- কেএনএফের ইউনিফর্ম তৈরিতে গ্রেপ্তার ৮ জন রিমান্ডে
রাজধানীর উত্তরায় মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নগদের ডিস্ট্রিবিউটরের এক প্রতিনিধির কাছ থেকে র্যাব পরিচয়ে ১ কোটি ৮ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত সার্জেন্ট জালাল উদ্দিন ওরফে রবিউল (৪৩) ও পুলিশের চাকরিচ্যুত গোলাম মোস্তফা ওরফে শাহীন পুলিশসহ (৫৫) পাঁচ আসামির ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। অন্য আসামিরা হলেন- মো. ইমদাদুল শরীফ ওরফে নয়ন (২৮), সাইফুল ইসলাম শিপন (৩৫) ও মো. হাসান (২৮)। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশীতা ইসলামের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এছাড়া পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কেএনএফের ইউনিফর্ম তৈরিতে গ্রেপ্তার ৮ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এদিন আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার উপ-পরিদর্শক সুমন মিয়া। রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। শুনানি শেষে বিচারক প্রত্যেকের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের উপ-পরিদর্শক আতিকুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
এর আগে, গত বুধবার রাত ১টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রিমান্ড আবেদনে, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্য দুই জনকে ডাকাত দলের দলনেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
জানা গেছে, গত ১৪ জুন সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডে নগদের স্থানীয় ডিস্ট্রিবিউটর অফিসের এমডি আব্দুল খালেক নয়নের বাসা থেকে দুটি ব্যাগে ভরে দুটি মোটরসাইকেলে ১ কোটি ২২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা নিয়ে রওনা দেন চার জন ব্যক্তি। বাসার সামনে বাম পাশে পৌঁছাতেই আগে থেকে অবস্থান নেওয়া কালো রঙের হাইস গাড়ি মোটরসাইকেল দুটির গতিরোধ করে। পরে র্যাব পরিচয়ে ও র্যাবের পোশাক পরা ৮ থেকে ১০ জন অস্ত্রের মুখে ওই চার জনকে জিম্মি করে ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ভুক্তভোগী ব্যক্তি মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। এ সময় একটি কালো মাইক্রোবাস মোটরসাইকেলটির গতিরোধ করে। এরপর র্যাবের পোশাক পরা কয়েকজন ওই মাইক্রোবাস থেকে বেরিয়ে এসে ভুক্তভোগীকে ধরার চেষ্টা করে। ভুক্তভোগী ব্যক্তি দৌড় দিলে র্যাবের পোশাক পরা ব্যক্তিরা তাকে ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে তারা তাকে ধরে ফেলে এবং মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে চলে যায়। এ ঘটনায় মো. আব্দুর রহমান গত ১৪ তারিখ উত্তরা পশ্চিম থানায় একটা মামলা করেন।
এদিকে, বান্দরবানের পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ইউনিফর্ম তৈরি এবং কাপড় সরবরাহের অভিযোগে চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার আট আসামির ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আসামি হলেন- তারিকুল ইসলাম, তৌহিদুল ইসলাম, আতিকুর রহমান, জামালুল ইসলাম, কামরুজ্জামান, সাহেদুল ইসলাম, গোলাম আজম ও নিয়াজ মোরশেদ। গত বুধবার (১৮ জুন) বায়েজিদ থানার এক মামলায় শুনানি শেষে মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মোস্তফা এ আদেশ দেন। এর আগে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গ্রেপ্তার ৮ আসামির ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, গত ৩ জুন পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তারিকুল ইসলাম, তৌহিদুল ইসলাম ও আতিকুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রথম দফায় পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন আদালত।
গত ২ জুন রাতে নগরের চান্দগাঁওয়ের কালুরঘাট এলাকার কারখানা থেকে চার জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- তারিকুল ইসলাম, তৌহিদুল ইসলাম, আতিকুর রহমান ও জামালুল ইসলাম। চার আসামিকে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এর আগে, গত ২৭ মে রাতে নগরীর পাহাড়তলী থানার নুর ফ্যাশন অ্যান্ড গার্মেন্টস নামের কারখানা থেকে কেএনএফের ১৫ হাজার ইউনিফর্ম উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে বায়েজিদ বোস্তামী থানার এক পুলিশ সদস্য বাদি হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পাহাড়তলী থানায় মামলা করেন।
তারও আগে, গত ২৬ মে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকায় রিংভো অ্যাপারেলস নামের পোশাক কারখানার গুদাম থেকে ১১ হাজার ৭৮৫টি এবং ১৭ মে নয়ারহাটের কারখানা এবং পাশের মুজাফফরনগর আবাসিক এলাকার ওই কারখানা থেকে কেএনএফের ২০ হাজার ৩০০ সেট ইউনিফর্ম জব্দ করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ ঘটনায় ওই কারখানা মালিক সাহেদুল ইসলাম, ইউনিফর্ম তৈরির দুই ফরমাশদাতা গোলাম আজম এবং নিয়াজ হায়দারকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ঘটনায় বায়েজিদ থানায় একই আইনে আরেক মামলা হয়। ওই মামলায় উল্লেখ করা হয়, নিষিদ্ধ সংগঠন কেএনএফের সদস্যরা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান জেলার বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র অবস্থান নিয়ে ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়, হত্যা, অপহরণ, গুমসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে। গ্রেপ্তার ও অজ্ঞাতপরিচয়ের আসামিরা বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করতে অবৈধভাবে বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করে।























