০৬:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত আজিমপুরবাসী!

ছবি: সংগৃহীত

  • রাস্তা-ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে হাট-বাজার
  • যত্রতত্র গণপরিবহনসহ বিভিন্ন যানবাহনের অবৈধ পার্কিং-স্ট্যান্ড
  • বেড়েছে মশার উৎপাত, বেওয়ারিশ কুকুর ও ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্য
  • নিত্যসঙ্গী গ্যাস সংকট, ড্রেনের অব্যবস্থাপনা ও ওয়াসার পানির দুর্গন্ধে দুর্বিষহ জনজীবন

 

রাজধানীর আজিমপুর থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত বিস্তৃত, নাগরিকদের চলাচল ও জীবনযাত্রাকে নাকাল করে রেখেছে। ফুটপাত ও প্রধান সড়কের সিংহভাগ দখল করে বসানো হয়েছে প্রায় ৫০০ দোকান। বিশেষ করে ডিএসসিসি’র আওতাধীন ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তির্ণ জনপদে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্ট, নার্সারি, ভ্যান-টুকরি দোকান, কাঁচাবাজার, মাছ-মুরগি বিক্রির দোকান, রেন্ট এ কার স্ট্যান্ড এবং গণপরিবহণের অবৈধ পার্কিং পর্যন্ত কি নেই? এতে পথচারীরা দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়ছেন। এছাড়া এলাকায় চলাচলকারী বাস, অটো, সিএনজি এবং গণপরিবহণ যত্রতত্র পার্কিং ও যাত্রী ওঠানামা করায় যানজটও বিরাজ করছে। নাগরিকদের দুর্ভোগ কেবল দখলেই সীমাবদ্ধ নয়। এলাকায় গ্যাস সংকট, ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ, অপরিকল্পিত ড্রেনেজের কারণে বৃষ্টিতেই প্রধান সড়কে পানি জমে যাওয়া, মশার উৎপাত, বেওয়ারিশ কুকুরের আতঙ্ক এবং অন্ধকার রাস্তায় ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্য। সবমিলিয়ে আজিমপুর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডকে পরিকল্পনাহীন নগরায়ন ও প্রশাসনিক অবহেলার এক করুণ চিত্রে পরিণত করেছে। পুরো এলাকা যেন চলমান হাটবাজার যা নগরজীবনকে করে তুলেছে দুর্বিষহ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর পুরান ঢাকার আজিমপুর এলাকাটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি প্রশাসনিক ওয়ার্ড, যা অঞ্চল-৩ এর অন্তর্গত। এক সময়ে এটি অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৬২নং ওয়ার্ড ছিল। বতমানে এটি ২৬ নং ওয়ার্ড ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ থানা এলাকায় অবস্থিত। ওয়ার্ডটি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ঢাকা-৭ আসনের অন্তর্গত। আজিমপুর রোড (হোল্ডিং নং- ১-১৭৮), আজিমপুর এস্টেট, পলাশী ব্যারাক পশ্চিম ও দক্ষিণ, ইডেন মহিলা কলেজ হোস্টেল, স্টাফ কোয়ার্টার এবং গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, বি.সি দাস স্টিট, নীলক্ষেত সরকারি বাজার (আজিমপুর), লালবাগ রোড এলাকাজুড়ে বিস্তৃত।

সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর আজিমপুর ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়ক হলেও এলাকাজুড়ে চলছে অরাজকতা। ফুটপাত দখল, অবৈধ বাজার, ভ্যান-অটো-সিএনজি ও রেন্ট এ কার স্ট্যান্ড, গণপরিবহণের অবৈধ পার্কিং, খাবার-চায়ের দোকান, মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্য সবমিলিয়ে প্রতিদিন মানুষের চলাচলই দুর্বিষহ করে তুলেছে। এর সঙ্গে রয়েছে গ্যাস সংকট, ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ, মশার উপদ্রব, ড্রেনেজের অব্যবস্থাপনা ও বেওয়ারিশ কুকুরের আতঙ্ক। আজিমপুর রোড ও প্রধান সড়ক আজিমপুর এস্টেট ছাপড়া মসজিদ বাজার থেকে আজিমপুর ম্যাটার্নিটি হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত ফুটপাতের প্রায় ৬০ শতাংশ দখল করে রাখা হয়েছে। ছাপড়া মসজিদের দুই পাশেই বহু বছর ধরে চলছে অবৈধ বাজার, যেখানে প্রতিদিন মাছ, মাংস, তরকারি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রি হচ্ছে।

আজিমপুর রোডে গোড়-এ-শহীদ মাজার এলাকার আবাসিক ভবনে অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ একাধিক রেস্টুরেন্ট ও ফাস্টফুডের দোকান। দীর্ঘ বছর ধরে রাস্তার একপাশে সিএনজি অটোরিকশা ও রেন্ট-এ-কার স্ট্যান্ড গড়ে[ তোলা হয়েছে, যার কারণে সড়কের অর্ধেকের বেশি অংশ স্থায়ীভাবে দখল হয়ে আছে। আজিমপুর এতিমখানা মোড়ে রয়েছে ব্যাটারিচালিত আরেকটি বড় অটো স্ট্যান্ড, যেখানে অর্ধশতাধিক অটো প্রতিদিন কামরাঙ্গীরচর পর্যন্ত যাতায়াত করে। এতিমখানা মোড় থেকে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত পুরো ফুটপাতজুড়ে বসানো হয়েছে দুই শতাধিক দোকান। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে অর্ধশতাধিক খাবারের দোকান। মেটারনিটি হাসপাতাল মোড় থেকে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত প্রতিদিন শতাধিক গণপরিবহণ বাস যত্রতত্র পার্কিং ও যাত্রী ওঠানামা করে। ভিআইপি, দেওয়ান, মেট্রো লিংক, বিকাশ, ঠিকানা পরিবহণসহ বিভিন্ন কোম্পানির বাস শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে দিনের বেলা যাত্রী নামায় আর রাতের বেলা আজিমপুর এলাকাতেই সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এতে প্রধান সড়কের বড় একটি অংশ সারাক্ষণ অবরুদ্ধ থাকে।

আজিমপুর এস্টেট অভ্যন্তরীণ সড়ক ম্যাটারনিটি হাসপাতাল মোড় থেকে ছাপড়া মসজিদ হয়ে আমতলা ও বটতলা মোড় পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে অবৈধ হাট-বাজার বসে প্রতিদিন। এখানে ভ্যানের মধ্যে টুকরিতে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে দোকান, মাছ-মুরগির দোকান, কাঁচাবাজার, মুদি ও কাঁচামালের দোকান রয়েছে। ব্যক্তিগত ব্যবসায়ীরাও তাদের মালপত্র রাস্তার ওপর ছড়িয়ে রেখে ফুটপাত-সড়ক আটকে দেয়। এছাড়াও ম্যাটারনিটি হাসপাতাল মোড়ে ব্যাটারিচালিত আরেকটি অটো স্ট্যান্ড রয়েছে। যেটি যত্রতত্র পার্কিং করে সবসময় রাস্তা অবরুদ্ধ করে রাখে। এছাড়াও এলাকায় গ্যাসের তীব্র সংকট ও ওয়াসার দুর্গন্ধযুক্ত পানি মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।

আজিমপুর সরকারি কলোনি এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় বিএনপি নেতা লেবু ও আমিনুল জানান, এলাকার মানুষ দিনের পর দিন চরম দুর্ভোগে আছে। তারা জানান, ডিএসসিসি’র ২৬ নং ওয়ার্ডের ফুটপাত ও সড়ক প্রায় সবটাই দখল হয়ে গেছে। বিভিন্ন ব্যবসায়ীর চায়ের দোকান, রেস্টুরেন্ট, নার্সারি, ভ্যান-টুকরি দোকান, কাঁচাবাজার, মাছ-মুরগি বিক্রির দোকান, রেন্ট-এ-কার স্ট্যান্ড এবং গণপরিবহণের বাসের সারি দীর্ঘদিন ধরে ফুটপাত ও সড়কে দখল করে রেখেছে।

স্থানীয়রা জানান, আজিমপুর পুরাতন কবরস্থান ও জাজেস কোয়ার্টারের বিপরীতে পার্কিংবিহীন গড়ে ওঠা ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ, রায়হান স্কুল এন্ড কলেজ, ১০২ আজিমপুর রোডের পার্ল হারবার কমিউনিটি সেন্টার ও ঢাকা কনভেনশন সেন্টার ঘিরে দিনরাত ব্যস্ততম এ সড়কটি তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে ওই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচলকারী কামরাঙ্গীরচর-হাজারীবাগ ও কেরানীগঞ্জবাসী যানজটে আটকা পড়ে চরম দুর্ভোগে পড়েন। একই সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মরদেহ দাফন ও কবর জিয়ারত করতে এসে প্রতিনিয়ত যানজটের কবলে পড়ে দুই মিনিটের পথে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষায় থেকে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন। সবমিলিয়ে আজিমপুর এলাকা এখন দখল, যানজট ও অরাজকতার এক চলমান হাটবাজারে পরিণত হয়েছে, যা সাধারণ মানুষকে দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় চরম দুর্ভোগে ফেলেছে। এছাড়া তিতাস গ্যাস লাইনে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ না থাকায় এবং ঢাকা ওয়াসার লাইনে সরবরাহকৃত পানির দুর্গন্ধে অতিষ্ট আজিমপুরবাসী। তারা নিয়মিত গ্যাস ও ওয়াসার বিল পরিশোধ করেও ন্যূনতম সুবিধা না পাওয়ায় নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত লাখ লাখ পরিবার। সেবার মান বৃদ্ধিকরণে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে অভিযোগ করেও সন্তোষজনক কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না। বরং কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর উদাসীনতার কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তারা। এর ফলে বাধ্য হয়ে অনেকেই টাকার বিণিময়ে বাইরে থেকে সিলিন্ডার গ্যাস ও বিশুদ্ধ পানি কিনে ব্যবহার করছেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ২৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম সুইট বলেন, আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে চাই, এলাকায় জনভোগান্তি এড়াতে ফুটপাত ও প্রধান সড়ক সম্পূর্ণ দখলমুক্ত থাকুক। তাই আমি আশা করি, প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন যথাযথ তদারকি এবং নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে এসব সড়ককে দখলমুক্ত করবে, যাতে সাধারণ মানুষ নিরাপদে-অবাধে চলাচল করতে পারে।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা হাছিবা খান জানান, ডিএসসিসি’র আওতাধীন আমাদের রাস্তা-ফুটপাত অবৈধ দখল ও হকারমুক্ত করতে নিয়মিত অভিযান চলছে। পর্যায়ক্রমে আজিমপুর এলাকার অবৈধ সব দখলকৃত রাস্তা ও ফুটপাত উচ্ছেদ করব। আমাদের লক্ষ্য, মানুষ যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিরাপদে জীবনযাপন করতে পারে। এজন্য আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

ডিএমপি’র লালবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তফা কামাল খান বলেন, আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সন্ধ্যার পরে ছিনতাইরোধে থানা ও ফাঁড়ি পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। এলাকার মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করেছি। বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে আইনত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও লালবাগ থানার পক্ষ থেকে এলাকাবাসীকে দুর্ভোগমুক্ত রাখতে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এমআর/

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত আজিমপুরবাসী!

আপডেট সময় : ০৯:৪১:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • রাস্তা-ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে হাট-বাজার
  • যত্রতত্র গণপরিবহনসহ বিভিন্ন যানবাহনের অবৈধ পার্কিং-স্ট্যান্ড
  • বেড়েছে মশার উৎপাত, বেওয়ারিশ কুকুর ও ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্য
  • নিত্যসঙ্গী গ্যাস সংকট, ড্রেনের অব্যবস্থাপনা ও ওয়াসার পানির দুর্গন্ধে দুর্বিষহ জনজীবন

 

রাজধানীর আজিমপুর থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত বিস্তৃত, নাগরিকদের চলাচল ও জীবনযাত্রাকে নাকাল করে রেখেছে। ফুটপাত ও প্রধান সড়কের সিংহভাগ দখল করে বসানো হয়েছে প্রায় ৫০০ দোকান। বিশেষ করে ডিএসসিসি’র আওতাধীন ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তির্ণ জনপদে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্ট, নার্সারি, ভ্যান-টুকরি দোকান, কাঁচাবাজার, মাছ-মুরগি বিক্রির দোকান, রেন্ট এ কার স্ট্যান্ড এবং গণপরিবহণের অবৈধ পার্কিং পর্যন্ত কি নেই? এতে পথচারীরা দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়ছেন। এছাড়া এলাকায় চলাচলকারী বাস, অটো, সিএনজি এবং গণপরিবহণ যত্রতত্র পার্কিং ও যাত্রী ওঠানামা করায় যানজটও বিরাজ করছে। নাগরিকদের দুর্ভোগ কেবল দখলেই সীমাবদ্ধ নয়। এলাকায় গ্যাস সংকট, ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ, অপরিকল্পিত ড্রেনেজের কারণে বৃষ্টিতেই প্রধান সড়কে পানি জমে যাওয়া, মশার উৎপাত, বেওয়ারিশ কুকুরের আতঙ্ক এবং অন্ধকার রাস্তায় ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্য। সবমিলিয়ে আজিমপুর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডকে পরিকল্পনাহীন নগরায়ন ও প্রশাসনিক অবহেলার এক করুণ চিত্রে পরিণত করেছে। পুরো এলাকা যেন চলমান হাটবাজার যা নগরজীবনকে করে তুলেছে দুর্বিষহ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর পুরান ঢাকার আজিমপুর এলাকাটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি প্রশাসনিক ওয়ার্ড, যা অঞ্চল-৩ এর অন্তর্গত। এক সময়ে এটি অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৬২নং ওয়ার্ড ছিল। বতমানে এটি ২৬ নং ওয়ার্ড ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ থানা এলাকায় অবস্থিত। ওয়ার্ডটি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ঢাকা-৭ আসনের অন্তর্গত। আজিমপুর রোড (হোল্ডিং নং- ১-১৭৮), আজিমপুর এস্টেট, পলাশী ব্যারাক পশ্চিম ও দক্ষিণ, ইডেন মহিলা কলেজ হোস্টেল, স্টাফ কোয়ার্টার এবং গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, বি.সি দাস স্টিট, নীলক্ষেত সরকারি বাজার (আজিমপুর), লালবাগ রোড এলাকাজুড়ে বিস্তৃত।

সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর আজিমপুর ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়ক হলেও এলাকাজুড়ে চলছে অরাজকতা। ফুটপাত দখল, অবৈধ বাজার, ভ্যান-অটো-সিএনজি ও রেন্ট এ কার স্ট্যান্ড, গণপরিবহণের অবৈধ পার্কিং, খাবার-চায়ের দোকান, মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্য সবমিলিয়ে প্রতিদিন মানুষের চলাচলই দুর্বিষহ করে তুলেছে। এর সঙ্গে রয়েছে গ্যাস সংকট, ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ, মশার উপদ্রব, ড্রেনেজের অব্যবস্থাপনা ও বেওয়ারিশ কুকুরের আতঙ্ক। আজিমপুর রোড ও প্রধান সড়ক আজিমপুর এস্টেট ছাপড়া মসজিদ বাজার থেকে আজিমপুর ম্যাটার্নিটি হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত ফুটপাতের প্রায় ৬০ শতাংশ দখল করে রাখা হয়েছে। ছাপড়া মসজিদের দুই পাশেই বহু বছর ধরে চলছে অবৈধ বাজার, যেখানে প্রতিদিন মাছ, মাংস, তরকারি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রি হচ্ছে।

আজিমপুর রোডে গোড়-এ-শহীদ মাজার এলাকার আবাসিক ভবনে অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ একাধিক রেস্টুরেন্ট ও ফাস্টফুডের দোকান। দীর্ঘ বছর ধরে রাস্তার একপাশে সিএনজি অটোরিকশা ও রেন্ট-এ-কার স্ট্যান্ড গড়ে[ তোলা হয়েছে, যার কারণে সড়কের অর্ধেকের বেশি অংশ স্থায়ীভাবে দখল হয়ে আছে। আজিমপুর এতিমখানা মোড়ে রয়েছে ব্যাটারিচালিত আরেকটি বড় অটো স্ট্যান্ড, যেখানে অর্ধশতাধিক অটো প্রতিদিন কামরাঙ্গীরচর পর্যন্ত যাতায়াত করে। এতিমখানা মোড় থেকে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত পুরো ফুটপাতজুড়ে বসানো হয়েছে দুই শতাধিক দোকান। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে অর্ধশতাধিক খাবারের দোকান। মেটারনিটি হাসপাতাল মোড় থেকে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত প্রতিদিন শতাধিক গণপরিবহণ বাস যত্রতত্র পার্কিং ও যাত্রী ওঠানামা করে। ভিআইপি, দেওয়ান, মেট্রো লিংক, বিকাশ, ঠিকানা পরিবহণসহ বিভিন্ন কোম্পানির বাস শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে দিনের বেলা যাত্রী নামায় আর রাতের বেলা আজিমপুর এলাকাতেই সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এতে প্রধান সড়কের বড় একটি অংশ সারাক্ষণ অবরুদ্ধ থাকে।

আজিমপুর এস্টেট অভ্যন্তরীণ সড়ক ম্যাটারনিটি হাসপাতাল মোড় থেকে ছাপড়া মসজিদ হয়ে আমতলা ও বটতলা মোড় পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে অবৈধ হাট-বাজার বসে প্রতিদিন। এখানে ভ্যানের মধ্যে টুকরিতে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে দোকান, মাছ-মুরগির দোকান, কাঁচাবাজার, মুদি ও কাঁচামালের দোকান রয়েছে। ব্যক্তিগত ব্যবসায়ীরাও তাদের মালপত্র রাস্তার ওপর ছড়িয়ে রেখে ফুটপাত-সড়ক আটকে দেয়। এছাড়াও ম্যাটারনিটি হাসপাতাল মোড়ে ব্যাটারিচালিত আরেকটি অটো স্ট্যান্ড রয়েছে। যেটি যত্রতত্র পার্কিং করে সবসময় রাস্তা অবরুদ্ধ করে রাখে। এছাড়াও এলাকায় গ্যাসের তীব্র সংকট ও ওয়াসার দুর্গন্ধযুক্ত পানি মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।

আজিমপুর সরকারি কলোনি এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় বিএনপি নেতা লেবু ও আমিনুল জানান, এলাকার মানুষ দিনের পর দিন চরম দুর্ভোগে আছে। তারা জানান, ডিএসসিসি’র ২৬ নং ওয়ার্ডের ফুটপাত ও সড়ক প্রায় সবটাই দখল হয়ে গেছে। বিভিন্ন ব্যবসায়ীর চায়ের দোকান, রেস্টুরেন্ট, নার্সারি, ভ্যান-টুকরি দোকান, কাঁচাবাজার, মাছ-মুরগি বিক্রির দোকান, রেন্ট-এ-কার স্ট্যান্ড এবং গণপরিবহণের বাসের সারি দীর্ঘদিন ধরে ফুটপাত ও সড়কে দখল করে রেখেছে।

স্থানীয়রা জানান, আজিমপুর পুরাতন কবরস্থান ও জাজেস কোয়ার্টারের বিপরীতে পার্কিংবিহীন গড়ে ওঠা ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ, রায়হান স্কুল এন্ড কলেজ, ১০২ আজিমপুর রোডের পার্ল হারবার কমিউনিটি সেন্টার ও ঢাকা কনভেনশন সেন্টার ঘিরে দিনরাত ব্যস্ততম এ সড়কটি তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে ওই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচলকারী কামরাঙ্গীরচর-হাজারীবাগ ও কেরানীগঞ্জবাসী যানজটে আটকা পড়ে চরম দুর্ভোগে পড়েন। একই সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মরদেহ দাফন ও কবর জিয়ারত করতে এসে প্রতিনিয়ত যানজটের কবলে পড়ে দুই মিনিটের পথে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষায় থেকে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন। সবমিলিয়ে আজিমপুর এলাকা এখন দখল, যানজট ও অরাজকতার এক চলমান হাটবাজারে পরিণত হয়েছে, যা সাধারণ মানুষকে দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় চরম দুর্ভোগে ফেলেছে। এছাড়া তিতাস গ্যাস লাইনে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ না থাকায় এবং ঢাকা ওয়াসার লাইনে সরবরাহকৃত পানির দুর্গন্ধে অতিষ্ট আজিমপুরবাসী। তারা নিয়মিত গ্যাস ও ওয়াসার বিল পরিশোধ করেও ন্যূনতম সুবিধা না পাওয়ায় নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত লাখ লাখ পরিবার। সেবার মান বৃদ্ধিকরণে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে অভিযোগ করেও সন্তোষজনক কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না। বরং কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর উদাসীনতার কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তারা। এর ফলে বাধ্য হয়ে অনেকেই টাকার বিণিময়ে বাইরে থেকে সিলিন্ডার গ্যাস ও বিশুদ্ধ পানি কিনে ব্যবহার করছেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ২৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম সুইট বলেন, আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে চাই, এলাকায় জনভোগান্তি এড়াতে ফুটপাত ও প্রধান সড়ক সম্পূর্ণ দখলমুক্ত থাকুক। তাই আমি আশা করি, প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন যথাযথ তদারকি এবং নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে এসব সড়ককে দখলমুক্ত করবে, যাতে সাধারণ মানুষ নিরাপদে-অবাধে চলাচল করতে পারে।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা হাছিবা খান জানান, ডিএসসিসি’র আওতাধীন আমাদের রাস্তা-ফুটপাত অবৈধ দখল ও হকারমুক্ত করতে নিয়মিত অভিযান চলছে। পর্যায়ক্রমে আজিমপুর এলাকার অবৈধ সব দখলকৃত রাস্তা ও ফুটপাত উচ্ছেদ করব। আমাদের লক্ষ্য, মানুষ যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিরাপদে জীবনযাপন করতে পারে। এজন্য আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

ডিএমপি’র লালবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তফা কামাল খান বলেন, আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সন্ধ্যার পরে ছিনতাইরোধে থানা ও ফাঁড়ি পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। এলাকার মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করেছি। বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে আইনত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও লালবাগ থানার পক্ষ থেকে এলাকাবাসীকে দুর্ভোগমুক্ত রাখতে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এমআর/