১২:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মালয়েশিয়ায় ভোগান্তিতে লাখো বাংলাদেশি

  • বিভিন্ন খাতে কাজ করছেন প্রায় ১৫ লাখ কর্মী
  • দেশটিতে পড়াশোনা করছেন ২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী
  • শিক্ষা শেষেও মেলেনা কাজের অনুমোদন
    ‘দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা আছে, কিন্তু দক্ষ কর্মীর ঘাটতি প্রবল। বিদেশগামীদের প্রস্তুতি নিয়েই আসা উচিত’

প্রতি বছরই বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কর্মী যাচ্ছেন মালয়েশিয়া। এদের অনেকেই দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ ছাড়াই মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে পাড়ি জমান। প্রতিকূল পরিবেশে শুরু হয় কঠিন প্রবাস জীবন। কেউ কেউ কয়েক বছরে অর্জন করেন কাক্সিক্ষত দক্ষতা, কিন্তু ততদিনে শেষ হয়ে যায় ভিসার মেয়াদ। একই সঙ্গে উচ্চতর শিক্ষা অর্জনেও পাড়ি দিচ্ছেন মালয়েশিয়ায়। সে দেশটির ১০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। কিন্তু তাদের শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করেও মেলাতে পারছেন ভালো চাকরি বা কাজের সুযোগ। অনুমোদন না থাকায় শিক্ষা জীবনের পাঠ চুকিয়ে ফিরতে হচ্ছে নিজ দেশে। মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি ব্যবসায়ী মাসুদ খানের মতে, দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা আছে, কিন্তু দক্ষ কর্মীর ঘাটতি প্রবল। বিদেশগামীদের প্রস্তুতি নিয়েই আসা উচিত। এদিকে অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলছেন, মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের দুর্দশা নতুন কোনো ঘটনা নয়, প্রবাসীদের দুর্দশার জন্য রাষ্ট্রই দায়ী। জেনেশুনেই প্রতিবার রাষ্ট্র এখানে অন্ধ থাকে। ফলে আমাদের কর্মীরা মালয়েশিয়া যাওয়ার নামে বারবার প্রতারিত হচ্ছেন। সুতরাং, এর দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারেনা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছরই হাজার হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক ও শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া ও কাজের জন্য নানাভাবে পছন্দের দেশ মালয়েশিয়ায় পাড়ি দিচ্ছেন। দেশটিতে হোটেল-রেস্টুরেন্ট খাতেই কর্মীর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। লাখো বাংলাদেশি সেখানে কাজ করছেন। তাদের একজন নোয়াখালীর আকাশ মোল্লা। আড়াই বছর ধরে তিনি কুয়ালালামপুরের একটি খাবারের দোকানে কর্মরত। কলিং ভিসায় যেতে খরচ হয়েছে ৫ লাখ টাকা। তবে বেতন-ভাতা কিংবা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তার কোনো অভিযোগ নেই।
আকাশ জানান, যারা কোম্পানির মাধ্যমে মালয়েশিয়া যান তাদের ঝামেলায় পড়তে হয় না। থাকা-খাওয়া থেকে শুরু করে মাস শেষে বেতন, সবই ভালোভাবে মেলে। এমনকি পুলিশি হয়রানির শিকারও হতে হয় না। তবে সবার পরিস্থিতি আর তার মতো নয়। অনেক প্রতিষ্ঠানই কর্মীদের নিয়মিত বেতন দেয় না। এতে নানা সংকটে দিন কাটাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
ভুক্তভোগী বাংলাদেশি কর্মীদের অভিযোগ, অধিকাংশ হয়রানির পেছনে দায়ী দুই দেশের দালাল চক্র। যাচাই-বাছাই ছাড়াই দক্ষতা ও প্রশিক্ষণবিহীন কর্মীদের পাঠানো হচ্ছে মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ধার-দেনার মাধ্যমে বিপুল অর্থ ব্যয় করে পছন্দের দেশটিতে গিয়ে কাজ না পাওয়ার পাশাপাশি নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। কণও কাজ পেলেও বিদেশে পাড়ি দিতে গিয়ে ব্যয় করা অর্থ উপার্জনও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় কর্মীদের।
এদিকে, দিন দিন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য জনপ্রিয় গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে এশিয়ার শান্তিপূর্ণ দেশ মালয়েশিয়া। দেশটিতে বর্তমানে ২ লাখের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে বাংলাদেশিরা অন্যতম শীর্ষ স্থানে রয়েছে। আধুনিক, প্রগতিশীল ও বহুসংস্কৃতির সমাজে গড়ে ওঠা মালয়েশিয়ায় প্রতি বছর ১৪০টিরও বেশি দেশের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পান। উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা, ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা ও তুলনামূলক কম খরচ, সব মিলিয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে।
শিক্ষার্থীদের মতে, জীবনযাত্রার ব্যয় এবং পড়াশোনার খরচ অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। পাশাপাশি শিক্ষকেরাও বন্ধুসুলভ এবং সহায়ক। বর্তমানে ১০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। প্রকৌশল, ব্যবসা ও প্রযুক্তি বিভাগে তাদের উপস্থিতি বেশি। ভিসা জটিলতা না থাকাও আকর্ষণের অন্যতম কারণ। তবে বড় সীমাবদ্ধতা হলো- শিক্ষা শেষে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা চাকরির সুযোগ পান না। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য মালয়েশিয়া ওয়ার্ক পারমিট না দেওয়ায় এ সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হন। যদিও সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সফরে বাংলাদেশিদের জন্য গ্র্যাজুয়েট প্লাস ভিসা চালুর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এটি এখনও বায়স্তবায়ন করেনি দেশটির সরকার। তবে তা কার্যকর হলে পড়াশোনা শেষে চাকরি বা ইন্টার্নশিপের সুযোগ তৈরি হবে, যা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর রাজ্যের পুচং এলাকায় একটি ফুড কোর্টে অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশিসহ মোট ৫৫ জন অনিবন্ধিত অভিবাসীকে আটক করেছে ইমিগ্রেশন বিভাগ। গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতের এই অভিযানে তারা অবৈধভাবে কাজ করার সময় ধরা পড়েন।
ইমিগ্রেশন বিভাগের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টর বসরি ওথমান এক বিবৃতিতে জানান, জনসাধারণের অভিযোগের ভিত্তিতে ‘অপ কুটিপ’ নামের এই অভিযানে ৩৩৪ জনকে তল্লাশি করা হয়। এর মধ্যে ২৭৪ জন স্থানীয় এবং ৬০ জন বিদেশি ছিলেন। তল্লাশির পর ৫৫ জন অভিবাসীকে বিভিন্ন অপরাধের দায়ে আটক করা হয়। আটকদের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ ও ৩০ জন নারী রয়েছেন। তারা বেশিরভাগই ওয়েটার ও রান্নার কাজ করছিলেন। বসরি জানান, অভিযানের সময় অনেকে পালানোর চেষ্টা করলেও ইমিগ্রেশন কর্মীরা ফুড কোর্ট ঘিরে ফেলায় তারা ব্যর্থ হন।
তিনি আরও বলেন, আটকদের মধ্যে অনেকেই তাদের কাজের পারমিটের শর্ত ভঙ্গ করেছেন। কেউ মেয়াদোত্তীর্ণ কাগজপত্র নিয়ে কাজ করছিলেন, আবার কেউ খণ্ডকালীন পারমিট থাকার পরও পূর্ণকালীন কাজ করছিলেন। এমনকি একজন অভিবাসী দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ফুড কোর্টে অবৈধভাবে কাজ করছিলেন।
ইমিগ্রেশন আইনের ৩৯বি ধারা অনুযায়ী, কাজের অনুমোদন থাকলেও অন্য কোথাও কাজ করাকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে ধরা হয়। বসরি ওথমান বলেন, খণ্ডকালীন বা জারি করা পারমিটের বাইরে কাজ করার কোনো বৈধ কারণ নেই। আটকরা ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামের নাগরিক। তাদের বয়স ২৩ থেকে ৪৭ বছরের মধ্যে। আটকদের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি রয়েছেন তা জানা যায়নি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর আটকদের আরও তদন্তের জন্য ইমিগ্রেশন দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় কাজকর্ম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সে দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশি ব্যবসায়ী মাসুদ খান বলেন, বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন খাতে কাজ করছেন। দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা আছে, কিন্তু দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীর ঘাটতি প্রবল। বিদেশগামীদের প্রস্তুতি নিয়েই আসা উচিত।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের দুর্দশা নতুন কোনো ঘটনা নয়, প্রবাসীদের দুর্দশার জন্য রাষ্ট্রই দায়ী। জেনেশুনেই প্রতিবার রাষ্ট্র এখানে অন্ধ থাকে। ফলে আমাদের কর্মীরা মালয়েশিয়া যাওয়ার নামে বারবার প্রতারিত হচ্ছেন। সুতরাং, এর দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারেনা।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

মালয়েশিয়ায় ভোগান্তিতে লাখো বাংলাদেশি

আপডেট সময় : ০৭:৪১:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • বিভিন্ন খাতে কাজ করছেন প্রায় ১৫ লাখ কর্মী
  • দেশটিতে পড়াশোনা করছেন ২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী
  • শিক্ষা শেষেও মেলেনা কাজের অনুমোদন
    ‘দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা আছে, কিন্তু দক্ষ কর্মীর ঘাটতি প্রবল। বিদেশগামীদের প্রস্তুতি নিয়েই আসা উচিত’

প্রতি বছরই বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কর্মী যাচ্ছেন মালয়েশিয়া। এদের অনেকেই দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ ছাড়াই মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে পাড়ি জমান। প্রতিকূল পরিবেশে শুরু হয় কঠিন প্রবাস জীবন। কেউ কেউ কয়েক বছরে অর্জন করেন কাক্সিক্ষত দক্ষতা, কিন্তু ততদিনে শেষ হয়ে যায় ভিসার মেয়াদ। একই সঙ্গে উচ্চতর শিক্ষা অর্জনেও পাড়ি দিচ্ছেন মালয়েশিয়ায়। সে দেশটির ১০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। কিন্তু তাদের শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করেও মেলাতে পারছেন ভালো চাকরি বা কাজের সুযোগ। অনুমোদন না থাকায় শিক্ষা জীবনের পাঠ চুকিয়ে ফিরতে হচ্ছে নিজ দেশে। মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি ব্যবসায়ী মাসুদ খানের মতে, দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা আছে, কিন্তু দক্ষ কর্মীর ঘাটতি প্রবল। বিদেশগামীদের প্রস্তুতি নিয়েই আসা উচিত। এদিকে অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলছেন, মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের দুর্দশা নতুন কোনো ঘটনা নয়, প্রবাসীদের দুর্দশার জন্য রাষ্ট্রই দায়ী। জেনেশুনেই প্রতিবার রাষ্ট্র এখানে অন্ধ থাকে। ফলে আমাদের কর্মীরা মালয়েশিয়া যাওয়ার নামে বারবার প্রতারিত হচ্ছেন। সুতরাং, এর দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারেনা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছরই হাজার হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক ও শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া ও কাজের জন্য নানাভাবে পছন্দের দেশ মালয়েশিয়ায় পাড়ি দিচ্ছেন। দেশটিতে হোটেল-রেস্টুরেন্ট খাতেই কর্মীর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। লাখো বাংলাদেশি সেখানে কাজ করছেন। তাদের একজন নোয়াখালীর আকাশ মোল্লা। আড়াই বছর ধরে তিনি কুয়ালালামপুরের একটি খাবারের দোকানে কর্মরত। কলিং ভিসায় যেতে খরচ হয়েছে ৫ লাখ টাকা। তবে বেতন-ভাতা কিংবা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তার কোনো অভিযোগ নেই।
আকাশ জানান, যারা কোম্পানির মাধ্যমে মালয়েশিয়া যান তাদের ঝামেলায় পড়তে হয় না। থাকা-খাওয়া থেকে শুরু করে মাস শেষে বেতন, সবই ভালোভাবে মেলে। এমনকি পুলিশি হয়রানির শিকারও হতে হয় না। তবে সবার পরিস্থিতি আর তার মতো নয়। অনেক প্রতিষ্ঠানই কর্মীদের নিয়মিত বেতন দেয় না। এতে নানা সংকটে দিন কাটাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
ভুক্তভোগী বাংলাদেশি কর্মীদের অভিযোগ, অধিকাংশ হয়রানির পেছনে দায়ী দুই দেশের দালাল চক্র। যাচাই-বাছাই ছাড়াই দক্ষতা ও প্রশিক্ষণবিহীন কর্মীদের পাঠানো হচ্ছে মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ধার-দেনার মাধ্যমে বিপুল অর্থ ব্যয় করে পছন্দের দেশটিতে গিয়ে কাজ না পাওয়ার পাশাপাশি নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। কণও কাজ পেলেও বিদেশে পাড়ি দিতে গিয়ে ব্যয় করা অর্থ উপার্জনও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় কর্মীদের।
এদিকে, দিন দিন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য জনপ্রিয় গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে এশিয়ার শান্তিপূর্ণ দেশ মালয়েশিয়া। দেশটিতে বর্তমানে ২ লাখের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে বাংলাদেশিরা অন্যতম শীর্ষ স্থানে রয়েছে। আধুনিক, প্রগতিশীল ও বহুসংস্কৃতির সমাজে গড়ে ওঠা মালয়েশিয়ায় প্রতি বছর ১৪০টিরও বেশি দেশের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পান। উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা, ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা ও তুলনামূলক কম খরচ, সব মিলিয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে।
শিক্ষার্থীদের মতে, জীবনযাত্রার ব্যয় এবং পড়াশোনার খরচ অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। পাশাপাশি শিক্ষকেরাও বন্ধুসুলভ এবং সহায়ক। বর্তমানে ১০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। প্রকৌশল, ব্যবসা ও প্রযুক্তি বিভাগে তাদের উপস্থিতি বেশি। ভিসা জটিলতা না থাকাও আকর্ষণের অন্যতম কারণ। তবে বড় সীমাবদ্ধতা হলো- শিক্ষা শেষে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা চাকরির সুযোগ পান না। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য মালয়েশিয়া ওয়ার্ক পারমিট না দেওয়ায় এ সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হন। যদিও সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সফরে বাংলাদেশিদের জন্য গ্র্যাজুয়েট প্লাস ভিসা চালুর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এটি এখনও বায়স্তবায়ন করেনি দেশটির সরকার। তবে তা কার্যকর হলে পড়াশোনা শেষে চাকরি বা ইন্টার্নশিপের সুযোগ তৈরি হবে, যা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর রাজ্যের পুচং এলাকায় একটি ফুড কোর্টে অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশিসহ মোট ৫৫ জন অনিবন্ধিত অভিবাসীকে আটক করেছে ইমিগ্রেশন বিভাগ। গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতের এই অভিযানে তারা অবৈধভাবে কাজ করার সময় ধরা পড়েন।
ইমিগ্রেশন বিভাগের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টর বসরি ওথমান এক বিবৃতিতে জানান, জনসাধারণের অভিযোগের ভিত্তিতে ‘অপ কুটিপ’ নামের এই অভিযানে ৩৩৪ জনকে তল্লাশি করা হয়। এর মধ্যে ২৭৪ জন স্থানীয় এবং ৬০ জন বিদেশি ছিলেন। তল্লাশির পর ৫৫ জন অভিবাসীকে বিভিন্ন অপরাধের দায়ে আটক করা হয়। আটকদের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ ও ৩০ জন নারী রয়েছেন। তারা বেশিরভাগই ওয়েটার ও রান্নার কাজ করছিলেন। বসরি জানান, অভিযানের সময় অনেকে পালানোর চেষ্টা করলেও ইমিগ্রেশন কর্মীরা ফুড কোর্ট ঘিরে ফেলায় তারা ব্যর্থ হন।
তিনি আরও বলেন, আটকদের মধ্যে অনেকেই তাদের কাজের পারমিটের শর্ত ভঙ্গ করেছেন। কেউ মেয়াদোত্তীর্ণ কাগজপত্র নিয়ে কাজ করছিলেন, আবার কেউ খণ্ডকালীন পারমিট থাকার পরও পূর্ণকালীন কাজ করছিলেন। এমনকি একজন অভিবাসী দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ফুড কোর্টে অবৈধভাবে কাজ করছিলেন।
ইমিগ্রেশন আইনের ৩৯বি ধারা অনুযায়ী, কাজের অনুমোদন থাকলেও অন্য কোথাও কাজ করাকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে ধরা হয়। বসরি ওথমান বলেন, খণ্ডকালীন বা জারি করা পারমিটের বাইরে কাজ করার কোনো বৈধ কারণ নেই। আটকরা ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামের নাগরিক। তাদের বয়স ২৩ থেকে ৪৭ বছরের মধ্যে। আটকদের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি রয়েছেন তা জানা যায়নি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর আটকদের আরও তদন্তের জন্য ইমিগ্রেশন দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় কাজকর্ম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সে দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশি ব্যবসায়ী মাসুদ খান বলেন, বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন খাতে কাজ করছেন। দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা আছে, কিন্তু দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীর ঘাটতি প্রবল। বিদেশগামীদের প্রস্তুতি নিয়েই আসা উচিত।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের দুর্দশা নতুন কোনো ঘটনা নয়, প্রবাসীদের দুর্দশার জন্য রাষ্ট্রই দায়ী। জেনেশুনেই প্রতিবার রাষ্ট্র এখানে অন্ধ থাকে। ফলে আমাদের কর্মীরা মালয়েশিয়া যাওয়ার নামে বারবার প্রতারিত হচ্ছেন। সুতরাং, এর দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারেনা।