০৯:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সক্রিয় হচ্ছে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ!

  • রাজধানীতে বাড়ছে ঝটিকা মিছিলের তৎপরতা
  • একমাসে ঢাকায় গ্রেপ্তার সাবেক এমপি-সচিবসহ ৪৮৪
  • উদ্ধার করা হয়েছে গান পাউডার-ককটেল-মিছিলের ব্যানার

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলের অবসান ঘটে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে সেখানে অবস্থান করছেন। গত বছরের ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী ডা. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এরপর জনরোষের ভয়ে শেখ হাসিনার আজ্ঞাবহ অনেক মন্ত্রী-এমপি ও মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে চলে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা এমনকি বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের দলীয় কার্যালয়, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক হামলা-ভাঙচুর চালিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। ছাত্র-জনতার তোপের মুখে ইতোমধ্যেই সাবেক মন্ত্রী-এমপি, সচিব, আইজিপিসহ দলের নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে বন্দি রয়েছেন। চলতি বছরের ৮ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগ সমগ্র দেশে বিতর্কের সৃষ্টি করে, যার বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান চলাকালে জুলাই গণহত্যার নির্দেশ প্রদানের অভিযোগ করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সরকারের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করে তখন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ সরকারপ্রধান তথা অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচির সূচনা করেন যা পরবর্তীতে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যের ব্যানারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে পরিণত হয়। এরপর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গত বছরের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে সরকার। পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আত্মগোপনে থাকা পতিত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে রাজপথে নেমে ঝটিকা মিছিল করলে ফের আলোচনার সামনে আসে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনার সরকার পতনের আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছাত্র-জনতার মধ্যে নতুন করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের রাজনীতির মাঠে ফিরে আসবে পারে, এমন আতঙ্ক তৈরি হয়। পরবর্তীতে ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবির মুখে চলতি বছরের ১২ মে আওয়ামী লীগের সবধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় বিএনপি-জামায়াত ও এনসিপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক তৈরি হলেও সরকারের নির্দেশে তাদের কার্যক্রম প্রতিরোধে তৎপর হয়ে ওঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সব বাধা উপেক্ষা করেই নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ঝটিকা মিছিল বের করে নিষিদ্ধ এ দলটির সদস্যরা। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় প্রায়ই ঝটিকা মিছিল করছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে সাধারণ জনমনে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, ঝটিকা মিছিল বের করে ক্রমেই সক্রিয় হয়ে উঠছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অপরাধ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমকে বিতর্কিত করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জোটবদ্ধ হয়ে মিছিল বের করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে পারে। ডিএমপি’র কর্মকর্তারা বলছেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিলকালে এবং আত্মগোপনে থেকে বিশৃঙ্খলার অপচেষ্টার অভিযোগে সাবেক এমপি, সচিব, নারী কাউন্সিলর ও দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ ৪৮৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে একদিনেই ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয় ২৪৪ জনকে। একই সঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে গান পাউডার ও ককটেলসহ মিছিলে ব্যবহার করা দলীয় ব্যানার। ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এসএন মো. নজরুল ইসলাম বলেছেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় টাকা দিয়ে ঝটিকা মিছিল করাচ্ছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের অর্থ যোগানদাতা, আশ্রয়দাতা ও লোক সরবরাহকারীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানান, আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দ্রুত প্রত্যাহার হবে এমন কোনো সম্ভাবনা নেই। সংগঠন হিসেবে দলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচার পাওয়ার পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় শরীক জোট সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলের অবসান ঘটে। এ সময় জনরোষের ভয়ে দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে চলে যান পতিত শেখ হাসিনার সরকারের আজ্ঞাবহ মন্ত্রী-এমপি, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও দলের নেতাকর্মীরা। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ছাত্র-জনতার দাবির মুখে শুরু হয় শুদ্ধি অভিযান। গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে বন্দি হন অনেক মন্ত্রী-এমপিসহ দলের মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা। পরবর্তীতে সাধারণ জনতার কাতারে মিশে যায় তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী। দেশের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট। মব করে তাণ্ডব চালানো হয় সারাদেশে। এতে আওয়ামী লীগের দোসররা জড়িত বলে দাবি করেন জুলাই আন্দোলনে জড়িতরা। এমন পরিস্থিতির মুখে ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের কথা জানানো হয়।
মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখা-২ এর দেওয়া প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে গত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল এবং এ সম্পর্কিত প্রামাণ্য তথ্য দেশের সব প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে।
এদিকে, চলতি বছরের ৮ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগ সমগ্র দেশে বিতর্কের সৃষ্টি করে, যার বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান চলাকালে জুলাই গণহত্যার নির্দেশ প্রদানের অভিযোগ করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সরকারের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করে তখন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ সরকারপ্রধান তথা অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচির সূচনা করেন যা পরবর্তীতে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যের ব্যানারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে পরিণত হয়। চলমান আন্দোলনের মাঝে ১০ মে ২০২৫ সালে সরকার কর্তৃক কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দেওয়ার বিধান রেখে আইন সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। পরবর্তীতে ১২ মে ২০২৫ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচারকার্য শেষ হয়ে রায় না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর সকল সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম ও অঙ্গসংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয় এবং রাজনৈতিক দলটির নিবন্ধন স্থগিত করা হয়।
সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে গুম, খুন, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, গণহত্যা, বেআইনি আটক, অমানবিক নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে এবং এসব অভিযোগ দেশি ও আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেহেতু উলি¬খিত অপরাধগুলোর অভিযোগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং দেশের ফৌজদারি আদালতে বহুসংখ্যক মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কর্তৃক যে কোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে কোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেলের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানিয়েছেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর ভোরে গোপন সংবাদে ডিএমপির ডিবি তেজগাঁও বিভাগের একটি দল আশুলিয়া এলাকায় অভিযান চালায়। তখন সেখান থেকে ১ কেজি ৩৮০ গ্রাম গান পাউডারসহ কার্যক্রম নিষিদ্ধ মোঃ খাইরুল ইসলাম নামে আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। গ্রেফতারকৃত খাইরুল ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতাকর্মী সম্প্রতি রাজধানীর শ্যামলী এলাকায় ঝটিকা মিছিল করে এবং ককটেল বিস্ফোরণ করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। উদ্ধারকৃত গান পাউডারের উৎস অনুসন্ধান এবং এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে ডিবির অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিলকালে পুলিশ অভিযান চালিয়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ২৪৪ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে ডিবি পুলিশ ৫০ জনকে, সিটিটিসি ২৭ জনকে, তেজগাঁও বিভাগ ১০০ জনকে, রমনা বিভাগ ৫৫ জনকে, গুলশান বিভাগ ৫ জনকে, মিরপুর বিভাগ ৪ জনকে এবং উত্তরা বিভাগ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এই গ্রেপ্তারের সময় ১৪টি ককটেল ও ৭টি ব্যানার উদ্ধার করা হয়।
এরও আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকায় ঝটিকা মিছিলের প্রস্তুতিকালে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ১১ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে হাজারীবাগ থানা পুলিশ। এরা হলেন- মো. নুর ইসলাম, সৈয়দ বাদশা মিয়া, মো. জাহিদ হাসান হৃদয়, সাব্বির হোসেন, মো. বিল্লাল হোসেন, মো. মিলন মৃধা, মো. আমির হোসেন, মানিক দাস, মো. শ্রাবণ আহমেদ ইভান, মো. মুসফিকুর রহিম ও মো. ফরহাদ হোসেন মাতুব্বর। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ডিএমপির মিডিয়া সেলের ডিসি তালেবুর রহমান আরও জানান, গত সেপ্টেম্বরজুড়ে টানা এক মাসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিলকালে এবং নাশকতার অপচেষ্টায় আত্মগোপনে থাকা কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের সর্বমোট ৪৮৪ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে কয়েকজন সাবেক এমপি ও সচিব এবং নারী কাউন্সিলরও রয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এসএন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের অর্থ যোগানদাতা, আশ্রয়দাতা ও লোক সরবরাহকারীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠনের যে কোনো অপতৎপরতা রোধে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে গতকাল বুধবার দুপুরে বরিশাল নগরীর শঙ্কর মঠ পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দ্রুত প্রত্যাহার হবে এমন কোনো সম্ভাবনা নেই। সংগঠন হিসেবে দলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচার পাওয়ার পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সক্রিয় হচ্ছে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ!

আপডেট সময় : ০৭:৩৩:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫
  • রাজধানীতে বাড়ছে ঝটিকা মিছিলের তৎপরতা
  • একমাসে ঢাকায় গ্রেপ্তার সাবেক এমপি-সচিবসহ ৪৮৪
  • উদ্ধার করা হয়েছে গান পাউডার-ককটেল-মিছিলের ব্যানার

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলের অবসান ঘটে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে সেখানে অবস্থান করছেন। গত বছরের ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী ডা. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এরপর জনরোষের ভয়ে শেখ হাসিনার আজ্ঞাবহ অনেক মন্ত্রী-এমপি ও মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে চলে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা এমনকি বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের দলীয় কার্যালয়, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক হামলা-ভাঙচুর চালিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। ছাত্র-জনতার তোপের মুখে ইতোমধ্যেই সাবেক মন্ত্রী-এমপি, সচিব, আইজিপিসহ দলের নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে বন্দি রয়েছেন। চলতি বছরের ৮ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগ সমগ্র দেশে বিতর্কের সৃষ্টি করে, যার বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান চলাকালে জুলাই গণহত্যার নির্দেশ প্রদানের অভিযোগ করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সরকারের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করে তখন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ সরকারপ্রধান তথা অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচির সূচনা করেন যা পরবর্তীতে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যের ব্যানারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে পরিণত হয়। এরপর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গত বছরের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে সরকার। পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আত্মগোপনে থাকা পতিত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে রাজপথে নেমে ঝটিকা মিছিল করলে ফের আলোচনার সামনে আসে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনার সরকার পতনের আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছাত্র-জনতার মধ্যে নতুন করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের রাজনীতির মাঠে ফিরে আসবে পারে, এমন আতঙ্ক তৈরি হয়। পরবর্তীতে ছাত্র-জনতাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবির মুখে চলতি বছরের ১২ মে আওয়ামী লীগের সবধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় বিএনপি-জামায়াত ও এনসিপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক তৈরি হলেও সরকারের নির্দেশে তাদের কার্যক্রম প্রতিরোধে তৎপর হয়ে ওঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সব বাধা উপেক্ষা করেই নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ঝটিকা মিছিল বের করে নিষিদ্ধ এ দলটির সদস্যরা। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় প্রায়ই ঝটিকা মিছিল করছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে সাধারণ জনমনে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, ঝটিকা মিছিল বের করে ক্রমেই সক্রিয় হয়ে উঠছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অপরাধ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমকে বিতর্কিত করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জোটবদ্ধ হয়ে মিছিল বের করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে পারে। ডিএমপি’র কর্মকর্তারা বলছেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিলকালে এবং আত্মগোপনে থেকে বিশৃঙ্খলার অপচেষ্টার অভিযোগে সাবেক এমপি, সচিব, নারী কাউন্সিলর ও দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ ৪৮৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে একদিনেই ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয় ২৪৪ জনকে। একই সঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে গান পাউডার ও ককটেলসহ মিছিলে ব্যবহার করা দলীয় ব্যানার। ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এসএন মো. নজরুল ইসলাম বলেছেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় টাকা দিয়ে ঝটিকা মিছিল করাচ্ছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের অর্থ যোগানদাতা, আশ্রয়দাতা ও লোক সরবরাহকারীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানান, আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দ্রুত প্রত্যাহার হবে এমন কোনো সম্ভাবনা নেই। সংগঠন হিসেবে দলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচার পাওয়ার পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় শরীক জোট সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলের অবসান ঘটে। এ সময় জনরোষের ভয়ে দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে চলে যান পতিত শেখ হাসিনার সরকারের আজ্ঞাবহ মন্ত্রী-এমপি, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও দলের নেতাকর্মীরা। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ছাত্র-জনতার দাবির মুখে শুরু হয় শুদ্ধি অভিযান। গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে বন্দি হন অনেক মন্ত্রী-এমপিসহ দলের মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা। পরবর্তীতে সাধারণ জনতার কাতারে মিশে যায় তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী। দেশের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট। মব করে তাণ্ডব চালানো হয় সারাদেশে। এতে আওয়ামী লীগের দোসররা জড়িত বলে দাবি করেন জুলাই আন্দোলনে জড়িতরা। এমন পরিস্থিতির মুখে ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের কথা জানানো হয়।
মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখা-২ এর দেওয়া প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে গত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল এবং এ সম্পর্কিত প্রামাণ্য তথ্য দেশের সব প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে।
এদিকে, চলতি বছরের ৮ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগ সমগ্র দেশে বিতর্কের সৃষ্টি করে, যার বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান চলাকালে জুলাই গণহত্যার নির্দেশ প্রদানের অভিযোগ করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সরকারের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করে তখন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ সরকারপ্রধান তথা অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচির সূচনা করেন যা পরবর্তীতে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যের ব্যানারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে পরিণত হয়। চলমান আন্দোলনের মাঝে ১০ মে ২০২৫ সালে সরকার কর্তৃক কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দেওয়ার বিধান রেখে আইন সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। পরবর্তীতে ১২ মে ২০২৫ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচারকার্য শেষ হয়ে রায় না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর সকল সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম ও অঙ্গসংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয় এবং রাজনৈতিক দলটির নিবন্ধন স্থগিত করা হয়।
সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে গুম, খুন, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, গণহত্যা, বেআইনি আটক, অমানবিক নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে এবং এসব অভিযোগ দেশি ও আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেহেতু উলি¬খিত অপরাধগুলোর অভিযোগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং দেশের ফৌজদারি আদালতে বহুসংখ্যক মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কর্তৃক যে কোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে কোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেলের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানিয়েছেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর ভোরে গোপন সংবাদে ডিএমপির ডিবি তেজগাঁও বিভাগের একটি দল আশুলিয়া এলাকায় অভিযান চালায়। তখন সেখান থেকে ১ কেজি ৩৮০ গ্রাম গান পাউডারসহ কার্যক্রম নিষিদ্ধ মোঃ খাইরুল ইসলাম নামে আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। গ্রেফতারকৃত খাইরুল ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতাকর্মী সম্প্রতি রাজধানীর শ্যামলী এলাকায় ঝটিকা মিছিল করে এবং ককটেল বিস্ফোরণ করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। উদ্ধারকৃত গান পাউডারের উৎস অনুসন্ধান এবং এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে ডিবির অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিলকালে পুলিশ অভিযান চালিয়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ২৪৪ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে ডিবি পুলিশ ৫০ জনকে, সিটিটিসি ২৭ জনকে, তেজগাঁও বিভাগ ১০০ জনকে, রমনা বিভাগ ৫৫ জনকে, গুলশান বিভাগ ৫ জনকে, মিরপুর বিভাগ ৪ জনকে এবং উত্তরা বিভাগ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এই গ্রেপ্তারের সময় ১৪টি ককটেল ও ৭টি ব্যানার উদ্ধার করা হয়।
এরও আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকায় ঝটিকা মিছিলের প্রস্তুতিকালে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ১১ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে হাজারীবাগ থানা পুলিশ। এরা হলেন- মো. নুর ইসলাম, সৈয়দ বাদশা মিয়া, মো. জাহিদ হাসান হৃদয়, সাব্বির হোসেন, মো. বিল্লাল হোসেন, মো. মিলন মৃধা, মো. আমির হোসেন, মানিক দাস, মো. শ্রাবণ আহমেদ ইভান, মো. মুসফিকুর রহিম ও মো. ফরহাদ হোসেন মাতুব্বর। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ডিএমপির মিডিয়া সেলের ডিসি তালেবুর রহমান আরও জানান, গত সেপ্টেম্বরজুড়ে টানা এক মাসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিলকালে এবং নাশকতার অপচেষ্টায় আত্মগোপনে থাকা কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের সর্বমোট ৪৮৪ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে কয়েকজন সাবেক এমপি ও সচিব এবং নারী কাউন্সিলরও রয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এসএন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের অর্থ যোগানদাতা, আশ্রয়দাতা ও লোক সরবরাহকারীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠনের যে কোনো অপতৎপরতা রোধে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে গতকাল বুধবার দুপুরে বরিশাল নগরীর শঙ্কর মঠ পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দ্রুত প্রত্যাহার হবে এমন কোনো সম্ভাবনা নেই। সংগঠন হিসেবে দলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচার পাওয়ার পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।