► জর্ডানে ইসরায়েলি দূতাবাস ঘেরাও, ব্যাপক সংঘর্ষ
►গাজার আরো দুই হাসপাতাল অবরুদ্ধ, হামলা
গাজায় প্রতিদিনই বাড়ছে নিহতের সংখ্যা, ছোট্ট ভূখণ্ডটি দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। এ পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্ররা গাজা যুদ্ধ নিয়ে তাদের বাড়তে থাকা সংশয় প্রকাশ করতে শুরু করেছে। ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে গাজায় ৩২ হাজারের বেশি মানুষ এরই মধ্যে নিহত হয়েছে। এখন, ইসরায়েল সরকার মিশর সীমান্তবর্তী দক্ষিণের শহর রাফাহতে স্থল অভিযান শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েল সরকার যেভাবে গোঁ ধরে আছে, বিশেষ করে রাফাহতে পরিকল্পনা অনুযায়ী স্থল অভিযান চালানোর বিষয়টি নিয়ে দেশটির একগুঁয়েমিতে মিত্ররা উদ্বিগ্ন। ইসরায়েলের অভিযান থেকে প্রাণে বাঁচতে ১১ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি রাফাহতে আশ্রয় নিয়ে আছে। গাজা ভয়াবহ যে মানবিক বিপর্যয়ে পতিত হওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে আছে তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান আরো জরুরি হয়ে উঠছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলের পক্ষে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সবচেয়ে প্রভাবশালী মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। তারা গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে তোলা বেশ কয়েকটি প্রস্তাব ‘ভেটো’ দিয়ে আটকে দিয়েছে। তবে তাদের সেই সম্পর্কে ফাটল স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। এ সপ্তাহের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং নেতানিয়াহু একটি ফোনালাপে বার বার তর্কে জড়িয়েছেন। বাইডেন বলেছেন, (রাফাহ) স্থল অভিযানের পরিকল্পনা ‘ভুল’। যেখানে নেতানিয়াহু স্পষ্টই বলেছেন, তিনি নিজের অবস্থান থেকে বিন্দুমাত্র সরবেন না।
সম্প্রতি কানাডার পার্লামেন্টে ২০৪-১১৭ ভোটে ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংবাদ সংস্থা এএফপি কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ৮ জানুয়ারির পর থেকে কানাডা সরকার ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানির আর কোনো অনুমতিপত্রে অনুমোদন দেয়নি। এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা আমাদের রপ্তানি নীতির সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্মত হতে পারছি, ততক্ষণ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত অব্যাহত থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো কানাডাও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের একজন। কানাডা ছাড়াও জাপান, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস ও স্পেনসহ আরো কয়েকটি দেশ ইসরায়েল অস্ত্র রপ্তানি স্থগিত করতে চলেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে স্পেন গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সরব অবস্থান নিয়েছে। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ইউরোপিয়ান কমিশনকে ইইউ-ইসরায়েল সমন্বয় চুক্তি পুনর্বিবেচনা করে দেখতে বলেছেন। ইইউ ও ইসরায়েলের মধ্যে রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে ওই চুক্তি হয়েছে। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক অবশ্য তাদের এই আহ্বান বাতিল করে দিয়েছেন। তবে আগের দিন বৃহস্পতিবার ইইউভুক্ত ২৭ দেশের নেতারা একটি যৌথ বিবৃতিতে গাজায় ‘অবিলম্বে একটি মানবিক বিরতির’ আহ্বান জানিয়েছেন। যা একটি ‘টেকসই যুদ্ধবিরতি, সব জিম্মির নিঃর্শত মুক্তি এবং মানবিক সহায়তার ব্যবস্থা করার পথে পরিচালিত হবে। গাজায় পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে এই প্রথম ইইউ থেকে সম্মিলিত কোনো বিবৃতি দেওয়া হলো।
এদিকে গাজায় হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলা ও নিরীহ মানুষকে হত্যার প্রতিবাদে জর্ডানের রাজধানীর আম্মানে ইসরায়েলি দূতাবাস ঘেরাওয়ে জড়ো হয়েছিলেন শত শত জর্ডানি। পরে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ তাদের ওপর টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। গত রোববার আম্মানে কালোতি মসজিদে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সেখানে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করে কর্তৃপক্ষ। এখানেই ইসরায়েলি দূতাবাস ঘেরাওয়ের প্রস্তুতি নিয়েছিল তারা। পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দূতাবাস ঘেরায়ের জন্য বিক্ষোভকারীরা সামনের দিকে এগোতে থাকলে তাদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ। এ সময় অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময় বিক্ষোভকারীরা ‘আমরা সীমান্তে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের হত্যা এবং তাদের জিম্মি করতে চাই; আমরা পাল্টা প্রতিশোধ নিতে চাই; হামাসের সদস্যরা তোমরা তেল আবিবে বোমা হামলা চালাও’ এমন নানা স্লোগান দেন। পুলিশ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করে নাই।
অন্যদিকে গাজার প্রধান হাসপাতাল আল-শিফায় হামলার মধ্যে আরো দুই হাসপাতাল অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। আল-আমাল ও আল-নাসর নামের হাসপাতাল দুটিতে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানায়, হাসপাতাল ঘিরে রেখে গুলি চালানো হচ্ছে। ফলে ভেতরে আটকা পড়েছেন রোগী ও চিকিৎসকরা। এর আশপাশে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে।
গত সপ্তাহ থেকে গাজার আল-শিফা হাসপাতালে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। সেখান থেকে ৪৮০ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে আইডিএফ। গাজার হাসপাতালগুলোকে হামাস যোদ্ধারা অস্ত্র রাখার ও হামলা চালানোর ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছেন বলে দাবি আইডিএফের। কিন্তু তাদের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছে হামাস ও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।
মিসর সীমান্তের কাছে অবস্থিত রাফাহ শহরে ১৫ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ অবস্থান করছে। এর আগে গত শনিবার গাজা দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা লাইনের ওপর হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে অন্তত ১৯ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার আল নুসিরাতে ত্রাণের লাইনে হামলা চালিয়ে ২৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত করে।

























