০৪:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শুক্রবার মধ্যরাত থেকে পদ্মা-মেঘনায় ২২ দিন মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে জাতীয় সম্পদ ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আগামীকাল শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাত ১২টা থেকে ২৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার।

সরকারের এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে উপকূলীয় এলাকায় সচেতনামূলক প্রচারণা চালানো হয়েছে। মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইলিশসহ অন্যান্য মাছ আহরণে জড়িত জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা প্রায় ৪৩ হাজার। নিষেধাজ্ঞার সময় ডিমওয়ালা মা ইলিশ আহরণ থেকে বিরত থাকাকালীন এসব জেলেদের খাদ্যসহায়তা (৪০ কেজি চাল) দেওয়া হবে, যা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পৌঁছে যাবে।

নদীর মিঠা পানিতে এই সময়ে ইলিশের বিচরণ হওয়ায় চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকায় দিন-রাত অভিযান পরিচালনা করবে টাস্কফোর্স। অভয়াশ্রমে মাছ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন ও মজুদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে মৎস্য আইনে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

 

জেলেরা সরকারের নির্দেশ মেনে চলার ক্ষেত্রে সচেতন থাকলেও প্রশাসনের আরও কঠোর নজরদারির আহ্বান জানিয়েছেন। সদর উপজেলার হরিণা মাছঘাটের প্রবীণ ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম সৈয়াল বলেন, “নির্ধারিত সময়ে আড়তগুছিয়ে চলে যাই, তবে টাকার বিনিময়ে কিছু জেলে নদীতে নামে। প্রশাসনের উপস্থিতি নিশ্চিত হলে অভিযান সফল হবে।”

চাঁদপুর সদর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মির্জা ওমর ফারুক জানান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ ২২ দিন নদীতে কঠোর নজরদারি চালাবে। নৌকাগুলো নদীতে না নামার ব্যবস্থা করা হবে এবং খালের অভ্যন্তরে থাকা নৌকা একত্রিত করে বেধে রাখা হবে। অনৈতিক কাজে জড়িত কাউকে প্রশাসন কঠোরভাবে দণ্ডিত করবে।

নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জেলেদের উদ্দেশ্যে বলেন, “২২ দিন ধৈর্য ধরে মা ইলিশ রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকার পক্ষ থেকে বিকল্প কর্মসংস্থান ও সহায়তা দেওয়া হবে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, “মা ইলিশকে নিরাপদে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতে হবে। ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ ধরা হলে ভবিষ্যতে মাছের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই নিষেধাজ্ঞা জেলেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য, যাতে আগামী দিনে নদীতে আরও বেশি ইলিশ পাওয়া যায়।”

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

শহীদ জিয়ার কবরের পাশে খালেদা জিয়ার দাফনের প্রস্তুতি

শুক্রবার মধ্যরাত থেকে পদ্মা-মেঘনায় ২২ দিন মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

আপডেট সময় : ০৭:৪৭:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫

চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে জাতীয় সম্পদ ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আগামীকাল শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাত ১২টা থেকে ২৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার।

সরকারের এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে উপকূলীয় এলাকায় সচেতনামূলক প্রচারণা চালানো হয়েছে। মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইলিশসহ অন্যান্য মাছ আহরণে জড়িত জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা প্রায় ৪৩ হাজার। নিষেধাজ্ঞার সময় ডিমওয়ালা মা ইলিশ আহরণ থেকে বিরত থাকাকালীন এসব জেলেদের খাদ্যসহায়তা (৪০ কেজি চাল) দেওয়া হবে, যা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পৌঁছে যাবে।

নদীর মিঠা পানিতে এই সময়ে ইলিশের বিচরণ হওয়ায় চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকায় দিন-রাত অভিযান পরিচালনা করবে টাস্কফোর্স। অভয়াশ্রমে মাছ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন ও মজুদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে মৎস্য আইনে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

 

জেলেরা সরকারের নির্দেশ মেনে চলার ক্ষেত্রে সচেতন থাকলেও প্রশাসনের আরও কঠোর নজরদারির আহ্বান জানিয়েছেন। সদর উপজেলার হরিণা মাছঘাটের প্রবীণ ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম সৈয়াল বলেন, “নির্ধারিত সময়ে আড়তগুছিয়ে চলে যাই, তবে টাকার বিনিময়ে কিছু জেলে নদীতে নামে। প্রশাসনের উপস্থিতি নিশ্চিত হলে অভিযান সফল হবে।”

চাঁদপুর সদর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মির্জা ওমর ফারুক জানান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ ২২ দিন নদীতে কঠোর নজরদারি চালাবে। নৌকাগুলো নদীতে না নামার ব্যবস্থা করা হবে এবং খালের অভ্যন্তরে থাকা নৌকা একত্রিত করে বেধে রাখা হবে। অনৈতিক কাজে জড়িত কাউকে প্রশাসন কঠোরভাবে দণ্ডিত করবে।

নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জেলেদের উদ্দেশ্যে বলেন, “২২ দিন ধৈর্য ধরে মা ইলিশ রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকার পক্ষ থেকে বিকল্প কর্মসংস্থান ও সহায়তা দেওয়া হবে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, “মা ইলিশকে নিরাপদে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতে হবে। ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ ধরা হলে ভবিষ্যতে মাছের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই নিষেধাজ্ঞা জেলেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য, যাতে আগামী দিনে নদীতে আরও বেশি ইলিশ পাওয়া যায়।”

এমআর/সবা