, তাতে গুরুত্ব পেয়েছিল ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি’। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের সাবেক ও বর্তমান একাধিক কর্মকর্তার অস্বাভাবিক সম্পদ ও দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর দেশজুড়েই চলছে তোলপাড়। ফলে আওয়ামী লীগের দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে অঙ্গীকার তা অনেক ক্ষেত্রেই প্রশ্নের সস্মুখীন হচ্ছে। জাতীয় সংসদ থেকে রাজপথের রাজনীতি সবজায়গাতেই আলোচনায় ইস্যুটি। তবে ইশতিহারে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতেই অনড় অবস্থানে থাকার বার্তা সরকার ও আওয়ামী লীগের। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের পর ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’র অগ্রযাত্রায় দুর্নীতিকেই এখন মূল প্রতিবন্ধকতা হিসেবে মনে করছেন দলটির নেতারা। এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দুর্নীতিবাজদের কঠোর বার্তা দিয়েছেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শুধু দেশে প্রচলিত আইন দিয়ে দুর্নীতি স্বমূলে নির্মুল করা সম্ভব নয়, প্রয়োজন রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি সর্বমহলে প্রতীয়মান করতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, প্রশাসনের মধ্যে একের পর এক দুর্নীতির খবর প্রকাশ পাওয়া, একজন সংসদ সদস্য খুন হওয়া সবকিছুই আওয়ামী লীগের জন্য কিছুটা অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি করেছে। তবে আওয়ামী লীগ একটি পুরোনো দল, দক্ষ দল, ঐতিহ্যবাহী দল, যেকোনো সংকট মোকাবিলা করার সক্ষমতা তাদের আছে। প্রধানমন্ত্রীর যে বার্তা সুশাসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, সেটা দলের সর্বপর্যায়ের নেতাকর্মীদের লালন করতে হবে এবং যেন তা প্রশাসনসহ সর্বমহলে প্রতীয়মান হয়, নিশ্চিত করতে হবে।
জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের পক্ষে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের আওয়ামী লীগকেই জোরালো করতে হবে। তিনি বলেন, দুর্নীতির দায়ে সরকারের কর্মকর্তাদের নাম উঠে আসা, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষতিকর। এতে সরকারের দায়দায়িত্ব নেই বা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষণ্ন হবে না এমন ভাবার সুযোগ নেই। কারণ তাদের দুর্নীতি এ সরকারের আমলেই হয়েছে। এতে সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের যে অঙ্গীকার তা প্রশ্ন্নবিদ্ধ হয়েছে। তবে পূর্বে এর থেকেও বড় বড় দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে।
তিনি আরো বলেন, করোনাসহ ও বিশ^ অর্থনীতির অস্থিরতার কারণে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশের যেকোনো সময়ের থেকে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে, অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন। তবে আমাদের রাজনৈতিক উন্নয়ন হয়নি। যে মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হলো। মানবিক, সাম্যের, মিলেমিশে বাংলাদেশ, এই মূল্যবোধের যে দৃঢ়তা দরকার ছিল তা হয়ে ওঠেনি। এর জন্য যে সাংস্কৃতিক একটা বিপ্লবের দরকার ছিল তা আওয়ামী লীগকে জোরালো করতে হবে।
প্রখ্যাত এই অর্থনীতিবিদ বলেন, যে সমাজে দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, চোর-বাটপার ক্ষমতাবান হয়ে যায়, সে সমাজে শৃঙ্খলা থাকে না। এক পর্যায়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নও মুখ থুবড়ে পড়বে। যদি সামাজিক অনাচার, দুর্নীতি, বৈষম্য থামানো না যায়। সেজন্য আওয়ামী লীগকে উদ্যোগ নিতে হবে। রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে মানুষ যেন দুর্নীতি ঘৃণা করে, সমাজে যেন দুর্নীতিবাজরা প্রতিষ্ঠা না পায়, প্রশ্রয় না পায়, রাজনৈতিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা না পায়।
বর্তমান প্রেক্ষপটে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা কি জানতে চাইলে দলটির সভাপতি মন্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন, পার্টি সাধারণ সম্পাদক বারবার বলছেন, দুর্নীতি প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। সংসদ অধিবেশন শেষ হলে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হবে। সেখানে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।






















