০৪:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সামাজিক সুরক্ষা খাত

ভাতা বাড়লেও সন্তুষ্ট নন মুক্তিযোদ্ধারা

➤ ৩০০ টাকার ভাতা বেড়ে ২০ হাজার টাকা
➤ ভাতার আওতায় ২১২৫৮৫ জন মুক্তিযোদ্ধা
➤ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পান না সবাই
➤ ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব সংসদে

মহান মুক্তিযুদ্ধে মরণপণ লড়াই করে স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরির স্বীকৃতিতে জীবন সায়াহ্নে এসে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। শুরুতে মাত্র ৩০০ টাকা দিয়ে এই ভাতার যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে এই ভাতার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার টাকা। আর এখনকার এই দুর্মূল্যের বাজারে টাকা অত্যন্ত অপ্রতুল বলেই মনে করছেন ভাতা গ্রহীতারা। তাদের মতে, এই ভাতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার প্রবর্তিত ৩০০ টাকার দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বর্তমানে সব মুক্তিযোদ্ধার জন্য ২০ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা হিসেবে প্রবর্তিত হয়েছে। বর্তমানে ২০ হাজার টাকা হারে দুই লাখ বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী পাচ্ছেন। নথি অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের ওয়ারিশ মিলে মোট উপকারভোগী ২ লাখ ১২ হাজার ৫৮৫ জন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২ লাখ ১২ হাজার ৫৮৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের পরিবার বর্তমানে এ সুবিধা পাচ্ছেন। ২০২১ সাল থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ঘরে বসেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সম্মানী ভাতা পাচ্ছেন যেন তাদের ভাতা সংগ্রহ করতে গিয়ে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হতে না হয়। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায়, সাধারণ মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৪০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ৮০ হাজার ৫১৩ জনে উন্নীত করা হয়েছে। তাদের মাসিক সম্মানী ভাতার পাশাপাশি দুটি উৎসব ভাতা, জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিজয় দিবস ভাতা এবং সবার জন্য বৈশাখী ভাতাও চালু করা হয়েছে। ভাতা প্রদানের শুরুতে তিন মাস অন্তর জেলা, উপজেলা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা দেয়া হতো।

সূত্র জানায়, যুদ্ধাহত, খেতাবপ্রাপ্ত ও শহীদ পরিবারের মাসিক সম্মানী ভাতার পরিমাণ পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। ৬ হাজার ১৭৪ জন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে পঙ্গুত্বের ধরন ভেদে ২৫ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা মাসিক সম্মানী ভাতা দেয়া হচ্ছে। সাত বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ পরিবারকে মাসিক ৩৫ হাজার টাকা, ৫ হাজার ৮১৬ শহীদ পরিবারকে মাসিক ৩০ হাজার টাকা, মৃত ও যুদ্ধাহত পরিবারকে মাসিক ২৫ হাজার, বীর উত্তম খেতাবধারীরা মাসিক ২৫ হাজার, বীর বিক্রম খেতাবধারীরা মাসিক ২০ হাজার ও বীর প্রতীক খেতাবধারীরা মাসিক ২০ হাজার টাকা হারে ভাতা পাচ্ছেন। সম্মানী ভাতার পাশাপাশি শহীদ, যুদ্ধাহত ও সাত বীরশ্রেষ্ঠ এবং বীর প্রতীক তারামন বিবিসহ মোট ১১ হাজার মুক্তিযোদ্ধা পরিবার রেশনসামগ্রীও পান। সামরিক-অসামরিক নির্বিশেষে সব যুদ্ধাহত, শহীদ ও খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে কল্যাণ ট্রাস্টের আইন পরিবর্তন করে ২০১৮ সালে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মোট ১১ হাজার ৯৯৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের পরিবারের রাষ্ট্রীয় সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে।

তবে, এই ভাতাগুলোর ব্যাপারে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকার বিষয়ক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তাদের মতে, মুক্তিযোদ্ধাদের সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। আর ২০ বছর পরে এই দেশে কোনো মুক্তিযোদ্ধাই জীবিত থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এ দেশে একমাত্র আওয়ামী লীগ শাসিত সরকারই মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে কাজ করেছে। তাদের পক্ষেই সম্ভব সব মুক্তিযোদ্ধাকে জীবিত অবস্থাতেই যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করা। যা এই ভাতায় পুরোপুরি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের ভাইস চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাজ্জাদ হোসেন চিশতী বলেন, এখন বর্তমান সরকার হচ্ছেন স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির সরকার। এই আওয়ামী লীগ সরকার, এই দলের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বেই তার নির্দেশেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। তারই সুযোগ্য কন্যা, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন প্রধানমন্ত্রী। আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান আছি আমরা চাই এই সরকারের কাছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাড়তি কিছু সুযোগ সুবিধা। এখন মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের নিয়ে নানান ট্রল হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ট্রল হয়। যেই মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন না করলে আজকে আমরা একটা স্বাধীন দেশ পেতাম না সেই মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে, তাদের সন্তানদেরকে নিয়ে ট্রল হয়। আর মুক্তিযোদ্ধা ভাতাটা দীর্ঘদিন যাবত ২০ হাজার টাকা আটকে আছে। এটা নিয়ে প্রতিবারই মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় আবেদন করে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করে এটা ২৫/৩০/৪০ হাজার টাকা করা হোক। এবারও ৩০ হাজার টাকা করার জন্য আবেদন করা হয়েছে। এটা নাকচ হয়ে যায়, বাদ করে দেয়। প্রশ্ন হচ্ছে সরকারের ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ক এবং অন্যান্য বিষয়ে লাখ লাখ কোটি কোটি টাকা বাজেট হচ্ছে, তাদের সেখানে বরাদ্দ হচ্ছে এই মুক্তিযোদ্ধা ভাতাটা ২০ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকায় উন্নীত করলে এমন কি সমস্যা হয়? এবং বীর নিবাস যেগুলো দিচ্ছে সেগুলো এভেইলেবল না। সবাই পাচ্ছে না, তারপর স্বাস্থ্যসেবা যেটা আছে এটা এখনও পুরোপুরি গড়ে উঠেনি।

তিনি বলেন, সবচেয়ে দুঃখজনক হলো ভাতার বিপরীতে সোনালী ব্যাংক একটা লোন দেয়। এই লোনটা পেতে গেলে চরম ভোগান্তি হয় এবং এই লোনটার ইন্টারেস্ট কেটে রাখে ব্যাংক। এই মুক্তিযোদ্ধার ভাতার বিপরীতে লোনটা তো! এই ভাতার বিপরীতে সোনালী ব্যাংক যে লোন দেয়, এটা ইজি করা হোক, এটার সুদ মওকুফ করা হোক একদম। এবং অনেক ব্রাঞ্চে ভাতা নিতে গেলে সম্মানিত মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবাররা, ম্যানেজারদের দ্বারা, ব্যাংকের কর্মকর্তার দ্বারা হয়রানির শিকার হয়। এগুলো বন্ধ হোক। ভাতাটা বৃদ্ধি হোক। অনেক মুক্তিযোদ্ধার পরিবার আছে যাদের এই ভাতা দিয়েই পরিবার চলে। এটা দিয়েই তাদের চলতে হয়। এটা দিয়েই তাদের জীবন ধারণ করতে হয়। এই বিশ হাজার টাকা দিয়ে বর্তমান সময়ে জীবনধারণ করা অনেক কষ্টকর। এটা বৃদ্ধি করা হোক। এটা অবশ্যই দরকার। প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনেক কিছু করেছে। আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত যেমন, যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবার এটা এখন ডিজিটাল ডাটাবেজ হয়ে গেছে। তাদের সবাইকে দফায় দফায় ডেকে একদিন প্রধানমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারে। যেটা সাংবাদিকদের সঙ্গে করে, অন্যান্য পেশার লোকদের সঙ্গে করে। তারপর আমাদের জন্য একটা জায়গায় স্বল্পহারে ফ্ল্যাট দেওয়া হোক, আমাদের যে লোনটা আছে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক ঋণ সেটার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হোক। এই বিষয়গুলোকে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্য হিসেবে আমি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিআকর্ষণ করছি। ভাতা এবং যত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

এদিকে, সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের লিখিত প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সংসদে বলেছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত কার্যক্রম সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আওতাভুক্ত। উক্ত কমিটিতে ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সামান্তা শারমিনের নতুন বার্তা

সামাজিক সুরক্ষা খাত

ভাতা বাড়লেও সন্তুষ্ট নন মুক্তিযোদ্ধারা

আপডেট সময় : ০৫:০৪:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ জুলাই ২০২৪

➤ ৩০০ টাকার ভাতা বেড়ে ২০ হাজার টাকা
➤ ভাতার আওতায় ২১২৫৮৫ জন মুক্তিযোদ্ধা
➤ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পান না সবাই
➤ ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব সংসদে

মহান মুক্তিযুদ্ধে মরণপণ লড়াই করে স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরির স্বীকৃতিতে জীবন সায়াহ্নে এসে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। শুরুতে মাত্র ৩০০ টাকা দিয়ে এই ভাতার যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে এই ভাতার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার টাকা। আর এখনকার এই দুর্মূল্যের বাজারে টাকা অত্যন্ত অপ্রতুল বলেই মনে করছেন ভাতা গ্রহীতারা। তাদের মতে, এই ভাতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার প্রবর্তিত ৩০০ টাকার দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বর্তমানে সব মুক্তিযোদ্ধার জন্য ২০ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা হিসেবে প্রবর্তিত হয়েছে। বর্তমানে ২০ হাজার টাকা হারে দুই লাখ বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী পাচ্ছেন। নথি অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের ওয়ারিশ মিলে মোট উপকারভোগী ২ লাখ ১২ হাজার ৫৮৫ জন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২ লাখ ১২ হাজার ৫৮৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের পরিবার বর্তমানে এ সুবিধা পাচ্ছেন। ২০২১ সাল থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ঘরে বসেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সম্মানী ভাতা পাচ্ছেন যেন তাদের ভাতা সংগ্রহ করতে গিয়ে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হতে না হয়। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায়, সাধারণ মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৪০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ৮০ হাজার ৫১৩ জনে উন্নীত করা হয়েছে। তাদের মাসিক সম্মানী ভাতার পাশাপাশি দুটি উৎসব ভাতা, জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিজয় দিবস ভাতা এবং সবার জন্য বৈশাখী ভাতাও চালু করা হয়েছে। ভাতা প্রদানের শুরুতে তিন মাস অন্তর জেলা, উপজেলা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা দেয়া হতো।

সূত্র জানায়, যুদ্ধাহত, খেতাবপ্রাপ্ত ও শহীদ পরিবারের মাসিক সম্মানী ভাতার পরিমাণ পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। ৬ হাজার ১৭৪ জন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে পঙ্গুত্বের ধরন ভেদে ২৫ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা মাসিক সম্মানী ভাতা দেয়া হচ্ছে। সাত বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ পরিবারকে মাসিক ৩৫ হাজার টাকা, ৫ হাজার ৮১৬ শহীদ পরিবারকে মাসিক ৩০ হাজার টাকা, মৃত ও যুদ্ধাহত পরিবারকে মাসিক ২৫ হাজার, বীর উত্তম খেতাবধারীরা মাসিক ২৫ হাজার, বীর বিক্রম খেতাবধারীরা মাসিক ২০ হাজার ও বীর প্রতীক খেতাবধারীরা মাসিক ২০ হাজার টাকা হারে ভাতা পাচ্ছেন। সম্মানী ভাতার পাশাপাশি শহীদ, যুদ্ধাহত ও সাত বীরশ্রেষ্ঠ এবং বীর প্রতীক তারামন বিবিসহ মোট ১১ হাজার মুক্তিযোদ্ধা পরিবার রেশনসামগ্রীও পান। সামরিক-অসামরিক নির্বিশেষে সব যুদ্ধাহত, শহীদ ও খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে কল্যাণ ট্রাস্টের আইন পরিবর্তন করে ২০১৮ সালে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মোট ১১ হাজার ৯৯৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের পরিবারের রাষ্ট্রীয় সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে।

তবে, এই ভাতাগুলোর ব্যাপারে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকার বিষয়ক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তাদের মতে, মুক্তিযোদ্ধাদের সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। আর ২০ বছর পরে এই দেশে কোনো মুক্তিযোদ্ধাই জীবিত থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এ দেশে একমাত্র আওয়ামী লীগ শাসিত সরকারই মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে কাজ করেছে। তাদের পক্ষেই সম্ভব সব মুক্তিযোদ্ধাকে জীবিত অবস্থাতেই যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করা। যা এই ভাতায় পুরোপুরি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের ভাইস চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাজ্জাদ হোসেন চিশতী বলেন, এখন বর্তমান সরকার হচ্ছেন স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির সরকার। এই আওয়ামী লীগ সরকার, এই দলের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বেই তার নির্দেশেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। তারই সুযোগ্য কন্যা, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন প্রধানমন্ত্রী। আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান আছি আমরা চাই এই সরকারের কাছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাড়তি কিছু সুযোগ সুবিধা। এখন মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের নিয়ে নানান ট্রল হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ট্রল হয়। যেই মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন না করলে আজকে আমরা একটা স্বাধীন দেশ পেতাম না সেই মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে, তাদের সন্তানদেরকে নিয়ে ট্রল হয়। আর মুক্তিযোদ্ধা ভাতাটা দীর্ঘদিন যাবত ২০ হাজার টাকা আটকে আছে। এটা নিয়ে প্রতিবারই মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় আবেদন করে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করে এটা ২৫/৩০/৪০ হাজার টাকা করা হোক। এবারও ৩০ হাজার টাকা করার জন্য আবেদন করা হয়েছে। এটা নাকচ হয়ে যায়, বাদ করে দেয়। প্রশ্ন হচ্ছে সরকারের ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ক এবং অন্যান্য বিষয়ে লাখ লাখ কোটি কোটি টাকা বাজেট হচ্ছে, তাদের সেখানে বরাদ্দ হচ্ছে এই মুক্তিযোদ্ধা ভাতাটা ২০ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকায় উন্নীত করলে এমন কি সমস্যা হয়? এবং বীর নিবাস যেগুলো দিচ্ছে সেগুলো এভেইলেবল না। সবাই পাচ্ছে না, তারপর স্বাস্থ্যসেবা যেটা আছে এটা এখনও পুরোপুরি গড়ে উঠেনি।

তিনি বলেন, সবচেয়ে দুঃখজনক হলো ভাতার বিপরীতে সোনালী ব্যাংক একটা লোন দেয়। এই লোনটা পেতে গেলে চরম ভোগান্তি হয় এবং এই লোনটার ইন্টারেস্ট কেটে রাখে ব্যাংক। এই মুক্তিযোদ্ধার ভাতার বিপরীতে লোনটা তো! এই ভাতার বিপরীতে সোনালী ব্যাংক যে লোন দেয়, এটা ইজি করা হোক, এটার সুদ মওকুফ করা হোক একদম। এবং অনেক ব্রাঞ্চে ভাতা নিতে গেলে সম্মানিত মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবাররা, ম্যানেজারদের দ্বারা, ব্যাংকের কর্মকর্তার দ্বারা হয়রানির শিকার হয়। এগুলো বন্ধ হোক। ভাতাটা বৃদ্ধি হোক। অনেক মুক্তিযোদ্ধার পরিবার আছে যাদের এই ভাতা দিয়েই পরিবার চলে। এটা দিয়েই তাদের চলতে হয়। এটা দিয়েই তাদের জীবন ধারণ করতে হয়। এই বিশ হাজার টাকা দিয়ে বর্তমান সময়ে জীবনধারণ করা অনেক কষ্টকর। এটা বৃদ্ধি করা হোক। এটা অবশ্যই দরকার। প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনেক কিছু করেছে। আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত যেমন, যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবার এটা এখন ডিজিটাল ডাটাবেজ হয়ে গেছে। তাদের সবাইকে দফায় দফায় ডেকে একদিন প্রধানমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারে। যেটা সাংবাদিকদের সঙ্গে করে, অন্যান্য পেশার লোকদের সঙ্গে করে। তারপর আমাদের জন্য একটা জায়গায় স্বল্পহারে ফ্ল্যাট দেওয়া হোক, আমাদের যে লোনটা আছে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক ঋণ সেটার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হোক। এই বিষয়গুলোকে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্য হিসেবে আমি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিআকর্ষণ করছি। ভাতা এবং যত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

এদিকে, সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের লিখিত প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সংসদে বলেছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত কার্যক্রম সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আওতাভুক্ত। উক্ত কমিটিতে ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।