নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় আগাম আলু চাষে মেতে উঠেছেন স্থানীয় কৃষকরা। জমিতে ধান কাটা-মাড়াই শেষ হতেই জমি চাষ, হালচাষ, আগাছা পরিষ্কার, জৈব সার প্রয়োগ, সেচ ব্যবস্থার প্রস্তুতি এবং হিমাগার থেকে বীজ সংগ্রহ করে শুরু হয়েছে আগাম আলু রোপণের কাজ। কৃষকরা জানাচ্ছেন, এবার আগাম আলুর ভালো দাম পাওয়ার প্রত্যাশায় তারা সময়মতো আলু রোপণে ঝুঁকেছেন। বাজারে আগাম আলুর চাহিদা বেশি এবং দামও তুলনামূলক ভালো হওয়ায় লাভবান হওয়ার আশা করছেন তারা।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ৩ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে আগাম আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪১ হেক্টর জমিতে আগাম আলু রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি জমিতেও দ্রুত গতিতে রোপণ চলছে। কৃষকরা জানান, সাধারণত আগাম আলু রোপণ করা হয় উচ্চভূমিতে, কারণ এসব জমিতে পানি জমে না এবং শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে দ্রুত ফসল ঘরে তোলা যায়। চলতি বছর আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় আলু চাষে আগ্রহ বেড়েছে এবং ক্ষেত্রবিশেষে অতিরিক্ত জমিতেও আলু রোপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এবার কিশোরগঞ্জে আগাম আলুর বেশ কয়েকটি জাত রোপণ করা হচ্ছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সেভেন, গ্র্যানুল্যা, সাকিতা, কারেজ ও জামপ্লাস। এসব জাতের আলু তুলনামূলকভাবে দ্রুত ফলন দেয়, মাত্র ৫৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যেই আলু উত্তোলন করা যায়। কৃষকদের ধারণা, এসব জাতের আলু সময়মতো বাজারে আনতে পারলে প্রতি কেজিতে ৫০-৬০ টাকা পর্যন্ত লাভ হতে পারে। কৃষক আব্দুর রহমান জানান, প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয় ৩৫-৪০ টাকা। যদি বাজারের চাহিদা ঠিক থাকে এবং দাম ভালো পাওয়া যায়, তাহলে এই খরচ পুষিয়ে ভালো মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।
উল্লেখ্য, ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি বাজার থেকে ব্যবসায়ীরা আগাম আলুর ব্যাপারে আগাম বায়না দিয়ে থাকেন। অনেক সময় মাঠ থেকেই আলু কিনে নিয়ে যান তারা। এতে কৃষকরা সহজেই বাজারে আলু পাঠাতে পারেন এবং মধ্যস্বত্বভোগীর ঝামেলা ছাড়াই মূল্য পান। কৃষকদের মতে, বাজার ঠিক থাকলে এবং কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে আগাম আলু চাষে লোকসানের আশঙ্কা নেই বললেই চলে।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম জানান, চাষিদের আগ্রহ ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার আগাম আলু চাষে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। অনেক জমিতে ধান কাটা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলু চাষ শুরু হয়ে গেছে। যেসব কৃষক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন, তারা এরই মধ্যে রোপণ শেষ করেছেন।
নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মনজুর রহমান বলেন, কিশোরগঞ্জ উপজেলা বরাবরই আলু চাষে অগ্রগামী। গত বছর এখানে ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। চলতি বছরে আগাম আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে। কৃষকদের সহযোগিতায় মাঠ পর্যায়ে কৃষি অফিসারদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। প্রযুক্তিগত সহায়তা, উন্নতমানের বীজ এবং রোগবালাই দমনে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে।
এদিকে আগাম আলু রোপণের কারণে কৃষি শ্রমিকদের ব্যস্ততা বেড়েছে। নারী-পুরুষ শ্রমিক মিলে জমিতে কাজ করছেন। এতে স্থানীয় শ্রমিকদের কর্মসংস্থান বাড়ছে এবং চাহিদা অনুযায়ী মজুরি বৃদ্ধিও লক্ষ করা গেছে। দিনমজুরেরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে আলু রোপণের মৌসুমে শ্রমের মূল্য দৈনিক ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে, যা অন্য সময়ের চেয়ে কিছুটা বেশি।
সবমিলিয়ে বলা যায়, আগাম আলু চাষে এবার কিশোরগঞ্জের কৃষকরা আশাবাদী। সময়মতো আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং বাজারে চাহিদা অব্যাহত থাকলে তারা উল্লেখযোগ্য লাভ করতে পারবেন। কৃষি বিভাগের সহায়তা, কৃষকের প্রস্তুতি ও বাজারের প্রবণতা সব মিলিয়ে আলু চাষ নিয়ে জেলাজুড়ে চলছে ব্যস্ততা এবং প্রত্যাশার ছোঁয়া।
এস.এম শাহাদৎ হোসাইন, রংপুর ব্যুরো


























