১০:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঘরে ফেরার চেষ্টায় বানভাসিরা

◉ ধীরে নামছে বন্যার পানি, বাড়ছে রোগ-বালাই
◉ মৃত্যু বেড়ে ৭১, ক্ষতিগ্রস্ত ১২০৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
◉ ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার আশ্বাস
◉৬০০ পরিবারকে রেড ক্রিসেন্টের ত্রাণ সহায়তা

খুব ধীরগতিতে কমছে বন্যার পানি। ফলে, বানভাসি মানুষের কষ্ট বাড়ছেই। বাড়ছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগবালাই। এই বিপযর্য়ের মধ্যেই নিজেদের বাড়িঘর মেরামত শুরু করেছেন স্থানীয়রা। ঘরের আসবাবপত্র সব নষ্ট, ঘর নষ্ট, জমির ফসল নষ্ট। এমন অবস্থায় অত্যন্ত অমানবিক জীবনযাপন করছে দেশের বন্যাক্রান্ত ১৪ জেলার মানুষ। এই পরিস্থিতি পরিবর্তনে তারা সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন।
চলমান বন্যায় সারা দেশে প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১ জনে। এছাড়া বর্তমানে পানিবন্দি রয়েছে ৫ লাখ ৮২ হাজার ১৫৫টি পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৫০ লাখ ২৪ হাজার ২০২ জন।

গতকাল মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় জানায়, নিহতদের মধ্যে পুরুষ রয়েছে ৪৫ জন। এছাড়া ৭ জন মহিলা এবং ১৯ জন শিশু রয়েছে। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ২৮ জন মারা গেছে ফেনীতে। কুমিল্লায় ১৯, নোয়াখালীতে ১১, চট্টগ্রামে ৬, কক্সবাজারে ৩ এবং খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর ও মৌলভীবাজারের একজন করে মারা গেছেন। মৌলভীবাজার জেলায় এখনো একজন নিখোঁজ রয়েছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। মৌলভীবাজার জেলার পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। আর কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। বন্যার্তদের আশ্রয়ের জন্য ৩ হাজার ৬১২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৮৫ হাজার ৯৯৬ জন মানুষ, ৩১ হাজার ২০৩টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম জানিয়েছেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো পুনর্বাসনে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
এর আগে, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের সমন্বয়ক, আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর, আইওএম চিফ অব মিশন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি, ডাব্লিউএফপির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর, ইউনিসেফের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ, ইউএনআরসিও হিউম্যান্টেরিয়ান অ্যাফেয়ার অ্যাডভাইজারের সঙ্গে বৈঠক করেন উপদেষ্টা।
ফারুক-ই-আজম বলেন, আজ ইউএন (জাতিসংঘ) বডির আটটি নানা রকমের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সভা করেছি। তারা পুনর্বাসন কাজে যুক্ত হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বন্যার সময়ে সেনাবাহিনী ও জনগণের উদ্দীপনা, ত্রাণ কার্যক্রম, স্বেচ্ছাসেবা এবং অভূতপূর্ব সহযোগিতার জন্য দাতা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা প্রশংসা করেছেন বলেও জানান তিনি।

ত্রাণ উপদেষ্টা বলেন, আমরা বন্যার ত্রাণ পর্যায়টা অতিক্রম করে পুনর্বাসন পর্যায়ের দিকে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ খুব দ্রুত চলছে। মাঠ পর্যায়ে থেকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের পর কোন কোন বিষয়ে তারা সহযোগিতা দিতে পারেন সেটা আমরা নির্ণয় করে দিলে তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত আশাবাদী যে, আমরা দুর্যোগ যেভাবে সাহসিকতার সঙ্গে সাধারণ মানুষ ও স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় অতিক্রম করতে পেরেছি, আমরা ভবিষ্যতে পুনর্বাসন কর্মসূচিও সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে পারব।

উপদেষ্টা বলেন, ডি-ফরমের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য তিন সপ্তাহের মধ্যে দিতে হয়। আমরা সেটি এক সপ্তাহের মধ্যে করতে বলেছি। ত্রাণ বিতরণে অব্যবস্থাপনা আছে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, অব্যবস্থাপনা যে একেবারে হয়নি সেটা তো নয়। তবে আমরাও শিখছি।

এদিকে, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ১২০৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৭ কোটি ৩৮ লাখ ৭০ হাজার ৮০০ টাকা। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৬৫টিতে এখনই ক্লাস শুরু করা সম্ভব হবে না।
ওই প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৮৪৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৪ কোটি ৯৪ লাখ ৮৫ হাজার ৮০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, এ অঞ্চলে বর্তমানে ৬১৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস চলছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লাস চালু করা এখনই সম্ভব নয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম অঞ্চলের মধ্যে নোয়াখালী জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ জেলায় ৫৬৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১২ কোটি ২৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ফেনীতে ২৮১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১১ কোটি ৬৫ লাখ ৫ হাজার ৮০০ টাকা ও চট্টগ্রামে ২৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকার।

মাউশি জানিয়েছে, কুমিল্লা অঞ্চলে মোট ৩৩৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার আর্থিক পরিমাণ ১২ কোটি ১৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এ অঞ্চলে বর্তমানে ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস চলছে। বাকি ৩১৪টিতে এখনই পাঠদান চালু করা সম্ভব নয়।
কুমিল্লা অঞ্চলের মধ্যে লক্ষ্মীপুরে ৫৪টি, চাঁদপুরে ৪০টি, কুমিল্লায় ২৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লা জেলায় ১৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস চলমান। বাকি ২২৩টি ক্লাস চালুর অযোগ্য হয়ে পড়েছে। চাঁদপুরে ৩টিতে ক্লাস চলমান। বাকি ৩৭টি পাঠদানের অযোগ্য অবস্থায় রয়েছে।
সিলেট অঞ্চলে মোট ২৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৮ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে এ অঞ্চলে ২৮টি প্রতিষ্ঠানেই পাঠদান চলমান আছে।
লক্ষ্মীপুরে বন্যাকবলিত এলাকার দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (বিডিআরসিএস)। রেড ক্রিসেন্ট চেয়ারম্যান প্রথমে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। এরপর বাঞ্চানগর, হোগল্ডোহরী এবং মজুপুর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ৬০০ পরিবারের মাঝে ৭ দিনের খাবার প্যাকেজ (সাড়ে ৭ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ লিটার সয়াবিন তেল, ১ কেজি চিনি, ১ কেজি লবণ ও ৫০০ গ্রাম সুজি) বিতরণ করেন তিনি। এ সময় বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি কর্তৃক ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প পরিদর্শন, বিশুদ্ধ পানি ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। বিকালে কুমিল্লার শুভাপুর ইউনিয়নের চৌদ্দগ্রামে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন বিডিআরসিএস চেয়ারম্যান। দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় রেড ক্রিসেন্ট সবসময় নিবেদিত মন্তব্য করে সোসাইটির চেয়ারম্যান বলেন, আকস্মিক বন্যার শুরু থেকেই মাঠে আছেন আমাদের যুব স্বেচ্ছাসেবক ও কর্মীরা। বন্যা আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে লক্ষ্মীপুরে এ পর্যন্ত ১৯ হাজার ১৭৫ জন মানুষকে ত্রাণের আওতায় আনা হয়েছে। বন্যাদুর্গত মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ২০০ মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ঘরে ফেরার চেষ্টায় বানভাসিরা

আপডেট সময় : ০৭:২৬:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

◉ ধীরে নামছে বন্যার পানি, বাড়ছে রোগ-বালাই
◉ মৃত্যু বেড়ে ৭১, ক্ষতিগ্রস্ত ১২০৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
◉ ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার আশ্বাস
◉৬০০ পরিবারকে রেড ক্রিসেন্টের ত্রাণ সহায়তা

খুব ধীরগতিতে কমছে বন্যার পানি। ফলে, বানভাসি মানুষের কষ্ট বাড়ছেই। বাড়ছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগবালাই। এই বিপযর্য়ের মধ্যেই নিজেদের বাড়িঘর মেরামত শুরু করেছেন স্থানীয়রা। ঘরের আসবাবপত্র সব নষ্ট, ঘর নষ্ট, জমির ফসল নষ্ট। এমন অবস্থায় অত্যন্ত অমানবিক জীবনযাপন করছে দেশের বন্যাক্রান্ত ১৪ জেলার মানুষ। এই পরিস্থিতি পরিবর্তনে তারা সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন।
চলমান বন্যায় সারা দেশে প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১ জনে। এছাড়া বর্তমানে পানিবন্দি রয়েছে ৫ লাখ ৮২ হাজার ১৫৫টি পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৫০ লাখ ২৪ হাজার ২০২ জন।

গতকাল মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় জানায়, নিহতদের মধ্যে পুরুষ রয়েছে ৪৫ জন। এছাড়া ৭ জন মহিলা এবং ১৯ জন শিশু রয়েছে। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ২৮ জন মারা গেছে ফেনীতে। কুমিল্লায় ১৯, নোয়াখালীতে ১১, চট্টগ্রামে ৬, কক্সবাজারে ৩ এবং খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর ও মৌলভীবাজারের একজন করে মারা গেছেন। মৌলভীবাজার জেলায় এখনো একজন নিখোঁজ রয়েছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। মৌলভীবাজার জেলার পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। আর কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। বন্যার্তদের আশ্রয়ের জন্য ৩ হাজার ৬১২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৮৫ হাজার ৯৯৬ জন মানুষ, ৩১ হাজার ২০৩টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম জানিয়েছেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো পুনর্বাসনে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
এর আগে, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের সমন্বয়ক, আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর, আইওএম চিফ অব মিশন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি, ডাব্লিউএফপির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর, ইউনিসেফের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ, ইউএনআরসিও হিউম্যান্টেরিয়ান অ্যাফেয়ার অ্যাডভাইজারের সঙ্গে বৈঠক করেন উপদেষ্টা।
ফারুক-ই-আজম বলেন, আজ ইউএন (জাতিসংঘ) বডির আটটি নানা রকমের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সভা করেছি। তারা পুনর্বাসন কাজে যুক্ত হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বন্যার সময়ে সেনাবাহিনী ও জনগণের উদ্দীপনা, ত্রাণ কার্যক্রম, স্বেচ্ছাসেবা এবং অভূতপূর্ব সহযোগিতার জন্য দাতা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা প্রশংসা করেছেন বলেও জানান তিনি।

ত্রাণ উপদেষ্টা বলেন, আমরা বন্যার ত্রাণ পর্যায়টা অতিক্রম করে পুনর্বাসন পর্যায়ের দিকে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ খুব দ্রুত চলছে। মাঠ পর্যায়ে থেকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের পর কোন কোন বিষয়ে তারা সহযোগিতা দিতে পারেন সেটা আমরা নির্ণয় করে দিলে তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত আশাবাদী যে, আমরা দুর্যোগ যেভাবে সাহসিকতার সঙ্গে সাধারণ মানুষ ও স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় অতিক্রম করতে পেরেছি, আমরা ভবিষ্যতে পুনর্বাসন কর্মসূচিও সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে পারব।

উপদেষ্টা বলেন, ডি-ফরমের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য তিন সপ্তাহের মধ্যে দিতে হয়। আমরা সেটি এক সপ্তাহের মধ্যে করতে বলেছি। ত্রাণ বিতরণে অব্যবস্থাপনা আছে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, অব্যবস্থাপনা যে একেবারে হয়নি সেটা তো নয়। তবে আমরাও শিখছি।

এদিকে, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ১২০৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৭ কোটি ৩৮ লাখ ৭০ হাজার ৮০০ টাকা। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৬৫টিতে এখনই ক্লাস শুরু করা সম্ভব হবে না।
ওই প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৮৪৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৪ কোটি ৯৪ লাখ ৮৫ হাজার ৮০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, এ অঞ্চলে বর্তমানে ৬১৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস চলছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লাস চালু করা এখনই সম্ভব নয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম অঞ্চলের মধ্যে নোয়াখালী জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ জেলায় ৫৬৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১২ কোটি ২৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ফেনীতে ২৮১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১১ কোটি ৬৫ লাখ ৫ হাজার ৮০০ টাকা ও চট্টগ্রামে ২৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকার।

মাউশি জানিয়েছে, কুমিল্লা অঞ্চলে মোট ৩৩৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার আর্থিক পরিমাণ ১২ কোটি ১৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এ অঞ্চলে বর্তমানে ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস চলছে। বাকি ৩১৪টিতে এখনই পাঠদান চালু করা সম্ভব নয়।
কুমিল্লা অঞ্চলের মধ্যে লক্ষ্মীপুরে ৫৪টি, চাঁদপুরে ৪০টি, কুমিল্লায় ২৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লা জেলায় ১৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস চলমান। বাকি ২২৩টি ক্লাস চালুর অযোগ্য হয়ে পড়েছে। চাঁদপুরে ৩টিতে ক্লাস চলমান। বাকি ৩৭টি পাঠদানের অযোগ্য অবস্থায় রয়েছে।
সিলেট অঞ্চলে মোট ২৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৮ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে এ অঞ্চলে ২৮টি প্রতিষ্ঠানেই পাঠদান চলমান আছে।
লক্ষ্মীপুরে বন্যাকবলিত এলাকার দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (বিডিআরসিএস)। রেড ক্রিসেন্ট চেয়ারম্যান প্রথমে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। এরপর বাঞ্চানগর, হোগল্ডোহরী এবং মজুপুর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ৬০০ পরিবারের মাঝে ৭ দিনের খাবার প্যাকেজ (সাড়ে ৭ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ লিটার সয়াবিন তেল, ১ কেজি চিনি, ১ কেজি লবণ ও ৫০০ গ্রাম সুজি) বিতরণ করেন তিনি। এ সময় বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি কর্তৃক ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প পরিদর্শন, বিশুদ্ধ পানি ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। বিকালে কুমিল্লার শুভাপুর ইউনিয়নের চৌদ্দগ্রামে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন বিডিআরসিএস চেয়ারম্যান। দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় রেড ক্রিসেন্ট সবসময় নিবেদিত মন্তব্য করে সোসাইটির চেয়ারম্যান বলেন, আকস্মিক বন্যার শুরু থেকেই মাঠে আছেন আমাদের যুব স্বেচ্ছাসেবক ও কর্মীরা। বন্যা আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে লক্ষ্মীপুরে এ পর্যন্ত ১৯ হাজার ১৭৫ জন মানুষকে ত্রাণের আওতায় আনা হয়েছে। বন্যাদুর্গত মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ২০০ মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে।