০১:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৮৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ, গতি নেই রেলে

  • নতুন নির্মিত হয়েছে প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার নতুন রেলপথ
  • আধুনিক বিভিন্ন অবকাঠামো, কেনা হয়েছে ইঞ্জিন ও কোচ
  • ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে রেলওয়ের ১২১টি প্রকল্প
  • ২৮১টি লোকোমোটিভ থাকলেও ৯৪টি ইঞ্জিন অচল
  • ভুল বিনিয়োগ ও সমন্বয়হীন উন্নয়ন প্রকল্পের ফলে ট্রেন শিডিউল বিপর্যয় এখন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। রেল নেটওয়ার্কের সক্ষমতার তুলনায় বেশি ট্রেন চালানো হচ্ছে, যা বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ- ড. সামছুল হক, অধ্যাপক, বুয়েট

বাংলাদেশ গত দেড় দশকে রেলওয়ে খাতে হয়েছে বিপুল বিনিয়োগ- প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার নতুন রেলপথ, আধুনিক করা হয়েছে বিভিন্ন অবকাঠামো, কিনে আনা হয়েছে কিছু ইঞ্জিন ও কোচ। কিন্তু এতসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও রেলওয়ের সার্বিক পরিস্থিতি আশানুরূপভাবে বদলায়নি। বরং ঘন ঘন ইঞ্জিন বিকল, ট্রেন বাতিল, সময়মতো না চলা এবং যাত্রীসেবার নিম্নমান- এসব মিলিয়ে রেল খাত এখন এক অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার প্রতিচ্ছবি।
২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে রেলওয়ের ১২১টি প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯৪৮ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হলেও, মাত্র ৪০টি নতুন ইঞ্জিন সংগ্রহ করা হয়েছে। অন্যদিকে, বহু পুরোনো ইঞ্জিন অবসরে পাঠানো হলেও সেগুলোর বিকল্প আনা হয়নি। এমনকি ৭০টি ইঞ্জিন কেনার একটি প্রকল্প ১৪ বছর ঝুলে থাকার পর ২০২৪ সালে বাতিল হয়ে যায় অর্থায়নের অভাবে। বর্তমানে রেলওয়ের বহরে মোট ২৮১টি লোকোমোটিভ থাকলেও ৯৪টি ইঞ্জিন অচল। পূর্বাঞ্চলে ৫৫টি এবং পশ্চিমাঞ্চলে ৩৯টি ইঞ্জিন এখন আর চলাচলে সক্ষম নয়। এতে যাত্রীসেবা তো বটেই, বিপর্যস্ত হয়েছে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থাও। চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৯টি ইঞ্জিনের মধ্যে অর্ধেকের বেশি- ৪৪টি এখন বিকল অবস্থায় পড়ে আছে। এদের মধ্যে রয়েছে মাত্র চার বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি করা আধুনিক ইঞ্জিনও। ওয়ারেন্টি শেষ হলেও সময়মতো যন্ত্রাংশ আমদানি না করায় সেগুলোকেও সচল রাখা যাচ্ছে না। ফ্রেইট সার্ভিসেও দেখা দিয়েছে চরম স্থবিরতা। চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট থেকে প্রতিদিন অন্তত চারটি পণ্যবাহী ট্রেন চালু থাকার কথা থাকলেও চলছে মাত্র একটি বা দুটি। এতে বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনার জট বাড়ছে, রপ্তানি-আমদানিতে সময় লাগছে দ্বিগুণেরও বেশি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, রেলের বিনিয়োগ হয়েছে মূলত অবকাঠামোতে- তা-ও অনেক ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয়। যাত্রীসেবায় বিনিয়োগ খুবই কম। হাজার কোটি টাকার স্টেশন তৈরি হয়েছে, অথচ ট্রেন থামে এক বা দুটি। সব মিলিয়ে এক ধরনের এককেন্দ্রিক ও ভুল পরিকল্পনার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘দক্ষ ব্যবস্থাপনা, প্রয়োজন অনুযায়ী যন্ত্রাংশ ও লোকবল নিয়োগের পরিবর্তে শুধু দৃশ্যমান অবকাঠামোতে বিনিয়োগ হয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠান হিসেবে রেলওয়ে পেছনের দিকেই হাঁটছে। রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন স্বীকার করেছেন, ‘ইঞ্জিনগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। মিটারগেজ ইঞ্জিনগুলোর যন্ত্রাংশ এখন আর সহজলভ্য নয়। দরপত্র প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হওয়ায় আমরা সময়মতো যন্ত্রাংশ আনতে পারিনি। গাফিলতিও ছিল।’ তিনি আরও জানান, ‘অনেক ইঞ্জিনেরই কার্যকর আয়ু পেরিয়ে গেছে- কিছু ইঞ্জিন তো ৫০-৬০ বছরের পুরোনো। এসব এখন প্রায় অচল। এদিকে সৈয়দপুর ও পাহারতলীর রেল কারখানায় অনুমোদিত টেকনিক্যাল পদের ৬০ শতাংশই শূন্য। ফলে ইঞ্জিন মেরামতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসেই পূর্বাঞ্চলে অন্তত ১৫০ বার ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা ঘটেছে। এতে ট্রেন চলাচলে দীর্ঘ বিলম্ব, অনেক ক্ষেত্রে যাত্রা বাতিল হয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সৈকত এক্সপ্রেস থেকে শুরু করে কালনী এক্সপ্রেস- দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। লাভজনক রুট হিসেবেও পরিচিত কক্সবাজার রুটে প্রায় প্রতিদিনই ১৫-২০ মিনিট দেরি হচ্ছে। যাত্রীবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হলে মাঝে-মধ্যে পণ্যবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন দিয়ে যাত্রী পরিবহন চালু রাখা হচ্ছে। এতে যাত্রী ও পণ্য- উভয় সেবাই ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের যুগ্ম মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কক্সবাজারের মতো লাভজনক রুটও আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। যাত্রীবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হলে অনেক সময় পণ্যবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন পাঠিয়ে বাকি পথ পার করা হয়। এক্ষেত্রে পণ্য পৌঁছানোর সময়ও বাড়ছে। অপারেটিং রেশিও নামক একটি পরিমাপক নির্দেশক দিয়ে বোঝা যায়, কোন সংস্থা কতটা দক্ষ। রেলওয়ের অপারেটিং রেশিও ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ১৫৯ শতাংশ, যা ২০২০-২১ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় ২৫৮ শতাংশে। অর্থাৎ, প্রতি ১ টাকা আয় করতে গিয়ে রেলওয়ের ব্যয় হচ্ছে ২ টাকা ৫৮ পয়সা। ওই বছরে মোট লোকসান হয়েছে ১,৭৫৬ কোটি টাকা। ২০২২ সালের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, রেলওয়ের ধারাবাহিক লোকসানের জন্য দায়ী দুর্নীতি, সম্পদের অপব্যবহার, ও যাত্রীসেবার মানহীনতা। রেলওয়ের প্রধান লক্ষ্যগুলোর একটি হলো সময়ানুবর্তিতা। ২০০৯ সালে আন্তঃনগর মিটারগেজ ট্রেনগুলোর সময়মতো চলার হার ছিল ৮৮ শতাংশ, যা ২০২১ সালে নেমে দাঁড়ায় ৮০ শতাংশে। মেইল ও লোকাল ট্রেনের সময়ানুবর্তিতাও কমেছে। বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, ‘ভুল বিনিয়োগ ও সমন্বয়হীন উন্নয়ন প্রকল্পের ফলে ট্রেন শিডিউল বিপর্যয় এখন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। রেল নেটওয়ার্কের সক্ষমতার তুলনায় বেশি ট্রেন চালানো হচ্ছে, যা বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ।’

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

৮৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ, গতি নেই রেলে

আপডেট সময় : ০৭:১৭:২৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নতুন নির্মিত হয়েছে প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার নতুন রেলপথ
  • আধুনিক বিভিন্ন অবকাঠামো, কেনা হয়েছে ইঞ্জিন ও কোচ
  • ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে রেলওয়ের ১২১টি প্রকল্প
  • ২৮১টি লোকোমোটিভ থাকলেও ৯৪টি ইঞ্জিন অচল
  • ভুল বিনিয়োগ ও সমন্বয়হীন উন্নয়ন প্রকল্পের ফলে ট্রেন শিডিউল বিপর্যয় এখন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। রেল নেটওয়ার্কের সক্ষমতার তুলনায় বেশি ট্রেন চালানো হচ্ছে, যা বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ- ড. সামছুল হক, অধ্যাপক, বুয়েট

বাংলাদেশ গত দেড় দশকে রেলওয়ে খাতে হয়েছে বিপুল বিনিয়োগ- প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার নতুন রেলপথ, আধুনিক করা হয়েছে বিভিন্ন অবকাঠামো, কিনে আনা হয়েছে কিছু ইঞ্জিন ও কোচ। কিন্তু এতসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও রেলওয়ের সার্বিক পরিস্থিতি আশানুরূপভাবে বদলায়নি। বরং ঘন ঘন ইঞ্জিন বিকল, ট্রেন বাতিল, সময়মতো না চলা এবং যাত্রীসেবার নিম্নমান- এসব মিলিয়ে রেল খাত এখন এক অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার প্রতিচ্ছবি।
২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে রেলওয়ের ১২১টি প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯৪৮ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হলেও, মাত্র ৪০টি নতুন ইঞ্জিন সংগ্রহ করা হয়েছে। অন্যদিকে, বহু পুরোনো ইঞ্জিন অবসরে পাঠানো হলেও সেগুলোর বিকল্প আনা হয়নি। এমনকি ৭০টি ইঞ্জিন কেনার একটি প্রকল্প ১৪ বছর ঝুলে থাকার পর ২০২৪ সালে বাতিল হয়ে যায় অর্থায়নের অভাবে। বর্তমানে রেলওয়ের বহরে মোট ২৮১টি লোকোমোটিভ থাকলেও ৯৪টি ইঞ্জিন অচল। পূর্বাঞ্চলে ৫৫টি এবং পশ্চিমাঞ্চলে ৩৯টি ইঞ্জিন এখন আর চলাচলে সক্ষম নয়। এতে যাত্রীসেবা তো বটেই, বিপর্যস্ত হয়েছে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থাও। চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৯টি ইঞ্জিনের মধ্যে অর্ধেকের বেশি- ৪৪টি এখন বিকল অবস্থায় পড়ে আছে। এদের মধ্যে রয়েছে মাত্র চার বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি করা আধুনিক ইঞ্জিনও। ওয়ারেন্টি শেষ হলেও সময়মতো যন্ত্রাংশ আমদানি না করায় সেগুলোকেও সচল রাখা যাচ্ছে না। ফ্রেইট সার্ভিসেও দেখা দিয়েছে চরম স্থবিরতা। চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট থেকে প্রতিদিন অন্তত চারটি পণ্যবাহী ট্রেন চালু থাকার কথা থাকলেও চলছে মাত্র একটি বা দুটি। এতে বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনার জট বাড়ছে, রপ্তানি-আমদানিতে সময় লাগছে দ্বিগুণেরও বেশি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, রেলের বিনিয়োগ হয়েছে মূলত অবকাঠামোতে- তা-ও অনেক ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয়। যাত্রীসেবায় বিনিয়োগ খুবই কম। হাজার কোটি টাকার স্টেশন তৈরি হয়েছে, অথচ ট্রেন থামে এক বা দুটি। সব মিলিয়ে এক ধরনের এককেন্দ্রিক ও ভুল পরিকল্পনার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘দক্ষ ব্যবস্থাপনা, প্রয়োজন অনুযায়ী যন্ত্রাংশ ও লোকবল নিয়োগের পরিবর্তে শুধু দৃশ্যমান অবকাঠামোতে বিনিয়োগ হয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠান হিসেবে রেলওয়ে পেছনের দিকেই হাঁটছে। রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন স্বীকার করেছেন, ‘ইঞ্জিনগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। মিটারগেজ ইঞ্জিনগুলোর যন্ত্রাংশ এখন আর সহজলভ্য নয়। দরপত্র প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হওয়ায় আমরা সময়মতো যন্ত্রাংশ আনতে পারিনি। গাফিলতিও ছিল।’ তিনি আরও জানান, ‘অনেক ইঞ্জিনেরই কার্যকর আয়ু পেরিয়ে গেছে- কিছু ইঞ্জিন তো ৫০-৬০ বছরের পুরোনো। এসব এখন প্রায় অচল। এদিকে সৈয়দপুর ও পাহারতলীর রেল কারখানায় অনুমোদিত টেকনিক্যাল পদের ৬০ শতাংশই শূন্য। ফলে ইঞ্জিন মেরামতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসেই পূর্বাঞ্চলে অন্তত ১৫০ বার ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা ঘটেছে। এতে ট্রেন চলাচলে দীর্ঘ বিলম্ব, অনেক ক্ষেত্রে যাত্রা বাতিল হয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সৈকত এক্সপ্রেস থেকে শুরু করে কালনী এক্সপ্রেস- দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। লাভজনক রুট হিসেবেও পরিচিত কক্সবাজার রুটে প্রায় প্রতিদিনই ১৫-২০ মিনিট দেরি হচ্ছে। যাত্রীবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হলে মাঝে-মধ্যে পণ্যবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন দিয়ে যাত্রী পরিবহন চালু রাখা হচ্ছে। এতে যাত্রী ও পণ্য- উভয় সেবাই ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের যুগ্ম মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কক্সবাজারের মতো লাভজনক রুটও আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। যাত্রীবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হলে অনেক সময় পণ্যবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন পাঠিয়ে বাকি পথ পার করা হয়। এক্ষেত্রে পণ্য পৌঁছানোর সময়ও বাড়ছে। অপারেটিং রেশিও নামক একটি পরিমাপক নির্দেশক দিয়ে বোঝা যায়, কোন সংস্থা কতটা দক্ষ। রেলওয়ের অপারেটিং রেশিও ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ১৫৯ শতাংশ, যা ২০২০-২১ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় ২৫৮ শতাংশে। অর্থাৎ, প্রতি ১ টাকা আয় করতে গিয়ে রেলওয়ের ব্যয় হচ্ছে ২ টাকা ৫৮ পয়সা। ওই বছরে মোট লোকসান হয়েছে ১,৭৫৬ কোটি টাকা। ২০২২ সালের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, রেলওয়ের ধারাবাহিক লোকসানের জন্য দায়ী দুর্নীতি, সম্পদের অপব্যবহার, ও যাত্রীসেবার মানহীনতা। রেলওয়ের প্রধান লক্ষ্যগুলোর একটি হলো সময়ানুবর্তিতা। ২০০৯ সালে আন্তঃনগর মিটারগেজ ট্রেনগুলোর সময়মতো চলার হার ছিল ৮৮ শতাংশ, যা ২০২১ সালে নেমে দাঁড়ায় ৮০ শতাংশে। মেইল ও লোকাল ট্রেনের সময়ানুবর্তিতাও কমেছে। বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, ‘ভুল বিনিয়োগ ও সমন্বয়হীন উন্নয়ন প্রকল্পের ফলে ট্রেন শিডিউল বিপর্যয় এখন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। রেল নেটওয়ার্কের সক্ষমতার তুলনায় বেশি ট্রেন চালানো হচ্ছে, যা বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ।’