বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী একটি বাংলাদেশী আধাসামরিক বাহিনী। বাহিনীটি দেশের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনার নিরাপত্তা, মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করা, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার ও অন্যান্য বাহিনীকে সর্বাত্বক সহায়তা প্রদান করে আসছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর, জাতীয় ভিআইপি, সিআইপি এবং কূটনীতিকদের নিরাপত্তা প্রদানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এ বাহিনীর চৌকস সদস্যরা। বর্তমানে এ বাহিনীতে তিনটি শাখা রয়েছে। এর সর্বমোট সদস্য সংখ্যা প্রায় ৬১ লাখ। যা আধাসামরিক বা একক বাহিনী হিসাবে বিশ্বের বৃহত্তম। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সকল প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু করেছে এ বাহিনী। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাহিনীর জনবল সংকট ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আনসারে যুক্ত হচ্ছে নতুন ৫টি ব্যাটালিয়ন। এ বাহিনীকে অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই একাডেমিকভাবে সারাদেশে এ বাহিনীর সদস্যদের মৌলিক ও পেশাভিত্তিকসহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সমাপ্তি হবে। সংস্থাটির মুখপাত্র মো. আশিকুজ্জামান বলছেন, এখনও ইসি কর্তৃক চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়নি। এ জন্য নির্বাচনকেন্দ্রিক নিরাপত্তার দায়িত্বে সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নিশ্চিত করা না হলেও ধারণা করা হচ্ছে, এবারের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রসহ সারাদেশে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন আনসারের স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ সারাদেশে মোতায়েন থাকবে সাড়ে ৬ লক্ষাধিক সদস্য। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সরকার মুহাম্মদ শামসুদ্দিনের মতে, নতুন পাঁচটি ব্যাটালিয়ন গঠনের সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী। ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচন শুধু রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা নয়, বরং এটি দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্যও বড় পরীক্ষা। শুধু নির্বাচনের জন্য নয়, দীর্ঘমেয়াদে নিরাপত্তা নিশ্চিতের পরিকল্পনা করাও জরুরি। তবে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক
মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ বলেছেন, নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আনসার বাহিনীকে গড়ে তোলা হচ্ছে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী একটি বাংলাদেশী আধাসামরিক বাহিনী। বাহিনীটি দেশের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও স্থাপনার নিরাপত্তা, মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করা, দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার ও অন্যান্য বাহিনীকে সহায়তা প্রদান করে। অঙ্গীভুত আনসার এবং ভিডিপি সদস্য ও ব্যাটালিয়ন আনসার নিয়ে বাংলাদেশ আনসার বাহিনী গঠিত। বাহিনীর সফলতাসরূপ ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সরকার এই বাহিনীকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা প্রদান করে। ইতিপূর্বে আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন (এজিবি) নামে আনসার বাহিনীর নতুন একটি ইউনিট গঠন করা হয়েছে। যারা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা এবং সরকারের বিশেষ বিশেষ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। বর্তমানে আনসার বাহিনীর তিনটি শাখা রয়েছে, এগুলো হচ্ছে- জেনারেল আনসার, ব্যাটালিয়ন আনসার এবং গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (ভিডিপি)। তাদের সম্মিলিত সংখ্যা ৬ মিলিয়নেরও বেশি অর্থাৎ ৬১ লাখ, যা আধাসামরিক বা একক বাহিনী হিসাবে বিশ্বের বৃহত্তম বাহিনী। ‘শান্তি, শৃঙ্খলা, উন্নয়ন ও নিরাপত্তা’ সেøাগানকে ধারণ করা এ বাহিনীর মিশনগুলো হচ্ছে- জননিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সরকার বা সরকারের অধীনস্থ কোনো কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করা। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী যে কোনো জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা। মেট্রোপলিটন ও শিল্প নিরাপত্তায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করা। যুদ্ধের সময় জাতীয় প্রতিরক্ষায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে সহায়তা করা। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, জাতীয় ভিআইপি, সিআইপি এবং কূটনীতিকদের নিরাপত্তা প্রদান করছে। এছাড়া সরকারের নির্দেশ মোতাবেক যে কোন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা।আনসার সদস্যরা শিক্ষা সম্প্রসারণ কার্যক্রম, বৃক্ষরোপণ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, নারীর ক্ষমতায়ন, স্যানিটেশন কার্যক্রমেও অংশগ্রহণ করছে।
সূত্র জানায়, সারাদেশে ৫ হাজার ৭০১টি সংস্থায় বর্তমানে ৫৪ হাজার ৬৫১ জন উন্নত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং দক্ষ সাধারণ আনসার সদস্য অঙ্গীভূত হয়ে বিমান বন্দর, রেল ষ্টেশন, গণপরিবহন, শিল্প-কারখানা, বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ব্যাংক, গ্যাস ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শপিং মল, গার্মেন্টস শিল্প, লঞ্চ/সমূন্দ্র বন্দর, ট্রাফিক, ইপিজেডসহ গুরুত্ত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে মোতায়েন রয়েছে।
জানা যায়, ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর আরও জোর দিচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের পাঁচটি বিভাগে নতুন করে আনসারের পাঁচটি ব্যাটালিয়ন গঠনের পরিকল্পনা করছে সরকার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনের পাশাপাশি আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর জনবল সংকট কাটানো ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নতুন পাঁচটি ব্যাটালিয়ন গঠন করা হচ্ছে। চলতি বছরের ২৮ জুলাই মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেখান থেকে পাঠানো হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পর প্রস্তাবনার কাজ বাস্তবায়ন শুরু হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, এটার কাজ মোটামুটি শেষ পর্যায়ে। এখন ফাইল অর্থ মন্ত্রণালয়ে আছে। আশা করছি খুব দ্রুত এসব কাজ সম্পন্ন হবে। অনুমোদনের পর পাঁচটি নতুন ব্যাটালিয়ন গঠনের বাজেট নিয়ে একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি এসব ব্যাটালিয়ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ কেপিআইভুক্ত এলাকায় কাজ করবে। নতুন পাঁচ ব্যাটালিয়নকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি শহরে দায়িত্ব দেওয়া হবে। প্রথমটিকে রাখা হবে ঢাকার জন্য, দ্বিতীয় ব্যাটালিয়নকে বরিশাল সদরে, তৃতীয়টিকে চট্টগ্রাম, চতুর্থ ব্যাটালিয়নকে রংপুরের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকা এবং সর্বশেষ পঞ্চমটিকে দায়িত্ব দেওয়া হবে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায়। প্রতিটি ব্যাটালিয়নে ৪২৫ জন করে বিভিন্ন পদের কর্মকর্তা ও সিপাহি দায়িত্ব পালন করবেন।
জানা যায়, পাঁচটি ব্যাটালিয়ন গঠন এবং মোট ২ হাজার ১২৫টি স্থায়ী পদ সৃজনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এসব পদের মধ্যে পরিচালক, উপ-পরিচালক এবং সহকারী পরিচালক পদে ২০ জন থাকবেন বিসিএস আনসার ক্যাডারের কর্মকর্তারা। প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ২ হাজার ১২৫টি পদের মধ্যে ৫ জন পরিচালক, ৫ জন উপ-পরিচালক, ১০ জন সহকারী পরিচালক, ২০ জন সার্কেল অ্যাডজুট্যান্ট, ৯০ জন সুবেদার, ১০০ জন নায়েব সুবেদার, ১২০ জন হাবিলদার, ২০০ জন নায়েক, ৩৯০ জন ল্যান্স নায়েক, ১ হাজার ১৮০ জন সিপাহী এবং ৫ জন নার্সিং সহকারীর পদ সৃজনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। সাধারণত আনসার সদস্যদের ছয় মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, ত্রয়োদশ নির্বাচনের আগে এই পাঁচ ব্যাটালিয়নকে মাঠে নামানোর জন্য প্রয়োজনে চার মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতে পারে। আবার সরকারি বন্ধের দিনগুলোতে সাধারণত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না বা পিটি-প্যারেড হয় না। কিন্তু, সরকার চাইলে বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় শুক্র, শনি ও সরকারি দিনগুলোতে প্রশিক্ষণ দিয়ে এই গ্যাপটা পূরণ করা হতে পারে। সবকিছুই নির্ভর করছে কত দ্রুত এই পদ সৃজন কার্যক্রম শেষ হয়, সেটার ওপর। দেশে বর্তমানে মোট ৪২ ব্যাটালিয়ন আনসার রয়েছে। এদের মধ্যে ৩৯টি পুরুষ ব্যাটালিয়ন। দুটি নারী আনসার ব্যাটালিয়ন এবং বাকি একটি আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন বা এজিবি।
আনসারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ৩৯তম ব্যাটালিয়ন সৃষ্টির পর ৮ থেকে ৯ বছর অতিবাহিত হলেও নতুন কোনো ব্যাটালিয়ন তৈরি করা হয়নি। কিন্তু রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং কক্সবাজারের উখিয়াসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় প্রচুর সংখ্যক আনসার সদস্যকে মোতায়েন করতে হয়েছে। ফলে নির্বাচন ঘিরে এসব সদস্যকে এনে আবার নির্বাচনী ডিউটির জন্য মোতায়েন করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে।
তারা আরও জানান, সমতলে যেসব সদস্য রয়েছে- তাদের সংখ্যাও পর্যাপ্ত নয়। ফলে নতুন ব্যাটালিয়ন গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া, ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের অভিযান পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়েও ১০ থেকে ১২ জন করে আনসার সদস্য মোতায়েন থাকে। এসব কারণে নির্বাচনের জন্য সৈনিক সংকট তৈরি হয়েছে। সুতরাং জনবল স্বল্পতা এবং জাতীয় নির্বাচন, এই দুই বিষয় সামনে রেখে নতুন এই পাঁচটি ব্যাটালিয়ন গঠন করা হচ্ছে। সাধারণত আনসার সদস্যরা প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর এলএমজি ও অ্যাসল্ট রাইফেল বা চায়না রাইফেল নিয়ে ডিউটি করেন। এসব অস্ত্র বেশ পুরোনো মডেলের। তবে নতুন এই ব্যাটালিয়ন সদস্যরা অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত থাকবেন। আনসারের ৩৯তম ব্যাটালিয়ন গঠন হয় মানিকগঞ্জে। কিন্তু সেখানে এখন অবধি কোনো অবকাঠামো তৈরি করা সম্ভব হয়নি। মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশের কার্যালয়ের পাশে আনসারের এই ব্যাটালিয়ন রয়েছে। সেখানে একটি ভবনের কাজ শুরু হয়। সেখানের বেশিরভাগ সৈনিক বিটিভি ও লালবাগ কেল্লাসহ কয়েকটি জায়গায় মোতায়েন রয়েছে। সুতরাং ব্যাটালিয়ন অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গেই অবকাঠামো বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যে নিশ্চিত হচ্ছে তা কিন্তু নয়। সুতরাং নতুন এসব ব্যাটালিয়নের জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা এসব সৈনিকদের থাকার জায়গাও নেই।
এদিকে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার (১৮ বিএন) কোম্পানি কমান্ডার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে লক্ষ্মীপুর আনসার আনসার ব্যাটালিয়নে উপজেলা/থানা আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণ-২০২৫ (১ম ধাপ) এর দিনব্যাপী বিশেষ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনী মহড়ার মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীদের ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাৎক্ষণিকভাবে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কৌশল শেখানো হয়। বিশেষ করে নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যালট পেপার পরিবহন ও ব্যালটবাক্সের নিরাপত্তায় আনসার সদস্যদের দায়িত্বশীল ভূমিকা ও সতর্ক অবস্থানের গুরুত্ব ও নিরাপত্তা অনুশীলনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়।
আনসার ও ভিডিপি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা (মুখপাত্র) মো. আশিকুজ্জামান জানান, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তার দায়িত্ব নিশ্চিতকরণে দেশের বিভিন্ন বিভাগ, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে মৌলিক ও পেশাভিত্তিকসহ গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সমাপ্ত হবে। ইতোমধ্যেই নির্বাচনের নিরাপত্তাসহ অন্যান্য ইস্যুতে প্রস্তুত রয়েছে আনসার ও ভিডিপি’র সর্বস্তরের সদস্যরা।
কী সংখ্যক আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা নির্বাচনকেন্দ্রিক দায়িত্ব পালন করবেন এমন প্রশ্নে এই মুখপাত্র জানান, এখনও নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্তৃক চূড়ান্ত কোনো কেন্দ্রের সংখ্যা ঘোষণা করেনি। তাই এই মুহুর্তে সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নিশ্চিত করা করা সম্ভব হচ্ছে না। ভোটকেন্দ্রসহ পারিপার্শ্বিক বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আনসার সদস্য মোতায়েনের প্রকৃত সংখ্যা জানানো হবে। তবে ধারণা করা হচ্ছে ত্রয়োদশ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রসহ সারাদেশে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে আনসারের স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ সাড়ে ৬ লক্ষাধিক সদস্য মোতায়েন থাকতে পারে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সরকার মুহাম্মদ শামসুদ্দিন বলেন, ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচন শুধু রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা নয়, বরং এটি দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্যও বড় পরীক্ষা। বিগত নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে, সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ, ভোটকেন্দ্র সুরক্ষা এবং কেন্দ্রীয় স্থাপনাগুলোর পাহারায় আনসার বাহিনীর অবদান গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বর্তমানে ৪২টি ব্যাটালিয়নে প্রায় ১৮ হাজার সদস্য থাকলেও এর বড় অংশ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও প্রকল্পে ব্যস্ত থাকায় নির্বাচনী সময়ে পর্যাপ্ত জনবল হাতে থাকে না। নতুন পাঁচটি ব্যাটালিয়ন গঠনের বিষয়টি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। তবে শুধু নির্বাচনের জন্য নয়, দীর্ঘমেয়াদে নিরাপত্তা নিশ্চিতের পরিকল্পনা করাও জরুরি।
গত ২৩ আগস্ট গাজীপুরের সফিপুরে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে অনুষ্ঠিত সমাপনী প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ বলেছেন, আনসার বাহিনীর সদস্যদের শুধু সংখ্যাগত উপস্থিতি নয়, বরং নিরাপত্তা সেবার গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যেই এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আনসার বাহিনী চারটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। ভিডিপি/টিডিপি, উপজেলা/থানা আনসার, অঙ্গীভূত আনসার ও ব্যাটালিয়ন আনসারের দায়িত্ব ভিন্ন হলেও দেশের সার্বিক নিরাপত্তায় প্রতিটি সাংগঠনিক কাঠামোই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাটালিয়ন আনসার দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর সাথে দায়িত্ব পালন করছে, আর অঙ্গীভূত আনসার সদস্যরা পয়েন্ট সিকিউরিটিতে কেপিআই ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করছে। তারা সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে, যা দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে অপরিহার্য। উপজেলা আনসার সদস্যদের মিশন ও দায়িত্ব পরিধি অনুযায়ী প্রশিক্ষনের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা ও প্রান্তিক আয়োজনে জোরালো ভূমিকা রাখছে।
মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ বলেন, নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আনসার বাহিনীকে গড়ে তোলা হচ্ছে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত রয়েছে।
শিরোনাম
(শেষ পর্ব) আনসার ও ভিডিপি
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে প্রস্তুত আনসার বাহিনী
-
এসএম দেলোয়ার হোসেন - আপডেট সময় : ০৬:৫৯:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- ।
- 50
জনপ্রিয় সংবাদ

























