◉ তীব্র গরমের মধ্যে ঝড়-বন্যার নতুন পুর্বাভাস
◉ চরম দুর্ভোগে অধিকাংশ জনগণ
◉ প্রত্যেক কর্মজীবীর জন্য দুর্যোগভাতা চালুর দাবি
প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন কাটছেই না। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। প্রাকৃতিক দুর্যোগগে ঘিরে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি, অসুস্থতা, প্রতিদিনের খরচ বৃদ্ধিতে দিশাহারা হয়ে পড়ছে দেশের মানুষ। কিন্তু এর থেকে পরিত্রাণের যেন কোনো উপায় নেই। একেরপর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিম্ন-আয়ের ও শ্রমজীবী মানুষ। তবে, এ ব্যাপারে সরকারি পর্যায়ে বিশেষ কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, পাহাড় ধস, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, অতি গরম, অতি ঠাণ্ডা, তাপদাহ, বজ্রপাত এগুলো যেন প্রতিদিনের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, এই অক্টোবর মাসে বঙ্গোপসাগরে ১-৩টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। যার মধ্যে একটি নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এখন চলছে শরৎকাল। এই সময়ে যে বৃষ্টিপাতের মাত্রা থাকার কথা তার চেয়ে দেশে বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দিতে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি আরও জানিয়েছে, অক্টোবর মাসের প্রথমার্ধে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষা) বাংলাদেশ থেকে পর্যায়ক্রমে বিদায় নিতে পারে। দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে দু-চারদিন মাঝারি থেকে তীব্র বজ্রঝড় এবং সারা দেশে তিন-পাঁচদিন হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বজ্রঝড় হতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে পারে। তবে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছুটা বেশি থাকবে।
বন্যার পূর্বাভাস প্রসঙ্গে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, অক্টোবর মাসে দেশের প্রধান নদ-নদীতে স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান থাকতে পারে। তবে ভারী বৃষ্টিপাতজনিত কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকার কতিপয় স্থানে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে, আজ থেকে আগামীকাল পর্যন্ত কয়েকটি বিভাগে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও বুধবার সকাল ৬ টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় ভারী (৪৪-৮৮ মিলি মিটার/২৪ ঘণ্টা) থেকে অতিভারী (২৮৯ মিলি মিটার/২৪ ঘণ্টা) বৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে, পাহাড় ধ্বসের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদেরা।
একসময় বাংলাদেশ বন্যাপ্রবন দেশ হিসেবেই পরিচিত ছিল। কিন্তু এখন বজ্রপাতকেও দেশের একটি দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বেসরকারি সংগঠন ডিজাস্টার ফোরামের তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়ছেন ৩ হাজার ৮৭০ জর। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন ২০২১ সালে, ৩৮১ জন। ওই বছরের মে মাসে বজ্রপাতে সর্বোচ্চ ১২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার বেশিরভাগই কৃষক। কৃষিখেতে কাজ করার সময় তাদের বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে। বজ্রপাত প্রতিরোধে বিশেষ কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ সরকারিভাবে নেওয়া হয়েছে এমনটি দেখা যায়না। তবে, গবেষক গওহর নঈম ওয়ারার মতে, নেপালে বজ্রপাতের সময় রাবারের চপ্পল পায়ে দিয়ে কিছু বজ্রপাত প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। তবে, বাংলাদেশে এই ধরণের কোন গবেষণা দেখা যায়নি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে নিম্ন আয়ের পেশাজীবীরা। এমনই একজন সুরাইয়া জাহান। তিনি রাজধানীর মতিঝিলে একটি অনলাইন টিকেট সেল এজেন্সিতে কাজ করেন। তিনি বলেন, বেশি বৃষ্টি হলেই মতিঝিল এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়। তখন যাতায়াতের জন্য একমাত্র বাহন থাকে রিকশা। রিকশাওয়ালারা তখন দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া চায়। এই অবস্থায় দ্বিগুণ ভাড়া না গুণে কোন উপায় থাকে। তিনি বলেন, অবশ্যই প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিবেচনায় নিয়ে আমাদের কর্মজীবীদের জন্য দুর্যোগ ভাতা থাকা উচিত।
রাজধানীর পল্টন এলাকায় সবজি বিক্রেতা হিসেবে কাজ করেন, আলতামাস কবির মিশু। তিনি বলেন, যখন বৃষ্টি বেড়ে যায় সবজির ট্রাক জ্যামে আটকে যায়। আসতে পারেনা। এদিকে, সবজির দাম বেড়ে যায়। বেশি দামের কারণে বেশি সবজি কিনতে পারিনা। আবার যে দুই-একটা সবজি কিনে বিক্রি করি সেগুলোর দাম আগের দিনের চেয়ে ১০-২০ টাকা বেশি থাকে। তখন আমার কোন দোষ থাকেনা, তবু ক্রেতারা খারাপ ব্যবহার করে। ঝগড়া হয়। তিনি বলেন, ঝড় বৃষ্টির সময় বিশেষ ব্যবস্থায় যেন সবজি ঢাকায় আনা যায় সেটার জন্য সরকারের ব্যবস্থা থাকা দরকার।























