- করোনার টিকা নিতে অনিচ্ছা
- টিকার সুরক্ষা অ্যাপস বন্ধ, প্রচার নেই
- গত ২৮ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত ৮
- জুনে করোনা শনাক্ত ৪৫১ জনের, মৃত্যু ২২
- মৃত ব্যক্তিদের ৭০% ষাটোর্ধ্ব
দেশে নতুন করে করোনার সংক্রমণ দেখা দিলেও তা প্রতিরোধে টিকা নেওয়ার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না মানুষের মধ্যে। এতে অনুদানে পাওয়া ৩২ লাখ টিকা মেয়াদোত্তীর্ণ হতে চলেছে। বেশির ভাগ মানুষ জানে না যে সরকার এখনো করোনার টিকা দিচ্ছে। টিকার সুরক্ষা অ্যাপসও বন্ধ দীর্ঘদিন যাবৎ। কোনো প্রচারও নেই। এদিকে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ২১৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৮ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়। শনাক্তের হার ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) পরিচালিত সর্বশেষ কোভিড-১৯ সার্ভিলেন্স ‘ন্যাশনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভিলেন্স ও পিএইচওসি’ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরের মে থেকে দেশে করোনা সংক্রমণের হার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে শুরু করেছে। জুন মাসে ১ হাজার ৪০৯ জন সম্ভাব্য কোভিড-১৯ রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১৩৪ জন পজিটিভ শনাক্ত হন, যা পরীক্ষার ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। এটি ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মে সময়কালে সর্বোচ্চ হার। এর আগে ২০২৩ সালের মে-আগস্ট এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারি-আগস্টে সংক্রমণের হার ছিল ১ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি।
গত মাসের শুরুতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে সতর্ক করে, গর্ভবতী নারী, বয়স্ক ব্যক্তি ও জটিল রোগে ভোগা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট মারাত্মক হতে পারে। তবে এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো আগ্রহ তৈরি হয়নি। সরকারের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) প্রকল্প ব্যবস্থাপক এস এম আব্দুল্লাহ-আল-মুরাদ বলেন, অনুদানে পাওয়া প্রায় ৩২ লাখ ফাইজারের টিকা হাতে রয়েছে। আগামী নভেম্বর মাসে এসব টিকার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়ার আগ্রহ না থাকায় এসব টিকা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বেশি। আরও দুই মাস আগে সারা দেশে ১৭ লাখ টিকা পাঠানো হয়েছে। এগুলো ওভাবেই পড়ে আছে। কেউ নিচ্ছে না। কারণ বেশির ভাগ মানুষ জানে না যে সরকার এখনো করোনার টিকা দিচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছর করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ৭০ শতাংশের বয়স ষাটোর্ধ্ব। এই বয়সে মারা গেছে ১৬ জন। ৪০ থেকে ৫০ বছরের মারা গেছে পাঁচজন। ১১ থেকে ৩০ বছর বয়সের দুজনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, করোনা শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বাড়িতে চিকিৎসা নিয়েছে। যারা মারা গেছে, তারা বিভিন্ন জটিল রোগে আগে থেকেই ভুগছিল। আমরা এসব ব্যক্তির বিষয়ে সতর্ক করে বলেছি, এখনো যারা টিকা নেয়নি, গর্ভবতী নারী এবং যারা ইমিউনো কম্প্রোমাইজড তাদের টিকা নিতে হবে। পুরনো যারা এরই মধ্যে টিকা নিয়েছে, তাদের মধ্যে যারা ষাটোর্ধ্ব, স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি আছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদেরও ছয় মাস পর আরেকটা ডোজ নেওয়া উচিত। সরকারের হাতে মজুদ টিকার কার্যকারিতা আছে কি না এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক হালিমুর রশিদ ইউএস-সিডিসির গাইডলাইনের বরাত দিয়ে বলেন, সেখানে ২০২৪-২৫ সালের যে টিকা এসেছে, সেগুলো দেওয়ার পরামর্শ এসেছে। কারণ ওই টিকা ওমিক্রনের জন্য সুনির্দিষ্ট করা আছে। তবে বাংলাদেশে যে টিকা আছে, সেগুলোও নিরাপত্তা দেবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে করোনা প্রতিরোধে এ পর্যন্ত ৩৭ কোটি ৮১ লাখ ডোজ টিকা আমদানি করা হয়েছে। চারটি উৎস থেকে টিকা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বড় অংশ অনুদানের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় অনুদান হিসেবে পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, কভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন ড্যাশবোর্ডের সর্বশেষ তথ্য বলছে, এ পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছে ১৫ কোটি ৯২ লাখ পাঁচ হাজার ৬২০ জন, ১৪ কোটি ২২ লাখ এক হাজার ৬৮৪ জন দ্বিতীয় ডোজ এবং ছয় কোটি ৮৬ লাখ ১৫ হাজার ২৫০ জন তৃতীয় ডোজ টিকা নিয়েছে। চতুর্থ ডোজ টিকা নিয়েছে ৫১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৭৩ জন। পাঁচ বছর আগে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনা ভাইরাস ফের নতুন রূপে ফিরে আসছে। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও বেড়েছে করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার নতুন একটি ঢেউয়ের মুখে রয়েছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ পাওয়া করোনা ভাইরাসের নমুনাগুলোর জিনোম সিকুয়েন্সিং করে ‘ওমিক্রন বিএ ২.৮৬’ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে, যা এর আগেও দেশে শনাক্ত হয়েছিল।





















