০৩:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাজার স্থানান্তর নিয়ে পাল্টাপাল্টি আবেদন, সিদ্ধান্তহীনতায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন

দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে সংঘবদ্ধ চক্র মাজারে হামলা ও ভাঙচুর চালাচ্ছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার মাজারে হামলা এবং মরদেহ পোড়ানোর ঘটনা দেশজুড়ে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে অন্তত দেড় শতাধিক মাজার-খানকায় হামলার খবর পাওয়া গেছে।

এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ থেকে মাজার স্থানান্তরের জন্য পাল্টাপাল্টি আবেদন জমা পড়ে। তবে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।

আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান, আবেদনে উল্লেখ করেন, মাজার যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় অন্যত্র স্থানান্তর করা উচিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কবর স্থানান্তরের উদাহরণ রয়েছে। মাজার ও প্রাঙ্গণে বহুতল মসজিদ নির্মাণের কারণে ভবঘুরে লোকজন, ভিক্ষুক ও মাজার ভক্তদের উপস্থিতি বেশি এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, বিদ্যমান মসজিদ পর্যাপ্ত, নতুন বহুতল মসজিদ নির্মাণ করলে নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি হবে। প্রয়োজনে বিদ্যমান সড়ক ভবনের মসজিদ ভেঙে বহুতল মসজিদ নির্মাণ করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট আবেদনটির কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে। চেয়ারম্যান এম এ মতিন ও মহাসচিব অধ্যক্ষ আল্লামা স. উ. ম আবদুস সামাদ বলেন, নিরাপত্তার অজুহাতে মাজার ও মসজিদ সরানোর আবেদন সরাসরি ইসলাম অবমাননার শামিল। প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্ট সরানো হোক, কিন্তু মাজার নয়। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, সুন্নি জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিলে তারা ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

নুরাল হক বা নুরাল পাগলের মৃত্যু ও কবর সংক্রান্ত উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে। ৫ সেপ্টেম্বর গোয়ালন্দে শত শত মানুষ মাজারে হামলা চালায়, মরদেহ আগুনে পোড়ানো হয়, সংঘর্ষে একজন নিহত ও ২২ জন আহত হন। পুলিশ ও প্রশাসন বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা গাড়ি ভাঙচুর করে। মামলা দায়েরের পর ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মাজার সরানোর বা না করার বিষয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের কাছে উভয় পক্ষের চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত বা আলোচনা হয়নি, ফলে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে।

মাজার স্থানান্তর এবং বহুতল মসজিদ নির্মাণ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও প্রশাসনিক স্তরে বিতর্ক অব্যাহত আছে, এবং এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

মাজার স্থানান্তর নিয়ে পাল্টাপাল্টি আবেদন, সিদ্ধান্তহীনতায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন

আপডেট সময় : ০৫:০৭:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫

দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে সংঘবদ্ধ চক্র মাজারে হামলা ও ভাঙচুর চালাচ্ছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার মাজারে হামলা এবং মরদেহ পোড়ানোর ঘটনা দেশজুড়ে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে অন্তত দেড় শতাধিক মাজার-খানকায় হামলার খবর পাওয়া গেছে।

এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ থেকে মাজার স্থানান্তরের জন্য পাল্টাপাল্টি আবেদন জমা পড়ে। তবে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।

আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান, আবেদনে উল্লেখ করেন, মাজার যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় অন্যত্র স্থানান্তর করা উচিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কবর স্থানান্তরের উদাহরণ রয়েছে। মাজার ও প্রাঙ্গণে বহুতল মসজিদ নির্মাণের কারণে ভবঘুরে লোকজন, ভিক্ষুক ও মাজার ভক্তদের উপস্থিতি বেশি এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, বিদ্যমান মসজিদ পর্যাপ্ত, নতুন বহুতল মসজিদ নির্মাণ করলে নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি হবে। প্রয়োজনে বিদ্যমান সড়ক ভবনের মসজিদ ভেঙে বহুতল মসজিদ নির্মাণ করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট আবেদনটির কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে। চেয়ারম্যান এম এ মতিন ও মহাসচিব অধ্যক্ষ আল্লামা স. উ. ম আবদুস সামাদ বলেন, নিরাপত্তার অজুহাতে মাজার ও মসজিদ সরানোর আবেদন সরাসরি ইসলাম অবমাননার শামিল। প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্ট সরানো হোক, কিন্তু মাজার নয়। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, সুন্নি জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিলে তারা ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

নুরাল হক বা নুরাল পাগলের মৃত্যু ও কবর সংক্রান্ত উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে। ৫ সেপ্টেম্বর গোয়ালন্দে শত শত মানুষ মাজারে হামলা চালায়, মরদেহ আগুনে পোড়ানো হয়, সংঘর্ষে একজন নিহত ও ২২ জন আহত হন। পুলিশ ও প্রশাসন বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা গাড়ি ভাঙচুর করে। মামলা দায়েরের পর ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মাজার সরানোর বা না করার বিষয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের কাছে উভয় পক্ষের চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত বা আলোচনা হয়নি, ফলে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে।

মাজার স্থানান্তর এবং বহুতল মসজিদ নির্মাণ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও প্রশাসনিক স্তরে বিতর্ক অব্যাহত আছে, এবং এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

এমআর/সবা