১২:৪১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জব্দ করা সম্পদ নিয়ে বিপাকে দুদক

  • বাড়ি-গাড়িসহ বিপুল সম্পদ ক্রোক
  • রক্ষণাবেক্ষণে দুদকের আছে কেবল ৫ জন
  • লুট হচ্ছে জব্দ করা সম্পদ

‘জোড়াতালি দিয়ে চলছে ক্রোক করা গুরুত্বপূর্ণ এসব সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ। অর্থাৎ এর জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মকর্তা নিয়োজিত নেই’- কর্মকর্তা, দুদক

‘অনুসন্ধান বা তদন্তকারী কর্মকর্তা সরজমিন পরিদর্শন করে সম্পদের সঠিকতা যাচাই করে তারপর ক্রোকের জন্য আবেদন করার কথা। ওই কর্মকর্তারই রিসিভার নিয়োগের জন্য আবেদন করার কথা। এছাড়া সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিট তো রয়েছেই। তাহলে কীভাবে এসব সম্পদ রিসিভার নিয়োগের বাইরে রয়েছে?’-মঈদুল ইসলাম, সাবেক মহাপরিচালক, দুদক

গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুর্নীতির অভিযোগে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বাড়ি-গাড়িসহ বিপুল সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ক্রোক করা সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ‘সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিট’। তবে বর্তমানে এর জনবল কেবল পাঁচজন, যা এত বিপুল সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অপ্রতুল। এদিকে, জনবল সংকটের কারণে জব্দ করা সম্পদ নিয়ে বিপাকে পড়েছে দুদক। অব্যবস্থাপনার কারণে৪ জব্দ করা অনেক সম্পদ উধাও হয়ে যাচ্ছে। অনেক সম্পদ লুট করা হচ্ছে। সংশি¬ষ্টরা বলছেন, জোড়াতালি দিয়ে চলছে ক্রোক করা গুরুত্বপূর্ণ এসব সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ। অর্থাৎ এর জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মকর্তা নিয়োজিত নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনুসন্ধান বা তদন্তকারী কর্মকর্তা সরজমিন পরিদর্শন করে সম্পদের সঠিকতা যাচাই করে তারপর ক্রোকের জন্য আবেদন করার কথা। ওই কর্মকর্তারই রিসিভার নিয়োগের জন্য আবেদন করার কথা। এছাড়া সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিট তো রয়েছেই। তাহলে কীভাবে এসব সম্পদ রিসিভার নিয়োগের বাইরে রয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন তাদের।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দেশে প্রায় ১ হাজার ৪৫৩ একর জমি, ৭২টি বাড়ি, ১৪০টি ফ্ল্যাট, সাতটি ভবন, ৪০টি প¬ট, ১০টি দোকান, ২৩৩টি গাড়ি, একটি ট্রাক, তিনটি জাহাজ, একটি অফিস স্পেস ও একটি পার্ক ক্রোক (অ্যাটাচ) করেছে। বিদেশে ৫৮২টি বাণিজ্যিক স্পেস ক্রোক করা হয়েছে। এছাড়া ৪ হাজার ৯৬০টি ব্যাংক হিসাব, ১৭টি সঞ্চয়পত্র, বিপুল পরিমাণ শেয়ার, ১৯টি বিও হিসাব, তিনটি বীমা পলিসি, নগদ অর্থ, সোনা, বিদেশী মুদ্রা অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করেছে। এদিকে, স্থাবর সম্পদ ক্রোক করার পর থেকে সংশি¬ষ্ট মালিকের পরিবর্তে এসব সম্পদ থেকে আয় হওয়া অর্থ রাষ্ট্র পায়। সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের মাধ্যমে এসব সম্পদের ব্যবস্থাপনা করে দুদক। এ ইউনিট দুদক সচিবের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। বর্তমানে একজন পরিচালক, দুজন উপপরিচালক, একজন সহকারী পরিচালক ও একজন উপসহকারী পরিচালকÍপাঁচজন দিয়ে চলছে সংস্থাটির সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিট। এছাড়া একজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, একজন অফিস সহায়ক, দুজন এএসআই ও একজন পিএ কর্মরত রয়েছেন।
এদিকে, বিধি অনুযায়ী, ক্রোক করা সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রিসিভার নিয়োগ করা হয়। আদালতের আদেশেই ক্রোক ও রিসিভার নিয়োগ করা হয়। দুদক অনুসন্ধান বা তদন্তকারী কর্মকর্তারা এসব আবেদন করেন। দুদক সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর সিরাজগঞ্জ-২ আসনের (সদর-কামারখন্দ) সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর ১৬টি গাড়ি ক্রোক করা হয়। একইভাবে এনা পরিবহনের ১৫৩টি যাত্রীবাহী বাসও ক্রোক করা হয়। এগুলোসহ গত এক বছরে মোট ২৩৩টি গাড়ি ক্রোক করে দুদক। কিন্তু এসব গাড়ির জন্য কোনো রিসিভার নিয়োগ করা হয়নি। আবার রিসিভার নিয়োগ করা গাড়িরও হদিস নেই। দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের তথ্যানুযায়ী, গত ১৩ জানুয়ারি দুদকের মামলায় সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা শামসুল হক রাজুর একটি গাড়ির (রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ-৩৫-৩৭০৭) রিসিভার নিয়োগ করা হয়। কিন্তু গাড়িটি দুদক এখনো বুঝে পায়নি বলে জানিয়েছেন দুদকেরই এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, ক্রোক করা ২৩৩টি গাড়ির মধ্যে এনা পরিবহনের ১৫৩টি বাস ও সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর ১৬টি গাড়িও রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণে এখনো রিসিভার নিয়োগ না হওয়ায় এসব গাড়ির আয় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হচ্ছে না।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, এনা পরিবহনের ১৫৩টি বাসের রিসিভার নিয়োগের বিষয়ে কমিশনে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা উপপরিচালক সাইদুজ্জামান আবেদন করেছেন। কিন্তু তিনি এখনো এ বিষয়ে আদালতের আদেশ পাননি। দুদকের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের আবেদনের পর গত ১২ জানুয়ারি সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর জমি, ফ্ল্যাটসহ ৪৫টি স্থাবর সম্পত্তি ও ১৬টি গাড়ি ক্রোক করা হয়। এছাড়া ১৯টি ব্যাংক হিসাবে থাকা প্রায় ৫৭ কোটি ও যৌথ মালিকানাধীন চার কোম্পানির ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করা হয়। কিন্তু ১৬টি গাড়ি ক্রোকের পর কোথায় রাখা হয়েছে সে তথ্য নেই দুদকের কাছে। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হন সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ২৩ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সেই মামলায় তাকে ১৩ জানুয়ারি গ্রেফতার দেখানো হয়।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ক্রোক করা সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিতে নীতিমালা তৈরি করছে দুদক। দুদক কর্মকর্তারা জানান, ফ্রিজ বা ক্রোক আদেশের ক্ষমতা তদন্তকারীর হাতে থাকা উচিত। আদালত থেকে আদেশ আনতে আনতে অনেক দেরি হয়ে যায়। ততক্ষণে ব্যাংকের টাকা অপরাধীরা সরিয়ে ফেলে। ফ্রিজ ও ক্রোকের মেয়াদও বাড়ানো উচিত। সাধারণত অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হলে ছয়-সাত মাস পরে আনফ্রিজ হয়ে যায়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ও কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী কোনো মন্তব্য করেননি।
তবে দুদকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জোড়াতালি দিয়ে চলছে ক্রোক করা গুরুত্বপূর্ণ এসব সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ। অর্থাৎ এর জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মকর্তা নিয়োজিত নেই। অনুসন্ধান-তদন্তকারীদের দিয়েই চালানো হচ্ছে। তাছাড়া শুধু হিসাব রাখাই যেন দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের কাজ। সম্পদ বেহাত হয়ে যাওয়া বা ক্ষতি হলে তা থেকে রক্ষা করতে লোকবল বা সিস্টেম কিছু নেই।
এ বিষয়ে দুদকের সাবেক মহাপরিচালক মঈদুল ইসলাম বলেন, অনুসন্ধান বা তদন্তকারী কর্মকর্তা সরজমিন পরিদর্শন করে সম্পদের সঠিকতা যাচাই করে তারপর ক্রোকের জন্য আবেদন করার কথা। ওই কর্মকর্তারই রিসিভার নিয়োগের জন্য আবেদন করার কথা। এছাড়া সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিট তো রয়েছেই। তার পরও কীভাবে এসব সম্পদ রিসিভার নিয়োগের বাইরে রয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন করেন তিনি।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

জব্দ করা সম্পদ নিয়ে বিপাকে দুদক

আপডেট সময় : ০৭:২০:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫
  • বাড়ি-গাড়িসহ বিপুল সম্পদ ক্রোক
  • রক্ষণাবেক্ষণে দুদকের আছে কেবল ৫ জন
  • লুট হচ্ছে জব্দ করা সম্পদ

‘জোড়াতালি দিয়ে চলছে ক্রোক করা গুরুত্বপূর্ণ এসব সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ। অর্থাৎ এর জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মকর্তা নিয়োজিত নেই’- কর্মকর্তা, দুদক

‘অনুসন্ধান বা তদন্তকারী কর্মকর্তা সরজমিন পরিদর্শন করে সম্পদের সঠিকতা যাচাই করে তারপর ক্রোকের জন্য আবেদন করার কথা। ওই কর্মকর্তারই রিসিভার নিয়োগের জন্য আবেদন করার কথা। এছাড়া সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিট তো রয়েছেই। তাহলে কীভাবে এসব সম্পদ রিসিভার নিয়োগের বাইরে রয়েছে?’-মঈদুল ইসলাম, সাবেক মহাপরিচালক, দুদক

গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুর্নীতির অভিযোগে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বাড়ি-গাড়িসহ বিপুল সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ক্রোক করা সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ‘সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিট’। তবে বর্তমানে এর জনবল কেবল পাঁচজন, যা এত বিপুল সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অপ্রতুল। এদিকে, জনবল সংকটের কারণে জব্দ করা সম্পদ নিয়ে বিপাকে পড়েছে দুদক। অব্যবস্থাপনার কারণে৪ জব্দ করা অনেক সম্পদ উধাও হয়ে যাচ্ছে। অনেক সম্পদ লুট করা হচ্ছে। সংশি¬ষ্টরা বলছেন, জোড়াতালি দিয়ে চলছে ক্রোক করা গুরুত্বপূর্ণ এসব সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ। অর্থাৎ এর জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মকর্তা নিয়োজিত নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনুসন্ধান বা তদন্তকারী কর্মকর্তা সরজমিন পরিদর্শন করে সম্পদের সঠিকতা যাচাই করে তারপর ক্রোকের জন্য আবেদন করার কথা। ওই কর্মকর্তারই রিসিভার নিয়োগের জন্য আবেদন করার কথা। এছাড়া সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিট তো রয়েছেই। তাহলে কীভাবে এসব সম্পদ রিসিভার নিয়োগের বাইরে রয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন তাদের।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দেশে প্রায় ১ হাজার ৪৫৩ একর জমি, ৭২টি বাড়ি, ১৪০টি ফ্ল্যাট, সাতটি ভবন, ৪০টি প¬ট, ১০টি দোকান, ২৩৩টি গাড়ি, একটি ট্রাক, তিনটি জাহাজ, একটি অফিস স্পেস ও একটি পার্ক ক্রোক (অ্যাটাচ) করেছে। বিদেশে ৫৮২টি বাণিজ্যিক স্পেস ক্রোক করা হয়েছে। এছাড়া ৪ হাজার ৯৬০টি ব্যাংক হিসাব, ১৭টি সঞ্চয়পত্র, বিপুল পরিমাণ শেয়ার, ১৯টি বিও হিসাব, তিনটি বীমা পলিসি, নগদ অর্থ, সোনা, বিদেশী মুদ্রা অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করেছে। এদিকে, স্থাবর সম্পদ ক্রোক করার পর থেকে সংশি¬ষ্ট মালিকের পরিবর্তে এসব সম্পদ থেকে আয় হওয়া অর্থ রাষ্ট্র পায়। সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের মাধ্যমে এসব সম্পদের ব্যবস্থাপনা করে দুদক। এ ইউনিট দুদক সচিবের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। বর্তমানে একজন পরিচালক, দুজন উপপরিচালক, একজন সহকারী পরিচালক ও একজন উপসহকারী পরিচালকÍপাঁচজন দিয়ে চলছে সংস্থাটির সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিট। এছাড়া একজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, একজন অফিস সহায়ক, দুজন এএসআই ও একজন পিএ কর্মরত রয়েছেন।
এদিকে, বিধি অনুযায়ী, ক্রোক করা সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রিসিভার নিয়োগ করা হয়। আদালতের আদেশেই ক্রোক ও রিসিভার নিয়োগ করা হয়। দুদক অনুসন্ধান বা তদন্তকারী কর্মকর্তারা এসব আবেদন করেন। দুদক সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর সিরাজগঞ্জ-২ আসনের (সদর-কামারখন্দ) সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর ১৬টি গাড়ি ক্রোক করা হয়। একইভাবে এনা পরিবহনের ১৫৩টি যাত্রীবাহী বাসও ক্রোক করা হয়। এগুলোসহ গত এক বছরে মোট ২৩৩টি গাড়ি ক্রোক করে দুদক। কিন্তু এসব গাড়ির জন্য কোনো রিসিভার নিয়োগ করা হয়নি। আবার রিসিভার নিয়োগ করা গাড়িরও হদিস নেই। দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের তথ্যানুযায়ী, গত ১৩ জানুয়ারি দুদকের মামলায় সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা শামসুল হক রাজুর একটি গাড়ির (রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ-৩৫-৩৭০৭) রিসিভার নিয়োগ করা হয়। কিন্তু গাড়িটি দুদক এখনো বুঝে পায়নি বলে জানিয়েছেন দুদকেরই এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, ক্রোক করা ২৩৩টি গাড়ির মধ্যে এনা পরিবহনের ১৫৩টি বাস ও সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর ১৬টি গাড়িও রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণে এখনো রিসিভার নিয়োগ না হওয়ায় এসব গাড়ির আয় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হচ্ছে না।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, এনা পরিবহনের ১৫৩টি বাসের রিসিভার নিয়োগের বিষয়ে কমিশনে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা উপপরিচালক সাইদুজ্জামান আবেদন করেছেন। কিন্তু তিনি এখনো এ বিষয়ে আদালতের আদেশ পাননি। দুদকের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের আবেদনের পর গত ১২ জানুয়ারি সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর জমি, ফ্ল্যাটসহ ৪৫টি স্থাবর সম্পত্তি ও ১৬টি গাড়ি ক্রোক করা হয়। এছাড়া ১৯টি ব্যাংক হিসাবে থাকা প্রায় ৫৭ কোটি ও যৌথ মালিকানাধীন চার কোম্পানির ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করা হয়। কিন্তু ১৬টি গাড়ি ক্রোকের পর কোথায় রাখা হয়েছে সে তথ্য নেই দুদকের কাছে। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হন সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ২৩ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সেই মামলায় তাকে ১৩ জানুয়ারি গ্রেফতার দেখানো হয়।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ক্রোক করা সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিতে নীতিমালা তৈরি করছে দুদক। দুদক কর্মকর্তারা জানান, ফ্রিজ বা ক্রোক আদেশের ক্ষমতা তদন্তকারীর হাতে থাকা উচিত। আদালত থেকে আদেশ আনতে আনতে অনেক দেরি হয়ে যায়। ততক্ষণে ব্যাংকের টাকা অপরাধীরা সরিয়ে ফেলে। ফ্রিজ ও ক্রোকের মেয়াদও বাড়ানো উচিত। সাধারণত অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হলে ছয়-সাত মাস পরে আনফ্রিজ হয়ে যায়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ও কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী কোনো মন্তব্য করেননি।
তবে দুদকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জোড়াতালি দিয়ে চলছে ক্রোক করা গুরুত্বপূর্ণ এসব সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ। অর্থাৎ এর জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মকর্তা নিয়োজিত নেই। অনুসন্ধান-তদন্তকারীদের দিয়েই চালানো হচ্ছে। তাছাড়া শুধু হিসাব রাখাই যেন দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের কাজ। সম্পদ বেহাত হয়ে যাওয়া বা ক্ষতি হলে তা থেকে রক্ষা করতে লোকবল বা সিস্টেম কিছু নেই।
এ বিষয়ে দুদকের সাবেক মহাপরিচালক মঈদুল ইসলাম বলেন, অনুসন্ধান বা তদন্তকারী কর্মকর্তা সরজমিন পরিদর্শন করে সম্পদের সঠিকতা যাচাই করে তারপর ক্রোকের জন্য আবেদন করার কথা। ওই কর্মকর্তারই রিসিভার নিয়োগের জন্য আবেদন করার কথা। এছাড়া সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিট তো রয়েছেই। তার পরও কীভাবে এসব সম্পদ রিসিভার নিয়োগের বাইরে রয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন করেন তিনি।