০২:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গতিহীন থানার কার্যক্রম

◉ এখনো স্বাভাবিক হয়নি জনজীবন
◉ পাহাড়ে-সমতলে চলছে অস্থিরতা
◉ হামলা-লুটপাট, চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা
◉ আইনশৃঙ্খলায় স্বস্তি ফেরানোই বড় চ্যালেঞ্জ

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তার আজ্ঞাবহ মন্ত্রী-এমপিদের প্রায় সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য এবং ঊর্ধ্বতন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার হয়েছেন। আবার ঢাকার দুই মেয়র-কাউন্সিলরসহ পুলিশের অনেক কর্মকর্তাই এখনো আত্মগোপনে রয়েছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পরও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হলেও জোরাল কোনো অ্যাকশনে নেই সশস্ত্র বাহিনী। সেবাপ্রত্যাশীরা থানায় গিয়েও আগের মতো আর পুলিশি সেবা পাচ্ছেন না। পুলিশের কার্যক্রমে গতি ফেরাতে অন্তর্বর্তী সরকারসহ প্রশাসনের উচ্চপর্যায় থেকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেও কার্যত গতিহীন হয়ে পড়েছে থানার সেবা কার্যক্রম। যারা কাজে যোগদান করেছেন, তারা কেবল রুটিন ওয়ার্ক করে যাচ্ছেন। মাঠপর্যায়ে তেমন কোনো তদারকিতে নেই পুলিশ। এর ফলে এখনো স্বাভাবিক হয়নি জনজীবন। পাহাড়ে-সমতলে ও পোশাক শিল্পখাতে চলছে অস্থিরতা। এখনো হামলা লুটপাট, চাঁদাবাজি চলছেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উত্তরণে আরও কঠোর ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। পুলিশ বাহিনীকে জনগণের সেবা নিশ্চিতে কাজ করতে হবে। তাদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আইনশৃঙ্খলায় স্বস্তি ফেরানো। গতকাল মঙ্গলবার নগরীর বিভিন্ন থানা ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা যায়, শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ফ্রন্ট লাইনে থাকা জনবান্ধব হিসেবে পরিচিত সেই পুলিশ বাহিনীতে চরম ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। সম্মুখসারিতে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে যেসব পুলিশ সদস্য মুখোমুখি যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন এবং নেপথ্যে থেকে নির্দেশনা দিয়েছেন তাদের অনেকেই এখন অজানা শঙ্কায় আত্মগোপনে রয়েছেন। সরকার পতনের পর ভেঙে পড়েছে পুলিশ বাহিনীর চেইন অব কমান্ড। এখনো চলছে হামলা-ভাঙচুর, লুটপাট ও দখল-চাঁদাবাজি। পাহাড়ি অঞ্চল পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিভিন্ন দাবি আদায়ে আশুলিয়া-গাজীপুরে শতাধিক তৈরি পোশাক কারখানায় সহিংসতার ঘটনায় উত্তেজনা দেখা দিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দফায় দফায় চেষ্টা চালিয়েও তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক ঘটনায় পুলিশের মধ্যে যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে, তাতে পুলিশের মনোবল দৃঢ় করা অসম্ভব। এদিকে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা বলছেন, যারা উপরের চেয়ারে বসে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের দিয়ে ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন, তাদের কেউ তো মারা যায়নি। সাধারণ পুলিশ সদস্যদের ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে ভিলেন বানানো হয়েছে। সেই নির্দেশদাতা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তারা এখন গা ঢাকা দিয়েছেন। এই হত্যার দায়-দায়িত্ব তাদেরই বহন করতে হবে। আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে পারছে না মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা। এর ফলে দেশের জনজীবন এখনো স্বাভাবিক হয়নি। এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দেশের সব থানা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারএদিকে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, এ মুহূর্তে দেশ ও জাতির মতো বাংলাদেশ পুলিশও একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দৃশ্যত বাংলাদেশ পুলিশ এখনো ৫ আগস্টের সেই ধকল কাটিয়ে উঠতে পারছে না। অভিযুক্তরা গা ঢাকা দিয়েছেন। জুনিয়র কর্মকর্তা ও সদস্যরা দিশাহারা। এরা সবাই নিরীহ সদস্য। তিনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠান রক্ষার উদ্দেশ্যে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। পুলিশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও নেতৃত্ব যথাযথভাবে সক্রিয় হচ্ছে বলে বিশ্বাস করি। তিনি আরও বলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি নিরীহ সদস্যদের পুরো উদ্যমে জনসেবায় ব্রত হওয়ারও সুযোগ দেওয়া উচিত। পুলিশের স্থাপনা ও সম্পদ পুলিশের নয়, এগুলো দেশের জনগণের। পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় সব সম্পদ ধ্বংস বা নষ্ট না করার অনুরোধ জানান তিনি।

অন্তর্র্বর্তী সরকারের গত দুই মাসে বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বাহিনীর সদস্যদের। বিশেষ করে তৈরি পোশাক কারখানায় অস্থিরতা, পার্বত্য অঞ্চলে অস্থিরতা, পিটিয়ে হত্যার মতো ঘটনার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, দখলদারি, মব জাস্টিসের মতো ঘটনা উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। ডাকাতদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন তরুণ সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জন। তার এমন মৃত্যুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মনেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দায়িত্ব পাওয়া উপদেষ্টাদের সবার আগে জোর দিতে হবে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করায়। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে বাহিনীর সদস্যদের সর্বোচ্চ নির্দেশনা দেওয়া, যাতে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা জনগণের জান-মালের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নিতে পারে। একের পর এক হামলা, পিটিয়ে হত্যা, ভাঙচুর, কারখানায় অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটছেই। শ্রমিক আন্দোলনও মাথা চাড়া দিয়ে আছে। মাজার, আখড়ায় একের পর ভাঙচুর চালালেও কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। ভেঙে পড়েছে দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থাও।

আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টারও। দেশের একটি শীর্ষ দৈনিকে এক সাক্ষাৎকারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করছি। এখনো সফল হইনি। এখনো তো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। নানা রকম ব্যাখ্যা আছে। ব্যাখ্যার মধ্যে যেতে চাই না। কিন্তু এখনো উন্নতি হয়নি। কিঞ্চিৎ হয়েছে হয়তো। কিন্তু যে পর্যায়ে আসার কথা, সেই লেভেলে হয়নি। কাজেই আমাদের সার্বিক চেষ্টা হবে, ওটাকে আগে স্থির করা। এটা প্রথম কাজ। এটা না করলে তো বাকি জিনিস করতে পারছি না।

বিজিএমইএ ও পোশাক খাতের নেতারা বলছেন, শ্রমিক বিক্ষোভে গত কয়েক দিনে বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে কয়েকটি খোলার প্রক্রিয়াও চলছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগামী দু-এক মাসে আরও কিছু কারখানা বন্ধ হওয়ারও আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। বিভিন্ন দাবিতে আশুলিয়া অঞ্চলের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন বেশি। শ্রমিকদের টানা বিক্ষোভের জেরে শেষ পর্যন্ত তাদের ১৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে সম্মত হয় মালিকপক্ষ। এরপরও সহিংস আন্দোলন চালালে ৩০ সেপ্টেম্বর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে একজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এরপরও পুরোপুরি থামেনি আন্দোলন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীর দুটি এলাকায় তিনটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরে দুটি অপরাধীচক্রের সংঘর্ষে প্রাণ হারান নাসির বিশ্বাস ও মুন্না হাওলাদার নামের দুজন। এর বাইরে সূত্রাপুরে জিন্নাহ নামের একজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সবশেষ ১ অক্টোবর খাগড়াছড়িতে আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল রানা নামের এক কলেজশিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। এদিকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ভোরে খাগড়াছড়িতে মো. মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। একটি ঘটনা কেন্দ্র করে হঠাৎ করে তিন পার্বত্য জেলা অশান্ত হয়ে ওঠে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, মানুষ আগের চেয়ে অনেক সহিংস হয়ে উঠেছে। এসব ঘটনায় পুলিশও রেহাই পাচ্ছে না। মাঠ পর্যায়ে পুলিশ এখনো স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করতে পারছে না। এই সুযোগে যে যার মতো আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, বিগত সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিজেদের সুবিধার জন্য ব্যবহার করেছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য বিগত সরকারের আমলে বেনিফিটেড ছিল, যার কারণে তারা ন্যায়-অন্যায় দেখেননি। অন্যায় জিনিসকেও তারা আইনগত স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে হলে অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, যে কোনো স্বাধীনতার পরে যে কোনো দেশে দুই থেকে ছয় মাস পর্যন্ত অস্থিরতা থাকে। আগের সরকারের দীর্ঘমেয়াদি লোকবল সেট করা ছিল। সেই দীর্ঘমেয়াদি লোককে আপনি হুট করে সরিয়ে দিতে পারেন না। কারণ রিপ্লেসমেন্ট দিতে হবে। রিপ্লেসমেন্ট করতে গেলেও সময়ের ব্যাপার। আমাদের প্রধান কাজ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা।’

এলিনা খান আরও বলেন, ‘মব জাস্টিস নামে কোনো আইনের বিধান নেই। যাকে সন্দেহ হলো তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হলো এটা কোনো প্রশ্নই আসে না।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এই সরকারের সবার আগে স্বীকার করতে হবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমস্যা আছে। স্বীকার করার পরে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নিতে হবে। বেশি করে প্রচার চালাতে হবে। মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। মাজার-মন্দির ভাঙা অপরাধ, এটার জন্য ব্যাপক বক্তব্য ও প্রচারণা চালাতে হবে। শুধু বাহিনী দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা সম্ভব নয়। জনমত তৈরি করে ন্যায়-অন্যায়ের বোধ মানুষের মধ্যে ভালোমতো পরিষ্কার করতে হবে। অনেক সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী আছে যারা কোনোটাকে ধর্মের নামে, কোনোটাকে স্বৈরতন্ত্রবিরোধীর নামে এগুলো বৈধতা দিতে চায়।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, রেঞ্জ ডিআইজি, ৬৪ জেলা পুলিশ সুপার, সব মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারসহ বিভিন্ন ইউনিটে নতুন নেতৃত্বে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এটি একেবারেই অনিবার্য ছিল এবং চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে এই পরিবর্তন করা হয়েছে। যারা নতুন নেতৃত্বে কাজ শুরু করেছেন তারা সবাই পেশাদার কর্মকর্তা এবং কঠোর পরিশ্রম করছেন পুলিশের মনোবল-সাহস ফিরিয়ে আনতে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন থেকে শুরু করে অধস্তন সদস্যদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কাক্সিক্ষত সেবাটা যাতে দেওয়া যায় সেক্ষেত্রে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে বলেও দাবি করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এদিকে ডিএমপির মিডিয়া সেলের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, পরিবর্তিত সময়ে গেল দুই মাসে চেষ্টা করা হয়েছে ডিএমপিতে কর্মরত ফোর্সদের মনোবল বাড়িয়ে পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে, ডিএমপিতে এখন কার্যক্রম স্বাভাবিক। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে পুলিশি টহল বেড়েছে। দ্রুত আরও উন্নতি হবে। তিনি বলেন, যেসব থানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেগুলো দ্রুত মেরামত কাজ সম্পন্ন হবে। যে থানা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তার নিকটবর্তী থানায় সেই থানার কার্যক্রম চলমান। এক্ষেত্রে সেবা পেতে সমস্যা হচ্ছে না।

জনপ্রিয় সংবাদ

গতিহীন থানার কার্যক্রম

আপডেট সময় : ০৭:০১:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪

◉ এখনো স্বাভাবিক হয়নি জনজীবন
◉ পাহাড়ে-সমতলে চলছে অস্থিরতা
◉ হামলা-লুটপাট, চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা
◉ আইনশৃঙ্খলায় স্বস্তি ফেরানোই বড় চ্যালেঞ্জ

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তার আজ্ঞাবহ মন্ত্রী-এমপিদের প্রায় সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য এবং ঊর্ধ্বতন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার হয়েছেন। আবার ঢাকার দুই মেয়র-কাউন্সিলরসহ পুলিশের অনেক কর্মকর্তাই এখনো আত্মগোপনে রয়েছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পরও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হলেও জোরাল কোনো অ্যাকশনে নেই সশস্ত্র বাহিনী। সেবাপ্রত্যাশীরা থানায় গিয়েও আগের মতো আর পুলিশি সেবা পাচ্ছেন না। পুলিশের কার্যক্রমে গতি ফেরাতে অন্তর্বর্তী সরকারসহ প্রশাসনের উচ্চপর্যায় থেকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেও কার্যত গতিহীন হয়ে পড়েছে থানার সেবা কার্যক্রম। যারা কাজে যোগদান করেছেন, তারা কেবল রুটিন ওয়ার্ক করে যাচ্ছেন। মাঠপর্যায়ে তেমন কোনো তদারকিতে নেই পুলিশ। এর ফলে এখনো স্বাভাবিক হয়নি জনজীবন। পাহাড়ে-সমতলে ও পোশাক শিল্পখাতে চলছে অস্থিরতা। এখনো হামলা লুটপাট, চাঁদাবাজি চলছেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উত্তরণে আরও কঠোর ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। পুলিশ বাহিনীকে জনগণের সেবা নিশ্চিতে কাজ করতে হবে। তাদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আইনশৃঙ্খলায় স্বস্তি ফেরানো। গতকাল মঙ্গলবার নগরীর বিভিন্ন থানা ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা যায়, শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ফ্রন্ট লাইনে থাকা জনবান্ধব হিসেবে পরিচিত সেই পুলিশ বাহিনীতে চরম ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। সম্মুখসারিতে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে যেসব পুলিশ সদস্য মুখোমুখি যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন এবং নেপথ্যে থেকে নির্দেশনা দিয়েছেন তাদের অনেকেই এখন অজানা শঙ্কায় আত্মগোপনে রয়েছেন। সরকার পতনের পর ভেঙে পড়েছে পুলিশ বাহিনীর চেইন অব কমান্ড। এখনো চলছে হামলা-ভাঙচুর, লুটপাট ও দখল-চাঁদাবাজি। পাহাড়ি অঞ্চল পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিভিন্ন দাবি আদায়ে আশুলিয়া-গাজীপুরে শতাধিক তৈরি পোশাক কারখানায় সহিংসতার ঘটনায় উত্তেজনা দেখা দিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দফায় দফায় চেষ্টা চালিয়েও তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক ঘটনায় পুলিশের মধ্যে যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে, তাতে পুলিশের মনোবল দৃঢ় করা অসম্ভব। এদিকে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা বলছেন, যারা উপরের চেয়ারে বসে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের দিয়ে ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন, তাদের কেউ তো মারা যায়নি। সাধারণ পুলিশ সদস্যদের ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে ভিলেন বানানো হয়েছে। সেই নির্দেশদাতা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তারা এখন গা ঢাকা দিয়েছেন। এই হত্যার দায়-দায়িত্ব তাদেরই বহন করতে হবে। আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে পারছে না মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা। এর ফলে দেশের জনজীবন এখনো স্বাভাবিক হয়নি। এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দেশের সব থানা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারএদিকে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, এ মুহূর্তে দেশ ও জাতির মতো বাংলাদেশ পুলিশও একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দৃশ্যত বাংলাদেশ পুলিশ এখনো ৫ আগস্টের সেই ধকল কাটিয়ে উঠতে পারছে না। অভিযুক্তরা গা ঢাকা দিয়েছেন। জুনিয়র কর্মকর্তা ও সদস্যরা দিশাহারা। এরা সবাই নিরীহ সদস্য। তিনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠান রক্ষার উদ্দেশ্যে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। পুলিশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও নেতৃত্ব যথাযথভাবে সক্রিয় হচ্ছে বলে বিশ্বাস করি। তিনি আরও বলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি নিরীহ সদস্যদের পুরো উদ্যমে জনসেবায় ব্রত হওয়ারও সুযোগ দেওয়া উচিত। পুলিশের স্থাপনা ও সম্পদ পুলিশের নয়, এগুলো দেশের জনগণের। পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় সব সম্পদ ধ্বংস বা নষ্ট না করার অনুরোধ জানান তিনি।

অন্তর্র্বর্তী সরকারের গত দুই মাসে বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বাহিনীর সদস্যদের। বিশেষ করে তৈরি পোশাক কারখানায় অস্থিরতা, পার্বত্য অঞ্চলে অস্থিরতা, পিটিয়ে হত্যার মতো ঘটনার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, দখলদারি, মব জাস্টিসের মতো ঘটনা উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। ডাকাতদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন তরুণ সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জন। তার এমন মৃত্যুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মনেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দায়িত্ব পাওয়া উপদেষ্টাদের সবার আগে জোর দিতে হবে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করায়। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে বাহিনীর সদস্যদের সর্বোচ্চ নির্দেশনা দেওয়া, যাতে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা জনগণের জান-মালের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নিতে পারে। একের পর এক হামলা, পিটিয়ে হত্যা, ভাঙচুর, কারখানায় অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটছেই। শ্রমিক আন্দোলনও মাথা চাড়া দিয়ে আছে। মাজার, আখড়ায় একের পর ভাঙচুর চালালেও কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। ভেঙে পড়েছে দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থাও।

আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টারও। দেশের একটি শীর্ষ দৈনিকে এক সাক্ষাৎকারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করছি। এখনো সফল হইনি। এখনো তো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। নানা রকম ব্যাখ্যা আছে। ব্যাখ্যার মধ্যে যেতে চাই না। কিন্তু এখনো উন্নতি হয়নি। কিঞ্চিৎ হয়েছে হয়তো। কিন্তু যে পর্যায়ে আসার কথা, সেই লেভেলে হয়নি। কাজেই আমাদের সার্বিক চেষ্টা হবে, ওটাকে আগে স্থির করা। এটা প্রথম কাজ। এটা না করলে তো বাকি জিনিস করতে পারছি না।

বিজিএমইএ ও পোশাক খাতের নেতারা বলছেন, শ্রমিক বিক্ষোভে গত কয়েক দিনে বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে কয়েকটি খোলার প্রক্রিয়াও চলছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগামী দু-এক মাসে আরও কিছু কারখানা বন্ধ হওয়ারও আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। বিভিন্ন দাবিতে আশুলিয়া অঞ্চলের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন বেশি। শ্রমিকদের টানা বিক্ষোভের জেরে শেষ পর্যন্ত তাদের ১৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে সম্মত হয় মালিকপক্ষ। এরপরও সহিংস আন্দোলন চালালে ৩০ সেপ্টেম্বর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে একজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এরপরও পুরোপুরি থামেনি আন্দোলন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীর দুটি এলাকায় তিনটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরে দুটি অপরাধীচক্রের সংঘর্ষে প্রাণ হারান নাসির বিশ্বাস ও মুন্না হাওলাদার নামের দুজন। এর বাইরে সূত্রাপুরে জিন্নাহ নামের একজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সবশেষ ১ অক্টোবর খাগড়াছড়িতে আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল রানা নামের এক কলেজশিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। এদিকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ভোরে খাগড়াছড়িতে মো. মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। একটি ঘটনা কেন্দ্র করে হঠাৎ করে তিন পার্বত্য জেলা অশান্ত হয়ে ওঠে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, মানুষ আগের চেয়ে অনেক সহিংস হয়ে উঠেছে। এসব ঘটনায় পুলিশও রেহাই পাচ্ছে না। মাঠ পর্যায়ে পুলিশ এখনো স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করতে পারছে না। এই সুযোগে যে যার মতো আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, বিগত সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিজেদের সুবিধার জন্য ব্যবহার করেছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য বিগত সরকারের আমলে বেনিফিটেড ছিল, যার কারণে তারা ন্যায়-অন্যায় দেখেননি। অন্যায় জিনিসকেও তারা আইনগত স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে হলে অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, যে কোনো স্বাধীনতার পরে যে কোনো দেশে দুই থেকে ছয় মাস পর্যন্ত অস্থিরতা থাকে। আগের সরকারের দীর্ঘমেয়াদি লোকবল সেট করা ছিল। সেই দীর্ঘমেয়াদি লোককে আপনি হুট করে সরিয়ে দিতে পারেন না। কারণ রিপ্লেসমেন্ট দিতে হবে। রিপ্লেসমেন্ট করতে গেলেও সময়ের ব্যাপার। আমাদের প্রধান কাজ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা।’

এলিনা খান আরও বলেন, ‘মব জাস্টিস নামে কোনো আইনের বিধান নেই। যাকে সন্দেহ হলো তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হলো এটা কোনো প্রশ্নই আসে না।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এই সরকারের সবার আগে স্বীকার করতে হবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমস্যা আছে। স্বীকার করার পরে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নিতে হবে। বেশি করে প্রচার চালাতে হবে। মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। মাজার-মন্দির ভাঙা অপরাধ, এটার জন্য ব্যাপক বক্তব্য ও প্রচারণা চালাতে হবে। শুধু বাহিনী দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা সম্ভব নয়। জনমত তৈরি করে ন্যায়-অন্যায়ের বোধ মানুষের মধ্যে ভালোমতো পরিষ্কার করতে হবে। অনেক সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী আছে যারা কোনোটাকে ধর্মের নামে, কোনোটাকে স্বৈরতন্ত্রবিরোধীর নামে এগুলো বৈধতা দিতে চায়।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, রেঞ্জ ডিআইজি, ৬৪ জেলা পুলিশ সুপার, সব মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারসহ বিভিন্ন ইউনিটে নতুন নেতৃত্বে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এটি একেবারেই অনিবার্য ছিল এবং চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে এই পরিবর্তন করা হয়েছে। যারা নতুন নেতৃত্বে কাজ শুরু করেছেন তারা সবাই পেশাদার কর্মকর্তা এবং কঠোর পরিশ্রম করছেন পুলিশের মনোবল-সাহস ফিরিয়ে আনতে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন থেকে শুরু করে অধস্তন সদস্যদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কাক্সিক্ষত সেবাটা যাতে দেওয়া যায় সেক্ষেত্রে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে বলেও দাবি করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এদিকে ডিএমপির মিডিয়া সেলের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, পরিবর্তিত সময়ে গেল দুই মাসে চেষ্টা করা হয়েছে ডিএমপিতে কর্মরত ফোর্সদের মনোবল বাড়িয়ে পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে, ডিএমপিতে এখন কার্যক্রম স্বাভাবিক। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে পুলিশি টহল বেড়েছে। দ্রুত আরও উন্নতি হবে। তিনি বলেন, যেসব থানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেগুলো দ্রুত মেরামত কাজ সম্পন্ন হবে। যে থানা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তার নিকটবর্তী থানায় সেই থানার কার্যক্রম চলমান। এক্ষেত্রে সেবা পেতে সমস্যা হচ্ছে না।