দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামে সড়ক-সমুদ্র শিপিং খাতে বর্ধিত ট্যারিফ শিডিউল বিষয়ে ব্যাপক উদ্বেগ ও সমালোচনা উঠেছে। রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউতে চট্টগ্রাম বন্দরের অস্বাভাবিক ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রতিবাদে আয়োজিত ব্যবসায়ীদের সমন্বয় সভায় বক্তারা জানান, বন্দরের ট্যারিফ স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনায় না বসে কার্যকর করা হলে তা দেশের রপ্তানি-আমদানির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে এবং সাধারণ মানুষকে অতিরিক্ত অর্থব্যয় করতে হবে। তারা নতুন ট্যারিফ কার্যকর না করা পর্যন্ত তা স্থগিত করার দাবিও জানান।
সভায় সভাপতিত্ব করেন চিটাগাং চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ২০০৩ সালের মতো একযোগে একত্রে প্রতিরোধ না করলে ব্যবসায়ীগণ এই ট্যারিফ বাড়ানো মেনে নেবে না। “বন্দর নিয়ে যে খেলা শুরু হয়েছে তা খেলতে দেওয়া হবে না,” তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম চেম্বার থেকে একজন প্রতিনিধিকে বন্দরের পরিচালনায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, বন্দরের মাশুল ব্যবসায়ীরা জনগণের ওপর চাপিয়ে দিতে পারবেন না — জনগণকে কেন এই অর্থভার বহন করতে হবে? তিনি দাবি করেন, ট্যারিফ বাড়ানো একটি ষড়যন্ত্র; মোংলা ও পায়রায় এমন বাড়ানো হয়নি। “বন্দরকে কস্ট‑বেইজড ট্যারিফ নিতে হবে,” তিনি যোগ করেন।
বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সেলিম রহমান বলেন, আরএমজি সেক্টরের ব্যবসায়ীরা বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি দুইই করে; ভিয়েতনাম, ভারত ও মালয়েশিয়ার তুলনায় আমাদের কস্ট আরও বেশি হলে বায়াররা চলে যাবে। মেট্রেোপলিটন চেম্বারের সহ সভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী পর্যবেক্ষণ করেন, বন্দর জনগণের অর্থে তৈরি সেবা; যদি ট্যারিফ বাড়াতে হয় তাহলে জাতীয় সংসদেই আলোচনা হওয়া উচিত।
শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, বন্দরের মাশুল বাড়ানোর বিষয়ে তাদের ক্ষোভ আছে; সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়ানো যায়—৪১ শতাংশ বর্ধন বর্ণিত নয়। ২০ ফুট কনটেইনারে ইতিমধ্যে ১২‑১৪ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ পড়তে পারে বলেও তারা আশংকা করেন।
বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ট্যারিফ বাড়ালে আমদানির খরচ বাড়বে, ফলে রপ্তানির খরচও বেড়ে যাবে এবং দেশের রফতানি প্রতিযোগিতা নষ্ট হবে। বিজিএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দেশের অর্থনীতি বিচলিত হয়ে ওঠছে; বন্দরের ওপর এমন সিদ্ধান্ত দেশের ব্যবসায়ী সমাজকে আরও বিচ্ছিন্ন এবং হতাশ করে তুলছে।
এশিয়ান গ্রুপের প্রধান এম এ সালাম উদ্বোধনী স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বন্দর ব্যবসা করে না, সেবা দেয় — সেবা দিতে গিয়ে যদি জনগণকে অতিরিক্ত বোঝা দেয়া হয় তা গ্রহণযোগ্য নয়। সভা পরিচালনা করা এস এম আবু তৈয়ব বলেন, নতুন ট্যারিফ কার্যকর হলে চট্টগ্রাম এই অঞ্চলের সবচেয়ে কস্টলি বন্দর হয়ে যাবে; ফলে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হবে এবং বড় ধাক্কা লাগবে দেশে ব্যবসা ও কর্মসংস্থানকে।
সভায় বক্তারা একজোটভাবে দাবি করেন—বন্দর কর্তৃপক্ষ স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনায় বসুক, কারিগরি ও আর্থিক হিসাব‑নিকাশ সবাই হাতে পেয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন, আর এ পর্যন্ত ঘোষণা করা ট্যারিফ স্থগিত রাখা হোক। তারা আরও বলছেন, বন্দর‑পরিষেবার ট্যারিফ বাড়ালে তা শেষপর্যন্ত সাধারণ ভোক্তা ও রপ্তানিদাতাদের ওপরই পড়ে এবং দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
সভায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংগঠন, শিপিং এজেন্ট, সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট এবং অন্যান্য ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে তাদের উদ্বেগ ও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন এবং প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানান।
এমআর/সবা


























