১১:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন : প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ইসি, নজরে শান্তিপূর্ণ ভোট

  • ইউছুব ওসমান
  • আপডেট সময় : ০৭:৪৮:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • 84
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সেপ্টেম্বরেই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক
  • প্রশাসনে রদবদল শুরু, চিঠি যাচ্ছে মন্ত্রণালয়গুলোতে
  • কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা আরও জোরদারের পরিকল্পনা

‘এখনও আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কোনো বড় উদ্বেগ নেই এবং প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা তাদের এলাকার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন’- আখতার আহমেদ, ইসির সিনিয়র সচিব

‘নির্বাচনের জন্য ইসি প্রস্তুত নয়, ইসির সক্ষমতা নেই এমন অভিযোগ যাতে না ওঠে, সে জন্য আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছি’- এ এম এম নাসির উদ্দিন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার

 

জাতীয় সংসদের দ্বাদশ নির্বাচন ঘিরে গোটা দেশজুড়ে শুরু হয়েছে প্রস্তুতির জোর তৎপরতা। নির্বাচন কমিশন একদিকে যেমন রোডম্যাপ অনুযায়ী সময় ধরে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে, তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, প্রশাসনিক সমন্বয় এবং রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল রাখতেও নিয়েছে একাধিক কার্যকর পদক্ষেপ। নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, মাঠপর্যায়ের নিয়ন্ত্রণ এবং প্রশাসনিক প্রস্তুতি আরও সুসংহত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে ইসি। সেপ্টেম্বর মাসজুড়েই কমিশন বসছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যেখানে কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের প্রশিক্ষণ, ভোটের ফল প্রেরণের বিশেষ ব্যবস্থা, এমনকি প্রয়োজনে প্রশাসনে রদবদলের মতো বিষয়ও আসছে আলোচনায়। সবমিলিয়ে, একটি অবাধ, শান্তিপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের পথে আর কোনো গাফিলতির সুযোগ রাখতে চাইছে না নির্বাচন কমিশন।
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী এই মাসের শেষের দিকে স্বরাষ্ট্র, জননিরাপত্তা বিভাগ এবং প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিস সহ সকল সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কেন্দ্রীয় আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক প্রথম সভা হবে। এই সভায় ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা, নির্বাচনী এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও প্রাথমিক প্রস্তুতিমূলক বিষয়গুলো আলোচনা হবে। তফসিল ঘোষণার প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করার প্রস্তুতি শুরুর অংশ হিসেবে এই ধাপ নেওয়া হচ্ছে। এদিকিএ, নির্বাচন কমিশন প্রশাসনিক সমন্বয় বাড়াতে ফোকাল পয়েন্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনোনয়নের প্রস্তাব করেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, ভূমি, আইন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন করে প্রতিনিধি মনোনয়ন করতে বলা হচ্ছে। তাদের কাজ হবে নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ধষষ‑এর মধ্যে তথ্য ও নির্দেশ দ্রুত আদানপ্রদান নিশ্চিত করা।
অন্যদিকে, প্রশাসনে রদবদলের সম্ভাবনাও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। কমিশন বলেছে, নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনকালীন সময়ে গাফিলতি থাকলে সময় সাপেক্ষে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তফসিল ঘোষণার পরেও যদি প্রয়োজন হয়, এমনকি নির্বাচনের আগের দিনেও বড় কোনো পরিবর্তন করা হতে পারে। এসব হলো প্রধান নজর: কে কোথায় কায়েম থাকবে, দায়িত্ব কী হবে, প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছতা কতটুকু নিশ্চিত হবে ইত্যাদি বিষয়।
এদিকে, নির্বাচন কমিশন বলেছে, ২৫ সেপ্টেম্বর হবে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কেন্দ্রীয় সভা, যেখানে র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ, আনসার‑ভিডিপি, কোস্টগার্ড সহ সংশ্লিষ্ট বাহিনী ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। এই সভায় ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনী এলাকা নিরাপত্তার প্রস্তাবনা, মোতায়েনের পরিকল্পনা ও সার্বিক বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া আলোচনা হবে। এছাড়া তফসিল ঘোষণার ১৫ দিন আগে হবে দ্বিতীয় সভা; যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোথায় কতজন মোতায়েন হবে, দায়িত্ব‑বিভাজন ও নির্দেশনা দেওয়া হবে। নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে নির্বাচন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও মোবাইল‑টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে কাজ করবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্য একটি দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ হবে।
ইসি আরও বলেছে, ৩১ অক্টোবর তফসিল ঘোষণার দিনকে সামনে রেখে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় যোগাযোগ কমিটি গঠন হবে, যাতে ভোটকেন্দ্র নির্বাচন, নির্বাচনী এলাকার আইনশৃঙ্খলা, ঋণ খেলাপি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ এবং নির্বাচনকালীন নিয়োগ ও প্রস্তুতির অন্যান্য পরিকল্পনা তদারকি করা হবে। নির্বাচন কমিশন চাইছে ভোট গণনার বিবরণ কেন্দ্র থেকে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে বিশেষ খামে জমা দেওয়া হোক এবং যাতে সময়মতো ফলাফল প্রকাশ করতে কোনো বিলম্ব না থাকে। একই সঙ্গে ইসি রোডম্যাপের খসড়া সংস্করণে বলা হয়েছে, প্রশাসনে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় বাড়িয়ে নেওয়া হবে এবং ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তাদের ভূমিকা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া ভোটার তালিকা, ভোট কেন্দ্র ও বুথ‑সংখ্যা, ভোটার‑নিবন্ধন, এবং কেন্দ্রবিভাগের সংশোধন প্রয়োজনীয় হলে তাতে দ্রুত কাজ শুরু হবে। ভোটার সংখ্যা প্রতি বুথে কত হবে সেই বিষয়েও কিছু পরিবর্তন হতে পারে যাতে ভোট‐গ্রহণ প্রক্রিয়া দ্রুত ও স্মুথ হয়।
এদিকে, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও বাহিনীর মোতায়েন বাড়ানোর সুপারিশ বেশ শক্তভাবে এসেছে। গত নির্বাচনে সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে ১৬ জন নিরাপত্তাকর্মী এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ জন থাকলেও এবার সংখ্যাটি আরও বাড়িয়ে নেওয়া হতে পারে। এছাড়া রাজনৈতিক দলের নিরাপত্তা, ভোটার‑অভিযোগ নিষ্পত্তি, ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে পর্যবেক্ষণ বাড়িয়ে তোলা ও ফল প্রেরণের সুরক্ষা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে বিবেচনায় আছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে যেন “গল্প হয় নিয়মানুযায়ী”। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনের পুরো পরিস্থিতি জনসমক্ষে স্বচ্ছ রাখাও একান্ত জরুরি। কমিশন চায় যে সবাই জানুক ডাক পাওয়া ভোটার‑নথি ঠিক আছে কি না, নাম হয়তো ফেলে দেওয়া হয়নি কি না। ভোটার তালিকা সংশোধন, ভোটার নিবন্ধন ও এনআইডি সংশ্লিষ্ট কাজ দ্রুত ও সুপ্রস্তুতভাবে হতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি ভোটকেন্দ্র যেন পরিবহন সংযোগ, ম্যানেজমেন্ট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে তিনি সতর্ক করেছেন এসব নয়তো ভোটগ্রহণে ভুলভ্রান্তি ও ঝামেলা বাড়বে।
এদিকে ইসি বলছে, আদালতের অনুমোদন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন একসঙ্গে কাজ করবে সব প্রস্তুতির ধাপে। আরপিও এর সংশোধন, বিশেষ আইন প্রণয়ন ও প্রয়োজনে আদালতের সহযোগিতা নিয়ে কাজ চলছে যাতে আইনগত বাধা কমিয়ে আনা যায়। অন্যদিকে, জনসাধারণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশা অনেক। তারা চাইছেন ভোট দিতে পারবে ভয়‑ভীতি ছাড়া, ফলাফল হোক দ্রুত ও বিশ্বাসযোগ্য, নির্বাচন প্রক্রিয়া হোক সমান সুযোগে, এবং অভিযোগ থাকলে দ্রুত ও স্বাধীনভাবে নিষ্পত্তি হবে। মানুষের আস্থা না ফিরে আসলে নির্বাচন শুধু একটা অনুষ্ঠানে পরিনত হবে। তাই কমিশন বলেছে, অংশগ্রহণ বাড়াতে, প্রচারণার সময় আচরণবিধি মেনে চলতে রাজনৈতিক দল দেশবাসীকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান করবে।
এ বিষয়ে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, এখনও আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কোনো বড় উদ্বেগ নেই” এবং প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা তাদের এলাকার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যদি পরিস্থিতি চাহিদা অনুযায়ী পরিবর্তন চায়, রোডম্যাপে নতুন উপাদান যুক্ত করা হবে।
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, নির্বাচনের জন্য ইসি প্রস্তুত নয়, ইসির সক্ষমতা নেই এমন অভিযোগ যাতে না ওঠে, সে জন্য আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছি। সরকার থেকে চিঠি পাওয়ার পর আরও জোরেশোরে কার্যক্রম চলছে। যাতে সরকার যেকোনো সময় নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশ দিলে আমরা প্রস্তুত থাকতে পারি।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন : প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ইসি, নজরে শান্তিপূর্ণ ভোট

আপডেট সময় : ০৭:৪৮:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সেপ্টেম্বরেই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক
  • প্রশাসনে রদবদল শুরু, চিঠি যাচ্ছে মন্ত্রণালয়গুলোতে
  • কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা আরও জোরদারের পরিকল্পনা

‘এখনও আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কোনো বড় উদ্বেগ নেই এবং প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা তাদের এলাকার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন’- আখতার আহমেদ, ইসির সিনিয়র সচিব

‘নির্বাচনের জন্য ইসি প্রস্তুত নয়, ইসির সক্ষমতা নেই এমন অভিযোগ যাতে না ওঠে, সে জন্য আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছি’- এ এম এম নাসির উদ্দিন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার

 

জাতীয় সংসদের দ্বাদশ নির্বাচন ঘিরে গোটা দেশজুড়ে শুরু হয়েছে প্রস্তুতির জোর তৎপরতা। নির্বাচন কমিশন একদিকে যেমন রোডম্যাপ অনুযায়ী সময় ধরে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে, তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, প্রশাসনিক সমন্বয় এবং রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল রাখতেও নিয়েছে একাধিক কার্যকর পদক্ষেপ। নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, মাঠপর্যায়ের নিয়ন্ত্রণ এবং প্রশাসনিক প্রস্তুতি আরও সুসংহত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে ইসি। সেপ্টেম্বর মাসজুড়েই কমিশন বসছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যেখানে কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের প্রশিক্ষণ, ভোটের ফল প্রেরণের বিশেষ ব্যবস্থা, এমনকি প্রয়োজনে প্রশাসনে রদবদলের মতো বিষয়ও আসছে আলোচনায়। সবমিলিয়ে, একটি অবাধ, শান্তিপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের পথে আর কোনো গাফিলতির সুযোগ রাখতে চাইছে না নির্বাচন কমিশন।
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী এই মাসের শেষের দিকে স্বরাষ্ট্র, জননিরাপত্তা বিভাগ এবং প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিস সহ সকল সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কেন্দ্রীয় আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক প্রথম সভা হবে। এই সভায় ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা, নির্বাচনী এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও প্রাথমিক প্রস্তুতিমূলক বিষয়গুলো আলোচনা হবে। তফসিল ঘোষণার প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করার প্রস্তুতি শুরুর অংশ হিসেবে এই ধাপ নেওয়া হচ্ছে। এদিকিএ, নির্বাচন কমিশন প্রশাসনিক সমন্বয় বাড়াতে ফোকাল পয়েন্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনোনয়নের প্রস্তাব করেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, ভূমি, আইন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন করে প্রতিনিধি মনোনয়ন করতে বলা হচ্ছে। তাদের কাজ হবে নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ধষষ‑এর মধ্যে তথ্য ও নির্দেশ দ্রুত আদানপ্রদান নিশ্চিত করা।
অন্যদিকে, প্রশাসনে রদবদলের সম্ভাবনাও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। কমিশন বলেছে, নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনকালীন সময়ে গাফিলতি থাকলে সময় সাপেক্ষে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তফসিল ঘোষণার পরেও যদি প্রয়োজন হয়, এমনকি নির্বাচনের আগের দিনেও বড় কোনো পরিবর্তন করা হতে পারে। এসব হলো প্রধান নজর: কে কোথায় কায়েম থাকবে, দায়িত্ব কী হবে, প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছতা কতটুকু নিশ্চিত হবে ইত্যাদি বিষয়।
এদিকে, নির্বাচন কমিশন বলেছে, ২৫ সেপ্টেম্বর হবে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কেন্দ্রীয় সভা, যেখানে র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ, আনসার‑ভিডিপি, কোস্টগার্ড সহ সংশ্লিষ্ট বাহিনী ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। এই সভায় ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনী এলাকা নিরাপত্তার প্রস্তাবনা, মোতায়েনের পরিকল্পনা ও সার্বিক বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া আলোচনা হবে। এছাড়া তফসিল ঘোষণার ১৫ দিন আগে হবে দ্বিতীয় সভা; যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোথায় কতজন মোতায়েন হবে, দায়িত্ব‑বিভাজন ও নির্দেশনা দেওয়া হবে। নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে নির্বাচন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও মোবাইল‑টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে কাজ করবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্য একটি দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ হবে।
ইসি আরও বলেছে, ৩১ অক্টোবর তফসিল ঘোষণার দিনকে সামনে রেখে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় যোগাযোগ কমিটি গঠন হবে, যাতে ভোটকেন্দ্র নির্বাচন, নির্বাচনী এলাকার আইনশৃঙ্খলা, ঋণ খেলাপি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ এবং নির্বাচনকালীন নিয়োগ ও প্রস্তুতির অন্যান্য পরিকল্পনা তদারকি করা হবে। নির্বাচন কমিশন চাইছে ভোট গণনার বিবরণ কেন্দ্র থেকে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে বিশেষ খামে জমা দেওয়া হোক এবং যাতে সময়মতো ফলাফল প্রকাশ করতে কোনো বিলম্ব না থাকে। একই সঙ্গে ইসি রোডম্যাপের খসড়া সংস্করণে বলা হয়েছে, প্রশাসনে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় বাড়িয়ে নেওয়া হবে এবং ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তাদের ভূমিকা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া ভোটার তালিকা, ভোট কেন্দ্র ও বুথ‑সংখ্যা, ভোটার‑নিবন্ধন, এবং কেন্দ্রবিভাগের সংশোধন প্রয়োজনীয় হলে তাতে দ্রুত কাজ শুরু হবে। ভোটার সংখ্যা প্রতি বুথে কত হবে সেই বিষয়েও কিছু পরিবর্তন হতে পারে যাতে ভোট‐গ্রহণ প্রক্রিয়া দ্রুত ও স্মুথ হয়।
এদিকে, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও বাহিনীর মোতায়েন বাড়ানোর সুপারিশ বেশ শক্তভাবে এসেছে। গত নির্বাচনে সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে ১৬ জন নিরাপত্তাকর্মী এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ জন থাকলেও এবার সংখ্যাটি আরও বাড়িয়ে নেওয়া হতে পারে। এছাড়া রাজনৈতিক দলের নিরাপত্তা, ভোটার‑অভিযোগ নিষ্পত্তি, ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে পর্যবেক্ষণ বাড়িয়ে তোলা ও ফল প্রেরণের সুরক্ষা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে বিবেচনায় আছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে যেন “গল্প হয় নিয়মানুযায়ী”। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনের পুরো পরিস্থিতি জনসমক্ষে স্বচ্ছ রাখাও একান্ত জরুরি। কমিশন চায় যে সবাই জানুক ডাক পাওয়া ভোটার‑নথি ঠিক আছে কি না, নাম হয়তো ফেলে দেওয়া হয়নি কি না। ভোটার তালিকা সংশোধন, ভোটার নিবন্ধন ও এনআইডি সংশ্লিষ্ট কাজ দ্রুত ও সুপ্রস্তুতভাবে হতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি ভোটকেন্দ্র যেন পরিবহন সংযোগ, ম্যানেজমেন্ট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে তিনি সতর্ক করেছেন এসব নয়তো ভোটগ্রহণে ভুলভ্রান্তি ও ঝামেলা বাড়বে।
এদিকে ইসি বলছে, আদালতের অনুমোদন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন একসঙ্গে কাজ করবে সব প্রস্তুতির ধাপে। আরপিও এর সংশোধন, বিশেষ আইন প্রণয়ন ও প্রয়োজনে আদালতের সহযোগিতা নিয়ে কাজ চলছে যাতে আইনগত বাধা কমিয়ে আনা যায়। অন্যদিকে, জনসাধারণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশা অনেক। তারা চাইছেন ভোট দিতে পারবে ভয়‑ভীতি ছাড়া, ফলাফল হোক দ্রুত ও বিশ্বাসযোগ্য, নির্বাচন প্রক্রিয়া হোক সমান সুযোগে, এবং অভিযোগ থাকলে দ্রুত ও স্বাধীনভাবে নিষ্পত্তি হবে। মানুষের আস্থা না ফিরে আসলে নির্বাচন শুধু একটা অনুষ্ঠানে পরিনত হবে। তাই কমিশন বলেছে, অংশগ্রহণ বাড়াতে, প্রচারণার সময় আচরণবিধি মেনে চলতে রাজনৈতিক দল দেশবাসীকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান করবে।
এ বিষয়ে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, এখনও আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কোনো বড় উদ্বেগ নেই” এবং প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা তাদের এলাকার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যদি পরিস্থিতি চাহিদা অনুযায়ী পরিবর্তন চায়, রোডম্যাপে নতুন উপাদান যুক্ত করা হবে।
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, নির্বাচনের জন্য ইসি প্রস্তুত নয়, ইসির সক্ষমতা নেই এমন অভিযোগ যাতে না ওঠে, সে জন্য আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছি। সরকার থেকে চিঠি পাওয়ার পর আরও জোরেশোরে কার্যক্রম চলছে। যাতে সরকার যেকোনো সময় নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশ দিলে আমরা প্রস্তুত থাকতে পারি।