রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত উত্তর চট্টগ্রামের দুই উপজেলা রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ায় ৩১ জন খুন হয়েছেন। এর মধ্যে রাউজানে ১৭ জন ও রাঙ্গুনিয়ায় ১৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এসব হত্যাকাণ্ডের বেশিরভাগই আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, চাঁদাবাজি, ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও পারিবারিক বিরোধের জেরে সংঘটিত হয়েছে।
রাউজানে গত বছরের ২৮ আগস্ট পিটিয়ে হত্যা করা হয় আব্দুল মান্নানকে। ১ সেপ্টেম্বর ইউসুফ মিয়া, ২৯ অক্টোবর আজম খান ও ১১ নভেম্বর আবু তাহের খুন হন। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত হত্যা করা হয় আরও বেশ কয়েকজনকে—মুহাম্মদ হাসান, কমরউদ্দিন জিতু, মো. রুবেল, প্রকৌশলী নূর আলম বকুল, মো. জাফর, আবদুল্লাহ মানিক, ইব্রাহিম ও সেলিম উদ্দিনসহ অন্তত ১২ জন। সর্বশেষ ৭ অক্টোবর পাহাড়তলী এলাকায় ব্যবসায়ী আবদুল হাকিমকে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং ২৫ অক্টোবর যুবদল কর্মী মুহাম্মদ আলমগীর আলম দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন।
রাউজান থানা সূত্রে জানা গেছে, চাঁদাবাজি, মাটি-বালুর ব্যবসা ও রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খুনোখুনি বেড়েছে। নিহত ১৭ জনের মধ্যে ১৩ জন রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার। এসব ঘটনায় অর্ধশতাধিক মামলা হলেও গ্রেপ্তার সংখ্যা অল্প। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, “রাউজানে অনেক হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিতভাবে ঘটছে। পারিবারিক হত্যাগুলোও তাৎক্ষণিক সংঘটিত হচ্ছে। পুলিশ সব হত্যাকাণ্ডে আসামিদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে।”
রাঙ্গুনিয়ায়ও পরিস্থিতি ভিন্ন নয়। রাজানগর ইউনিয়নের ঠাণ্ডাছড়িতে গত ১৫ জানুয়ারি গৃহবধূ জরিনা বেগম, ২৫ মার্চ সরফভাটায় ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম তালুকদার ও ১০ এপ্রিল সীমান্ত এলাকায় আওয়াইমং মারমা হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। ৬ জুন শ্বশুর ওসমান গণি, ২০ জুন লেবু বিক্রেতা শিবুই মারমা এবং ১০ জুলাই প্রবাসফেরত মোহাম্মদ রাসেলকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরও কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ঘটে—সন্ত্রাসী রুবেল, গৃহবধূ রুমা আক্তার, দিনমজুর রহমত উল্লাহ ও যুবক খোরশেদ আলমকে খুন করা হয়।
এ বছরের ৭ আগস্ট জমি বিরোধে আবদুল মজিদ, ২ ডিসেম্বর সংঘর্ষে প্রবাসী সেকান্দর চৌধুরী মামুন এবং ২৬ ডিসেম্বর পিটুনিতে রবিউল হোসেন রুবেল নিহত হন। ১৮ আগস্ট মাদ্রাসাছাত্র ইমরান নবী জুয়েলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম জানান, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে। মাদক ও আধিপত্য বিস্তারকেন্দ্রিক অপরাধ রোধে সীমিত জনবল নিয়েও অভিযান অব্যাহত আছে। রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার ওসি এটিএম শিফাতুল মাজদার বলেন, “প্রত্যেকটি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।”
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, “রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করতে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। অপরাধীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।” তিনি স্থানীয়দেরও পুলিশের কাজে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।
এমআর/সবা


























