নদীর স্নিগ্ধ শব্দ প্রকৃতির এক অনন্য উপহার। জলপ্রবাহের মৃদু কলকল, পাখিদের মধুর কাকলি এবং বাতাসে দুলতে থাকা গাছের পাতার সুর আমাদের মনে প্রশান্তি এনে দেয়। এই প্রাকৃতিক রূপ ও সুর আমাদের মানসিক চাপ কমিয়ে মনকে শান্ত ও প্রফুল্ল করে। নদীর নীল জলরাশি, চারপাশের সবুজ গাছপালা এবং নীল আকাশ মিলে সৃষ্টি করে এক অপার্থিব সৌন্দর্য, যা আমাদের মনে নতুন উদ্যম জাগিয়ে তোলে। প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্যের মাঝে হারিয়ে গেলে আমরা যেন মানসিকভাবে আরও সতেজ এবং সৃষ্টিশীল হয়ে উঠি। সবুজ বাংলা এক্সপ্লোরার্স এমন একটি দিনের ট্যুরের আয়োজন করে, যেখানে একই দিনে আপনি নদী এবং বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে খুব কাছ থেকে উপভোগ করার সুযোগ পাবেন। এই ট্যুরটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে শহরের ব্যস্ত জীবন থেকে মুক্তি নিয়ে প্রকৃতির কোলে একটি শান্তিময় দিন কাটানো যায়। নদীর স্নিগ্ধতা, সবুজের মায়া এবং প্রকৃতির নির্মলতা আপনার মনকে সতেজ করে তুলবে। নদীর স্বচ্ছ পানির ধারায় নৌকাভ্রমণ, আশপাশের গ্রামীণ পরিবেশ, সবুজ মাঠ ও গাছপালা, আর পাখির কাকলি একসঙ্গে আপনাকে প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকার এক অসাধারণ সুযোগ এনে দেবে। সবুজ বাংলা এক্সপ্লোরার্স নিশ্চিত করে যে, আপনি ফিরে আসবেন এক প্রশান্ত মন এবং দারুণ স্মৃতির ঝুলিভর্তি নিয়ে। এটি কেবল একটি ভ্রমণ নয়, বরং প্রকৃতির সঙ্গে আত্মার এক সুন্দর সংযোগের সুযোগ।

তাহলে চলুন আপনাদের সঙ্গে আমার কাটানো সবুজ বাংলা এক্সপ্লোরার্সের একটি অসাধারণ দিনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। আমাদের ভ্রমণ শুরু হয় সকাল ৮টায় মতিঝিল থেকে। আমরা একটি দৈনিক সবুজ বাংলা গ্রুপের সঙ্গে যোগ দিই। আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল মেঘনা ঘাট। সেখানে পৌঁছানোর পর, আমরা সবুজ বাংলা এক্সপ্লোরার্সের সোনার তরীতে করে আমাদের গন্তব্য মায়াদ্বীপের দিকে রওনা হই। তরীতে ওঠার পরপরই আমাদের সকালের নাস্তার ব্যবস্থা করা হয়, যা সত্যিই মনোমুগ্ধকর ছিল। নাস্তায় ভুনা খিচুড়ি, ডিম ভাজি এবং আচার পরিবেশন করা হয়। নদীর মাঝবরাবর অবস্থায়, এমন পরিবেশে ভুনা খিচুড়ি দিয়ে সকালের নাস্তা সত্যিই এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এভাবে নদীর মাঝবরাবর অবস্থায় সকালে নাস্তা তাও আবার ভুনা খিচুরির সাথে ডিম ভাজি ভাবতেই কেমন লাগছে তাই না? হ্যা এটা অনেকের মতোই আমারও জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতাই ছিল। নদীর স্নিগ্ধ বাতাস, পানির শব্দ, আর সঙ্গে এমন মজার খাবার সব মিলিয়ে দিনটি যেন এক নতুন স্বাদে রঙিন হয়ে উঠেছিল সেই সকাল।
সকালের নাস্তা শেষ করে আমরা সোনার তীরের ছাদে উঠে যাই শীতের সকালের মিষ্টি রোদের উষ্ণতাকে গায়ে মাখতে। সেখানে সময় কাটানোর জন্য পেয়ে যাই উনো কার্ড। সবাই মিলে উনো খেলায় মেতে উঠি এবং শীতের রোদ উপভোগ করার মজাটাও দ্বিগুণ হয়ে যায়।

কিছুক্ষণ পরই আমরা পৌঁছে যাই আমাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য, সেই সবুজের ছায়ায় মোড়ানো মনোমুগ্ধকর মায়াদ্বীপে। আহা, প্রকৃতির কী অপার মায়া সেখানে! মায়াদ্বীপে পৌঁছে আমরা পুরো দ্বীপটি ঘুরে দেখি। সেখানে আরও একটি ভ্রমণকারী দল ছিল। তাদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, এই জায়গার মায়া সত্যিই উপেক্ষা করা অসম্ভব। পরে আমরা সবাই মিলে আমাদের সবুজ বাংলা পরিবারের পক্ষ থেকে দ্বীপটিকে পরিষ্কার ও সুন্দর রাখার জন্য আহ্বান জানাই।
মায়াদ্বীপে ভ্রমণের সময় আপনারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষার যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এ ধরনের প্রচেষ্টা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পর্যটনকেন্দ্রিক স্থানগুলোতে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। আপনাদের এই উদ্যোগ অন্য ভ্রমণকারীদের জন্য উদাহরণস্বরূপ এবং পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

মায়াদ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সবুজ প্রকৃতি ভ্রমণপিপাসুদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি করে। এমন স্থানে ভ্রমণের সময় পরিবেশের প্রতি যত্নশীল হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের মতো ভ্রমণকারীদের সচেতনতা ও উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্য রক্ষা করতে পারি। আমরা সেখানে বিভিন্ন স্থানে প্ল্যাকার্ড লাগিয়ে এ আহ্বান জানাই “মায়াদ্বীপ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা আমাদেরই দায়িত্ব।” এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা সবাইকে সচেতন করে তোলার চেষ্টা করি।

দ্বীপটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং এর মায়ায় আবেগে ভেসে যাওয়ার মতো একটি দিন কাটানোর পর, আমরা ঘোরাঘুরি শেষ করে আবারও সোনার তরীতে ফিরে যাই। সেখান থেকে শুরু হয় আমাদের দুপুরের খাবারের আয়োজন। সবুজ বাংলা এক্সপ্লোরাসের পক্ষ থেকে দুপুরের খাবারের যে ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। শীতের দুপুরে নদীর মাঝে এমন খাবারের আয়োজন নিঃসন্দেহে আমাদের মুগ্ধ করেছে। গরম ভাতের সাথে সুস্বাদু হাসের মাংস, ভর্তা এবং ভাজি সবকিছুই যেন আমাদের দিনটিকে আরও আনন্দময় করে তুলেছিল। খাবারের প্রতিটি আইটেমই তাজা ও মনোমুগ্ধকর ছিল, যা প্রমাণ করে যে আয়োজকরা আমাদের আরাম এবং সন্তুষ্টির প্রতি কতটা মনোযোগী। নদীর বুকে এমন পরিবেশে দুপুরের খাবার খাওয়ার অভিজ্ঞতা একেবারেই অনন্য এবং চিরস্মরণীয়।

সর্বশেষে, আমাদের দৈনিক সবুজ বাংলার ট্যুরে একটি বিশেষ চমক যুক্ত করা হয়, যা পুরো দিনটিকে আরও আনন্দময় এবং স্মরণীয় করে তোলে। আমাদের সম্মানিত সম্পাদক মহোদয়, জনাব গাজী মো. শফিকুল হক একটি র্যাফেল ড্রয়ের আয়োজন করেন। এই সারপ্রাইজ আয়োজন আমাদের সহকর্মীদের জন্য ছিল এক দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। র্যাফেল ড্রয়ের ঘোষণা শোনার পর সবার মধ্যে উত্তেজনা ও আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। ট্যুরের ক্লান্তি ভুলে গিয়ে সবাই উৎসাহিত হয়ে অংশ নেয় এই আয়োজনে। বিভিন্ন মজার পুরস্কার ছিল এই র্যাফেল ড্রয়ের অংশ, যা সহকর্মীদের হাসি ও আনন্দে ভরিয়ে দেয়। এই আয়োজনটি শুধু আমাদের বিনোদনই বাড়ায়নি, বরং সহকর্মীদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করেছে। এমন একটি উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবিদার, যা আমাদের দিনটিকে আরও রঙিন করে তুলেছে। সব মিলিয়ে মায়াদ্বীপ ভ্রমণ আমাদের জন্য একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।


























