দৈনিক সবুজ বাংলা পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর অবশেষে ৩ যুগ পর স্থানীয় প্রভাবশালীদের ‘হরিলুট’ থেকে দখলমুক্ত হয়েছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বাকচান্দা আব্দুস সামাদ একাডেমি নামক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের ৪৫ শতক জমি। এদিকে, দীর্ঘদিন পর স্কুলের জমি উদ্ধার হওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় সর্বস্তরের মানুষ উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ জমি উদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সংবাদমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানান।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকাল দশটা থেকে বিকেল দুইটা পর্যন্ত উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়জুর রহমানের নেতৃত্বে এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনার সময় পুলিশ প্রশাসন, স্কুলের শিক্ষার্থীসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সাধারণ জনগণ উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয়দের মতে, স্বাধীনতার পর থেকে নান্দাইল ও হোসেনপুর উপজেলার কতিপয় ব্যক্তি বিদ্যালয়ের নিজস্ব জমিতে সাবেক ম্যানেজিং কমিটির যোগসাজশে এই ভূমি দখলে নিয়ে নিজেদের মত ভোগ দখল করে দোকান থেকে ভাড়া বাবদ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। দোকান থেকে অবৈধ দখলদাররা ভাড়া আদায় করলেও বিদ্যালয় ফান্ডে তারা কোন টাকা জমা দিত না। বিষয়টি নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরুণ কৃষ্ণ পাল অবহিত হয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়েজুর রহমানের মাধ্যমে তদন্ত করে বিষয়টি নিশ্চিত হন। পরে অবৈধ ঘর দখল ছেড়ে দেবার জন্য নোটিশ দেওয়া হলে কিছু ব্যক্তি নিজেরা ঘর সরিয়ে নিয়ে যায় এবং বেশিরভাগ ব্যবসায়ী দখলদার বিষয়টির প্রতি কোন গুরুত্ব দেয়নি। এরপর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরুণ কৃষ্ণ পালের নির্দেশে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়েজুর রহমান নিজে ঘটনাস্থল উপস্থিত হয়ে কয়েক ঘণ্টা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের ৪৫ শতাংশ ভূমি বিদ্যালয়ের দখলে নিয়ে আসেন।
উচ্ছেদ অভিযান প্রসঙ্গে বাকচান্দা আব্দুস সামাদ একাডেমির প্রধান শিক্ষক মো. সুলতান উদ্দিন বলেন, আমি ২০১২ সালে বিদ্যালয়ে যোগদান করে ৩৫ বছর ধরে প্রভাবশালীদের দখলে থাকা বিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় উদ্ধার জন্য দৌড়ঝাঁপ করেও উদ্ধার করতে পারিনি। গত কিছুদিন আগে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও অরুণ কৃষ্ণ পালের কাছে অভিযোগ দিলে উনি আশ্বস্ত করে। এবং এরই ধারাবাহিকতায় আজ স্থানীয় প্রভাবশালীদের হাত থেকে বিদ্যালয়ের জায়গা উদ্ধার করে দেন। আমি এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ সহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও অরুণ কৃষ্ণ পালসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
এবিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়জুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল বাকচান্দা আব্দুস সামাদ অ্যাকাডেমির স্কুলের জায়গায় দখল করে স্কুল কর্তৃপক্ষকে নামমাত্র কিছু টাকা দিয়ে বাকি টাকা নিজেরাই হরিলুট করে আসছিলো। বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অবগত করলে আজ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরুণ কৃষ্ণ পাল স্যারের নির্দেশনা নান্দাইল মডেল থানায় পুলিশ প্রশাসন সহযোগিতায় স্কুলের জায়গায় দখল করে গড়ে ওঠা ২৬টি দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে।
এর আগে গত ১৪ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) “নিরুপায় কর্তৃপক্ষ; স্কুলের জায়গা দখল করে প্রভাবশালীদের হরিলুট” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক সবুজ বাংলা। প্রতিবেদনে উঠে আসে, আব্দুস সামাদ একাডেমি নামক একটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমিতে অন্তত ২৬টি দোকান নির্মাণ করে দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি ভাড়া উঠিয়ে আসছিলো পার্শ্ববর্তী জেলা কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর এলাকার কিছু ব্যক্তি ও পরিবার। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রভাব-প্রতিপত্তির মুখে স্কুল কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয়রা মুখ খুলতে না পারায় বছরে অন্তত ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার তহবিল থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলো স্কুলটি। এদিকে ভয়ে নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক কতিপয় শিক্ষক এনিয়ে একাধিকবার অভিযোগ জানালেও প্রভাবশালী মহলের মামলা-হামলার ভয়ে কেউই মুখফুটে কিছু বলতে পারছিলো না। এর আগে কয়েকজন কথা বলতে চাইলেও স্থানীয় ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের মাধ্যমে এলাকা ছাড়ার হুমকি থেকে শুরু করে দুনিয়া ছাড়া করার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ তাদের।


























