জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৫০ থেকে বাড়িয়ে একশ করার ক্ষেত্রে মোটামুটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্ত এসব আসনে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আছে মতানৈক্য। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য ৫০টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে। নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলোর প্রাপ্ত আসন সংখ্যার ভিত্তিতে সংরক্ষিত নারী আসনে কোন দলের কতজন নারী আইনপ্রণেতা থাকবেন, তা নির্ধারণ করা হয়। নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও অধিকাংশ দলই এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের সুবিধা বা অসুবিধাগুলো কী? আর আনুপাতিক হারে নারী আসন ভাগ হলে সেখানে কারা আসন পায়? ভোটের মাঠে গেলে তারা কি টিকতে পারবেন?
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. জাহেদ উর রহমান বলেন, আমাদের প্রস্তাব হলো মোট সংসদীয় আসন হবে ৪০০। এর মধ্যে ১০০টি হবে নারী আসন। ওই ১০০ আসনে নারী প্রার্থীরা সরাসরি নির্বাচন করবেন। কোনো পুরুষ প্রার্থী থাকবেন না। তবে বাকি ৩০০ আসনেও নারীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। আর সারা দেশকে ৪০০ সংসদীয় আসনে ভাগ করলে নারীদের ১০০ আসনে ঘূর্ণন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। প্রথম বছর হয়তো দৈবচয়নের ভিত্তিতে ১০০ আসন নির্ধারণ করা হলো। পাঁচ বছর পর ওই ১০০ বাদ দিয়ে নতুন ১০০ আসনে নির্বাচন হবে। এভাবে চার টার্মে মোট ৪০০ আসনে নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে। কমিশন এমন প্রস্তাব দিলেও ব্যক্তিগতভাবে এর সঙ্গে একমত নন কমিশন সদস্য ড. জাহেদ উর রহমান।
অন্যদিকে, নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে সংসদে ৬০০ আসন করার কথা বলা হয়েছে। কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক বলেন, এর মধ্যে ৩০০ আসন থাকবে নারীদের। সেখানে শুধু নারীরাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। তবে সাধারণ আসনেও নারীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। ফলে সংসদে নারীর অংশগ্রহণ বেশি হবে।
সংসদের নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ১০০ করার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হলেও সরাসরি নির্বাচন নিয়ে আছে মতানৈক্য। গত মঙ্গলবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন,‘নারী আসনের সংখ্যা ১০০-তে উন্নীত করার বিষয়ে সবার ঐকমত্য হয়েছে। বিদ্যমান মনোনয়ন পদ্ধতিতে আমরা নারী আসনের বিষয়টি বিবেচনার প্রস্তাব দিয়েছি। এছাড়া অন্যান্য দল নির্বাচন ও ৩০০ আসনে দলীয় মনোনয়নের কথা বলেছে। আমাদের ৩১ দফায় দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট ছিলই। নারী আসন সংখ্যা হবে ১০০। বেশিরভাগ দল এ বিষয়ে একমত। এর নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে।
সংরক্ষিত নারী আসন বাড়ানোর বিষয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও একমত। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ৩০০ আসনের সঙ্গে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনে আমরা আগের অবস্থানেই আছি। তবে সংরক্ষিত আসন বাড়ানোর বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত। আমরা এ বিষয়ে অনেক প্রস্তাবনা পাচ্ছি। আলোচনার ভিত্তিতেই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
এনসিপি নারীদের জন্য ১০০ আসন এবং সরাসরি নির্বাচন চায়। সংসদে নারীর জন্য সংরক্ষিত আসন প্রশ্নে এনসিপির নেতারা বলছেন, বিদ্যমান পদ্ধতি অনুসারে আসনপ্রাপ্তির অনুপাতে বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এসব আসন বণ্টন এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের কিছু নারীর জন্য সংসদীয় আসন সীমাবদ্ধ রাখার ব্যবস্থা থাকবে না। অন্য নারীরাও প্রার্থী হতে পারবেন। কোনো দলের ইচ্ছা বা দয়ার ভিত্তিতে নয়; বরং জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে ভোটারের ভোটে সরাসরি নির্বাচিত হবেন নারীরা। এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, আমরা সংসদে ১০০ নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন চাই। এটা নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে আমাদের প্রস্তাব তুলে ধরেছি। আমরা চাই নারীর ক্ষমতায়ন।
তবে নির্বাচন প্রক্রিয়া কেমন হবে তা নিয়ে এনসিপি নিজেদের মধ্যে এখনও আলাপ আলোচনা করছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, কয়েকটি পদ্ধতি নিয়ে কথা হচ্ছে। আলোচনায় ঘুর্ণন পদ্ধতি আছে। আবার কেউ বলছেন তিনটি আসন নিয়ে নারীদের জন্য একটি আসন করে, সেখানে সরসরি নির্বাচন করা যায়। তো নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে নানা বিতর্ক আছে। আমরাও আলোচনা করছি। চূড়ান্ত কিছু হয়নি।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. জাহেদ উর রহমান মনে করেন, আসলে কোনো ধরনের কোটা ব্যবস্থা, আর সেই কোটায় সরাসরি নির্বাচন নারীর ক্ষমতায়নে কাজে আসবে না। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য দরকার রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছা। তা হলো, নারীদের রাজনীতিতে সুযোগ দেয়া আর সাধারণ আসনে তাদের মনোনয়ন বাড়ানো। ১০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত করে যদি ঘূর্ণন পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় তাহলে দেখা যাবে একটি আসনে কোনো দলের কোনো প্রভাবশালী নেতা আছেন। তার আসনটি নারী আসন হলো। তখন তিনি তার স্ত্রী বা পরিবারে অন্য কোনো নারীর মনোনয়নের ব্যবস্থা করবেন। ফলে এখানে পরিবারতন্ত্র হবে , নারীর ক্ষমতায়ন হবে না। ৬০০ আসন করে ৩০০ নারীকে দিলেও পরিবারের প্রভাবের বাইরে যাওয়া অসম্ভব। আবার কোটা না করে সাধারণ আসনে ৩৩ শতাংশ নারীর মনোনয়ন বাধ্যতামূলক করলে দেখা যাবে, যেসব আসনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নাই সেইসব আসনে রাজনৈতিক দলগুলো নারীদের মনোনয়ন দেবে। আসলে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা দরকার সবার আগে।
শিরোনাম
ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদন
নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন কত দূর?
-
নিজস্ব প্রতিবেদক - আপডেট সময় : ০৮:০৫:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
- ।
- 153
জনপ্রিয় সংবাদ


























