০৬:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্বাচন ঘিরে লুণ্ঠিত অস্ত্র ব্যবহারের শঙ্কা

উদ্ধার হয়নি ১,৩৫৩টি অস্ত্র ও আড়াই লাখের বেশি গোলাবারুদ

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে লুণ্ঠিত অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারের শঙ্কা বাড়ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেদিনই সারাদেশের বহু থানা ও পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়। যদিও এর একটি বড় অংশ উদ্ধার করা গেছে, এখনও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হয়নি। এ কারণে রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতার ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা।

লুণ্ঠিত অস্ত্রের হিসাব- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী—

মোট লুট হয়েছিল: ৫,৭৬৩টি অস্ত্র ও ৬,৫২,০০৮ রাউন্ড গোলাবারুদ।

উদ্ধার হয়েছে: ৪,৪১০টি অস্ত্র ও ৩,৯৪,৩৪৯ রাউন্ড গোলাবারুদ।

এখনও উদ্ধার হয়নি: ১,৩৫৩টি অস্ত্র ও ২,৫৭,৬৫৯ রাউন্ড গোলাবারুদ।

এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে শর্টগান, পিস্তল, চায়না রাইফেল, এসএমজি, এমনকি এলএমজি পর্যন্ত।

লুটপাটের প্রেক্ষাপট: ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সময় রাজধানী ও সারাদেশে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট ঘটে। তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক কর্মকর্তা দায়িত্ব ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান। ফলে ভেঙে পড়ে চেইন অব কমান্ড। ওই সুযোগে বিক্ষুব্ধ জনতা ও সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা বিপুল অস্ত্র ও গুলি লুট করে। পরে এসব অস্ত্র হাতবদল হয়ে যায় দুর্বৃত্ত ও রাজনৈতিক দলের একাংশের কাছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, কিছু অস্ত্র ইতোমধ্যেই ব্যবহার হয়েছে ছিনতাই, ডাকাতি ও রাজনৈতিক সহিংসতায়।

 

পুরস্কার ঘোষণা: অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে।

শর্টগান বা পিস্তল উদ্ধার করলে ৫০ হাজার টাকা। চায়না রাইফেল বা এসএমজি উদ্ধার করলে ১ লাখ টাকা। এলএমজি উদ্ধার করলে ৫ লাখ টাকা। প্রতিটি রাউন্ড গুলি উদ্ধারে ৫০০ টাকা।

এই পুরস্কার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও পেতে পারবেন।

শঙ্কা ও সতর্কবার্তা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিশ্লেষক ড. মো. তৌহিদুল হক বলেন—“লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে যেগুলো উদ্ধার হয়নি, তা নির্বাচনের সময় অবৈধভাবে ব্যবহার হতে পারে। এতে রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতা বাড়ার ঝুঁকি প্রবল। দ্রুত উদ্ধার না হলে নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত হতে পারে।”

অন্যদিকে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন জানিয়েছেন— “অস্ত্রের বড় অংশ ইতোমধ্যেই উদ্ধার হয়েছে। বাকি অস্ত্র উদ্ধারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অভিযান চলছে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং অস্ত্র উদ্ধারে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।”

সরকারের অবস্থান: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীসহ সব বাহিনী মাঠে থাকবে। তিনি বলেন— “অস্ত্র উদ্ধার একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রতিদিনই উদ্ধার অভিযান চলছে। আশা করছি, নির্বাচনের আগে অধিকাংশ অস্ত্র উদ্ধার সম্ভব হবে।”

নির্বাচন ঘিরে উদ্বেগ : তবে এখনও যে পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার হয়নি, তা যে কোনো সময় রাজনৈতিক সহিংসতায় ব্যবহার হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এতে নির্বাচনি প্রচারণা, ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

বিজয় দিবস স্কোয়াশ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন রাফির সঙ্গে চবি উপাচার্যের সাক্ষাৎ

নির্বাচন ঘিরে লুণ্ঠিত অস্ত্র ব্যবহারের শঙ্কা

আপডেট সময় : ০৪:৫৭:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে লুণ্ঠিত অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারের শঙ্কা বাড়ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেদিনই সারাদেশের বহু থানা ও পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়। যদিও এর একটি বড় অংশ উদ্ধার করা গেছে, এখনও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হয়নি। এ কারণে রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতার ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা।

লুণ্ঠিত অস্ত্রের হিসাব- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী—

মোট লুট হয়েছিল: ৫,৭৬৩টি অস্ত্র ও ৬,৫২,০০৮ রাউন্ড গোলাবারুদ।

উদ্ধার হয়েছে: ৪,৪১০টি অস্ত্র ও ৩,৯৪,৩৪৯ রাউন্ড গোলাবারুদ।

এখনও উদ্ধার হয়নি: ১,৩৫৩টি অস্ত্র ও ২,৫৭,৬৫৯ রাউন্ড গোলাবারুদ।

এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে শর্টগান, পিস্তল, চায়না রাইফেল, এসএমজি, এমনকি এলএমজি পর্যন্ত।

লুটপাটের প্রেক্ষাপট: ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সময় রাজধানী ও সারাদেশে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট ঘটে। তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক কর্মকর্তা দায়িত্ব ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান। ফলে ভেঙে পড়ে চেইন অব কমান্ড। ওই সুযোগে বিক্ষুব্ধ জনতা ও সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা বিপুল অস্ত্র ও গুলি লুট করে। পরে এসব অস্ত্র হাতবদল হয়ে যায় দুর্বৃত্ত ও রাজনৈতিক দলের একাংশের কাছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, কিছু অস্ত্র ইতোমধ্যেই ব্যবহার হয়েছে ছিনতাই, ডাকাতি ও রাজনৈতিক সহিংসতায়।

 

পুরস্কার ঘোষণা: অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে।

শর্টগান বা পিস্তল উদ্ধার করলে ৫০ হাজার টাকা। চায়না রাইফেল বা এসএমজি উদ্ধার করলে ১ লাখ টাকা। এলএমজি উদ্ধার করলে ৫ লাখ টাকা। প্রতিটি রাউন্ড গুলি উদ্ধারে ৫০০ টাকা।

এই পুরস্কার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও পেতে পারবেন।

শঙ্কা ও সতর্কবার্তা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিশ্লেষক ড. মো. তৌহিদুল হক বলেন—“লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে যেগুলো উদ্ধার হয়নি, তা নির্বাচনের সময় অবৈধভাবে ব্যবহার হতে পারে। এতে রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতা বাড়ার ঝুঁকি প্রবল। দ্রুত উদ্ধার না হলে নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত হতে পারে।”

অন্যদিকে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন জানিয়েছেন— “অস্ত্রের বড় অংশ ইতোমধ্যেই উদ্ধার হয়েছে। বাকি অস্ত্র উদ্ধারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অভিযান চলছে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং অস্ত্র উদ্ধারে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।”

সরকারের অবস্থান: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীসহ সব বাহিনী মাঠে থাকবে। তিনি বলেন— “অস্ত্র উদ্ধার একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রতিদিনই উদ্ধার অভিযান চলছে। আশা করছি, নির্বাচনের আগে অধিকাংশ অস্ত্র উদ্ধার সম্ভব হবে।”

নির্বাচন ঘিরে উদ্বেগ : তবে এখনও যে পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার হয়নি, তা যে কোনো সময় রাজনৈতিক সহিংসতায় ব্যবহার হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এতে নির্বাচনি প্রচারণা, ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

এমআর/সবা