ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শাসনের ইতি টেনে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা
৮ আগস্ট রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে টানা সাড়ে ১৫ বছর শাসনের ইতি টেনে গত বছরের ৫ আগস্ট দুপুরে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। তিনদিন পর ৮ আগস্ট রাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই তিনদিন দেশে কোনো সরকার ছিল না। এতে নেতৃত্ব সংকটে প্রশাসনে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়, যার ফলে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে ব্যাপক অবনতি ঘটে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও নেতাকর্মীদের অনেকের বাড়িঘরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে ক্ষমতাচ্যুত দলটির শীর্ষ নেতাদের অনেকে দেশ ছাড়েন। বাকিরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে গাঁ ঢাকা দেন।
সরকারবিহীন তিনদিন পুলিশের থানা, ফাঁড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনায়ও হামলার ঘটনা ঘটে। বেশকিছু থানা ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ঘটে অস্ত্র লুট ও কয়েদি পালানোর মতো ঘটনাও। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা শঙ্কায় কর্মবিরতির ডাক দেয় পুলিশ। ফলে অনেক এলাকায় চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা বেড়ে যায়, যা সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করে তোলে। বিশেষ করে ঢাকার মোহাম্মদপুর ও মিরপুরে ডাকাত আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।
তখন কোথাও কোথাও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। সবমিলিয়ে ওই তিনদিন দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বেশ নাজুক হয়ে পড়ে। প্রায় ২০ দিনের প্রাণঘাতি আন্দোলনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের যখন পতন ঘটে তখন জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা বিভাগ, সেবাখাত, স্বাস্থ্য খাতসহ সরকারের প্রায় সব দপ্তরের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ-জামান ৬ আগস্ট থেকে প্রশাসনের সবাইকে দপ্তরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও পরিস্থিতির কারণে তার প্রতিফলন ঘটেনি। ৬ আগস্ট থেকে ব্যাংক ও বন্দর কার্যক্রম এবং উৎপাদন শুরু হলেও নিরাপত্তার শঙ্কায় কার্যত বন্ধই ছিল অর্থনীতির চাকা। সেদিন সচিবালয়ে কিছু কর্মকর্তা গেলেও কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন আতঙ্কের গুজব ছড়িয়ে পড়লে দৌড়ে বেরিয়ে পড়েন।
পরদিন ৭ আগস্ট কিছু কর্মকর্তা গেলেও তাদের কোনো কাজ করতে হয়নি। বরং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা মহড়া দিয়ে চলে যান। ৭ আগস্ট থেকে সারা দেশের কলকারখানা পুরোদমে চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ। কারখানা খুললেও নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ প্রকাশ করেন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। অরাজকতা ঠেকাতে সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যদের মাঠে নামানো হয়। স্বেচ্ছাসেবীরাও অনেক এলাকায় পাহারা দেয়। পাশাপাশি ছাত্র-জনতা এবং রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের বাড়িঘর ও উপাসনালয় পাহারা দেয়। সরকার পতনের পর দীর্ঘদিন আয়নাঘরে থাকা সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেমের মতো আরও বেশ কয়েকজন ফিরে আসেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে কমপক্ষে ৫২ জন নিহত হয়েছেন বলে বিবিসি আই-এর একটি অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। ঘটনাটিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ পুলিশি সহিংসতাগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। নির্বিচারে মানুষ হত্যার পর ক্ষুব্ধ জনতা ৫ আগস্ট বিকেলে যাত্রাবাড়ী থানায় হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। শুধু যাত্রাবাড়ী নয়, রাজধানীর ৫০ থানার প্রায় অর্ধেকেই ৫ আগস্ট হামলা চালায় ক্ষুব্ধ জনতা। ভাঙচুরের পাশাপাশি অনেক থানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, চলে লুটপাট। রাজধানীর বেশিরভাগ থানা কার্যত পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাউকেই প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। ঢাকার সড়কে কোথাও দেখা মেলেনি ট্রাফিক পুলিশ। দুপুরে সরকার পতনের পর গভীর রাতে মালিবাগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও বিশেষ শাখার (এসবি) ফটকে জড়ো হয়ে হামলা চালানোর চেষ্টা করে লোকজন। এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পুলিশের ওই দুটি কার্যালয় সংলগ্ন রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের ব্যারাকগুলোয়। সেখানে অবস্থান নেওয়া পুলিশ সদস্যরা ব্যারাক থেকে বেরিয়ে প্রতিটি প্রবেশ ফটকে অবস্থান নেন। ৫ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তরে ভাঙচুর করে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ৫ আগস্ট দুপুরের পর থেকেই রীতিমতো চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ে পুলিশ বাহিনীর। তবে বিভিন্ন থানা ও পুলিশ লাইন্সে অবস্থান নেন বাহিনীর মাঠপর্যায়ের সদস্যরা। বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশ স্থাপনা ঘিরে হামলা চালানো শুরু করলে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে বিভিন্ন থানায় হতাহতের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে নানাভাবে থানা ও স্থাপনার ফোর্সও আত্মগোপনে চলে যায়। রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের ব্যারাকগুলোতে পুলিশ সদস্যরা থাকলেও তারা কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিকে। পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকা মহানগর পুলিশের সদর দপ্তর ও গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে কোনো পুলিশ সদস্যই ছিলেন না। বিমানবন্দরসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতেও পুলিশের কার্যক্রম ছিল না।
৬ আগস্ট আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে জানানো হয়, সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সঙ্গে বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও আনসার সহায়তা করছে। আত্মগোপনে থাকা পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ৬ আগস্ট এক ভিডিওবার্তায় পুলিশের সব সদস্যকে দৃঢ় মনোবল নিয়ে ধৈর্যসহকারে নিজের নিরাপত্তা বজায় রেখে দায়িত্ব পালনের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। সবার সহযোগিতায় দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। কর্মবিরতিতে যাওয়ার পর টানা তিনদিন ডিএমপির থানাগুলোয় কোনো পুলিশ সদস্য ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীর কিছু এলাকায় রাতে ডাকাতি এবং ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এছাড়া বেশ কিছু এলাকায় গণডাকাতির চেষ্টা চালানো হয়। তখন রাজধানীর মিরপুর, কালশী, ইসিবি চত্বর, মোহাম্মদপুর, ঘাটারচর, বালুরচর, বছিলা, উত্তরা, বাড্ডা ও ধানমন্ডি এলাকায় ডাকাতির চেষ্টা চলে বলে জানায় এলাকাবাসী। ডাকাত ঠেকাতে অনেক এলাকায় রাত জেগে পাহারা বসায় ছাত্র-জনতা। এরইমধ্যে অস্ত্রসহ কয়েকজন ডাকাত ধরে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরও করেন তারা। কোথাও কোথাও মসজিদের মাইকে দেওয়া হয় সতর্কবার্তা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও পোস্ট করা হয় ডাকাতির তথ্য।
৭ আগস্ট রাতে রাজধানীর ইসিবি চত্বর এলাকায় ডাকাতির চেষ্টাকালে বেশ কয়েকজনকে ধরে ফেলেন এলাকাবাসী। পরে তাদের সেনাবাহিনীর টহল দলের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বসিলা এলাকার অবস্থাও ছিল এমন। এলাকাভিত্তিক পাহারা বসিয়ে রাতভর চলে ডাকাত প্রতিহতের চেষ্টা। এসব ঘটনার তথ্য, ছবি ও ভিডিও তুলে ধরে রাজাধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা ডাকাত প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সেনাবাহিনী ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান। মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিং, মোহাম্মদিয়া হাউজিং, চান মিয়া হাউজিং, চাঁদ উদ্যান, ঢাকা উদ্যান, চন্দ্রিমা হাউজিং এলাকায় ডাকাতির আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ৭ আগস্ট নবোদয় হাউজিং থেকে দুই লাখ টাকা ডাকাতি হওয়ার অভিযোগ করেন সেখানকার একটি বাড়ির মালিক। পরে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে স্থানীয়রা ১১ জনকে আটক করে তাদের হাতে তুলে দেন। ৬ আগস্ট আইএসপিআর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ে রদবদলে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পর্যায়ের পাঁচ কর্মকর্তার দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করা হয়েছে। চাকরি হারান মেজর জেনারেল পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা- যিনি টেলিযোগাযোগ নজরদারির সংস্থায় দায়িত্বরত ছিলেন। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীমকে সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফের (সিজিএস) দায়িত্বে আনা হয়। সিজিএসের দায়িত্ব পালন করে আসা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ শাহীনুল হককে কমান্ড্যান্ট করে পাঠানো হয় ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে (এনডিসি)। আর এনডিসির কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. সাইফুল আলমের চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। সেনা সদরের কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মজিবুর রহমানকে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের (আর্টডক) জিওসি করা হয়। আর্টডকের জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহম্মদ তাবরেজ শামস চৌধুরী হন নতুন কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল। কারা সূত্রে জানা যায়, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সারাদেশের আটটি কারাগারে কয়েদি ও হাজতিরা বিদ্রোহ করেন। তখন বিভিন্ন কারাগার থেকে পালিয়ে যান দুই হাজার ২০০ আসামি। একই সময় কোনো কোনো কারাগারে আগুন দিয়ে লুট করা হয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ। আসামিদের মধ্যে গ্রেফতার হন এবং আত্মসমর্পণ করেন দেড় হাজার জন। এখনো পলাতক ৭০০ আসামি। পলাতকদের মধ্যে আছেন ৮৪ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এবং নয়জন জঙ্গি। এর আগে ৫ আগস্ট সাতক্ষীরা জেলা কারাগার থেকে মোট ৮৭ জন আসামি পালিয়ে যান। কুষ্টিয়া জেলা কারাগার থেকে ৭ আগস্ট ৯৮ জন বন্দি পালান। ৫ আগস্ট বিকেলে শেরপুর জেলা কারাগারে ফটক ভেঙে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। এ সুযোগে শেরপুর কারাগারের ৫১৮ বন্দিই পালিয়ে যান। ৫ আগস্ট বিকেল থেকে মিরপুরের কচুক্ষেতে অবস্থান নিয়ে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফেরত দেওয়ার দাবি জানান সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও গুম হওয়ার পর ফেরত আসা ব্যক্তিরা। প্রায় আট বছর নিখোঁজ থাকার পর ৬ আগস্ট ফেরেন সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী এবং ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম। এমন আরও বেশ কয়েকজনকে আয়নাঘর থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়ান ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা। বাদ পড়েননি আওয়ামী লীগের এমপি-নেতারাও। ক্ষমতাচ্যুত মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে আশ্রয় চেয়েছিলেন বলে খবর চাউর হয় সে সময়। এই অবস্থায় ৬ আগস্ট বিদেশে যাওয়ার সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে আটকে দেওয়া হয়। বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ও ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মাহমুদকেও আটকে দেন। সবাইকে গ্রেফতার দেখালেও শেষ পর্যন্ত হাছান মাহমুদ দেশ ছেড়ে চলে যান। জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ৫ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত সংসদ এলাকাতেই ছিলেন। এরপর তিনি সেনানিবাস এলাকার নিরাপদ স্থানে চলে যান। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জনসমাগম এড়িয়ে অবস্থান নেন। অনেকেই নিজেদের বাসা বা সরকারি বাংলোতে না গিয়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে তুমুল গণআন্দোলনে সরকার পতনের পর বিভিন্ন থানায় অগ্নিসংযোগ ও হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যার ঘটনার পর নিরাপত্তাজনিত কারণে অনেক পুলিশ সদস্য ‘আত্মগোপন’ করেছেন বলে জানান অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান। ৬ আগস্ট সন্ধ্যায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা দ্রুততম সময়ে তাদের কাজে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করছি এবং অরক্ষিত পুলিশ স্থাপনাগুলোকে নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যাপারে কাজ করছি। এক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চাওয়ার কথা তুলে ধরেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর ৬ আগস্ট প্রশাসনের শীর্ষ দুই কর্মকর্তা মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবসহ প্রভাবশালী আমলারা পালিয়ে বেড়ান। দপ্তরের সঙ্গেও তাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। অধস্তন কর্মকর্তাদের কোনো ধরনের নির্দেশনাও তারা দেননি। এছাড়া অন্যান্য দপ্তরের প্রধানরাও অফিসে অনুপস্থিত ছিলেন। ফলে অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে প্রশাসন। চেইন অব কমান্ড একেবারেই ভেঙে পড়ে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নিঃশর্ত মুক্তি পান বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ৬ আগস্ট বিকেলে বঙ্গভবনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়। চিকিৎসকদের কাছে এ খবর শুনে হাসেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া।























