০৯:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অরক্ষিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প

  • আট হাজার একরজুড়ে রয়েছে ৩৩ ক্যাম্প
  • নজরদারিতে বসানো ৭০০ সিসি ক্যামেরাই অচল
  • কেটে ফেলা হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া, চ্যালেঞ্জের মুখে নিরাপত্তা
  • পানবাজার ক্যাম্পে তৈরি হয়েছে ৬টি পয়েন্টে গোপন পথ
  • দুই দেশের সীমান্তে গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গা অপরাধীদের নিরাপদ রুট

মিয়ানমারে সামরিক জান্তা বাহিনীর গণহত্যা ও অমানুষিক নির্যাতনের ভয়ে ২০১৭ সালে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লক্ষাধিক মানুষ। তৎকালীন সময়ে মানবিক কারণে শেখ হাসিনার সরকার তাদের কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দিয়েছিল। সময়ের ব্যবধানে দেশটির অভ্যন্তরে চলমান সহিংসতায় গত ৮ বছরে এ দেশে পালিয়ে আসা আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার ১১টি ইউনিয়নের ১০টিতেই অবস্থান করছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। শুধু উখিয়ার পাহাড়ি জনপদের ৮ হাজার একরজুড়ে গড়ে ওঠা ৩৩টি ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণে রাখতে সে সময় নির্মাণ করা হয়েছিল কাঁটাতারের বেড়া। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে ও নজরদারি বাড়াতে ৭০০ সিসি ক্যামেরা বসানো হলেও কার্যত তা দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থায় পড়ে রয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রিত একটি চক্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বেশকিছু অংশের কাঁটাতারের বেড়া ও সবকটি সিসি ক্যামেরার সংযুক্ত ক্যাবল কেটে ফেলেছে। শরণার্থী শিবিরের পানবাজার ক্যাম্পেই তৈরি করা হয়েছে অপরাধীদের অবাধ যাতায়াতের অন্তত ৬টি গোপন পথ। এসব সুরঙ্গ পথ দিয়েই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারী অস্ত্র-ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক চোরাচালান সরবরাহ আর রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে এ দেশে অনুপ্রবেশ করছে। এর ফলে দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় রোহিঙ্গা অপরাধীদের নিরাপদ রুট হিসেবে গড়ে উঠেছে। তবে ক্যাম্পের কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় এবং সিসিটিভি’র কার্যক্রম বন্ধ থাকার সুযোগে রোহিঙ্গারা নানা কৌশলে দিনে রাতে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে অন্যান্য জেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে। এতে একদিকে যেমন অরক্ষিত হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প, অন্যদিকে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে স্থানীয়রা। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলামের মতে, অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সীমান্তে মিয়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো তৎপর রয়েছে। এ দেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারাও নানা অপরাধে জড়িয়ে স্থানীয়দের ঝুঁকির মুখে ফেলছে। তবে তাদের দমনে অভিযান জোরদার ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে। তবে বিজিবি বলছে, সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই বিজিবি’র অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, মাদকসহ সব ধরনের চোরাচালান রোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও গোয়েন্দা নজরদারি চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীন বিরোধে সামরিক জান্তা বাহিনী দেশটির রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উৎখাতে নির্মম হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন শুরু করে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বসতভিটা ফসলি জমি। অমানবিক নির্যাতন আর গণহত্যার ভয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট পালিয়ে মিয়ানমারের সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম পরিবারসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা। তৎকালীন সময়ে শেখ হাসিনার সরকার মানবিক কারণে রাখাইন রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার ১১টি ইউনিয়নে আশ্রয় দেয়। এরপর সময় গড়িয়ে গেল আট বছরের ব্যবধানে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩ লাখেরও বেশি। পরবর্তীতে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে দফায় দফায় কূটনৈতিক তৎপরতা চালালেও অদবধি একজন রোহিঙ্গাকে ফেরৎ নেয়নি মিয়ানমার সরকার। এদিকে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় এবং অন্যান্য জেলায় ছড়ানো ঠেকাতে শুধু উখিয়ার পাহাড়ি জনপদের ৮ হাজার একরজুড়ে গড়ে ওঠা ৩৩টি ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণে রাখতে সে সময় নির্মাণ করা হয়েছিল কাঁটাতারের বেড়া। একই সঙ্গে ক্যাম্পের ভেতর ও বাইরের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এবং রোহিঙ্গা অপরাধীদের ওপর নজরদারি বাড়াতে সরকারি উদ্যোগে বসানো হয় ৭০০টি সিসি ক্যামেরা।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) দেওয়া তথ্যমতে, নির্ধারিত ক্যাম্প ছাড়িয়ে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার ১০ ইউনিয়নেও অবস্থান করছে। ক্যাম্পবহির্ভূত রোহিঙ্গারা সীমিত ছিল কেবলই টেকনাফের শামলাপুর, নয়াপাড়া, লেদা ও জাদিমুড়া এলাকায়। কিন্তু বর্তমান হিসাবে দেখা যায়, রোহিঙ্গারা টেকনাফ ও উখিয়ার ১১ ইউনিয়নের ১০টিতেই ছড়িয়ে পড়েছে।
ইউএনএইচসিআর’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা ও নির্যাতন চলতে থাকায় প্রতিনিয়ত হাজারো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন। এই আগমন প্রবাহ ২০১৭ সালের পর সবচেয়ে বড় বলে উল্লেখ করেছে ইউএনএইচসিআর। ওই বছর প্রাণঘাতী দমন-পীড়নের মুখে ৭ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিলেন। কক্সবাজারের অতি ঘনবসতিপূর্ণ ২৪ বর্গকিলোমিটারে আগে থেকেই প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাস করছিলেন। নতুন করে আগতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
ইন্টার-সার্ভিস কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইসিএসজি) প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সংখ্যার বিচারে টেকনাফ উপজেলার পরিস্থিতি বেশি উদ্বেগজনক। হ্নিলা ইউনিয়নে রোহিঙ্গাদের ১২৮ পরিবার (সদস্য ), সাবরাংয়ে ৪৯৭ পরিবার (সদস্য ১৯৩৬), টেকনাফ পৌরসভায় ১২২ পরিবার (সদস্য ৫৪৯), হোয়াইকংয়ে ১১৬ পরিবার (সদস্য ৫১৪), টেকনাফ ইউনিয়নে ১৭০ পরিবার (সদস্য ৬৯০) ও বাহারছড়ায় ১৫ পরিবার (সদস্য ৬৫) স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে মিলিতভাবে বসবাস করছে। উপজেলার একটিমাত্র ইউনিয়নে রোহিঙ্গাদের আনুষ্ঠানিক উপস্থিতি নেই, তা হচ্ছে সেন্ট মার্টিনস। তবে সেখানে মাঝেমধ্যেই কাজের সন্ধানে যান রোহিঙ্গারা। উখিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের সবক’টিতেই রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি রয়েছে। হলদিয়া পালংয়ে রোহিঙ্গাদের ৩৬ পরিবার (সদস্য ১৫৮), জালিয়া পালংয়ে ২২৬ পরিবার (সদস্য ৯৮২ ), পালং খালিতে ১১৫ পরিবার (সদস্য ৫১৩), রাজা পালংয়ে ১৬১ পরিবার (সদস্য ৬৯৭ ) ও রত্না পালংয়ে ২৭ পরিবার (সদস্য ১৩৬) বাংলাদেশি পরিবারগুলোর সঙ্গেই অবস্থান করছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে রোহিঙ্গারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে রয়েছে ভারী আগ্নেয়াস্ত্র। এখন মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে রাখাইন রাজ্যসহ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে কিছু ক্যাম্পে কেটে ফেলা হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। এর মধ্যে পানবাজার ক্যাম্পে অন্তত ছয়টি পয়েন্টে কাঁটাতার কেটে তৈরি করা হয়েছে গোপন সুরঙ্গ পথ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব কাজ করছে খোদ শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গারাই। এই গোপন পথ ব্যবহার করে ক্যাম্পের বাইরে জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে অনেক রোহিঙ্গারা। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পড়তে হচ্ছে নতুন চ্যালেঞ্জে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অত্যাচার-নিপীড়ণে এখন টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার কয়েক লাখ বাসিন্দা এখন ঝুঁকি আর অজানা শঙ্কায় রয়েছেন।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার সিরাজুল মোস্তফা লালু বলেন, গত শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে হোয়াইক্যংয়ের ওপারে রাখাইন সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা কাদের মধ্যে ঘটেছে তা স্পষ্ট নই, তবে ধারণা করা হচ্ছে- মিয়ানমারের বিদ্রোহী সশস্ত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে এ ঘটনা ঘটতে পারে। অথবা মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে গোলাগুলির এ ঘটনা ঘটতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এক বছর আগে মিয়ানমার জান্তা বাহিনী ও দেশটির বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘাতের পর রাখাইনের মংডুসহ কয়েকটি শহর ও গ্রাম এবং নিরাপত্তা বাহিনীর চৌকি ও ক্যাম্প আরাকান আর্মির দখলে চলে যায়। সেইসঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তের সঙ্গে থাকা রাখাইনের ২৭০ কিলোমিটার সীমান্তও আরাকান আর্মির দখলে যাওয়ার পর এখনও রাখাইন সীমান্ত সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দিন দিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো অরক্ষিত হয়ে পড়ছে। তাই এখন জরুরি হয়ে পড়েছে শক্ত নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা।
বিজিবি জানায়, দুষ্কৃতিকারীরা কাঁটাতার কেটে ফেলার পর সেগুলো আর মেরামত করা হয়নি। ফলে ওই পথ ব্যবহার করে কিছু রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরে চলে যাচ্ছে। এমনকি স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতিকারীও তাদের সঙ্গে জড়িয়ে অপরাধে অংশ নিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, স্থানীয়দের প্রশ্রয়েই রোহিঙ্গারা এই সুযোগ পাচ্ছে।
এপিবিএন-এর তথ্য অনুযায়ী, ক্যাম্পে স্থাপিত ৭০০ সিসিটিভির একটিও এখন আর সচল নেই। এসব ধ্বংসাত্মক তৎপরতার মূল কারণ মাদক ও অস্ত্রের কারবার বলে স্বীকার করেছেন রোহিঙ্গা নেতারাও।
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, স্থল ও জলপথের ৩৩ রুট দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র আনা হচ্ছে। ইয়াবা-অস্ত্রের সবচেয়ে বড় চালান ঢুকছে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্ত দিয়ে। চট্টগ্রামের ৯টি রুট দিয়ে অস্ত্রের চালান আসছে। মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে অবৈধ ভারী অস্ত্র। এসব আগ্নেয়াস্ত্র উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর হাতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চোরাকারবারিরা মিয়ানমার থেকে ভারী অস্ত্রগুলো এনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক সন্ত্রাসীদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে। এর মধ্যে জার্মানির তৈরি জি-থ্রি রাইফেল ও রকেট শেলের মতো ভারী আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। জব্দ করা বেশির ভাগ অস্ত্রই বিদেশি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলামের মতে, অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সীমান্তে মিয়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো তৎপর রয়েছে। এ দেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারাও নানা অপরাধে জড়িয়ে স্থানীয়দের ঝুঁকির মুখে ফেলছে। তবে তাদের দমনে অভিযান জোরদার ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে।
বিজিবি সদর দপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল এস এম শফিকুর রহমান জানান, সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই বিজিবি’র অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, মাদকসহ সব ধরনের চোরাচালান রোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। সীমান্ত সুরক্ষায় বিজিবি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
সীমান্তে চোরাচালান বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবি টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, দেশের সীমান্তের নিরাপত্তা, মাদক নির্মূল এবং সকল অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স নীতি বজায় রেখে অত্যন্ত পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে বিজিবি’র সদস্যরা।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

সোনারগাঁয়ে অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করায় গুড়িয়ে দেয়া হয় দু’টি প্রতিষ্ঠান, একটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

অরক্ষিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প

আপডেট সময় : ০৭:৪১:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫
  • আট হাজার একরজুড়ে রয়েছে ৩৩ ক্যাম্প
  • নজরদারিতে বসানো ৭০০ সিসি ক্যামেরাই অচল
  • কেটে ফেলা হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া, চ্যালেঞ্জের মুখে নিরাপত্তা
  • পানবাজার ক্যাম্পে তৈরি হয়েছে ৬টি পয়েন্টে গোপন পথ
  • দুই দেশের সীমান্তে গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গা অপরাধীদের নিরাপদ রুট

মিয়ানমারে সামরিক জান্তা বাহিনীর গণহত্যা ও অমানুষিক নির্যাতনের ভয়ে ২০১৭ সালে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লক্ষাধিক মানুষ। তৎকালীন সময়ে মানবিক কারণে শেখ হাসিনার সরকার তাদের কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দিয়েছিল। সময়ের ব্যবধানে দেশটির অভ্যন্তরে চলমান সহিংসতায় গত ৮ বছরে এ দেশে পালিয়ে আসা আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার ১১টি ইউনিয়নের ১০টিতেই অবস্থান করছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। শুধু উখিয়ার পাহাড়ি জনপদের ৮ হাজার একরজুড়ে গড়ে ওঠা ৩৩টি ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণে রাখতে সে সময় নির্মাণ করা হয়েছিল কাঁটাতারের বেড়া। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে ও নজরদারি বাড়াতে ৭০০ সিসি ক্যামেরা বসানো হলেও কার্যত তা দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থায় পড়ে রয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রিত একটি চক্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বেশকিছু অংশের কাঁটাতারের বেড়া ও সবকটি সিসি ক্যামেরার সংযুক্ত ক্যাবল কেটে ফেলেছে। শরণার্থী শিবিরের পানবাজার ক্যাম্পেই তৈরি করা হয়েছে অপরাধীদের অবাধ যাতায়াতের অন্তত ৬টি গোপন পথ। এসব সুরঙ্গ পথ দিয়েই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারী অস্ত্র-ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক চোরাচালান সরবরাহ আর রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে এ দেশে অনুপ্রবেশ করছে। এর ফলে দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় রোহিঙ্গা অপরাধীদের নিরাপদ রুট হিসেবে গড়ে উঠেছে। তবে ক্যাম্পের কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় এবং সিসিটিভি’র কার্যক্রম বন্ধ থাকার সুযোগে রোহিঙ্গারা নানা কৌশলে দিনে রাতে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে অন্যান্য জেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে। এতে একদিকে যেমন অরক্ষিত হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প, অন্যদিকে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে স্থানীয়রা। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলামের মতে, অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সীমান্তে মিয়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো তৎপর রয়েছে। এ দেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারাও নানা অপরাধে জড়িয়ে স্থানীয়দের ঝুঁকির মুখে ফেলছে। তবে তাদের দমনে অভিযান জোরদার ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে। তবে বিজিবি বলছে, সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই বিজিবি’র অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, মাদকসহ সব ধরনের চোরাচালান রোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও গোয়েন্দা নজরদারি চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীন বিরোধে সামরিক জান্তা বাহিনী দেশটির রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উৎখাতে নির্মম হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন শুরু করে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বসতভিটা ফসলি জমি। অমানবিক নির্যাতন আর গণহত্যার ভয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট পালিয়ে মিয়ানমারের সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম পরিবারসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা। তৎকালীন সময়ে শেখ হাসিনার সরকার মানবিক কারণে রাখাইন রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার ১১টি ইউনিয়নে আশ্রয় দেয়। এরপর সময় গড়িয়ে গেল আট বছরের ব্যবধানে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩ লাখেরও বেশি। পরবর্তীতে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে দফায় দফায় কূটনৈতিক তৎপরতা চালালেও অদবধি একজন রোহিঙ্গাকে ফেরৎ নেয়নি মিয়ানমার সরকার। এদিকে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় এবং অন্যান্য জেলায় ছড়ানো ঠেকাতে শুধু উখিয়ার পাহাড়ি জনপদের ৮ হাজার একরজুড়ে গড়ে ওঠা ৩৩টি ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণে রাখতে সে সময় নির্মাণ করা হয়েছিল কাঁটাতারের বেড়া। একই সঙ্গে ক্যাম্পের ভেতর ও বাইরের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এবং রোহিঙ্গা অপরাধীদের ওপর নজরদারি বাড়াতে সরকারি উদ্যোগে বসানো হয় ৭০০টি সিসি ক্যামেরা।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) দেওয়া তথ্যমতে, নির্ধারিত ক্যাম্প ছাড়িয়ে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার ১০ ইউনিয়নেও অবস্থান করছে। ক্যাম্পবহির্ভূত রোহিঙ্গারা সীমিত ছিল কেবলই টেকনাফের শামলাপুর, নয়াপাড়া, লেদা ও জাদিমুড়া এলাকায়। কিন্তু বর্তমান হিসাবে দেখা যায়, রোহিঙ্গারা টেকনাফ ও উখিয়ার ১১ ইউনিয়নের ১০টিতেই ছড়িয়ে পড়েছে।
ইউএনএইচসিআর’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা ও নির্যাতন চলতে থাকায় প্রতিনিয়ত হাজারো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন। এই আগমন প্রবাহ ২০১৭ সালের পর সবচেয়ে বড় বলে উল্লেখ করেছে ইউএনএইচসিআর। ওই বছর প্রাণঘাতী দমন-পীড়নের মুখে ৭ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিলেন। কক্সবাজারের অতি ঘনবসতিপূর্ণ ২৪ বর্গকিলোমিটারে আগে থেকেই প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাস করছিলেন। নতুন করে আগতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
ইন্টার-সার্ভিস কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইসিএসজি) প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সংখ্যার বিচারে টেকনাফ উপজেলার পরিস্থিতি বেশি উদ্বেগজনক। হ্নিলা ইউনিয়নে রোহিঙ্গাদের ১২৮ পরিবার (সদস্য ), সাবরাংয়ে ৪৯৭ পরিবার (সদস্য ১৯৩৬), টেকনাফ পৌরসভায় ১২২ পরিবার (সদস্য ৫৪৯), হোয়াইকংয়ে ১১৬ পরিবার (সদস্য ৫১৪), টেকনাফ ইউনিয়নে ১৭০ পরিবার (সদস্য ৬৯০) ও বাহারছড়ায় ১৫ পরিবার (সদস্য ৬৫) স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে মিলিতভাবে বসবাস করছে। উপজেলার একটিমাত্র ইউনিয়নে রোহিঙ্গাদের আনুষ্ঠানিক উপস্থিতি নেই, তা হচ্ছে সেন্ট মার্টিনস। তবে সেখানে মাঝেমধ্যেই কাজের সন্ধানে যান রোহিঙ্গারা। উখিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের সবক’টিতেই রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি রয়েছে। হলদিয়া পালংয়ে রোহিঙ্গাদের ৩৬ পরিবার (সদস্য ১৫৮), জালিয়া পালংয়ে ২২৬ পরিবার (সদস্য ৯৮২ ), পালং খালিতে ১১৫ পরিবার (সদস্য ৫১৩), রাজা পালংয়ে ১৬১ পরিবার (সদস্য ৬৯৭ ) ও রত্না পালংয়ে ২৭ পরিবার (সদস্য ১৩৬) বাংলাদেশি পরিবারগুলোর সঙ্গেই অবস্থান করছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে রোহিঙ্গারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে রয়েছে ভারী আগ্নেয়াস্ত্র। এখন মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে রাখাইন রাজ্যসহ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে কিছু ক্যাম্পে কেটে ফেলা হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। এর মধ্যে পানবাজার ক্যাম্পে অন্তত ছয়টি পয়েন্টে কাঁটাতার কেটে তৈরি করা হয়েছে গোপন সুরঙ্গ পথ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব কাজ করছে খোদ শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গারাই। এই গোপন পথ ব্যবহার করে ক্যাম্পের বাইরে জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে অনেক রোহিঙ্গারা। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পড়তে হচ্ছে নতুন চ্যালেঞ্জে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অত্যাচার-নিপীড়ণে এখন টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার কয়েক লাখ বাসিন্দা এখন ঝুঁকি আর অজানা শঙ্কায় রয়েছেন।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার সিরাজুল মোস্তফা লালু বলেন, গত শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে হোয়াইক্যংয়ের ওপারে রাখাইন সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা কাদের মধ্যে ঘটেছে তা স্পষ্ট নই, তবে ধারণা করা হচ্ছে- মিয়ানমারের বিদ্রোহী সশস্ত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে এ ঘটনা ঘটতে পারে। অথবা মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে গোলাগুলির এ ঘটনা ঘটতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এক বছর আগে মিয়ানমার জান্তা বাহিনী ও দেশটির বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘাতের পর রাখাইনের মংডুসহ কয়েকটি শহর ও গ্রাম এবং নিরাপত্তা বাহিনীর চৌকি ও ক্যাম্প আরাকান আর্মির দখলে চলে যায়। সেইসঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তের সঙ্গে থাকা রাখাইনের ২৭০ কিলোমিটার সীমান্তও আরাকান আর্মির দখলে যাওয়ার পর এখনও রাখাইন সীমান্ত সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দিন দিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো অরক্ষিত হয়ে পড়ছে। তাই এখন জরুরি হয়ে পড়েছে শক্ত নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা।
বিজিবি জানায়, দুষ্কৃতিকারীরা কাঁটাতার কেটে ফেলার পর সেগুলো আর মেরামত করা হয়নি। ফলে ওই পথ ব্যবহার করে কিছু রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরে চলে যাচ্ছে। এমনকি স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতিকারীও তাদের সঙ্গে জড়িয়ে অপরাধে অংশ নিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, স্থানীয়দের প্রশ্রয়েই রোহিঙ্গারা এই সুযোগ পাচ্ছে।
এপিবিএন-এর তথ্য অনুযায়ী, ক্যাম্পে স্থাপিত ৭০০ সিসিটিভির একটিও এখন আর সচল নেই। এসব ধ্বংসাত্মক তৎপরতার মূল কারণ মাদক ও অস্ত্রের কারবার বলে স্বীকার করেছেন রোহিঙ্গা নেতারাও।
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, স্থল ও জলপথের ৩৩ রুট দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র আনা হচ্ছে। ইয়াবা-অস্ত্রের সবচেয়ে বড় চালান ঢুকছে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্ত দিয়ে। চট্টগ্রামের ৯টি রুট দিয়ে অস্ত্রের চালান আসছে। মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে অবৈধ ভারী অস্ত্র। এসব আগ্নেয়াস্ত্র উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর হাতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চোরাকারবারিরা মিয়ানমার থেকে ভারী অস্ত্রগুলো এনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক সন্ত্রাসীদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে। এর মধ্যে জার্মানির তৈরি জি-থ্রি রাইফেল ও রকেট শেলের মতো ভারী আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। জব্দ করা বেশির ভাগ অস্ত্রই বিদেশি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলামের মতে, অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সীমান্তে মিয়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো তৎপর রয়েছে। এ দেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারাও নানা অপরাধে জড়িয়ে স্থানীয়দের ঝুঁকির মুখে ফেলছে। তবে তাদের দমনে অভিযান জোরদার ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে।
বিজিবি সদর দপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল এস এম শফিকুর রহমান জানান, সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই বিজিবি’র অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, মাদকসহ সব ধরনের চোরাচালান রোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। সীমান্ত সুরক্ষায় বিজিবি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
সীমান্তে চোরাচালান বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবি টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, দেশের সীমান্তের নিরাপত্তা, মাদক নির্মূল এবং সকল অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স নীতি বজায় রেখে অত্যন্ত পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে বিজিবি’র সদস্যরা।