০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নতুন সংকট ভুয়া সমন্বয়ক

বাড্ডায় রিয়াদের আরো একটি বাসার খোঁজ, পাওয়া গেল নগদ টাকা

সামনে আরেকটি সংকট ভুয়া সমন্বয়ক। যেভাবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর হঠাৎ ‘সিক্সটিন ডিভিশন’ নামের একটি বাহিনী আবির্ভূত হয়েছিল, এখনো তেমন একটি নতুন সংকট মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে- ভুয়া সমন্বয়ক। এখনই প্রতিরোধ না করলে এটি ভবিষ্যতের বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুর্নীতি ও হয়রানীমুক্ত সেবা নিশ্চিতকরণ এবং সেবার মানোন্নয়ন নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময়সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।তিনি বলেন, ‘সরকার পাল্টায়, সরকার চলে যায়। কিন্তু আমরা প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয়কে এতটা জায়গা দিয়েছি যে এখন সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘এখন আমাদের সামনে বড় সুযোগ। অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক পক্ষপাতবিহীন। রাজনৈতিক চাপ না থাকলে আমাদের কাজের পরিবেশ ভালো থাকে। আমাদের উচিত এই সুযোগে পরিবর্তন আনা। কারো পক্ষ নেওয়া আমাদের জন্য ভালো নয়। আমাদের কাজ হচ্ছে নিরপেক্ষ সেবা দেওয়া। আমরা সেই সেবা দিয়েই যাব। রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা প্রায়ই বলি প্রশাসনের রাজনৈতিকীকরণ হয়েছে। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতায় দেখি উল্টো, আমরাই অনেক সময় রাজনীতিবিদদের কাছে যাই। যদি আমরা নিরপেক্ষ থাকতে পারি, পরিবর্তন আনা সম্ভব। দুদক চেয়ারম্যানের বক্তব্যে আগামী নির্বাচনের প্রসঙ্গও উঠে আসে। এ প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, ‘সবার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ নির্বাচন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনুস প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জাতিকে একটি ভালো নির্বাচন উপহার দেওয়ার। এই কাজ সফল করতে আমাদের সক্রিয় থাকতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদকের অগ্রাধিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের বেশি কাজ হওয়া উচিত, ভবিষ্যতে যেন দুর্নীতি না হয়। আগের দুর্নীতি নিয়ে শতভাগ সময় ব্যয় না করে বর্তমান দুর্নীতি প্রতিরোধে মনোযোগী হওয়া জরুরি। এই ভুল থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’ এর আগে সকালে ড. মোমেন নগরীর সিএন্ডবি রোডে প্রায় ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য ছয়তলা বিশিষ্ট বরিশাল দুদক ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সভায় বরিশাল বিভাগের সব সরকারি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান রিয়াদের আরো একটি বাসার খোঁজ পেয়েছে পুলিশ। আর সেই বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে নগদ ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। এছাড়া রিয়াদ ও তার সহযোগীরা অন্য কোথায় কোথায় চাঁদাবাজি করেছে সেই বিষয়েও খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা রিয়াদের আরও চাঁদাবাজির বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। এছাড়া বাড্ডা এলাকায় রিয়াদের আরও একটি বাসার খোঁজ পাওয়া গেছে। সেখান থেকে নগদ ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে সোমবার রাতে বৈষ্যম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদের নাখালপাড়ার বাসায় অভিযান চালানো হয়। এ অভিযানে দুই কোটি ২৫ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করা হয়। একইসঙ্গে প্রায় ২০ লাখ টাকার এফডিআর নথি উদ্ধার করা হয়। সম্প্রতি সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন পাঁচ যুবক। সাবেক এমপি পলাতক থাকায় তার স্বামীর কাছে এ চাঁদা দাবি করা হয়। কয়েকদিন আগে তারা ওই বাসায় গিয়ে ১০ লাখ টাকা নিয়ে আসেন। এরপর তারা আবার ওই বাসায় যান স্বর্ণালংকার আনতে। সেসময় বাড়ির লোকজন পুলিশকে খবর দিলে রিয়াদসহ সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া পাঁচজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। এ ঘটনায় শাম্মি আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর গুলশান থানায় ছয়জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমান তাদের সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

সপরিবারে হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন তারেক রহমান

নতুন সংকট ভুয়া সমন্বয়ক

বাড্ডায় রিয়াদের আরো একটি বাসার খোঁজ, পাওয়া গেল নগদ টাকা

আপডেট সময় : ০৭:২৪:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ অগাস্ট ২০২৫

সামনে আরেকটি সংকট ভুয়া সমন্বয়ক। যেভাবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর হঠাৎ ‘সিক্সটিন ডিভিশন’ নামের একটি বাহিনী আবির্ভূত হয়েছিল, এখনো তেমন একটি নতুন সংকট মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে- ভুয়া সমন্বয়ক। এখনই প্রতিরোধ না করলে এটি ভবিষ্যতের বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুর্নীতি ও হয়রানীমুক্ত সেবা নিশ্চিতকরণ এবং সেবার মানোন্নয়ন নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময়সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।তিনি বলেন, ‘সরকার পাল্টায়, সরকার চলে যায়। কিন্তু আমরা প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয়কে এতটা জায়গা দিয়েছি যে এখন সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘এখন আমাদের সামনে বড় সুযোগ। অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক পক্ষপাতবিহীন। রাজনৈতিক চাপ না থাকলে আমাদের কাজের পরিবেশ ভালো থাকে। আমাদের উচিত এই সুযোগে পরিবর্তন আনা। কারো পক্ষ নেওয়া আমাদের জন্য ভালো নয়। আমাদের কাজ হচ্ছে নিরপেক্ষ সেবা দেওয়া। আমরা সেই সেবা দিয়েই যাব। রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা প্রায়ই বলি প্রশাসনের রাজনৈতিকীকরণ হয়েছে। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতায় দেখি উল্টো, আমরাই অনেক সময় রাজনীতিবিদদের কাছে যাই। যদি আমরা নিরপেক্ষ থাকতে পারি, পরিবর্তন আনা সম্ভব। দুদক চেয়ারম্যানের বক্তব্যে আগামী নির্বাচনের প্রসঙ্গও উঠে আসে। এ প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, ‘সবার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ নির্বাচন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনুস প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জাতিকে একটি ভালো নির্বাচন উপহার দেওয়ার। এই কাজ সফল করতে আমাদের সক্রিয় থাকতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদকের অগ্রাধিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের বেশি কাজ হওয়া উচিত, ভবিষ্যতে যেন দুর্নীতি না হয়। আগের দুর্নীতি নিয়ে শতভাগ সময় ব্যয় না করে বর্তমান দুর্নীতি প্রতিরোধে মনোযোগী হওয়া জরুরি। এই ভুল থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’ এর আগে সকালে ড. মোমেন নগরীর সিএন্ডবি রোডে প্রায় ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য ছয়তলা বিশিষ্ট বরিশাল দুদক ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সভায় বরিশাল বিভাগের সব সরকারি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান রিয়াদের আরো একটি বাসার খোঁজ পেয়েছে পুলিশ। আর সেই বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে নগদ ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। এছাড়া রিয়াদ ও তার সহযোগীরা অন্য কোথায় কোথায় চাঁদাবাজি করেছে সেই বিষয়েও খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা রিয়াদের আরও চাঁদাবাজির বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। এছাড়া বাড্ডা এলাকায় রিয়াদের আরও একটি বাসার খোঁজ পাওয়া গেছে। সেখান থেকে নগদ ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে সোমবার রাতে বৈষ্যম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদের নাখালপাড়ার বাসায় অভিযান চালানো হয়। এ অভিযানে দুই কোটি ২৫ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করা হয়। একইসঙ্গে প্রায় ২০ লাখ টাকার এফডিআর নথি উদ্ধার করা হয়। সম্প্রতি সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন পাঁচ যুবক। সাবেক এমপি পলাতক থাকায় তার স্বামীর কাছে এ চাঁদা দাবি করা হয়। কয়েকদিন আগে তারা ওই বাসায় গিয়ে ১০ লাখ টাকা নিয়ে আসেন। এরপর তারা আবার ওই বাসায় যান স্বর্ণালংকার আনতে। সেসময় বাড়ির লোকজন পুলিশকে খবর দিলে রিয়াদসহ সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া পাঁচজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। এ ঘটনায় শাম্মি আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর গুলশান থানায় ছয়জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমান তাদের সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।