০৭:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
পাঠ্যবই সংকট

সিন্ডিকেটে ভাঙ্গার চ্যালেঞ্জে এনসিটিবি

  • ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার টেন্ডার বাতিল
  • ‘অদৃশ্য প্রভাব’-এর গুঞ্জন
  • সময়মতো বই হাতে না পাওয়ার আশঙ্কা

‘শিক্ষাবর্ষ সঠিকভাবে শুরু করতে হলে বই হাতে পৌঁছানো খুবই জরুরি। আশা করি জানুয়ারির মধ্যেই শিক্ষার্থীরা বই হাতে পাবে’- অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খান, মহাপরিচালক, মাউশি

‘সরকার বই ছাপার কাজকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমরা টেন্ডার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে জানুয়ারির মধ্যে বই বিতরণ নিশ্চিত করতে কাজ করছি’- অধ্যাপক রবিউল কবির চৌধুরী, চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব), এনসিটিবি

 

আগামী শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের হাতে নির্ধারিত সময়ে পাঠ্যবই পৌঁছে দিতে বছর শুরুর আগেই কাজ শুরু করেছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। কিন্তু টেন্ডার প্রক্রিয়ার প্রায় সবকিছু শেষ করে মূল্যায়ন শেষ করার পরও ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র বাতিল করেছে সরকার। ফলে এখন নতুন করে পুনঃটেন্ডার আহ্বান করতে হচ্ছে এনসিটিবিকে। এতে করে বই ছাপা ও বিতরণে সময়ক্ষেপণ হবে, এবং শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার বই ছাপার কাজকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তারা টেন্ডার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে জানুয়ারির মধ্যে বই বিতরণ নিশ্চিত করতে কাজ করছেন।
ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি দরপত্র বাতিলের নির্দেশ দিলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এর কোনো নির্দিষ্ট কারণ জানানো হয়নি এনসিটিবিকে। ১৯ আগস্টের বৈঠকে টেন্ডার বাতিল করা হলেও তা জানানো হয়েছে ২ সেপ্টেম্বর। এনসিটিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দরপত্র মানেই অর্থনৈতিক লেনদেন। সেখানে ‘অদৃশ্য প্রভাব’ কাজ করে, এমনটা অস্বাভাবিক নয়। তবে আমরা আগের টেন্ডারই আবার জমা দিতে বলেছি, সেটাই পুনঃদরপত্র হিসেবে চলবে।’ তবে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রবিউল কবির চৌধুরী দাবি করেছেন, পুনরায় টেন্ডার হলেও শিক্ষার্থীরা সময়মতোই বই হাতে পাবে। সরকারের পক্ষ থেকেও বই ছাপার কাজকে ‘সর্বোচ্চ গুরুত্বে’ দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, চলতি বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে প্রায় ৩০ কোটি বই ছাপাতে হবে। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরে ৮ কোটি ৪৯ লাখ ২৫ হাজার বই এবং মাধ্যমিক স্তরে ২১ কোটি ৪০ লাখ বই ছাপার পরিকল্পনা ছিল। শুধু ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বইয়ের পরিমাণই প্রায় ১২ কোটির বেশি। ছাপার কাজের জন্য ২৮০টি লটে ভাগ করা হয়েছিল দরপত্র। এর মধ্যে ১১ কোটির বেশি বই ছাপানোর দরপত্র বাতিল হয়েছে। এগুলো ছাপানোর দায়িত্ব যে প্রতিষ্ঠানগুলো পাচ্ছিল, তাদের অনেকেই অতীতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন। কেউ কেউ সরাসরি দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলেও গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এদের নিয়েই একটি ‘সিন্ডিকেট’ গড়ে উঠেছে বলেও জানা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এই সিন্ডিকেট ভাঙতেই সরকারের এই টেন্ডার বাতিলের সিদ্ধান্ত।
এদিকে, মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, এই সিন্ডিকেট ভাঙা খুবই জরুরি ছিল। আগে সক্ষমতা যাচাই না করে শুধু দলীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে কাজ দেওয়া হতো। একটি আইপি থেকে অসংখ্য দরপত্র জমা পড়েছিল এটিই প্রমাণ করে সিন্ডিকেট কিভাবে কাজ করতো। পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে। এতে ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোও কাজের সুযোগ পাবে। তবে এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, কাজ যাকে দেওয়া হবে সেটা সর্বনিম্ন দরদাতা এবং সক্ষম প্রতিষ্ঠান হতে হবে এই নীতিই বরাবরের মতো অনুসরণ করা হয়েছে। দল-মত এখানে বিবেচ্য নয়। কিন্তু কখনও কখনও ‘অদৃশ্য প্রভাব’ ও রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিবর্তন আনা হয়, যা প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও গতিকে বাধাগ্রস্ত করে।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এনসিটিবি পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করেছে ৪ থেকে ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। নতুন টেন্ডার জমা নেওয়া, মূল্যায়ন, সক্ষমতা যাচাই, ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপন, অনুমোদন ও চুক্তি এসব প্রক্রিয়া শেষ করতে অন্তত তিন মাস সময় লাগবে। এরপর ছাপাখানা মালিকদের বই ছাপানোর জন্য ৭০ দিন সময় দেওয়া হবে। অর্থাৎ বাস্তবসম্মতভাবে বলতে গেলে, আগামী পাঁচ মাসের মধ্যে সব কাজ শেষ করা কঠিন। এই পরিস্থিতিতে জানুয়ারি মাসে নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানো নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। আর এই বছর ফেব্রুয়ারির শুরুতেই রমজান শুরু হচ্ছে, যা মার্চের শেষ পর্যন্ত চলবে। ফলে ফেব্রুয়ারি-মার্চজুড়ে দীর্ঘ ছুটি থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে বই হাতে পেতে দেরি হলে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই প্রস্তুতির সুযোগ হারাবে।
এদিকে, সম্প্রতি গুঞ্জন উঠেছিল, এনসিটিবি আন্তর্জাতিক দরপত্রের দিকে ঝুঁকছে। কিন্তু এনসিটিবির কর্মকর্তারা এটিকে ভিত্তিহীন গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, বই ছাপার কাজ শুধুই দেশীয় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে, যথাযথ নীতিমালার আলোকে। এনসিটিবির এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা ওপেন দরপত্রের মাধ্যমেই কাজ করছি। যার দর কম, সক্ষমতা আছে, তাকেই কাজ দেওয়া হবে। কোনো আন্তর্জাতিক দরপত্র এখনো হয়নি। অন্যদিকে, দরপত্র বাতিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি পালন করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক শাখা। তারা এনসিটিবির ‘দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও রাজনৈতিক প্রভাব’ এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। তবে এসব নিয়ে এনসিটিবি বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খান বলেন, শিক্ষাবর্ষ সঠিকভাবে শুরু করতে হলে বই হাতে পৌঁছানো খুবই জরুরি। রোজা ও ঈদের ছুটির আগে যদি বই না দেওয়া যায়, তাহলে পড়ালেখার বড় ক্ষতি হবে। আশা করি জানুয়ারির মধ্যেই শিক্ষার্থীরা বই হাতে পাবে।
এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবির চৌধুরী বলেন, সরকার বই ছাপার কাজকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমরা টেন্ডার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে জানুয়ারির মধ্যে বই বিতরণ নিশ্চিত করতে কাজ করছি।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

সানজিদা তন্বীর বিয়ের খবর জানালেন ফেসবুকে নিজের হৃদয়গ্রাহী পোস্টে

পাঠ্যবই সংকট

সিন্ডিকেটে ভাঙ্গার চ্যালেঞ্জে এনসিটিবি

আপডেট সময় : ০৭:৩৮:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার টেন্ডার বাতিল
  • ‘অদৃশ্য প্রভাব’-এর গুঞ্জন
  • সময়মতো বই হাতে না পাওয়ার আশঙ্কা

‘শিক্ষাবর্ষ সঠিকভাবে শুরু করতে হলে বই হাতে পৌঁছানো খুবই জরুরি। আশা করি জানুয়ারির মধ্যেই শিক্ষার্থীরা বই হাতে পাবে’- অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খান, মহাপরিচালক, মাউশি

‘সরকার বই ছাপার কাজকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমরা টেন্ডার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে জানুয়ারির মধ্যে বই বিতরণ নিশ্চিত করতে কাজ করছি’- অধ্যাপক রবিউল কবির চৌধুরী, চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব), এনসিটিবি

 

আগামী শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের হাতে নির্ধারিত সময়ে পাঠ্যবই পৌঁছে দিতে বছর শুরুর আগেই কাজ শুরু করেছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। কিন্তু টেন্ডার প্রক্রিয়ার প্রায় সবকিছু শেষ করে মূল্যায়ন শেষ করার পরও ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র বাতিল করেছে সরকার। ফলে এখন নতুন করে পুনঃটেন্ডার আহ্বান করতে হচ্ছে এনসিটিবিকে। এতে করে বই ছাপা ও বিতরণে সময়ক্ষেপণ হবে, এবং শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার বই ছাপার কাজকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তারা টেন্ডার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে জানুয়ারির মধ্যে বই বিতরণ নিশ্চিত করতে কাজ করছেন।
ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি দরপত্র বাতিলের নির্দেশ দিলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এর কোনো নির্দিষ্ট কারণ জানানো হয়নি এনসিটিবিকে। ১৯ আগস্টের বৈঠকে টেন্ডার বাতিল করা হলেও তা জানানো হয়েছে ২ সেপ্টেম্বর। এনসিটিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দরপত্র মানেই অর্থনৈতিক লেনদেন। সেখানে ‘অদৃশ্য প্রভাব’ কাজ করে, এমনটা অস্বাভাবিক নয়। তবে আমরা আগের টেন্ডারই আবার জমা দিতে বলেছি, সেটাই পুনঃদরপত্র হিসেবে চলবে।’ তবে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রবিউল কবির চৌধুরী দাবি করেছেন, পুনরায় টেন্ডার হলেও শিক্ষার্থীরা সময়মতোই বই হাতে পাবে। সরকারের পক্ষ থেকেও বই ছাপার কাজকে ‘সর্বোচ্চ গুরুত্বে’ দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, চলতি বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে প্রায় ৩০ কোটি বই ছাপাতে হবে। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরে ৮ কোটি ৪৯ লাখ ২৫ হাজার বই এবং মাধ্যমিক স্তরে ২১ কোটি ৪০ লাখ বই ছাপার পরিকল্পনা ছিল। শুধু ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বইয়ের পরিমাণই প্রায় ১২ কোটির বেশি। ছাপার কাজের জন্য ২৮০টি লটে ভাগ করা হয়েছিল দরপত্র। এর মধ্যে ১১ কোটির বেশি বই ছাপানোর দরপত্র বাতিল হয়েছে। এগুলো ছাপানোর দায়িত্ব যে প্রতিষ্ঠানগুলো পাচ্ছিল, তাদের অনেকেই অতীতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন। কেউ কেউ সরাসরি দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলেও গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এদের নিয়েই একটি ‘সিন্ডিকেট’ গড়ে উঠেছে বলেও জানা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এই সিন্ডিকেট ভাঙতেই সরকারের এই টেন্ডার বাতিলের সিদ্ধান্ত।
এদিকে, মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, এই সিন্ডিকেট ভাঙা খুবই জরুরি ছিল। আগে সক্ষমতা যাচাই না করে শুধু দলীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে কাজ দেওয়া হতো। একটি আইপি থেকে অসংখ্য দরপত্র জমা পড়েছিল এটিই প্রমাণ করে সিন্ডিকেট কিভাবে কাজ করতো। পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে। এতে ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোও কাজের সুযোগ পাবে। তবে এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, কাজ যাকে দেওয়া হবে সেটা সর্বনিম্ন দরদাতা এবং সক্ষম প্রতিষ্ঠান হতে হবে এই নীতিই বরাবরের মতো অনুসরণ করা হয়েছে। দল-মত এখানে বিবেচ্য নয়। কিন্তু কখনও কখনও ‘অদৃশ্য প্রভাব’ ও রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিবর্তন আনা হয়, যা প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও গতিকে বাধাগ্রস্ত করে।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এনসিটিবি পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করেছে ৪ থেকে ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। নতুন টেন্ডার জমা নেওয়া, মূল্যায়ন, সক্ষমতা যাচাই, ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপন, অনুমোদন ও চুক্তি এসব প্রক্রিয়া শেষ করতে অন্তত তিন মাস সময় লাগবে। এরপর ছাপাখানা মালিকদের বই ছাপানোর জন্য ৭০ দিন সময় দেওয়া হবে। অর্থাৎ বাস্তবসম্মতভাবে বলতে গেলে, আগামী পাঁচ মাসের মধ্যে সব কাজ শেষ করা কঠিন। এই পরিস্থিতিতে জানুয়ারি মাসে নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানো নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। আর এই বছর ফেব্রুয়ারির শুরুতেই রমজান শুরু হচ্ছে, যা মার্চের শেষ পর্যন্ত চলবে। ফলে ফেব্রুয়ারি-মার্চজুড়ে দীর্ঘ ছুটি থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে বই হাতে পেতে দেরি হলে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই প্রস্তুতির সুযোগ হারাবে।
এদিকে, সম্প্রতি গুঞ্জন উঠেছিল, এনসিটিবি আন্তর্জাতিক দরপত্রের দিকে ঝুঁকছে। কিন্তু এনসিটিবির কর্মকর্তারা এটিকে ভিত্তিহীন গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, বই ছাপার কাজ শুধুই দেশীয় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে, যথাযথ নীতিমালার আলোকে। এনসিটিবির এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা ওপেন দরপত্রের মাধ্যমেই কাজ করছি। যার দর কম, সক্ষমতা আছে, তাকেই কাজ দেওয়া হবে। কোনো আন্তর্জাতিক দরপত্র এখনো হয়নি। অন্যদিকে, দরপত্র বাতিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি পালন করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক শাখা। তারা এনসিটিবির ‘দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও রাজনৈতিক প্রভাব’ এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। তবে এসব নিয়ে এনসিটিবি বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খান বলেন, শিক্ষাবর্ষ সঠিকভাবে শুরু করতে হলে বই হাতে পৌঁছানো খুবই জরুরি। রোজা ও ঈদের ছুটির আগে যদি বই না দেওয়া যায়, তাহলে পড়ালেখার বড় ক্ষতি হবে। আশা করি জানুয়ারির মধ্যেই শিক্ষার্থীরা বই হাতে পাবে।
এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবির চৌধুরী বলেন, সরকার বই ছাপার কাজকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমরা টেন্ডার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে জানুয়ারির মধ্যে বই বিতরণ নিশ্চিত করতে কাজ করছি।