- জুন মাসে ১৩৬ কোটি টাকার ভারতীয় পণ্যসামগ্রী জব্দ
- মর্টার শেল-হ্যান্ড গ্রেনেডসহ দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার
- সীমান্ত অতিক্রমে ৭ ভারতীয় ও ১৫৫ বাংলাদেশি আটক
- সাড়ে ৪ কেজি স্বর্ণ ও ভারতীয় পণ্যসহ চোরাচালান চক্রের ১৯৭ সদস্য আটক
- বাংলাদেশে অনুবেশের চেষ্টাকালে মিয়ানমারের ৩৩৫ জন নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত
দেশের বিভিন্ন জেলার দুর্গম সীমান্ত এলাকাজুড়ে প্রতিদিনই অবৈধ পথে ভারতীয় চোরাচালানী পণ্যসামগ্রী এ দেশে প্রবেশ করছে। সীমান্ত এলাকার দুই পাড়েই রয়েছে সংঘবদ্ধ চোরাচালানী চক্র। তারা শুল্ক ফাঁকি দিয়ে রাতের আঁধারে এমনকি বৈরী আবহাওয়ার সুযোগ নিয়ে দুর্গম পাহাড়ি জনপদ ও বন-জঙ্গল মাড়িয়ে চোরাচালানি পণ্যসামগ্রী এ দেশে নিয়ে আসছে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকেও স্বর্ণসহ অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী চোরাই পথে ভারতে পাঠানো হচ্ছে। সীমান্ত দিয়ে অবাধে এ দেশে প্রবেশ করছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। এতে প্রতিনিয়তই সরকার হারাচ্ছে বিপুল অংকের রাজস্ব।
বিজিবি বলছে, চলতি বছরের জুন মাসে দেশের সীমান্ত এলাকাসহ অন্যান্য স্থানে অভিযান চালিয়ে সর্বমোট ১৩৬ কোটি ৯ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ সময় সীমান্তসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মর্টার শেল ও হ্যান্ড গ্রেনেডসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। একই সঙ্গে সীমান্ত এলাকা অতিক্রম করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের দায়ে ৭ ভারতীয় নাগরিক ও ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ১৫৫ বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে মিয়ানমারের ৩৩৫ জন নাগরিককে আটক করে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। সীমান্তে চোরাচালানে জড়িত থাকার দায়ে প্রায় সাড়ে ৪ কেজি স্বর্ণ ও ভারতীয় বিভিন্ন চোরাচালানি পণ্যসামগ্রীসহ চক্রের ১৯৭ জন সদস্যকে আটক করা হয়েছে। সিলেট বিজিবি’র ৪৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. নাজমুল হক বলেন, সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষা, চোরাচালান দমন এবং অস্ত্র-মাদকদ্রব্যের অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে বিজিবির আভিযানিক কার্যক্রম ও গোয়েন্দা তৎপরতা সর্বোতভাবে অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে গত ১৪ জুলাই দৈনিক সবুজ বাংলায় পাঠানো বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত জুন মাসে সারা দেশে বিজিবি’র অভিযানে জব্দকৃত চোরাচালান দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে- ৪ কেজি ৩৩৮ গ্রাম স্বর্ণ, ১৩ হাজার ৩৭২টি শাড়ি, ৩ হাজার ৫০০টি থ্রিপিস/শার্টপিস/চাদর/কম্বল, ৫৪৮টি তৈরি পোশাক, ২ হাজার ১৪৭ মিটার থান কাপড়, ২ লাখ ২৫ হাজার ৯৬টি কসমেটিক্স সামগ্রী, ৪ হাজার ৫৭৮টি ইমিটেশন সামগ্রী, ৬ লাখ ৬৪ হাজার ৫০৮টি আতশবাজি, ৬ হাজার ৩৪৫ ঘনফুট কাঠ, ৪ হাজার ৯০৩ কেজি চা পাতা, ৩১ হাজার ৯৭৪ কেজি সুপারি, ১৭ হাজার ৭৬৯ কেজি সার, ১০ হাজার ৫৪০ কেজি কয়লা, ১৯ হাজার ২০৪ কেজি সুতা/কারেন্ট জাল, এক হাজার ৩২৮টি মোবাইল, এক হাজার ৮৫০টি মোবাইল কভার, ৩৭ হাজার ৫৪১টি মোবাইল ডিসপ্লে, ১৫ হাজার ৫১৯টি চশমা, ২ হাজার ১৮২ কেজি বিভিন্ন প্রকার ফল, ৫ হাজার ৮৪৪ কেজি ভোজ্য তেল, এক হাজার লিটার ডিজেল, ৩ হাজার ১৮২ কেজি জিরা, এক হাজার ৩৩৬ প্যাকেট বিভিন্ন প্রকার বীজ, ৭ হাজার ৪৯২টি চিংড়ি মাছের পোনা, এক হাজার ১৫০ কেজি কফি, ৫ লাখ ৪৭ হাজার ২৪৬ পিস চকোলেট, ৭৭৭টি গরু/মহিষ, একটি কষ্টি পাথরের মূর্তি। এছাড়া এসব চোরাচালানি পণ্য বহনে ব্যবহৃত ৩টি বাস, ১০টি ট্রাক/কাভার্ড ভ্যান, ৩টি পিকআপ/মাহেন্দ্র, ৭টি প্রাইভেটকার/মাইক্রোবাস, ১৩৮টি নৌকা, ২৭টি সিএনজি/ইজিবাইক, ৬৪টি মোটরসাইকেল এবং ৩৯টি বাইসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।
অপরদিকে বিজিবি’র অভিযানে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ২টি দেশীয় পিস্তল, ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি দেশীয় একনাল বন্দুক, ৩টি শটগান, ৩টি মর্টার শেল, ১৯টি গুলি এবং ৪টি হ্যান্ড গ্রেনেড।
এছাড়াও গত মাসে বিজিবি কর্তৃক বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে- ১২ লাখ ৬৮ হাজার ১৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৭ কেজি ৯২৫ গ্রাম হেরোইন, ১ কেজি ৪৩০ গ্রাম কোকেন, ৮ হাজার ২৭২ বোতল ফেনসিডিল, ১০ হাজার ৯৪০ বোতল বিদেশি মদ, ৩৯৩.৫ লিটার বাংলা মদ, ১ হাজার ৪৩৫ বোতল ক্যান বিয়ার, ১ হাজার ৬৯৮ কেজি ৭০৭ গ্রাম গাঁজা, ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৮৭ প্যাকেট বিড়ি ও সিগারেট, ২ হাজার ৬৪৯ কেজি তামাক পাতা, ৫৩ হাজার ৯৩৫টি নেশাজাতীয় ট্যাবলেট/ইনজেকশন, ৪ হাজার ৭৭০ বোতল ইস্কাফ সিরাপ, ১৭ বোতল এলএসডি, ১২ হাজার ৩৭৬টি এ্যানেগ্রা/সেনেগ্রা ট্যাবলেট এবং ৯ লাখ ৬১ হাজার ৩৩টি বিভিন্ন প্রকার ওষুধ ও অন্যান্য ট্যাবলেট।
সীমান্তে বিজিবি’র অভিযানে ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক পাচার ও অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে চোরাচালানি চক্রের সক্রিয় ১৯৭ সদস্য এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে ১৫৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক ও ৭ জন ভারতীয় নাগরিককে আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ৩৩৫ জন মায়ানমার নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত প্রদান করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট বিজিবি ৪৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. নাজমুল হক বলেন, সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষা, চোরাচালান দমন এবং অস্ত্র-মাদকদ্রব্যের অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে বিজিবির আভিযানিক কার্যক্রম অব্যাহত ও গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে, গত ১ জুলাই সকালে গোপন সংবাদে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তবর্তী আলীর ডেইল ও খরেরমুখ এলাকায় দুটি পৃথক অভিযান পরিচালনা করে ৯০,০০০ পিস ইয়াবা ও ২৮ কেজি গাঁজাসহ মাদক কারবারে জড়িত ২ নারীসহ ৩ জনকে আটক করেছে বিজিবি।
ওইদিন সকাল ৬টায় আলীর ডেইল এলাকা ঘিরে রেখে বিজিবি’র টহলদল চিরুনী অভিযান চালায়। এ সময় মাদক কারবারি মিনারা বেগমের বসত বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ৯০ হাজার পিস ইয়াবা জব্দসহ মিনারা বেগম ও মো. কেফায়েত উল্লাহকে আটক করা হয়। আটককৃত মিনারা বেগম সাবরাং আলীর ডেইল এলাকার মৃত ছিদ্দিকের মেয়ে এবং কেফায়েত উল্লাহ একই এলাকার ফরিদ আলমের ছেলে। তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ইয়াবাসহ টেকনাফ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। এদিন একই সময়ে গোপন সংবাদে টেকনাফের খরেরমুখ এলাকার বাসিন্দা জমিলা বেগমের বাড়ির মুরগির খামারের ভেতর তল্লাশি চালায় বিজিবি’র অপর একটি দল। এ সময় ২৮ কেজি গাঁজাসহ মাদক কারবারি জমিলা বেগমকে আটক করা হয়। মাদক ব্যবসায়ী জড়িত থাকার দায়ে জব্দকৃত মাদকদ্রব্যসহ গ্রেপ্তার ৩ জনকেই টেকনাফ থানায় সোপর্দ করেছে বিজিবি।
বিজিবি টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, দেশের সীমান্তের নিরাপত্তা, মাদক নির্মূল এবং সকল অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স নীতি বজায় রেখে অত্যন্ত পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে বিজিবি’র সদস্যরা। জাতীয় নিরাপত্তা ও জনস্বার্থে বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান বিজিবি’র এই কর্মকর্তা।


























