০২:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
দ্য গার্ডিয়ানের জরিপ

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচন আজ

➤ এবার ভরাডুবির শঙ্কায় কনজারভেটি পার্টি
➤ ১৪ বছর পর ক্ষমতায় ফিরছে লেবার পার্টি

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আজ। এতে ক্ষমতাসীন কনজার্ভেটিভ পার্টি ও বিরোধী লেবার পার্টির মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে মোট আসন ৬৫০। ৩২৬ আসনে যে দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, তাদেরই আগামী পাঁচ বছরের জন্য সরকার গড়তে বলবেন রাজা তৃতীয় চার্লস। সরকারিভাবে রেজিস্টার্ড পার্টির সংখ্যা ৩৯২। তবে নির্দল প্রার্থী নেহাত কম নয়। ২০১৫ সালের ভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন ১১ জন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি, ২০১৯ সালে সংখ্যাটি বেড়ে হয় ১৪; এবার তা এক লাফে ৩৪ হল। সার্ভেশনসের সেন্ট্রাল সিনারিওর তথ্য অনুযায়ী, লেবার পার্টি ৪৮৪ আসনে জয় পেতে পারে। যা দলটির সাবেক নেতা টনি ব্লেয়ারের আমলের ৪১৮টি আসনে জয়ের থেকেও বেশি। ১৪ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে কনজার্ভেটিভ পার্টি। পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলটি মাত্র ৬৪ আসনে জয় পেতে পারে। যা হতে পারে দল প্রতিষ্ঠার পর সর্বনিম্ন আসনে জয়। যুক্তরাজ্যে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছরের।

ভোটের গতিপ্রকৃতি কেমন হতে পারে তা নিয়ে জরিপ প্রকাশ করেছে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। জরিপে দেখা যাচ্ছে, এবারের নির্বাচনে দীর্ঘ ১৪ বছর পর ক্ষমতায় ফিরতে যাচ্ছে লেবার পার্টি আর জায়গা হারাচ্ছে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি। জরিপ অনুসারে, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত অন্তত ৪০ দশমিক ৩ শতাংশ ভোটার কিয়ের স্টারমারের নেতৃত্বে লেবার পার্টিকে বেছে নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। বিপরীতে ঋষি সুনাকের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টিকে বেছে নেওয়া পক্ষে মত দিয়েছে মাত্র ২০ দশমিক ৭ শতাংশ ভোটার। যা লেবার পার্টির প্রায় অর্ধেক।

লেবার ও কনজারভেটিভ পার্টির বাইরে বড় একটি অংশের ব্রিটিশ ভোটার লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে বেছে নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। এই দলটির পক্ষে মত দিয়েছেন ১১ দশমিক ৩ শতাংশ ভোটার। বিপরীতে রিফর্ম ইউকে পার্টি ও গ্রিন পার্টির পক্ষে মত দিয়েছে যথাক্রমে ১৬ ও ৫ দশমিক ৮ শতাংশ ভোটার।
মজার ব্যাপার হলো- ২০২২ সালের জুলাইয়ের পর থেকে বলা যায় লেবার পার্টির জনসমর্থন একই রয়েছে। যদিও কিঞ্চিৎ কমেছে তবে সেটা খুব বেশি নয়। ২০২২ সালে লেবার পার্টির জনসমর্থন ছিল ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ। আর সেই সময়ে কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থন ছিল ৩২ দশমিক ২ শতাংশ। দুই বছরের ব্যবধানে দলটি প্রায় ১২ শতাংশ সমর্থন হারিয়েছে। বলা যায়, কনজারভেটিভ পার্টির এই হারানো সমর্থনের পুরোটাই গেছে নাইজেল ফারাজের রিফর্ম ইউকের দখলে। ২০২২ সালে দলটির জন সমর্থন ছিল প্রায় আড়াই শতাংশ। চলতি বছরের ২ জুলাই নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ শতাংশে।

কোন দল কতটি আসন পেতে পারে জরিপের ভিত্তিতে তারও একটি সারমর্ম তৈরি করেছে দ্য গার্ডিয়ান জরিপের ভিত্তিতে বলছে, বর্তমান বিরোধী দল লেবার পার্টি পেতে পারে ৪২৮টি আসন এবং ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি পেতে পারে মাত্র ১২৭টি আসন। অথচ ২০১৯ সালের নির্বাচনে লেবার পার্টি পেয়েছিল ২০৩টি আসন এবং ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছিল ৩৬৫টি আসন। উল্লেখ্য, ৬৫০ আসনের পার্লামেন্টে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ৩২৬টি আসন। লেবার ও কনজারভেটিভ পার্টির বাইরে লিবারেল ডেমোক্রেটিক (লিব ডেম) পার্টি পেতে পারে ৫০টি আসন, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি পেতে পারে ১৯টি আসন। এর আগের নির্বাচনে লিব ডেম পেয়েছিল ১১টি এবং স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি পেয়েছিল ৪৮টি আসন। এবারের নির্বাচনে বাদবাকি আসনগুলো অন্যান্যদের দখলে যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে গার্ডিয়ানের জরিপে।

জরিপ অনুসারে, এবারের নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির ভরাডুবি হতে পারে। এই ভরাডুবির পেছনে মূল কারণ হতে পারে দলটির অভিজ্ঞ নেতাদের এবারের নির্বাচনে অংশ না নেওয়া। কনজারভেটিভ পার্টির রেকর্ড সংখ্যক পুরোনো এমপি এবার আর লড়ছেন না। বর্তমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান ঋষি সুনাকের আকস্মিক নির্বাচন ঘোষণার বিষয়টি দলের অনেকেরই পছন্দ হয়নি। এই বিষয়টি নিয়েও অসন্তোষ আছে দলের ভেতরে। এ ছাড়া দলের ভেতরে শৃঙ্খলার অভাব, সততার অভাব ইত্যাদি বিষয়ও দলটির নির্বাচনী যাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে। নির্বাচনী প্রচারেও নিষ্প্রভ ছিল কনজারভেটিভ পার্টি। মূলত ঋষি সুনাকই এর জন্য বেশির ভাগ দায়ী। তিনি নিজেও নির্বাচনী প্রচারণায় খুব একটা কারিশমা দেখাতে পারেননি। এছাড়া, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি মোকাবিলা করতে দিক নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি তা হলো- অর্থনীতি। লেবার পার্টি যেখানে অর্থনৈতিক সংস্কার, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে তাদের করণীয় অনেকটাই স্পষ্টভাবে হাজির করেছে তরুণ ভোটারদের সামনে সেখানে এ ধরনের কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে ব্যর্থ হয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি। আর এসব কারণই মূলত দলটিতে ভরাডুবির দিকে ঠেলে দিতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্য গার্ডিয়ানের জরিপ

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচন আজ

আপডেট সময় : ০২:৩৩:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০২৪

➤ এবার ভরাডুবির শঙ্কায় কনজারভেটি পার্টি
➤ ১৪ বছর পর ক্ষমতায় ফিরছে লেবার পার্টি

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আজ। এতে ক্ষমতাসীন কনজার্ভেটিভ পার্টি ও বিরোধী লেবার পার্টির মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে মোট আসন ৬৫০। ৩২৬ আসনে যে দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, তাদেরই আগামী পাঁচ বছরের জন্য সরকার গড়তে বলবেন রাজা তৃতীয় চার্লস। সরকারিভাবে রেজিস্টার্ড পার্টির সংখ্যা ৩৯২। তবে নির্দল প্রার্থী নেহাত কম নয়। ২০১৫ সালের ভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন ১১ জন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি, ২০১৯ সালে সংখ্যাটি বেড়ে হয় ১৪; এবার তা এক লাফে ৩৪ হল। সার্ভেশনসের সেন্ট্রাল সিনারিওর তথ্য অনুযায়ী, লেবার পার্টি ৪৮৪ আসনে জয় পেতে পারে। যা দলটির সাবেক নেতা টনি ব্লেয়ারের আমলের ৪১৮টি আসনে জয়ের থেকেও বেশি। ১৪ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে কনজার্ভেটিভ পার্টি। পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলটি মাত্র ৬৪ আসনে জয় পেতে পারে। যা হতে পারে দল প্রতিষ্ঠার পর সর্বনিম্ন আসনে জয়। যুক্তরাজ্যে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছরের।

ভোটের গতিপ্রকৃতি কেমন হতে পারে তা নিয়ে জরিপ প্রকাশ করেছে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। জরিপে দেখা যাচ্ছে, এবারের নির্বাচনে দীর্ঘ ১৪ বছর পর ক্ষমতায় ফিরতে যাচ্ছে লেবার পার্টি আর জায়গা হারাচ্ছে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি। জরিপ অনুসারে, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত অন্তত ৪০ দশমিক ৩ শতাংশ ভোটার কিয়ের স্টারমারের নেতৃত্বে লেবার পার্টিকে বেছে নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। বিপরীতে ঋষি সুনাকের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টিকে বেছে নেওয়া পক্ষে মত দিয়েছে মাত্র ২০ দশমিক ৭ শতাংশ ভোটার। যা লেবার পার্টির প্রায় অর্ধেক।

লেবার ও কনজারভেটিভ পার্টির বাইরে বড় একটি অংশের ব্রিটিশ ভোটার লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে বেছে নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। এই দলটির পক্ষে মত দিয়েছেন ১১ দশমিক ৩ শতাংশ ভোটার। বিপরীতে রিফর্ম ইউকে পার্টি ও গ্রিন পার্টির পক্ষে মত দিয়েছে যথাক্রমে ১৬ ও ৫ দশমিক ৮ শতাংশ ভোটার।
মজার ব্যাপার হলো- ২০২২ সালের জুলাইয়ের পর থেকে বলা যায় লেবার পার্টির জনসমর্থন একই রয়েছে। যদিও কিঞ্চিৎ কমেছে তবে সেটা খুব বেশি নয়। ২০২২ সালে লেবার পার্টির জনসমর্থন ছিল ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ। আর সেই সময়ে কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থন ছিল ৩২ দশমিক ২ শতাংশ। দুই বছরের ব্যবধানে দলটি প্রায় ১২ শতাংশ সমর্থন হারিয়েছে। বলা যায়, কনজারভেটিভ পার্টির এই হারানো সমর্থনের পুরোটাই গেছে নাইজেল ফারাজের রিফর্ম ইউকের দখলে। ২০২২ সালে দলটির জন সমর্থন ছিল প্রায় আড়াই শতাংশ। চলতি বছরের ২ জুলাই নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ শতাংশে।

কোন দল কতটি আসন পেতে পারে জরিপের ভিত্তিতে তারও একটি সারমর্ম তৈরি করেছে দ্য গার্ডিয়ান জরিপের ভিত্তিতে বলছে, বর্তমান বিরোধী দল লেবার পার্টি পেতে পারে ৪২৮টি আসন এবং ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি পেতে পারে মাত্র ১২৭টি আসন। অথচ ২০১৯ সালের নির্বাচনে লেবার পার্টি পেয়েছিল ২০৩টি আসন এবং ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছিল ৩৬৫টি আসন। উল্লেখ্য, ৬৫০ আসনের পার্লামেন্টে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ৩২৬টি আসন। লেবার ও কনজারভেটিভ পার্টির বাইরে লিবারেল ডেমোক্রেটিক (লিব ডেম) পার্টি পেতে পারে ৫০টি আসন, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি পেতে পারে ১৯টি আসন। এর আগের নির্বাচনে লিব ডেম পেয়েছিল ১১টি এবং স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি পেয়েছিল ৪৮টি আসন। এবারের নির্বাচনে বাদবাকি আসনগুলো অন্যান্যদের দখলে যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে গার্ডিয়ানের জরিপে।

জরিপ অনুসারে, এবারের নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির ভরাডুবি হতে পারে। এই ভরাডুবির পেছনে মূল কারণ হতে পারে দলটির অভিজ্ঞ নেতাদের এবারের নির্বাচনে অংশ না নেওয়া। কনজারভেটিভ পার্টির রেকর্ড সংখ্যক পুরোনো এমপি এবার আর লড়ছেন না। বর্তমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান ঋষি সুনাকের আকস্মিক নির্বাচন ঘোষণার বিষয়টি দলের অনেকেরই পছন্দ হয়নি। এই বিষয়টি নিয়েও অসন্তোষ আছে দলের ভেতরে। এ ছাড়া দলের ভেতরে শৃঙ্খলার অভাব, সততার অভাব ইত্যাদি বিষয়ও দলটির নির্বাচনী যাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে। নির্বাচনী প্রচারেও নিষ্প্রভ ছিল কনজারভেটিভ পার্টি। মূলত ঋষি সুনাকই এর জন্য বেশির ভাগ দায়ী। তিনি নিজেও নির্বাচনী প্রচারণায় খুব একটা কারিশমা দেখাতে পারেননি। এছাড়া, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি মোকাবিলা করতে দিক নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি তা হলো- অর্থনীতি। লেবার পার্টি যেখানে অর্থনৈতিক সংস্কার, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে তাদের করণীয় অনেকটাই স্পষ্টভাবে হাজির করেছে তরুণ ভোটারদের সামনে সেখানে এ ধরনের কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে ব্যর্থ হয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি। আর এসব কারণই মূলত দলটিতে ভরাডুবির দিকে ঠেলে দিতে পারে।