বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির হোতা আলোচিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন শুনানির জন্য আগামি ১৮ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়া ওই আদেশ দেন।
জ্ঞাতআয় বহির্ভূত ৭৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনসহ আদালতে হাজির করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, আসামি অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ স্বার্থে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য অবৈধ উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ৭৫ কোটি ৮০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন মর্মে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এছাড়া, সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ ও উন্নয়ন কাজের নামে প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগসহ দেশে এবং দেশের বাইরে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় তার নিজ এবং পরিবারের সদস্যদের নামে অর্থ পাচারের অভিযোগে অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
উল্লেখিত বিষয়ে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। সুষ্ঠু অনুসন্ধান ও তদন্তের স্বার্থে তথ্য উদঘাটনের জন্য আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন।
আসামির পক্ষে রিমান্ড বাতিল করে জামিন চেয়ে আবেদন করা হয় ।
আদালত সূত্র জানায়, উভয় আবেদন শুনানির জন্য তারিখ ধার্য করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে রাজধানীর গুলশান থেকে মিঠুকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
দুদকের দাখিল করা অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইস ও টেকনোক্রেট নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক মিঠু কৃষিজমি ক্রয়, জমি লিজ, প্লট, ফ্ল্যাট ও বাড়ি নির্মাণে মোট ১৮ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানিতে শেয়ার ও বিনিয়োগ, গাড়ি ক্রয়, ব্যাংক হিসাবের স্থিতি, স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী মিলিয়ে আরও ৫৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ তার নামে পাওয়া গেছে। স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে সম্পদের মোট মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
এ ছাড়া, মিঠুর নামে পারিবারিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৭১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ সম্পদ ও ব্যয়সহ তার মোট সম্পদের হিসাব দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অন্যদিকে অনুসন্ধানে বৈধ উৎস পাওয়া গেছে ৭১ কোটি ৪৯ লাখ টাকার। অর্থাৎ বৈধ আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে ৭৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এজন্য দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
তার মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ ও উন্নয়নকাজের নামে প্রভাব খাঁটিয়ে বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৬ সালে প্রকাশিত বহুল আলোচিত পানামা পেপারসে নাম আসে মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর।
এমআর/সবা

























