সিলেটের ভোলাগঞ্জ থেকে ১৫০০ থেকে ২০০০ ব্যক্তি সাদা পাথর লুট করে নিয়ে যায়। এ কারণে খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইন, ১৯৯২ এবং বিধিমালা ২০১২ এর ৯৩ (১) ধারা লঙ্ঘনের দায়ে ২০০০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার খনিজ সম্পদ ও পরিবেশ সচিবের পক্ষে হাইকোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার হাইকোর্ট বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ আগস্ট তারিখে কোম্পানিগঞ্জ থানায় মামলা নং ০৯, ধারা খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইন, ১৯৯২ তৎসহ ৩৭৯/৪৩১ পেনাল কোড ধারায় দায়ের করা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয় যে, ৫ আগস্ট থেকে সিলেট জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার গেজেটভুক্ত ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি থেকে অজ্ঞাতপরিচয় ১৫০০ থেকে ২০০০ ব্যক্তি পাথর চুরি করে নিয়ে যায়। আদালতের নির্দেশনা অনুসারে পরিবেশগত আর্থিক ক্ষতি নিরসনের জন্য ২১ আগস্ট অতিরিক্ত সচিব (অপারেশ), জালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগকে আহ্বায়ক করে বুয়েটের একজন অধ্যাপকসহ মোট ৬ (ছয়) সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। জেলা প্রশাসক এভিডেভিট দাখিল করে আদালতকে অবগত করেন যে, পাথর প্রতিস্থাপনের কাজ চলমান আছে, দায়ী ব্যক্তিদের তালিকা তৈরির কাজ অব্যাহত আছে এবং ভোলাগঞ্জের পাথর কোয়ারি এরিয়া নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।
বিভিন্ন পত্রিকায় সাদা পাথর লুটপাটের সংবাদ প্রকাশিত হলে জনস্বার্থে পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ রিট পিটিশন দায়ে করলে গত ১৪ আগস্ট হাইকোর্ট রুল জারি করেন। পাশাপাশি ৭ (সাত) দিনের মধ্যে বিবাদীরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লুট হওয়া উক্ত সাদা পাথর স্থানীয় সিভিল প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগীতায় সংগ্রহ করে ভোলাগঞ্জের উক্ত নির্দিষ্ট স্থানে উক্ত সাদা পাথরগুলোকে প্রতিস্থাপনের নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসন, বিজিবি, র্যাবসহ মোট ৫ (পাঁচ) জনকে সাদা পাথর লুটপাটের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে এফিডেভিট আকারে ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দেন।
পরিবেশ সচিব ও খনিজ সম্পদ সচিবকে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে যেখানে বুয়েটের একজন প্রফেসর থাকবেন তাদের মাধ্যমে পাথর সরানোর কারণে পরিবেশের কি পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণ করে ২ (দুই) মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। স্থানীয় প্রশাসন ও বিবাদীদেরকে উক্ত এলাকায় ৪৮ (আটচল্লিশ) ঘণ্টার মধ্যে দিন ও রাতে তদারকির জন্য মনিটরিং টিম গঠন করে ২ (দুই) সপ্তাহের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন। শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
সিলেটে পরিত্যক্ত ৫ ডোবায় মিললো দেড় লাখ ঘনফুট পাথর :সিলেট ব্যুরো জানায়, পাথর উদ্ধার অভিযানে জেলা প্রশাসকের তিনদিনের আল্টিমেটাম শেষ হয় গত মঙ্গলবার। এবার শুরু হয়েছে অ্যাকশন। পুকুরে পাথর লুকিয়েও পার মিলছে না। এতদিন অভিযানের ভয়ে পাথর লুকিয়ে রাখা হয়েছিল বালুর নিচে। কোথাও কোথাও তেরপল দিয়েও ঢেকে রাখা হয় লুটের পাথর। এবার পাঁচ পুকুর থেকে উদ্ধার হল প্রায় দেড়লাখ ঘনফুট পাথর। অভিযানের ভয়ে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল এসব পাথর। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা ৬ পর্যন্ত ধোপাগুল এলাকায় চলে এ অভিযান। গত ২৩ আগস্টে সিলেটসহ বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রাখা সাদাপাথরের পাথর ফিরিয়ে দিতে ৩ দিনের আল্টিমেটাম দেওয়া হয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কারও কাছে সাদাপাথর পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয় উপজেলা প্রশাসনের মতবিনিময় সভায়। আল্টিমেটামের ৩ দিন পেরিয়ে গেলেও অনেকেই পাথর জমা দেননি নির্ধারিত ডাম্পিং গ্রাউন্ডে। এ অবস্থায় সিলেটজুড়ে অভিযান শুরু করে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল বৃহস্পতিবার ধোপাগুল ও আশপাশ এলাকায় অভিযান চালানো হয়। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ৫টি পুকুরে অভিযান চালানো হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খুব কৌশলে এসব পাথর লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। এমনভাবে লুকিয়ে রাখা হয় কেউ যাতে বুঝতে না পারে পুকুরে কোন পাথর লুকিয়ে রাখা হয়েছে। গোপন সংবাদ পেয়ে ধোপাগুলসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় সিলেট সদর উপজেলা প্রশাসন। এ সময় ৫ পুকুর থেকে প্রায় দেড়লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করে। রাত হয়ে যাওয়ায় অভিযান বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন নেতৃত্ব দেওয়া সিলেট সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামুনুর রশীদ। তিনি জানান, পাথর আরও বেশি হতে পারে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও জানান, পাথরগুলো ভোলাগঞ্জ এলাকায় নেওয়া হবে। এরপর সেখানে প্রতিস্থাপন করা হবে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলেও জানান তিনি। এদিকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৭ লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। এরমধ্যে প্রায় ৭ লাখ ঘনফুট পাথর সাদাপাথরে প্রতিস্থাপন হয়েছে। বিভিন্নস্থানে রাখা পাথর ধীরে ধীরে সাদাপাথর এলাকায় নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিন মিয়া।






















