০৮:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রাম অফিস-আদালতে ছুটির আমেজ কাটেনি, হাসপাতালে চাপ

নগরবাসীর কর্মমুখর জীবন ফের শুরু হয়েছে। টানা ৯ দিনের ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে আজ (৬ এপ্রিল) খুলেছে সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত সকল প্রতিষ্ঠান। তবে ছুটির আমেজ এখনো কাটেনি অফিস-আদালতে। প্রথমদিনের অফিস অনেকটাই যেন নিষ্প্রাণ। কারও মুখে ঈদের গল্প, কেউবা ফিরেই নেমে পড়েছেন কাজের চাপে।তবে বেশিরভাগ সরকারি দপ্তরে কর্মীদের সরব উপস্থিতি দেখা গেলেও, কাজ শুরু হয়েছে ধীরে ধীরে। যারা নির্ধারিত সময়ে এসেছেন তাদের মধ্যে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা গেছে। আবার অনেককেই গ্রাম থেকে ছুটি কাটিয়ে সরাসরি অফিসে ফিরতে দেখা গেছে।রবিবার (৬ এপ্রিল) সকাল ৯টা থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়, আদালত প্রাঙ্গণ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক), চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অফিস ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
প্রথম কার্যদিবসে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতির হার ছিল কিছুটা কম। এদিকে, অফিস খোলার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মেতে ছিলো সৌজন্য বৈঠকে। তবে দীর্ঘ ছুটি কাটানোর পরও সবার চেহারায় ছিল বিষাদের ছায়া। প্রিয়জনকে দূরে রেখে আসার কষ্ট ওঠেছে ভেসে।কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আজ (রবিবার) থেকে অফিস শুরু হয়েছে। তবে এখনো কাজের চাপ নেই। আরো কয়েকদিন হয়তো এভাবে চলবে। কিছুদিন পর আস্তে আস্তে কাজের চাপ বাড়বে।এদিকে, চসিক মেয়র জরুরি কাজে ঢাকায় অবস্থান করায় প্রথম দিনে তার দেখা মেলেনি। তাই ঈদ পরবর্তীতে সব ডিপার্টমেন্ট প্রধানদের সঙ্গে কাজের করণীয় নিয়ে যে মিটিং হওয়ার কথা তা হয়নি।চসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আজিজ আহমেদ বলেন, ‘অফিস শুরু হয়েছে। সবাই যথারীতি অফিস এসেছেন। ঈদের পরে অফিসে প্রথম কার্যদিবসে সহকর্মীদের ঈদ কেমন কাটলো তা নিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে। মেয়র স্যার ঢাকায় অবস্থান করায় তিনি আসেননি। তাই স্বাভাবিক নিয়মে অফিস শেষ করে বাসায় ফিরবেন কর্মকর্তারা। আজ সব ডিপার্টমেন্ট প্রধানদের নিয়ে মিটিং হওয়ার কথা ছিল। মেয়র স্যার এলেই সেটি হবে।’বেশিরভাগই উপস্থিত ওয়াসায় চট্টগ্রাম ওয়াসা কার্যালয়ের রাজস্ব বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘লম্বা ছুটি শেষে কাজে ফিরলাম। এইবার আমরা অনেকদিনের ছুটি কাটিয়েছি। যদিও আমাদের প্রতিষ্ঠান সেবা সংস্থা। এজন্য সার্বক্ষণিক অনলাইনে থাকলেও অনেক ফাইল ওয়ার্কের কাজ জমে গেছে। আজ মূলত অফিসে ফাইল জমা, ছুটি শেষে রিপোর্টিংÑএই টাইপের কাজই করা হবে। স্বাভাবিক সময়ের মতো পুরো গতিতে সব কিছু চালু হতে আরও একদিন লাগবে।’হিসাব বিভাগের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেকদিন আমরা ছুটি পেয়েছি। অন্যান্য সময় মানুষজন ছুটি কম পায়, তাই অফিস খুললেও দেখা যেতো অনেকে প্রথম দিন অফিস করতে পারতো না। কিন্তু এবার আগে পরে শুক্র-শনিবারসহ ছুটি পাওয়ায় যারা দূরে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে গেছেন তারাও বন্ধ শেষ হওয়ার আগেই চলে আসতে পেরেছেন। বলতে গেলে সবাই অফিস করছেন। প্রথমদিন, তাই ঈদের কুশল বিনিময় চলছে। কাল-পরশুর মধ্যে আগের মতো ব্যস্ততা শুরু হয়ে যাবে।’আদালতপাড়া সরগরম হয়নিদীর্ঘ ছুটি শেষে চট্টগ্রাম আদালত খুললেও তেমন জমে ওঠেনি প্রথম কার্যদিবস। চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ, জেলা ও দায়রা জজ, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও বিভিন্ন ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবসে বেশিরভাগ বিচারকই আসেননি। আইনজীবীদের উপস্থিতি অনেকাংশেই কম। তবে মোটামুটি ভিড় আছে বিচারপ্রার্থীদের।চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বলেন, ‘ঈদের ছুটির আমেজ এখনো আছে। আইনজীবীদের অনেকেই কোর্টে আসেননি। অনেকেই গ্রামে রয়ে গেছেন। বিচারকরা অবশ্য অনেকেই চলে এসেছেন। বিচারপ্রার্থীদের উপস্থিতি আছে।’অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান বলেন, ‘দীর্ঘ ছুটির ফলে কর্মচাঞ্চল্যতা নেই আদালতপাড়ায়। আইনজীবীদের উপস্থিতি অনেক কম। বেশিরভাগ বিচারকই এখনো ছুটিতে আছেন। অনেকে দূর-দূরান্তে বেড়াতে গেছেন। হয়তো কাল-পরশু থেকে পুরোদমে সরগরম হবে আদালত প্রাঙ্গণ। গরম বেড়ে যাওয়ায় আজ থেকে পোশাকের শিথিলতা দেওয়া হয়েছে। কোর্ট গাউন ছাড়া আইনজীবীরা টাই এবং সাদা শার্ট পড়বেন।’আইনজীবী নাজমুল হোসেন বলেন, ‘অনেক বিচারক না থাকায় আজ সেসব কোর্ট বসেনি। আবার বাদীপক্ষের অনেকেই অনুপস্থিত থাকায় সময় বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। আজ সকালে একটি মামলার শুনানি করেছি। দুপুরে আরেকটি মামলার শুনানি করবো।’ছুটির মধ্যেও সচল ছিল রেলওয়েঈদের দীর্ঘ ছুটির মধ্যেও বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি বিভাগ সচল ছিল। ফলে দপ্তরগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সাধারণ অন্যান্য কর্মদিবসের মতোই কাটাচ্ছেন। তবে কিছু বিভাগে ছুটির আমেজ বইছে এখনো।বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ছুটি শেষ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে ফিরেছেন। দীর্ঘ ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবস হওয়ায় কাজকর্ম অনেকটা ঢিলেঢালা চলছে। জমানো কাজগুলো শেষ করার জন্য কাজে মন দিয়েছেন কেউ কেউ। তাছাড়া ঈদ যাত্রায় রেলের যাত্রী সেবা অব্যাহত ছিলো এবং নিরাপদে যাত্রীসেবা দেয়া সম্ভব হয়েছে বলেও জানান রেলওয়ে কর্মকর্তারা।কর্মকর্তারা জানান, ইতোমধ্যে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে শনিবার সিআরবি এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়েছেন। ধীরে ধীরে কর্মচাঞ্চল্য ফিরতে শুরু করেছে। তবে ছুটি থাকায় কাজ জমে গেছে, সেগুলো নিয়েই অনেকটা ব্যস্ত সময় পার করতে হবে তাদের।রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কন্ট্রোল অফিস ঈদের ছুটিতেও ২৪ ঘণ্টা খোলা ছিল। তাদের কাছে ঈদের ছুটি নিয়ে জানতে চাইতে কর্মরতরা জানান,ঈদেরসময় ছুটির পরিবর্তে তাদের কর্মব্যস্ততা আরও বেড়ে যায়। তবে সবাইকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার মাঝেই শান্তি পান তারা। কর্মস্থলেই তাদের ঈদ উদযাপন করা হয়েছে।কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে ঈদের ছুটি শেষে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে যোগ দিয়েছেন। ফিরেছে স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্য। কেজিসিডিএলের উপমহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. বেলাল উদ্দিন বলেন, ছুটি শেষ করে স্বাভাবিকভাবেই সবাই আজ কাজে যোগ দিয়েছেন। কাজকর্মও শুরু হয়েছে। রুটিন ওয়ার্কের পাশাপাশি যার যার সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাজগুলোও করা হচ্ছে। আর নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহ করতে ঈদের ছুটিতেও কাজ করেছে কেজিডিসিএল’র কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতালসহ সরকারি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলোতে ঈদের ছুটিতে জরুরি সেবা চালু থাকলেও রবিবার থেকে বহির্বিভাগে রোগীর চাপ বেড়েছে। এ সময় রোগীদের অনেকেই সেবা নিতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন।চমেক হাসপাতালের এক সিনিয়র স্টাফ নার্স বলেন, ‘ঈদের পরপরই প্রচুর রোগী আসেন চেকআপের জন্য, কিন্তু অনেকে এখনো ছুটিতে থাকায় চাপ বেশি পড়েছে।’একই বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মোটামুটি সবাই অফিসে এসেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত থাকলেও মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। আজকে মূলত রিপোর্টিং ও মিটিং হয়েছে, ফিল্ড ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কাজ শুরু হবে সোমবার থেকে।’শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্কুল-কলেজগুলো এখনো খোলেনি। ফলে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মচাঞ্চল্য দেখা যায়নি। যদিও আগামী ১০ এপ্রিল থেকে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তাই বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষকদের উপস্থিত থাকতে হয়েছে। যদিও রমজান ও ঈদের ছুটি শেষে আগামী মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) থেকে স্কুল-কলেজগুলো পুনরায় খুলবে।চাঁদ দেখার ওপরে নির্ভর করে গত ৩১ মার্চ দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। তবে সরকারি ছুটির তালিকা আগে থেকেই নির্ধারণ করা ছিল। এর আগে উপদেষ্টা পরিষদ গত বছরের ১৭ অক্টোবর ঈদুল ফিতরের দিনের ছুটি অনুমোদন করেছিল। এরপর ২১ অক্টোবর ছুটির বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এ ছুটি ছিল ৩ দিন। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ৩১ মার্চ সোমবার ঈদুল ফিতরের দিন সাধারণ ছুটি। ঈদের আগের দুই দিন ২৯ ও ৩০ মার্চ এবং ঈদের পরের দুই দিন ১ ও ২ এপ্রিল মিলিয়ে সরকারি ছুটি। আর ৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ছিল নির্বাহী আদেশে ছুটি। সঙ্গে দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি ৪ ও ৫ এপ্রিল। সব মিলিয়ে এবার কর্মজীবিরা টানা নয় দিনের ছুটি পেয়েছেন। যা শনিবার (৫ এপ্রিল) শেষ হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

২৫ ডিসেম্বর শাহজালালে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে যাত্রীদের পৌঁছানোর অনুরোধ

চট্টগ্রাম অফিস-আদালতে ছুটির আমেজ কাটেনি, হাসপাতালে চাপ

আপডেট সময় : ০৫:৫৯:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫

নগরবাসীর কর্মমুখর জীবন ফের শুরু হয়েছে। টানা ৯ দিনের ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে আজ (৬ এপ্রিল) খুলেছে সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত সকল প্রতিষ্ঠান। তবে ছুটির আমেজ এখনো কাটেনি অফিস-আদালতে। প্রথমদিনের অফিস অনেকটাই যেন নিষ্প্রাণ। কারও মুখে ঈদের গল্প, কেউবা ফিরেই নেমে পড়েছেন কাজের চাপে।তবে বেশিরভাগ সরকারি দপ্তরে কর্মীদের সরব উপস্থিতি দেখা গেলেও, কাজ শুরু হয়েছে ধীরে ধীরে। যারা নির্ধারিত সময়ে এসেছেন তাদের মধ্যে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা গেছে। আবার অনেককেই গ্রাম থেকে ছুটি কাটিয়ে সরাসরি অফিসে ফিরতে দেখা গেছে।রবিবার (৬ এপ্রিল) সকাল ৯টা থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়, আদালত প্রাঙ্গণ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক), চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অফিস ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
প্রথম কার্যদিবসে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতির হার ছিল কিছুটা কম। এদিকে, অফিস খোলার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মেতে ছিলো সৌজন্য বৈঠকে। তবে দীর্ঘ ছুটি কাটানোর পরও সবার চেহারায় ছিল বিষাদের ছায়া। প্রিয়জনকে দূরে রেখে আসার কষ্ট ওঠেছে ভেসে।কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আজ (রবিবার) থেকে অফিস শুরু হয়েছে। তবে এখনো কাজের চাপ নেই। আরো কয়েকদিন হয়তো এভাবে চলবে। কিছুদিন পর আস্তে আস্তে কাজের চাপ বাড়বে।এদিকে, চসিক মেয়র জরুরি কাজে ঢাকায় অবস্থান করায় প্রথম দিনে তার দেখা মেলেনি। তাই ঈদ পরবর্তীতে সব ডিপার্টমেন্ট প্রধানদের সঙ্গে কাজের করণীয় নিয়ে যে মিটিং হওয়ার কথা তা হয়নি।চসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আজিজ আহমেদ বলেন, ‘অফিস শুরু হয়েছে। সবাই যথারীতি অফিস এসেছেন। ঈদের পরে অফিসে প্রথম কার্যদিবসে সহকর্মীদের ঈদ কেমন কাটলো তা নিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে। মেয়র স্যার ঢাকায় অবস্থান করায় তিনি আসেননি। তাই স্বাভাবিক নিয়মে অফিস শেষ করে বাসায় ফিরবেন কর্মকর্তারা। আজ সব ডিপার্টমেন্ট প্রধানদের নিয়ে মিটিং হওয়ার কথা ছিল। মেয়র স্যার এলেই সেটি হবে।’বেশিরভাগই উপস্থিত ওয়াসায় চট্টগ্রাম ওয়াসা কার্যালয়ের রাজস্ব বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘লম্বা ছুটি শেষে কাজে ফিরলাম। এইবার আমরা অনেকদিনের ছুটি কাটিয়েছি। যদিও আমাদের প্রতিষ্ঠান সেবা সংস্থা। এজন্য সার্বক্ষণিক অনলাইনে থাকলেও অনেক ফাইল ওয়ার্কের কাজ জমে গেছে। আজ মূলত অফিসে ফাইল জমা, ছুটি শেষে রিপোর্টিংÑএই টাইপের কাজই করা হবে। স্বাভাবিক সময়ের মতো পুরো গতিতে সব কিছু চালু হতে আরও একদিন লাগবে।’হিসাব বিভাগের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেকদিন আমরা ছুটি পেয়েছি। অন্যান্য সময় মানুষজন ছুটি কম পায়, তাই অফিস খুললেও দেখা যেতো অনেকে প্রথম দিন অফিস করতে পারতো না। কিন্তু এবার আগে পরে শুক্র-শনিবারসহ ছুটি পাওয়ায় যারা দূরে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে গেছেন তারাও বন্ধ শেষ হওয়ার আগেই চলে আসতে পেরেছেন। বলতে গেলে সবাই অফিস করছেন। প্রথমদিন, তাই ঈদের কুশল বিনিময় চলছে। কাল-পরশুর মধ্যে আগের মতো ব্যস্ততা শুরু হয়ে যাবে।’আদালতপাড়া সরগরম হয়নিদীর্ঘ ছুটি শেষে চট্টগ্রাম আদালত খুললেও তেমন জমে ওঠেনি প্রথম কার্যদিবস। চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ, জেলা ও দায়রা জজ, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও বিভিন্ন ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবসে বেশিরভাগ বিচারকই আসেননি। আইনজীবীদের উপস্থিতি অনেকাংশেই কম। তবে মোটামুটি ভিড় আছে বিচারপ্রার্থীদের।চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বলেন, ‘ঈদের ছুটির আমেজ এখনো আছে। আইনজীবীদের অনেকেই কোর্টে আসেননি। অনেকেই গ্রামে রয়ে গেছেন। বিচারকরা অবশ্য অনেকেই চলে এসেছেন। বিচারপ্রার্থীদের উপস্থিতি আছে।’অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান বলেন, ‘দীর্ঘ ছুটির ফলে কর্মচাঞ্চল্যতা নেই আদালতপাড়ায়। আইনজীবীদের উপস্থিতি অনেক কম। বেশিরভাগ বিচারকই এখনো ছুটিতে আছেন। অনেকে দূর-দূরান্তে বেড়াতে গেছেন। হয়তো কাল-পরশু থেকে পুরোদমে সরগরম হবে আদালত প্রাঙ্গণ। গরম বেড়ে যাওয়ায় আজ থেকে পোশাকের শিথিলতা দেওয়া হয়েছে। কোর্ট গাউন ছাড়া আইনজীবীরা টাই এবং সাদা শার্ট পড়বেন।’আইনজীবী নাজমুল হোসেন বলেন, ‘অনেক বিচারক না থাকায় আজ সেসব কোর্ট বসেনি। আবার বাদীপক্ষের অনেকেই অনুপস্থিত থাকায় সময় বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। আজ সকালে একটি মামলার শুনানি করেছি। দুপুরে আরেকটি মামলার শুনানি করবো।’ছুটির মধ্যেও সচল ছিল রেলওয়েঈদের দীর্ঘ ছুটির মধ্যেও বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি বিভাগ সচল ছিল। ফলে দপ্তরগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সাধারণ অন্যান্য কর্মদিবসের মতোই কাটাচ্ছেন। তবে কিছু বিভাগে ছুটির আমেজ বইছে এখনো।বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ছুটি শেষ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে ফিরেছেন। দীর্ঘ ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবস হওয়ায় কাজকর্ম অনেকটা ঢিলেঢালা চলছে। জমানো কাজগুলো শেষ করার জন্য কাজে মন দিয়েছেন কেউ কেউ। তাছাড়া ঈদ যাত্রায় রেলের যাত্রী সেবা অব্যাহত ছিলো এবং নিরাপদে যাত্রীসেবা দেয়া সম্ভব হয়েছে বলেও জানান রেলওয়ে কর্মকর্তারা।কর্মকর্তারা জানান, ইতোমধ্যে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে শনিবার সিআরবি এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়েছেন। ধীরে ধীরে কর্মচাঞ্চল্য ফিরতে শুরু করেছে। তবে ছুটি থাকায় কাজ জমে গেছে, সেগুলো নিয়েই অনেকটা ব্যস্ত সময় পার করতে হবে তাদের।রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কন্ট্রোল অফিস ঈদের ছুটিতেও ২৪ ঘণ্টা খোলা ছিল। তাদের কাছে ঈদের ছুটি নিয়ে জানতে চাইতে কর্মরতরা জানান,ঈদেরসময় ছুটির পরিবর্তে তাদের কর্মব্যস্ততা আরও বেড়ে যায়। তবে সবাইকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার মাঝেই শান্তি পান তারা। কর্মস্থলেই তাদের ঈদ উদযাপন করা হয়েছে।কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে ঈদের ছুটি শেষে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে যোগ দিয়েছেন। ফিরেছে স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্য। কেজিসিডিএলের উপমহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. বেলাল উদ্দিন বলেন, ছুটি শেষ করে স্বাভাবিকভাবেই সবাই আজ কাজে যোগ দিয়েছেন। কাজকর্মও শুরু হয়েছে। রুটিন ওয়ার্কের পাশাপাশি যার যার সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাজগুলোও করা হচ্ছে। আর নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহ করতে ঈদের ছুটিতেও কাজ করেছে কেজিডিসিএল’র কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতালসহ সরকারি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলোতে ঈদের ছুটিতে জরুরি সেবা চালু থাকলেও রবিবার থেকে বহির্বিভাগে রোগীর চাপ বেড়েছে। এ সময় রোগীদের অনেকেই সেবা নিতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন।চমেক হাসপাতালের এক সিনিয়র স্টাফ নার্স বলেন, ‘ঈদের পরপরই প্রচুর রোগী আসেন চেকআপের জন্য, কিন্তু অনেকে এখনো ছুটিতে থাকায় চাপ বেশি পড়েছে।’একই বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মোটামুটি সবাই অফিসে এসেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত থাকলেও মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। আজকে মূলত রিপোর্টিং ও মিটিং হয়েছে, ফিল্ড ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কাজ শুরু হবে সোমবার থেকে।’শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্কুল-কলেজগুলো এখনো খোলেনি। ফলে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মচাঞ্চল্য দেখা যায়নি। যদিও আগামী ১০ এপ্রিল থেকে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তাই বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষকদের উপস্থিত থাকতে হয়েছে। যদিও রমজান ও ঈদের ছুটি শেষে আগামী মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) থেকে স্কুল-কলেজগুলো পুনরায় খুলবে।চাঁদ দেখার ওপরে নির্ভর করে গত ৩১ মার্চ দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। তবে সরকারি ছুটির তালিকা আগে থেকেই নির্ধারণ করা ছিল। এর আগে উপদেষ্টা পরিষদ গত বছরের ১৭ অক্টোবর ঈদুল ফিতরের দিনের ছুটি অনুমোদন করেছিল। এরপর ২১ অক্টোবর ছুটির বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এ ছুটি ছিল ৩ দিন। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ৩১ মার্চ সোমবার ঈদুল ফিতরের দিন সাধারণ ছুটি। ঈদের আগের দুই দিন ২৯ ও ৩০ মার্চ এবং ঈদের পরের দুই দিন ১ ও ২ এপ্রিল মিলিয়ে সরকারি ছুটি। আর ৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ছিল নির্বাহী আদেশে ছুটি। সঙ্গে দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি ৪ ও ৫ এপ্রিল। সব মিলিয়ে এবার কর্মজীবিরা টানা নয় দিনের ছুটি পেয়েছেন। যা শনিবার (৫ এপ্রিল) শেষ হয়েছে।