০৮:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৩৬ কোটি টাকার প্রকল্পে অনিয়ম, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ

  • নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, অর্ধসমাপ্ত কাজ রেখে বিল উত্তোলন
  • উপকারভোগী বাছাইয়ে স্বজনপ্রীতি
  • বছরজুড়েই উপকূলীয় এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট

 

উপকূলীয় জেলা বরগুনায় বছরজুড়েই থাকে বিশুদ্ধ পানির সংকট। এই সমস্যা নিরসনে ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেম’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। তবে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, অর্ধসমাপ্ত কাজ রেখে বিল উত্তোলন এবং উপকারভোগী বাছাইয়ে স্বজনপ্রীতির মতো নানা অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, ২০২২ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া ‘রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেম’ প্রকল্পের আওতায় বরগুনার তিনটি উপজেলায় পাঁচ হাজার ৫৪২টি পরিবারে তিন হাজার লিটার ধারণক্ষমতার ট্যাংক সরবরাহের কথা ছিল। প্রতিটি ইউনিটের জন্য বরাদ্দ ৪৫ হাজার টাকা। পাশাপাশি ক্যাচমেন্ট এরিয়া নির্মাণে অতিরিক্ত ছয় হাজার ৯৮০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও ট্যাংক, পাইপলাইন ও ফিল্টারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ দেওয়া হয়নি। ট্যাংক বসানোর প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে প্রথম শ্রেণির ইটের পরিবর্তে ব্যবহার হয়েছে নিম্নমানের ইট। অভিযোগ উঠেছে, কম সিমেন্ট ও নিম্নমানের বালু ব্যবহারের। এতে তৈরি কাঠামোগুলোর স্থায়িত্ব নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন উপকারভোগীরা। সরেজমিনে বরগুনা সদরের এম বালিয়াতলী ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে প্রকল্পের দেওয়া পানির ট্যাংক থাকলেও ব্যবহার করতে হচ্ছে পুকুরের পানি। উঠানের এক কোণে বসানো পানির ট্যাংকে দেওয়া হয়নি সংযোগ। একই অবস্থা অন্যসব সুবিধাভোগীদের বাড়িতেও। এই এলাকায় পাঁচটি বাড়িতে গিয়েও সম্পূর্ণ পাওয়া যায়নি কোনো পানির প্ল্যান্ট। শুধুমাত্র প্ল্যাটফর্ম করেই দায় সেরেছেন ঠিকাদার। নিম্নমানের কাজের জন্য প্রকল্পের সবকিছুই এখন জরাজীর্ণ। স্থানীয়দের অভিযোগ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের এই প্রকল্পের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে দিতে হয়েছে ৫-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুস। আবার প্ল্যাটফর্ম সম্পন্ন হওয়ার পরে বাড়ি পর্যন্ত পানির ট্যাংকগুলো নিয়ে আসতে হয়েছে উপকারভোগীদের নিজ খরচে। ট্যাংক আনার দুই বছরেও দেওয়া হয়নি সংযোগ।
এ বিষয়ে বালিয়াতলী গ্রামের হামিদা বেগম বলেন, ‘প্রকল্পে নাম উঠাতে আমার কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। এরপর শুধু প্ল্যাটফর্ম করে তারা চলে গেছে কিন্তু আজ পর্যন্ত পানির ট্যাংকসহ কিছুই পাইনি। অথচ পানির সমস্যার কারণে আমরা এই প্রকল্পে নাম দিয়েছিলাম। পানির ট্যাংক এখন বোঝা হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন আরিফ ইসলাম নামের এক ভুক্তভোগী। তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পে নাম লেখাতে আমাদের কাছ থেকে সাত হাজার টাকা নিয়েছিল। দুই বছর আগে প্ল্যাটফর্ম, এরপর ট্যাংক প্রদান করে। তারপর থেকে তারা আর কোনো খোঁজ নেয়নি। এখন এগুলো পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে।’ দুলাল মোল্লা নামের আরেক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, ‘দুই বছর ধরে আমাদেরকে ঠিকাদার ঘুরাচ্ছে। অথচ জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এসব বিষয়ে কেউ দেখভাল করতে আসেনি। আমরা গ্রামের মানুষ, এ বিষয়ে কাউকে বলার মতো পাই না। আমরা চাই এরসঙ্গে জড়িত ঠিকাদার ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তি হোক। মেসার্স কামাল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী কামাল হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। বরগুনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাইসুল ইসলামের বক্তব্য জানতে তার অফিসে গেলে তিনি ঢাকায় আছেন বলে অফিস থেকে জানানো হয়। পরবর্তী সময়ে তাকে বারবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। বরগুনা সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি মনির হোসেন কামাল বলেন, ‘বরগুনায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের নামে কোটি কোটি টাকার যে প্রকল্প চলছে ,তার সুফল মানুষ পাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ যদি সুফলই না পায়, তবে সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়ন না করাই ভালো। বর্তমানে এ কাজগুলো যারা করছেন, তাদের কাজে গাফিলতি থাকলে অথবা অনিয়ম দুর্নীতি হলে তদন্ত করে শাস্তির আওতায় আনা দরকার।’

জনপ্রিয় সংবাদ

ঈদগাঁওয়ে ৪৯ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই বিতরণের প্রস্তুতি ও কার্যক্রম শুরু

৩৬ কোটি টাকার প্রকল্পে অনিয়ম, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ

আপডেট সময় : ০৭:১১:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
  • নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, অর্ধসমাপ্ত কাজ রেখে বিল উত্তোলন
  • উপকারভোগী বাছাইয়ে স্বজনপ্রীতি
  • বছরজুড়েই উপকূলীয় এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট

 

উপকূলীয় জেলা বরগুনায় বছরজুড়েই থাকে বিশুদ্ধ পানির সংকট। এই সমস্যা নিরসনে ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেম’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। তবে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, অর্ধসমাপ্ত কাজ রেখে বিল উত্তোলন এবং উপকারভোগী বাছাইয়ে স্বজনপ্রীতির মতো নানা অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, ২০২২ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া ‘রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেম’ প্রকল্পের আওতায় বরগুনার তিনটি উপজেলায় পাঁচ হাজার ৫৪২টি পরিবারে তিন হাজার লিটার ধারণক্ষমতার ট্যাংক সরবরাহের কথা ছিল। প্রতিটি ইউনিটের জন্য বরাদ্দ ৪৫ হাজার টাকা। পাশাপাশি ক্যাচমেন্ট এরিয়া নির্মাণে অতিরিক্ত ছয় হাজার ৯৮০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও ট্যাংক, পাইপলাইন ও ফিল্টারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ দেওয়া হয়নি। ট্যাংক বসানোর প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে প্রথম শ্রেণির ইটের পরিবর্তে ব্যবহার হয়েছে নিম্নমানের ইট। অভিযোগ উঠেছে, কম সিমেন্ট ও নিম্নমানের বালু ব্যবহারের। এতে তৈরি কাঠামোগুলোর স্থায়িত্ব নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন উপকারভোগীরা। সরেজমিনে বরগুনা সদরের এম বালিয়াতলী ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে প্রকল্পের দেওয়া পানির ট্যাংক থাকলেও ব্যবহার করতে হচ্ছে পুকুরের পানি। উঠানের এক কোণে বসানো পানির ট্যাংকে দেওয়া হয়নি সংযোগ। একই অবস্থা অন্যসব সুবিধাভোগীদের বাড়িতেও। এই এলাকায় পাঁচটি বাড়িতে গিয়েও সম্পূর্ণ পাওয়া যায়নি কোনো পানির প্ল্যান্ট। শুধুমাত্র প্ল্যাটফর্ম করেই দায় সেরেছেন ঠিকাদার। নিম্নমানের কাজের জন্য প্রকল্পের সবকিছুই এখন জরাজীর্ণ। স্থানীয়দের অভিযোগ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের এই প্রকল্পের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে দিতে হয়েছে ৫-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুস। আবার প্ল্যাটফর্ম সম্পন্ন হওয়ার পরে বাড়ি পর্যন্ত পানির ট্যাংকগুলো নিয়ে আসতে হয়েছে উপকারভোগীদের নিজ খরচে। ট্যাংক আনার দুই বছরেও দেওয়া হয়নি সংযোগ।
এ বিষয়ে বালিয়াতলী গ্রামের হামিদা বেগম বলেন, ‘প্রকল্পে নাম উঠাতে আমার কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। এরপর শুধু প্ল্যাটফর্ম করে তারা চলে গেছে কিন্তু আজ পর্যন্ত পানির ট্যাংকসহ কিছুই পাইনি। অথচ পানির সমস্যার কারণে আমরা এই প্রকল্পে নাম দিয়েছিলাম। পানির ট্যাংক এখন বোঝা হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন আরিফ ইসলাম নামের এক ভুক্তভোগী। তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পে নাম লেখাতে আমাদের কাছ থেকে সাত হাজার টাকা নিয়েছিল। দুই বছর আগে প্ল্যাটফর্ম, এরপর ট্যাংক প্রদান করে। তারপর থেকে তারা আর কোনো খোঁজ নেয়নি। এখন এগুলো পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে।’ দুলাল মোল্লা নামের আরেক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, ‘দুই বছর ধরে আমাদেরকে ঠিকাদার ঘুরাচ্ছে। অথচ জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এসব বিষয়ে কেউ দেখভাল করতে আসেনি। আমরা গ্রামের মানুষ, এ বিষয়ে কাউকে বলার মতো পাই না। আমরা চাই এরসঙ্গে জড়িত ঠিকাদার ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তি হোক। মেসার্স কামাল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী কামাল হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। বরগুনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাইসুল ইসলামের বক্তব্য জানতে তার অফিসে গেলে তিনি ঢাকায় আছেন বলে অফিস থেকে জানানো হয়। পরবর্তী সময়ে তাকে বারবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। বরগুনা সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি মনির হোসেন কামাল বলেন, ‘বরগুনায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের নামে কোটি কোটি টাকার যে প্রকল্প চলছে ,তার সুফল মানুষ পাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ যদি সুফলই না পায়, তবে সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়ন না করাই ভালো। বর্তমানে এ কাজগুলো যারা করছেন, তাদের কাজে গাফিলতি থাকলে অথবা অনিয়ম দুর্নীতি হলে তদন্ত করে শাস্তির আওতায় আনা দরকার।’