০৪:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অতিরিক্ত এআই নির্ভরতা মস্তিষ্কের গভীর চিন্তা ও স্মৃতিকে কমাতে পারে: গবেষণা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এখন আর নতুন প্রযুক্তি নয়। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে চ্যাটজিপিটি চালুর পর এটি বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে। তথ্য অনুসন্ধান, লেখালেখি, কাজের গতি বাড়ানো এবং সমস্যা সমাধানে অনেকেই এখন চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করছেন। তবে এআই-এর ক্রমবর্ধমান ব্যবহার আমাদের মস্তিষ্কের ওপর কী প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে গবেষকরা নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন। সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, অতিরিক্ত এআই নির্ভরতা আমাদের বিশ্লেষণ ক্ষমতা ও গভীর চিন্তাশক্তিকে কমিয়ে দিতে পারে।

এমআইটির বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি একটি খসড়া গবেষণা প্রকাশ করেছেন। এতে ১৮ থেকে ৩৯ বছর বয়সী ৫৪ জন মার্কিন নাগরিককে চারটি প্রবন্ধ লেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়। অংশগ্রহণকারীদের তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছিল—একটিতে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করা হয়, আরেকটিতে কেবল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়, এবং তৃতীয় গ্রুপ সম্পূর্ণভাবে নিজের মস্তিষ্কের ওপর নির্ভর করে। প্রথম তিনটি প্রবন্ধে দেখা যায়, চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক সংযোগের মাত্রা সবচেয়ে কম। সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে সংযোগ কিছুটা বেশি হলেও চ্যাটজিপিটি গ্রুপের তুলনায় কম ছিল।

গবেষণার এক পর্যায়ে গ্রুপ বদলানো হলে দেখা গেছে, যারা আগে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেছিলেন এবং হঠাৎ নিজের মস্তিষ্কের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হন, তাদের মস্তিষ্কের সংযোগ আরও কমে যায়। তারা লেখার মালিকানা কম অনুভব করেন এবং নিজেদের লেখা থেকে তথ্য মনে রাখতে অসুবিধা হয়। তবে এই ধাপটি মাত্র ১৮ জনের ওপর প্রযোজ্য ছিল এবং গবেষণাটি এখনো পিয়ার রিভিউ হয়নি।

এছাড়া ২০২৫ সালের সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশেষ করে ১৭ থেকে ২৫ বছরের ব্যবহারকারীদের মধ্যে অতিরিক্ত এআই নির্ভরতার কারণে সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তি কমে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে। গবেষকরা এটিকে “কগনিটিভ অফলোডিং” হিসেবে উল্লেখ করছেন, অর্থাৎ মানসিক কাজ এআই-এর ওপর ছেড়ে দেওয়া।

আরেকটি ২০২৫ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, এআই ব্যবহার মানুষের সক্রিয় চিন্তার ক্ষমতাকে নিষ্ক্রিয় চিন্তার দিকে ঠেলে দিতে পারে। এর প্রধান কারণ হলো—তথ্য যাচাইয়ের সীমাবদ্ধতা, সমস্যা সমাধানে এআই-এর ওপর নির্ভরতা, এবং নিজের বিশ্লেষণের পরিবর্তে এআই-এর ব্যাখ্যা অনুসরণ করা। এসব পরিবর্তন স্মৃতি, মনোযোগ, তথ্য প্রয়োগের ক্ষমতা ও সৃজনশীলতাকেও প্রভাবিত করতে পারে।

তবে গবেষকরা মনে করছেন, এআই ব্যবহার পুরোপুরি বাদ দেয়া সম্ভব নয়। বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর কর্মপরিবেশে এটি অপরিহার্য। সমাধান হলো সঠিকভাবে ব্যবহার শেখা। ব্যবহারকারীকে বুঝতে হবে, এআই কি কেবল সহকারী হিসেবে কাজ করছে, নাকি পুরো চিন্তার দায়িত্ব নিচ্ছে। সচেতন ব্যবহারে এআই সৃজনশীলতা বাড়াতে, নতুন ধারণা তৈরিতে এবং শেখার গতিতে সাহায্য করতে পারে।

যদিও গবেষণা প্রাথমিক পর্যায়ে, তবে অতিরিক্ত এআই-নির্ভরতার কারণে গভীর চিন্তা, স্মৃতি এবং মনোযোগ কমে যাওয়ার ঝুঁকি স্পষ্ট ইঙ্গিত হিসেবে উঠে এসেছে। তাই কোনও কাজের গতি বাড়াতে এআই-এর ওপর পুরোপুরি নির্ভর না করাই ভালো।

শুভ/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

একনেক সভায় ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকার ২২ প্রকল্প অনুমোদন

অতিরিক্ত এআই নির্ভরতা মস্তিষ্কের গভীর চিন্তা ও স্মৃতিকে কমাতে পারে: গবেষণা

আপডেট সময় : ০৮:০৪:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এখন আর নতুন প্রযুক্তি নয়। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে চ্যাটজিপিটি চালুর পর এটি বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে। তথ্য অনুসন্ধান, লেখালেখি, কাজের গতি বাড়ানো এবং সমস্যা সমাধানে অনেকেই এখন চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করছেন। তবে এআই-এর ক্রমবর্ধমান ব্যবহার আমাদের মস্তিষ্কের ওপর কী প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে গবেষকরা নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন। সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, অতিরিক্ত এআই নির্ভরতা আমাদের বিশ্লেষণ ক্ষমতা ও গভীর চিন্তাশক্তিকে কমিয়ে দিতে পারে।

এমআইটির বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি একটি খসড়া গবেষণা প্রকাশ করেছেন। এতে ১৮ থেকে ৩৯ বছর বয়সী ৫৪ জন মার্কিন নাগরিককে চারটি প্রবন্ধ লেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়। অংশগ্রহণকারীদের তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছিল—একটিতে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করা হয়, আরেকটিতে কেবল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়, এবং তৃতীয় গ্রুপ সম্পূর্ণভাবে নিজের মস্তিষ্কের ওপর নির্ভর করে। প্রথম তিনটি প্রবন্ধে দেখা যায়, চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক সংযোগের মাত্রা সবচেয়ে কম। সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে সংযোগ কিছুটা বেশি হলেও চ্যাটজিপিটি গ্রুপের তুলনায় কম ছিল।

গবেষণার এক পর্যায়ে গ্রুপ বদলানো হলে দেখা গেছে, যারা আগে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেছিলেন এবং হঠাৎ নিজের মস্তিষ্কের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হন, তাদের মস্তিষ্কের সংযোগ আরও কমে যায়। তারা লেখার মালিকানা কম অনুভব করেন এবং নিজেদের লেখা থেকে তথ্য মনে রাখতে অসুবিধা হয়। তবে এই ধাপটি মাত্র ১৮ জনের ওপর প্রযোজ্য ছিল এবং গবেষণাটি এখনো পিয়ার রিভিউ হয়নি।

এছাড়া ২০২৫ সালের সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশেষ করে ১৭ থেকে ২৫ বছরের ব্যবহারকারীদের মধ্যে অতিরিক্ত এআই নির্ভরতার কারণে সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তি কমে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে। গবেষকরা এটিকে “কগনিটিভ অফলোডিং” হিসেবে উল্লেখ করছেন, অর্থাৎ মানসিক কাজ এআই-এর ওপর ছেড়ে দেওয়া।

আরেকটি ২০২৫ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, এআই ব্যবহার মানুষের সক্রিয় চিন্তার ক্ষমতাকে নিষ্ক্রিয় চিন্তার দিকে ঠেলে দিতে পারে। এর প্রধান কারণ হলো—তথ্য যাচাইয়ের সীমাবদ্ধতা, সমস্যা সমাধানে এআই-এর ওপর নির্ভরতা, এবং নিজের বিশ্লেষণের পরিবর্তে এআই-এর ব্যাখ্যা অনুসরণ করা। এসব পরিবর্তন স্মৃতি, মনোযোগ, তথ্য প্রয়োগের ক্ষমতা ও সৃজনশীলতাকেও প্রভাবিত করতে পারে।

তবে গবেষকরা মনে করছেন, এআই ব্যবহার পুরোপুরি বাদ দেয়া সম্ভব নয়। বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর কর্মপরিবেশে এটি অপরিহার্য। সমাধান হলো সঠিকভাবে ব্যবহার শেখা। ব্যবহারকারীকে বুঝতে হবে, এআই কি কেবল সহকারী হিসেবে কাজ করছে, নাকি পুরো চিন্তার দায়িত্ব নিচ্ছে। সচেতন ব্যবহারে এআই সৃজনশীলতা বাড়াতে, নতুন ধারণা তৈরিতে এবং শেখার গতিতে সাহায্য করতে পারে।

যদিও গবেষণা প্রাথমিক পর্যায়ে, তবে অতিরিক্ত এআই-নির্ভরতার কারণে গভীর চিন্তা, স্মৃতি এবং মনোযোগ কমে যাওয়ার ঝুঁকি স্পষ্ট ইঙ্গিত হিসেবে উঠে এসেছে। তাই কোনও কাজের গতি বাড়াতে এআই-এর ওপর পুরোপুরি নির্ভর না করাই ভালো।

শুভ/সবা