◉ নতুন সরকারে চার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারী এমপি
◉ আমরা নিশ্চয় তাদের এই অর্জনে খুশি : মুন্সী ফয়েজ আহমেদ
◉ নতুন আলোচনায় আসতে পারে তারেককে ফেরানোর ইস্যু
যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে লেবার পার্টি থেকে বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ সিদ্দিকসহ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চার নারী আবারও যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। তাদের এই বিজয় এমন এক সময়ে হলো যখন বাংলাদেশেও নতুন সরকার যাত্রা শুরু করেছে গত ৯ জানুয়ারি। নতুনভাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর কূটনৈতিক সম্পর্কগুলোকে আরও উচ্চমাত্রায় নিয়ে যাওয়া, বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক অমীমাংসিত ইস্যুগুলোকে মীমাংসা করতে চায় সরকার। এ অবস্থায় যুক্তরাজ্যের নতুন চার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি নির্বাচিত হওয়ায় তারা বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে নতুন করে আলোচনা হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
লেবার পার্টি থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড-কিলবার্ন আসন থেকে নির্বাচন হন। তার জয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা ও টিউলিপের মা শেখ রেহানা। টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন ও স্টেপনি আসন থেকে রুশনারা আলী টানা পঞ্চমবার, পপলার অ্যান্ড লাইম হাউস আসন থেকে আফসানা বেগম দ্বিতীয়বার এবং লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল ও একটন আসনে টানা চতুর্থবার জয়ী হয়েছেন ড. রূপা হক।
সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বিআইআইএসএস এর সাবেক চেয়ারম্যান মুন্সী ফয়েজ আহমেদ দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, আমরা সবসময় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কেউ যদি যে কোনো দেশে ভালো কিছু অর্জন করে, তাদের ভালো অর্জনে আমরা সবসময় গৌরবান্বিত করি। আর সেখানে যারা আছেন তাদের তো বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ যারা আছেন তাদের অনেকের সাথেই খুব ভালো সম্পর্ক আছে। পারিবারিক সম্পর্ক তো আছেই তাছাড়াও তারা যেমন রুশানারা আলী, রুপা হক এরা কিন্তু বাংলাদেশে এসেছেন এবং উনাদের সাথে অনেকের সাথেই তাদের ভালো সম্পর্ক আছে। তারা চিনেন জানেন। আর যেহেতু তারা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। তাদের আত্মীয়স্বজনেরা এখানে আছেন। সুতরাং তাদের বাংলাদেশের প্রতি একটা টান থাকবে এটাই স্বাভাবিক। যেহেতু উনারা ব্রিটিশ রাজনীতিতে আছেন, ওখানকার বিষয়াদি সব নাগরিকরা ভাবেন সেগুলো নিয়ে তারা কাজ করেন। তারপরেও তাদের একটা বিশেষ টান বাংলাদেশের প্রতি থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। এরা চারজনই আগে ছিলেন। তাদের কাছে নতুন কিছু না। তারা আবার এমপি হয়েছেন। এতে আমরা নিশ্চয় খুশি এবং আমি মনে করি যে, তারা আবার এমপি হওয়াতে একনম্বর হলো তারা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে সাহায্য করতে পারবেন, দ্বিতীয় তারা বাংলাদেশের বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবেন। সুতরাং আমরা নিশ্চয়ই তাদের এই অর্জনে আমরা খুশি। এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ থাকার কারণ নাই যে, তারা এমপি হওয়াতে এটা আমাদের জন্য একটা সুখবর। সব দিক থেকেই।
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের কূটনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘবছরের। ১৯৭২ সাল থেকে এই সম্পর্ক অটুট রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে আগামী ২০২৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধাও ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য। ইউরোপের মধ্যে জার্মানির পরই দেশটি বাংলাদেশের পোশাক শিল্প খাতের বড় ক্রেতা। সেখান থেকে বিমান বাহিনীর জন্য সি-১৩০ উড়োজাহাজ ক্রয় করেছে বাংলাদেশ। এছাড়া যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধ জাহাজও কিনেছে। নৌবাহিনীর জাহাজও কেনা হয়েছে সেখান থেকে। দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা রয়েছে। বাংলাদেশের অন্যতম সীমান্ত সমস্যা রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় সবসময় পাশে আছে। রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় অন্যতম প্রধান দাতাদেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য ২০১৭ সাল থেকে ৩২০ মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি আর্থিক সাহায্য দিয়েছে। প্রায় ৬ লাখ বাংলাদেশি দেশটিতে আছেন। প্রচুর বাংলাদেশি শিক্ষার্থী দেশটিতে লেখাপড়া করতে যান। দেশের শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নে শিক্ষাবৃত্তিও দেয় দেশটি। এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবিলা, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, মানবাধিকার, সুশাসন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে দেশটি।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনব এবং এই দেশের মানুষকে সত্যিকার অর্থেই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব। জনগণের রাষ্ট্র আমরা তৈরি করব এবং সেই রাষ্ট্র হবে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সেই রাষ্ট্র হবে মুক্ত রাষ্ট্র।
গত ২৬ জুন সংসদে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেছেন, একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমানকে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কিছু আইনগত জটিলতা রয়েছে। তবে সব আইনি প্রক্রিয়া নিরসন করে তারেককে দেশে ফিরিয়ে এনে সাজার মুখোমুখি করার বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সরকার। এ উদ্দেশ্য জোর কূটনৈতিক তৎপরতা ও আইনি কার্যক্রম একই সঙ্গে চলমান রয়েছে। যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কাজ করে যাচ্ছে। আশা করা যায়, এ প্রক্রিয়ায় ফলাফল আমরা অচিরেই দেখতে সক্ষম হব।
তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট দেশগুলাতে খুনিদের অবস্থানের বিষয়ে আইনগত জটিলতা থাকায় এ বিষয়ে প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি। খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বর্তমানে প্রচলিত কূটনীতির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইন অনুযায়ীও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বক্তব্য এসেছে। এ প্রসঙ্গে মুন্সী ফয়েজ আহমেদ দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, সেটাকে দেখতে হবে। একটা নতুন সরকার আসলেই যে, একটা নতুন অগ্রগতি হবে তাতো না। ঐ দেশের আইনকানুন আছে। সেই আইন কানুনের মধ্যে চেষ্টা করা হচ্ছে। আবার নতুন করে হয়ত চেষ্টা করবেন সরকার। তারপরে তারা কতটুকু সফল হয় সেটা দেখতে হবে। নিশ্চয় নতুন সরকার হলে আমরা মনে করব যে, এবার হয়ত আগের চেয়ে কিছুটা প্রগ্রেস করা যেতে পারে। এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে। কিন্তু এটা সময় নিয়ে বুঝতে হবে যে, কোনো অগ্রগতি হচ্ছে কি হচ্ছে না। কিন্তু সরকার যে চেষ্টা করবেন নতুন করে সে সম্বন্ধে তো কোনো সন্দেহ নেই।






















