০১:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
চবি শিক্ষার্থীদের জন্য এক বিশেষ দিন

কঠোর নিরাপত্তায় চলছে চাকসু নির্বাচন, উচ্ছ্বাসে মুখর ক্যাম্পাস

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ এক ঐতিহাসিক দিন। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। বহু প্রতীক্ষিত এই নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে উচ্ছ্বাস, উৎসবের আবহ ও অংশগ্রহণের গভীর আগ্রহ।

বুধবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ, যা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এর আগেই ক্যাম্পাসে জমায়েত হতে থাকেন হাজারো শিক্ষার্থী। শাটল ট্রেন ও বাসে করে ভোর থেকে শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করেন। ‘জিরো পয়েন্ট’ থেকে শুরু করে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের ঢল। ক্যাম্পাসে এমন প্রাণচাঞ্চল্য অনেকেই বহু বছর পর দেখছেন।

 

লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই দিনটির জন্য আমরা অনেক বছর অপেক্ষা করেছি। আজকে ভোট দিতে পারছি, এটা শুধু আনন্দের নয়, গর্বেরও।’ অনেকে প্রথমবারের মতো ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা নিতে পেরে উচ্ছ্বসিত। তাদের চোখেমুখে ছিল অধিকার ফিরে পাওয়ার আনন্দ, ইতিহাসের অংশ হওয়ার গর্ব।

ভোট গ্রহণের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ১৫টি কেন্দ্র, যেখানে রয়েছে ৬০টি কক্ষ ও ৬৮৯টি বুথ। একজন ভোটার কেন্দ্রীয় সংসদের ২৬টি ও হল সংসদের ১৪টি, মোট ৪০টি পদে ভোট দিতে পারছেন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ওএমআর ব্যালট পদ্ধতিতে, যাতে প্রতিটি ভোটারের গড়ে ১০ মিনিট সময় লাগছে।

এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ১৩টি প্যানেল। মোট প্রার্থী সংখ্যা ৯০৭ জন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৬টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪১৪ জন এবং হল ও হোস্টেল সংসদের ২৪টি পদের জন্য প্রার্থী হয়েছেন ৪৯৩ জন। ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৫১৬ জন, যার মধ্যে ১৬ হাজার ১৮৪ জন পুরুষ এবং ১১ হাজার ৩২৯ জন নারী।

 

ভোটকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে মোতায়েন রয়েছেন পুলিশ, র‍্যাব, ডিবি, আনসার এবং সেনাবাহিনীসহ প্রায় ১২০০ জন নিরাপত্তাকর্মী। প্রতিটি কেন্দ্রে রয়েছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারি করা হচ্ছে।

চাকসু নির্বাচন ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে ছিল প্রচারণার উন্মাদনা। প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার, গান, শ্লোগানে মুখর ছিল ক্যাম্পাস। বিভিন্ন প্যানেলের কর্মীদের ভিন্ন ভিন্ন প্রচারণা কৌশল এবং শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এই নির্বাচনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর নুরুল হামিদ কানন বলেন, “আমরা চাই শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ একটি নির্বাচন হোক। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।” শিক্ষার্থী সামিয়া বলেন, “আজ শুধু ভোট দেওয়ার দিন না, এটা আমাদের অধিকার ফিরে পাওয়ার দিন। খুব গর্ব হচ্ছে অংশ নিতে পেরে।”

প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, “নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ আমাদের অনুপ্রাণিত করছে। আমরা আশা করছি, এই নির্বাচন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক চর্চার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।” অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত হুসাইন বলেন, “চাকসু নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে শুধু দায়িত্ব নয়, হাজারো শিক্ষার্থীর প্রত্যাশা থাকবে। তারা যেন সেই আস্থা ও দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে।”

তিন যুগের বেশি সময় পর অনুষ্ঠিত হওয়া এই চাকসু নির্বাচন শুধু একটি ব্যালটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ, অধিকারচর্চা, নেতৃত্ব তৈরির সুযোগ এবং গণতন্ত্রের অনুশীলনের একটি বাস্তব রূপ।

আজকের দিনটি ইতিহাস হয়ে থাকবে সেইসব শিক্ষার্থীর জন্য, যারা বহু প্রতীক্ষার পর নিজেদের প্রতিনিধি নিজ হাতে বেছে নেওয়ার অধিকার ফিরে পেয়েছে।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

বিমানবন্দর থেকে বুলেটপ্রুফ বাসে পূর্বাচলের সংবর্ধনায় যাচ্ছেন তারেক রহমান

চবি শিক্ষার্থীদের জন্য এক বিশেষ দিন

কঠোর নিরাপত্তায় চলছে চাকসু নির্বাচন, উচ্ছ্বাসে মুখর ক্যাম্পাস

আপডেট সময় : ১০:৫৩:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ এক ঐতিহাসিক দিন। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। বহু প্রতীক্ষিত এই নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে উচ্ছ্বাস, উৎসবের আবহ ও অংশগ্রহণের গভীর আগ্রহ।

বুধবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ, যা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এর আগেই ক্যাম্পাসে জমায়েত হতে থাকেন হাজারো শিক্ষার্থী। শাটল ট্রেন ও বাসে করে ভোর থেকে শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করেন। ‘জিরো পয়েন্ট’ থেকে শুরু করে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের ঢল। ক্যাম্পাসে এমন প্রাণচাঞ্চল্য অনেকেই বহু বছর পর দেখছেন।

 

লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই দিনটির জন্য আমরা অনেক বছর অপেক্ষা করেছি। আজকে ভোট দিতে পারছি, এটা শুধু আনন্দের নয়, গর্বেরও।’ অনেকে প্রথমবারের মতো ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা নিতে পেরে উচ্ছ্বসিত। তাদের চোখেমুখে ছিল অধিকার ফিরে পাওয়ার আনন্দ, ইতিহাসের অংশ হওয়ার গর্ব।

ভোট গ্রহণের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ১৫টি কেন্দ্র, যেখানে রয়েছে ৬০টি কক্ষ ও ৬৮৯টি বুথ। একজন ভোটার কেন্দ্রীয় সংসদের ২৬টি ও হল সংসদের ১৪টি, মোট ৪০টি পদে ভোট দিতে পারছেন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ওএমআর ব্যালট পদ্ধতিতে, যাতে প্রতিটি ভোটারের গড়ে ১০ মিনিট সময় লাগছে।

এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ১৩টি প্যানেল। মোট প্রার্থী সংখ্যা ৯০৭ জন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৬টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪১৪ জন এবং হল ও হোস্টেল সংসদের ২৪টি পদের জন্য প্রার্থী হয়েছেন ৪৯৩ জন। ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৫১৬ জন, যার মধ্যে ১৬ হাজার ১৮৪ জন পুরুষ এবং ১১ হাজার ৩২৯ জন নারী।

 

ভোটকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে মোতায়েন রয়েছেন পুলিশ, র‍্যাব, ডিবি, আনসার এবং সেনাবাহিনীসহ প্রায় ১২০০ জন নিরাপত্তাকর্মী। প্রতিটি কেন্দ্রে রয়েছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারি করা হচ্ছে।

চাকসু নির্বাচন ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে ছিল প্রচারণার উন্মাদনা। প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার, গান, শ্লোগানে মুখর ছিল ক্যাম্পাস। বিভিন্ন প্যানেলের কর্মীদের ভিন্ন ভিন্ন প্রচারণা কৌশল এবং শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এই নির্বাচনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর নুরুল হামিদ কানন বলেন, “আমরা চাই শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ একটি নির্বাচন হোক। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।” শিক্ষার্থী সামিয়া বলেন, “আজ শুধু ভোট দেওয়ার দিন না, এটা আমাদের অধিকার ফিরে পাওয়ার দিন। খুব গর্ব হচ্ছে অংশ নিতে পেরে।”

প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, “নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ আমাদের অনুপ্রাণিত করছে। আমরা আশা করছি, এই নির্বাচন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক চর্চার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।” অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত হুসাইন বলেন, “চাকসু নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে শুধু দায়িত্ব নয়, হাজারো শিক্ষার্থীর প্রত্যাশা থাকবে। তারা যেন সেই আস্থা ও দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে।”

তিন যুগের বেশি সময় পর অনুষ্ঠিত হওয়া এই চাকসু নির্বাচন শুধু একটি ব্যালটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ, অধিকারচর্চা, নেতৃত্ব তৈরির সুযোগ এবং গণতন্ত্রের অনুশীলনের একটি বাস্তব রূপ।

আজকের দিনটি ইতিহাস হয়ে থাকবে সেইসব শিক্ষার্থীর জন্য, যারা বহু প্রতীক্ষার পর নিজেদের প্রতিনিধি নিজ হাতে বেছে নেওয়ার অধিকার ফিরে পেয়েছে।

এমআর/সবা