চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কোলাগাঁও ইউনিয়নের নলান্ধা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক আহমদ (৮২) আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম কাতারের এই সৈনিক বহুবার চেষ্টা করেও জীবদ্দশায় “মুক্তিযোদ্ধা খেতাব” পাননি। অবশেষে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির অপেক্ষায় থেকেই তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
গত শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) বেলা সোয়া একটার দিকে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রফিক আহমদ। একই দিন এশার নামাজের পর নলান্ধা কাশেমিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিনি ১৯৪৭ সালের ৭ আগস্ট পটিয়ার কোলাগাঁও ইউনিয়নের নলান্ধা গ্রামের মুন্সি মিয়াজীর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। চরকানাই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা শুরু করে চরকানাই বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে মেট্রিক পাস করেন। পরে বোয়ালখালীর স্যার আশুতোষ কলেজ থেকে ১৯৬৯ সালে বি.কম এবং স্বাধীনতার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে অধ্যয়ন করেন।
ছাত্রজীবনেই বাম রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি। ছিলেন ছাত্র ফেডারেশনের সক্রিয় কর্মী এবং ১১ দফা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৮-৬৯ সালে স্যার আশুতোষ কলেজের হোস্টেল নিয়ন্ত্রক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
দেশের টানে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন রফিক আহমদ। দোভাষী বাজার, পদুয়া, বান্দরবান ও মিজোরামের দেমাগ্রী ক্যাম্পে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন তিনি। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধরা পড়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হলেও দেশের জন্য লড়াই থেকে পিছু হটেননি।
স্বাধীনতার পর শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন তিনি। ১৯৭৩ সালে সারোয়াতলী উচ্চ বিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেন। তবে, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি— যা তাঁর প্রাপ্য ছিল দেশের জন্য অবদানের কারণে— তা কখনও পাননি। জীবনের শেষ পর্যন্ত তাঁর নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় ওঠেনি।
তাঁর মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতির আবেদন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় অতিক্রম করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে গেলেও এখনো অনুমোদিত হয়নি।
আবেদনটি মন্ত্রণালয়ের—কক্ষ নং ৬০৮, রেজি. নং ৩৩৯১, তারিখ ২ এপ্রিল ২০২৩, কক্ষ নং ৭১৫, রেজি. নং ১১৯৯, তারিখ ৫ এপ্রিল ২০২৩, কক্ষ নং ৬১২, রেজি. নং ৬২৫, তারিখ ৬ এপ্রিল ২০২৩— এভাবে তিন দফায় নথিভুক্ত হয়ে ঝুলে আছে।
এলাকাবাসী ও শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাঁদের ভাষায়— “যে মানুষ দেশ স্বাধীন করতে জীবন বাজি রেখেছিলেন, তিনি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পেয়ে চলে গেলেন— এর চেয়ে বেদনাদায়ক কিছু হতে পারে না।”
মৃত্যুকালে রফিক আহমদ স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে ও অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন। এলাকার মানুষ তাঁকে স্মরণ করছে এক নিঃস্বার্থ যোদ্ধা হিসেবে—
যিনি দেশের জন্য সব দিয়েছেন, কিন্তু দেশের কাছ থেকে কিছুই নেননি।
এমআর/সবা






















