চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ পৌরসভাটি ২০০৫ সালের ১লা সেপ্টেম্বর স্থাপিত হয়। যার আয়তন ১৯.৭৫ বর্গ কি:মি। এই পৌরসভাটি ৯ টি ওয়ার্ডের জনসংখ্যা ৩৪,৬১১ জন। ২০২১ সালের ১৪ মার্চ ফরিদগঞ্জ পৌরসভার দায়িত্বে আসেন ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এক সময়ের বাজারের বেবি ট্যাক্সির লাইনম্যান ছিলন আবুল খায়ের পাটওয়ারী। বৃদ্ধ বয়সে পৌর মেয়র হওয়ায় পৌরসভার সকল বিষয়ে ক্ষমতার জোরে সিদ্ধান্ত নিতেন তার মেয়ে নাজমুনন্নাহার অনি। সে ছিল অঘোষিত মেয়র। আবুল খায়ের পাটোয়ারী মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার সাথে সাথেই পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে দারোয়ান পর্যন্ত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কাউন্সিলরগণ জিম্মি ছিলেন পৌর মেয়র ও তার কন্যা উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী নাজমুন্নাহার অনি’র হাতে। ফরিদগঞ্জ পৌরসভার অফিসের চেকবই ছিনিয়ে নিয়ে নিজের ইচ্ছামতো টাকা হাতিয়ে নিতেন মেয়র কন্যা। মেয়র কন্যার জিম্মায় থাকত পৌরসভার সকল চেকবই। সময়মতো বেতন থেকে বঞ্চিত হতেন কর্মকর্তা- কর্মচারীরা। প্রতিবাদ করলেই মেয়রের হাতে মারধোরের শিকার হয়েছেন পৌরসভার অনেক কর্মকর্তা- কর্মচারী।
মেয়র আবুল খায়ের পাটোয়ারীর মেয়ে চেক বই ছিনিয়ে নেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে পৌর প্রশাসক শাহ সুফিয়ান জানান, দীর্ঘদিন পৌরসভার চেক বই তার কাছে ছিল, ৫ আগস্টের পর পৌরসভার অফিস সহকারী দীনেশের মাধ্যমে চেক বই অফিসে প্রেরণ করেন। তার ক্ষমতাকালীন সময় আমরা ভয়ে প্রতিবাদ তো দূরের কথা, কথাও বলতে পারিনি।
পৌরসভার ৭ জন কর্মচারী নিয়োগে ৩০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়ার অভিযোগ আছে মেয়র কন্যার বিরুদ্ধে। এছাড়া মেয়র কন্যা বাজার ও বাসস্ট্যান্ড ইজারা বাবদ হাতিয়ে নিতেন প্রতি বছরে ১০ লাখেরর অধিক টাকা । পৌরসভার উন্নয়ন খাতে প্রকল্পের কাজে বিভিন্ন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দেয়ার কথা বলে হাতিয়ে নিতেন লক্ষ লক্ষ টাকা। আজিজ ব্রাদার্সের কাছ থেকে নিয়েছেন ২৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের একাংশের ১১ কোটি ৬৮ লাখ টাকার কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএস রহমান থেকে সিংহভাগ কাজ হাতিয়ে নেন মেয়র কন্যা নাজমুন্নাহার অনি। গোপালগঞ্জে শশুর বাড়ি থাকা সত্ত্বেও স্বামীর সাথে না থেকে মেয়র পিতার ক্ষমতায় আধিপত্য বিস্তার করতে থাকেন ফরিদগঞ্জে। জিম্মি করে রাখেন পৌরসভা বাসীকে। পৌর ক্যাশিয়ার থেকে জানা যায়, ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে ফাতেহা এন্টারপ্রাইজের নাম ব্যবহার করে কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই মেয়র কন্যা। পৌরসভার সকল ক্ষেত্রে তার অধিপত্য বিস্তার হিল। অন্যায় অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ছিল মেয়র কন্যার কাজ। একটি সময় বেবী ট্যাক্সির লাইন ম্যানের দায়িত্ব পালন করে চলতে হত আবুল খায়ের পাটোয়ারীর সংসার। যার কিনা ২০০৮ সালের আগেও ১টা বস্তা চাল কিনা ছিল স্বপ্নের মত। আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকালীন সময়ে মেয়র হয়ে মেয়েকে ব্যবহার করে গড়ে তোলেনসম্পদের পাহাড়। নিজ এলাকাতেই করেন দুইটি বাড়ি। আবুল খায়ের পাটোয়ারী পৌর মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তার মেয়ে নাজমুনন্নাহার অনি প্রায় ৪০ লক্ষাধিক টাকার গাড়ির মালিক বনে যান। কখনো গাড়িতে সাংবাদিক, কখনো পুলিশ লেখা স্টিকার লাগিয়ে পুলিশের হর্ন বাজিয়ে যাতায়াত করতেন নিয়মিত। বিলাস বহুল জীবনযাপন করতে থাকেন। দুর্নীতি ও কালো টাকার জোরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ফরিদগ-৪ আসন থেকে নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখেন মেয়র কন্যা। ১৭ জন দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে নাজমুনন্নাহার অনি হিল একজন।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার সরকারের পতন হলে এক এক করে মুখ খুলতে শুরু করেন ভুক্তভোগীরা। তারা জানায় ৫ আগস্ট মেয়র আবুল খায়ের পাটোয়ারী পালানোর সময় জনতা তাকে অটক করলে ৩১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তা রফাদফা করে আত্মগোপনে চলে যান। গত ১৭ আগস্ট শনিবার দিনব্যাপী পৌর মেয়রের পদত্যাগের দাবিতে পৌর চত্বরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা অভিযোগ করে বলেন, ফ্যাসিবাদ মেয়র পৌরসভাকে অনিয়মের তীর্থস্থান হিসেবে গড়ে তুলে নিজে ও তার মেয়ে মিলে টাকার পাহাড় গড়েছেন। আবুল খায়ের পাটোয়ারী মেয়র হওয়ার পর থেকে ফরিদগঞ্জ বাজারের অটোচালকদের কাছ থেকে লাইসেন্সের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়, দলীয় নেতাকর্মীদের মাস্টাররোলে পৌরসভায় চাকুরি দেওয়া, বিভিন্ন প্রকল্প থেকে কমিশন বাণিজ্য, দুর্নীতি করে নিজের মেয়েকে দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ করানো, সালিশি বাণিজ্য, দলীয় ক্যাডার দিয়ে চাঁদাবাজি, কালো টাকায় বিভিন্ন স্থানে একাধিক বহুতল বাড়ি নির্মাণ করেন।
এছাড়া অন্যের নামে হওয়া লাইসেন্স ব্যাবহার করে ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোয়াল ভার থেকে চরকুমিরা দাসপাড়া, কবির জুনিয়র স্কুল-হালিম গাজী বাড়ি, উত্তোর কেরোয়া হাজিবাড়ি থেকে প্রাইমারি স্কুল সড়ক, কালিবাজার চৌ রাস্তা থেকে কারিবাড়ি রাস্তা, উত্তোর কেরোয়া আলাবক্স হাজিবাড়ি সড়কের এডিপির বিশেষ বরাদ্দের ৭০ লক্ষ টাকা বরাদ্দের কাজে কাজ না করে অর্থ লুট করার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
তার নিয়ন্ত্রাধীন কোভিড-১৯ বিশেষ বরাদ্দের প্রায় দেড় কোটি টাকার কাজের ২০ শতাংশ কাজও হয়নি। বিগত কয়েক বছরের নগর উন্নয়নের কাজ বাবদ ১৫ কোটি টাকার ভ্যাট ও ইনকাম ট্যাক্সের এক টাকাও রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেন নি তিনি এবং গত সাড়ে তিন বছরে এডিবির বরাদ্দের প্রায় আড়াই কোটি টাকা কোন টেন্ডার ছাড়া বেনামীয় কাজ দেখিয়ে লুটে নেন তিনি
এছাড়া ফরিদগঞ্জ পৌরসভায় মাস্টাররুলে চাকরি করা ৪০ জনই ছিলো ছাত্রলীগ কর্মী কিংবা সাবেক পৌরমেয়র ও তার মেয়ে নাজমুন নাহার অনিকে তেলমারা রাজনৈতিক কর্মি। এরমধ্যে সাবেক পেসিবাদ মেয়রের আগ্রাসনমূলক মতের বিরুদ্ধে যারা যখনই কথা বলেছে তাদেরকে চাকুরীচূত করা দৃষ্টান্তও দৃশ্যমাম।


























