১২:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রবাসীদের পায়ে কোথায় মন ভরানো ফুটবল

প্রবাসী ফুটবলারদের প্রীতি ম্যাচে নজর কাড়েনি আলাদা করে কেউ। ছবি: বাফুফে

পুরস্কার বিতরণী শেষ হতে না হতেই ঢাকা স্টেডিয়ামে বাধ ভাঙা দর্শকের উল্লাস। হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ল সবুজ মাঠে। এই দর্শকদের কারো হাতে প্ল্যাকার্ড। কারো গায়ে লাল সবুজের পতাকা। যে দর্শকের বেশিরভাগই ঢাকায় ট্রায়াল দিতে আসা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলারের আত্মীয় স্বজন।

ঢাকা স্টেডিয়ামে সোমবার শেষ হয়েছে বাফুফের নেক্সট গ্লোবাল স্টার কর্মসূচী। যেখানে বিশ্বের ১৪টি দেশ থেকে আসা ৪৮ জন প্রবাসী ফুটবলার তিন দিনের ট্রায়াল শেষে প্রীতি ম্যাচ খেললেন।

প্রথমে জুনিয়র দল (অনূর্ধ্ব-১৯) দুই ভাগ হয়ে খেলেছেন। এরপর সিনিয়র দল খেলেছেন। প্রথম ম্যাচটিতে ২-২ গোলে ড্র হয়েছে। পরের ম্যাচে গোলশূন্য ড্র।

পুরো সময় ম্যাচ দেখে মনে হয়েছে এখনও এই ফুটবলাররা বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক বা জাতীয় দলে খেলার মতো যোগ্য নন। বিশেষ করে ব্যক্তিগত নৈপুন্য সেভাবে কেউ দেখাতে পারেননি। বল নিয়ে অনেকে বক্সে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়ে খেই হারিয়েছেন।

এত ফুটবলারের ভীড়ে একজনই শুধু নজর কাড়তে পেরেছেন আলাদা করে- জুনিয়র দলের বিতোসোক চাকমা। লেফট উইং দিয়ে বারবার আক্রমণে উঠেছেন। এরপর একটা গোলও করেছেন।

বিতোসোক চাকমার শেকড় বাংলাদেশেই শুধু নয়, তার মামা বিকাশ বরুন দেওয়ান জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার। এমন স্কিল তাই যেন বংশ পরম্পরায় পাওয়া।

সিনিয়র দলে খেলতে আসা সঞ্জয় করিম অবশ্য মাঝ মাঠে চেষ্টা করেছেন বেশ কয়েকবার বল নিয়ে বের হতে। কিন্তু এর আগে একবার বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল ক্লাব পুলিশের হয়ে ট্রায়াল দিয়েও সুযোগ পাননি। যেখানে ঘরোয়া ক্লাবগুলো আগ্রহ দেখায়নি সেখানে জাতীয় দলে কিভাবে সুযোগ পাবেন তিনি? তবুও আত্মবিশ্বাস নিয়ে এসেছেন।

এই ফুটবলারদের গত তিন দিন ধরে ট্রায়ালে টেকনিকাল কমিটির সদস্য ও কোচেরা স্কিল দেখেছেন। তাদের নিয়ে অবশ্য ম্যাচ শেষে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি কেউ। সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবে বাফুফে। শুধু ম্যাচ শেষে ফুটবলারদের দেওয়া হয়েছে সার্টিফিকেট ও উপহারসামগ্রী।

ওয়েলস থেকে আসা ফুটবলার সামির মিয়া বলেন, “তিন দিনের ট্রায়ালের পর আমি আশাবাদী। নিজের পজিশনে খুব ভালো খেলেছি। বিশেষ করে শেষ দশ মিনিট নিজের সেরার বেশি দিয়ে খেলেছি। এখানে আসতে পেরে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বাফুফেকে।”

সুইডেন থেকে আসা অনিক রহমান বলেন, “এটা আমার জন্য দারুণ এক অভিজ্ঞতা। এক কথায় অবিশ্বাস্য। খুব ভালো লাগছে। বিশেষ করে এটা আমার স্বপ্ন ছিল যে বাংলাদেশের জন্য খেলব। সেই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য খুব সম্মানিত বোধ করছি। বাংলাদেশের হয়ে ট্রায়াল দিতে পেরেছি এবং এখানে এই মাঠে খেলতে পেরেছি। এতে আমি অনেক খুশি।”

আশিকুর রহমান এসেছেন লন্ডন থেকে। বাবার জন্ম মৌলভীবাজারে। এখানে তিন দিনের ট্রায়াল নিয়ে সন্তষ্ট হলেও ৯০ মিনিটের ম্যাচ চেয়েছিলেন, “এখানে তিন দিনের ট্রায়াল ভালো হয়েছে । কিন্তু ৯০ মিনিট ম্যাচ হলে ভালো হতো। আমি শেষ পর্যন্ত সুযোগ পাব কিনা জানিনা। কিন্তু ফিরে গিয়ে আরও কঠোর পরিশ্রম করব। সেখানে লিগে খেলব এবং আবারও ফিরে আসব।”

একরামুল কাসপার হক থাকেন ইংল্যান্ডে। তার খেলা দেখতে সাভার থেকে এসেছেন দাদি মিসেস রোকেয়া হক। তিনি জানালেন ৭ বছর পর একরামুল বাংলাদেশে এসেছে। ইংল্যান্ডে স্পোর্টস সায়েন্সে স্নাতক করা একরামুলের স্বপ্ন লাল সবুজের জার্সি গায়ে তোলা। মাঠে একরামুলকে দেখে রোকেয়া হক  রোমাঞ্চিত। তিনি বলেন, “আমার খুবই ভালো লাগছে। আমরা নাতি বাংলাদেশের হয়ে খেলবে এটা ভাবতেই খুব এক্সাইটেড। এই মাঠে আমি আগেও এসেছি। কিন্তু এবার এসে বেশি ভালো লাগছে। আমার নাতি মূলত ডিফেন্ডার। ওর জায়গায় ও সবটুকু উজাড় করে দিয়ে খেলেছে। আমি আশাবাদী ও সুযোগ পাবে। না সুযোগ পেলেও আমার মনে দুঃখ নেই। কারণ আমার নাতি সাত বছর পর দেশে এসেছে শুধু আমাকে দেখতে।”

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা ফুটবলার জায়ান আহমেদের বাবা মায়ের জন্ম চাঁদপুর। ঢাকা স্টেডিয়ামে জায়ানের খেলা দেখতে এসেছিলেন তাদের তিনি কাজিন। তারা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে এসেছিলেন। হাতে প্ল্যাকার্ড ধরে উচ্ছ্বসিত একজন বলছিলেন, “আমরা ঢাকায় থাকি। কিন্তু আমাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর। এবারই প্রথম এই স্টেডিয়ামে এসেছি আমাদের ভাইয়ের খেলা দেখতে। ওকে খেলতে দেখে অনেক গর্ব হচ্ছে। জায়ান যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসে বাংলাদেশের জন্য খেলছে। আমরা গর্বিত। আমরা আশাবাদী ইনশাল্লাহ দ্রুতই ও বাংলাদেশের হয়ে খেলবে।”

প্ল্যাকার্ড নিয়ে জায়ানকে উৎসাহ দিয়েছেন এই তরুণীরা। জানালেন, “জায়ান এই মাঠে খেলবে দেখেই এখানে ওকে উৎসাহ দিতে এগুলো নিয়ে এসেছি। যেহেতু সে নতুন আমরা চেয়েছি ওকে যেন সাপোর্ট করতে পারি।”

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রবাসীদের পায়ে কোথায় মন ভরানো ফুটবল

আপডেট সময় : ০৮:১৭:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

পুরস্কার বিতরণী শেষ হতে না হতেই ঢাকা স্টেডিয়ামে বাধ ভাঙা দর্শকের উল্লাস। হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ল সবুজ মাঠে। এই দর্শকদের কারো হাতে প্ল্যাকার্ড। কারো গায়ে লাল সবুজের পতাকা। যে দর্শকের বেশিরভাগই ঢাকায় ট্রায়াল দিতে আসা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলারের আত্মীয় স্বজন।

ঢাকা স্টেডিয়ামে সোমবার শেষ হয়েছে বাফুফের নেক্সট গ্লোবাল স্টার কর্মসূচী। যেখানে বিশ্বের ১৪টি দেশ থেকে আসা ৪৮ জন প্রবাসী ফুটবলার তিন দিনের ট্রায়াল শেষে প্রীতি ম্যাচ খেললেন।

প্রথমে জুনিয়র দল (অনূর্ধ্ব-১৯) দুই ভাগ হয়ে খেলেছেন। এরপর সিনিয়র দল খেলেছেন। প্রথম ম্যাচটিতে ২-২ গোলে ড্র হয়েছে। পরের ম্যাচে গোলশূন্য ড্র।

পুরো সময় ম্যাচ দেখে মনে হয়েছে এখনও এই ফুটবলাররা বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক বা জাতীয় দলে খেলার মতো যোগ্য নন। বিশেষ করে ব্যক্তিগত নৈপুন্য সেভাবে কেউ দেখাতে পারেননি। বল নিয়ে অনেকে বক্সে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়ে খেই হারিয়েছেন।

এত ফুটবলারের ভীড়ে একজনই শুধু নজর কাড়তে পেরেছেন আলাদা করে- জুনিয়র দলের বিতোসোক চাকমা। লেফট উইং দিয়ে বারবার আক্রমণে উঠেছেন। এরপর একটা গোলও করেছেন।

বিতোসোক চাকমার শেকড় বাংলাদেশেই শুধু নয়, তার মামা বিকাশ বরুন দেওয়ান জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার। এমন স্কিল তাই যেন বংশ পরম্পরায় পাওয়া।

সিনিয়র দলে খেলতে আসা সঞ্জয় করিম অবশ্য মাঝ মাঠে চেষ্টা করেছেন বেশ কয়েকবার বল নিয়ে বের হতে। কিন্তু এর আগে একবার বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল ক্লাব পুলিশের হয়ে ট্রায়াল দিয়েও সুযোগ পাননি। যেখানে ঘরোয়া ক্লাবগুলো আগ্রহ দেখায়নি সেখানে জাতীয় দলে কিভাবে সুযোগ পাবেন তিনি? তবুও আত্মবিশ্বাস নিয়ে এসেছেন।

এই ফুটবলারদের গত তিন দিন ধরে ট্রায়ালে টেকনিকাল কমিটির সদস্য ও কোচেরা স্কিল দেখেছেন। তাদের নিয়ে অবশ্য ম্যাচ শেষে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি কেউ। সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবে বাফুফে। শুধু ম্যাচ শেষে ফুটবলারদের দেওয়া হয়েছে সার্টিফিকেট ও উপহারসামগ্রী।

ওয়েলস থেকে আসা ফুটবলার সামির মিয়া বলেন, “তিন দিনের ট্রায়ালের পর আমি আশাবাদী। নিজের পজিশনে খুব ভালো খেলেছি। বিশেষ করে শেষ দশ মিনিট নিজের সেরার বেশি দিয়ে খেলেছি। এখানে আসতে পেরে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বাফুফেকে।”

সুইডেন থেকে আসা অনিক রহমান বলেন, “এটা আমার জন্য দারুণ এক অভিজ্ঞতা। এক কথায় অবিশ্বাস্য। খুব ভালো লাগছে। বিশেষ করে এটা আমার স্বপ্ন ছিল যে বাংলাদেশের জন্য খেলব। সেই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য খুব সম্মানিত বোধ করছি। বাংলাদেশের হয়ে ট্রায়াল দিতে পেরেছি এবং এখানে এই মাঠে খেলতে পেরেছি। এতে আমি অনেক খুশি।”

আশিকুর রহমান এসেছেন লন্ডন থেকে। বাবার জন্ম মৌলভীবাজারে। এখানে তিন দিনের ট্রায়াল নিয়ে সন্তষ্ট হলেও ৯০ মিনিটের ম্যাচ চেয়েছিলেন, “এখানে তিন দিনের ট্রায়াল ভালো হয়েছে । কিন্তু ৯০ মিনিট ম্যাচ হলে ভালো হতো। আমি শেষ পর্যন্ত সুযোগ পাব কিনা জানিনা। কিন্তু ফিরে গিয়ে আরও কঠোর পরিশ্রম করব। সেখানে লিগে খেলব এবং আবারও ফিরে আসব।”

একরামুল কাসপার হক থাকেন ইংল্যান্ডে। তার খেলা দেখতে সাভার থেকে এসেছেন দাদি মিসেস রোকেয়া হক। তিনি জানালেন ৭ বছর পর একরামুল বাংলাদেশে এসেছে। ইংল্যান্ডে স্পোর্টস সায়েন্সে স্নাতক করা একরামুলের স্বপ্ন লাল সবুজের জার্সি গায়ে তোলা। মাঠে একরামুলকে দেখে রোকেয়া হক  রোমাঞ্চিত। তিনি বলেন, “আমার খুবই ভালো লাগছে। আমরা নাতি বাংলাদেশের হয়ে খেলবে এটা ভাবতেই খুব এক্সাইটেড। এই মাঠে আমি আগেও এসেছি। কিন্তু এবার এসে বেশি ভালো লাগছে। আমার নাতি মূলত ডিফেন্ডার। ওর জায়গায় ও সবটুকু উজাড় করে দিয়ে খেলেছে। আমি আশাবাদী ও সুযোগ পাবে। না সুযোগ পেলেও আমার মনে দুঃখ নেই। কারণ আমার নাতি সাত বছর পর দেশে এসেছে শুধু আমাকে দেখতে।”

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা ফুটবলার জায়ান আহমেদের বাবা মায়ের জন্ম চাঁদপুর। ঢাকা স্টেডিয়ামে জায়ানের খেলা দেখতে এসেছিলেন তাদের তিনি কাজিন। তারা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে এসেছিলেন। হাতে প্ল্যাকার্ড ধরে উচ্ছ্বসিত একজন বলছিলেন, “আমরা ঢাকায় থাকি। কিন্তু আমাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর। এবারই প্রথম এই স্টেডিয়ামে এসেছি আমাদের ভাইয়ের খেলা দেখতে। ওকে খেলতে দেখে অনেক গর্ব হচ্ছে। জায়ান যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসে বাংলাদেশের জন্য খেলছে। আমরা গর্বিত। আমরা আশাবাদী ইনশাল্লাহ দ্রুতই ও বাংলাদেশের হয়ে খেলবে।”

প্ল্যাকার্ড নিয়ে জায়ানকে উৎসাহ দিয়েছেন এই তরুণীরা। জানালেন, “জায়ান এই মাঠে খেলবে দেখেই এখানে ওকে উৎসাহ দিতে এগুলো নিয়ে এসেছি। যেহেতু সে নতুন আমরা চেয়েছি ওকে যেন সাপোর্ট করতে পারি।”