১১:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রামে বন্ধ হচ্ছে বিনিয়োগ বোর্ডের কার্যালয়, ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ

চট্টগ্রামে বিনিয়োগ বোর্ডের কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের সব বিভাগীয় কার্যালয়ও গুটিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম শুধুমাত্র ঢাকার প্রধান কার্যালয় থেকে পরিচালিত হবে।

দেশের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে বিনিয়োগ বোর্ডের কার্যালয় বন্ধ হওয়ার খবর জানার পর ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা মনে করছেন, এতে ব্যবসা–বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। তবে বিনিয়োগ বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অনলাইন সেবার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা সব ধরনের সেবা পাবেন।

সূত্র জানিয়েছে, সরকার বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সব বিভাগীয় কার্যালয় বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ১৪ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ মুখলেছুর রহমান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে জানানো হয়, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এসব কার্যালয় বিলুপ্ত করা হবে। ইতিমধ্যে এসব কার্যালয়ের মালামালের তালিকা তৈরি এবং ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব নথি প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে বিডার অনলাইন ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) শুধুমাত্র প্রধান কার্যালয় থেকে পরিচালিত হবে। এ নির্দেশ অনুযায়ী বিভাগীয় কার্যালয়গুলোকে বিদ্যুৎ, পানি, ইন্টারনেট, ভাড়া সহ সব দায়–দেনা পরিশোধ করে অফিস বন্ধ করতে বলা হয়েছে।

প্রশাসনিকভাবে এটি সরকারি বিনিয়োগ প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পুনর্গঠন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের কারণে চট্টগ্রাম দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এখানকার ইপিজেড এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। এসব বিনিয়োগের প্রতিটির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। স্থানীয়ভাবে এটি বিনিয়োগ বোর্ড নামে পরিচিত।

বিডা মূলত বিনিয়োগে প্রচার, অনুমোদন ও সহজীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিনিয়োগে উৎসাহিত করার পাশাপাশি পরিবেশ তৈরি, প্রয়োজনীয় অনুমোদনসহ নানা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বোর্ডের দায়িত্ব থাকে। দেশি–বিদেশি ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের বিনিয়োগ বোর্ডে প্রচুর কাজ থাকে। চট্টগ্রামে বিনিয়োগ বোর্ড থাকায় এসব কাজ অনেক সহজ হয়ে আসত। ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, “যে কোনো প্রয়োজনে আমরা আগ্রাবাদের সিজিও বিল্ডিংস্থ কার্যালয়ে গিয়ে কাজ সেরে আসতে পারতাম। এখন এসব কাজের জন্য ঢাকায় যেতে হবে।”

অনলাইনে সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও বিনিয়োগকারী মোহাম্মদ জাফরুল ইসলাম বলেন, “দেশে অনলাইনের অবস্থা এবং সার্ভারে গোলমালের কারণে চট্টগ্রামে বসে অনলাইন সেবার মাধ্যমে কাজ সমাধা করা কার্যত কঠিন।”

ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা বলছেন, দেশের অন্যান্য বিভাগকে চট্টগ্রামের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। শুধুমাত্র দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে মাথায় রেখে চট্টগ্রামের কার্যালয়টি চালু রাখার জন্য তারা আহ্বান জানাচ্ছেন।

সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে চট্টগ্রামে ২,৪১২ কোটি ৯৩ লাখ টাকার বিনিয়োগ হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে বিনিয়োগ ছিল ৩,৪৫০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। বিপুল এই বিনিয়োগে চট্টগ্রামস্থ কার্যালয় থেকে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হতো। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা মন্তব্য করেছেন, হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগকারীদের জন্য চট্টগ্রামে বিনিয়োগ বোর্ডের কার্যালয় থাকা অত্যন্ত জরুরি।

বিডার অনলাইন ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) এখন কেবল প্রধান কার্যালয় থেকে পরিচালিত হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সেবা দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে নেওয়া যাবে এবং এটি সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম চালাতে সহায়ক। তবে চট্টগ্রামের বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, স্থানীয় কার্যালয় বন্ধ হলে বিনিয়োগকারীদের ফিজিক্যাল সহায়তা কমে যাবে। বিশেষত আঞ্চলিক উদ্যোক্তারা যারা সরাসরি যোগাযোগে অভ্যস্ত ছিলেন, তাদের জন্য এটি বড় ধরনের একটি ধাক্কা।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

চট্টগ্রামে বন্ধ হচ্ছে বিনিয়োগ বোর্ডের কার্যালয়, ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ

আপডেট সময় : ০৬:৩২:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫

চট্টগ্রামে বিনিয়োগ বোর্ডের কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের সব বিভাগীয় কার্যালয়ও গুটিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম শুধুমাত্র ঢাকার প্রধান কার্যালয় থেকে পরিচালিত হবে।

দেশের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে বিনিয়োগ বোর্ডের কার্যালয় বন্ধ হওয়ার খবর জানার পর ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা মনে করছেন, এতে ব্যবসা–বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। তবে বিনিয়োগ বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অনলাইন সেবার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা সব ধরনের সেবা পাবেন।

সূত্র জানিয়েছে, সরকার বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সব বিভাগীয় কার্যালয় বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ১৪ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ মুখলেছুর রহমান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে জানানো হয়, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এসব কার্যালয় বিলুপ্ত করা হবে। ইতিমধ্যে এসব কার্যালয়ের মালামালের তালিকা তৈরি এবং ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব নথি প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে বিডার অনলাইন ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) শুধুমাত্র প্রধান কার্যালয় থেকে পরিচালিত হবে। এ নির্দেশ অনুযায়ী বিভাগীয় কার্যালয়গুলোকে বিদ্যুৎ, পানি, ইন্টারনেট, ভাড়া সহ সব দায়–দেনা পরিশোধ করে অফিস বন্ধ করতে বলা হয়েছে।

প্রশাসনিকভাবে এটি সরকারি বিনিয়োগ প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পুনর্গঠন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের কারণে চট্টগ্রাম দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এখানকার ইপিজেড এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। এসব বিনিয়োগের প্রতিটির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। স্থানীয়ভাবে এটি বিনিয়োগ বোর্ড নামে পরিচিত।

বিডা মূলত বিনিয়োগে প্রচার, অনুমোদন ও সহজীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিনিয়োগে উৎসাহিত করার পাশাপাশি পরিবেশ তৈরি, প্রয়োজনীয় অনুমোদনসহ নানা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বোর্ডের দায়িত্ব থাকে। দেশি–বিদেশি ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের বিনিয়োগ বোর্ডে প্রচুর কাজ থাকে। চট্টগ্রামে বিনিয়োগ বোর্ড থাকায় এসব কাজ অনেক সহজ হয়ে আসত। ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, “যে কোনো প্রয়োজনে আমরা আগ্রাবাদের সিজিও বিল্ডিংস্থ কার্যালয়ে গিয়ে কাজ সেরে আসতে পারতাম। এখন এসব কাজের জন্য ঢাকায় যেতে হবে।”

অনলাইনে সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও বিনিয়োগকারী মোহাম্মদ জাফরুল ইসলাম বলেন, “দেশে অনলাইনের অবস্থা এবং সার্ভারে গোলমালের কারণে চট্টগ্রামে বসে অনলাইন সেবার মাধ্যমে কাজ সমাধা করা কার্যত কঠিন।”

ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা বলছেন, দেশের অন্যান্য বিভাগকে চট্টগ্রামের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। শুধুমাত্র দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে মাথায় রেখে চট্টগ্রামের কার্যালয়টি চালু রাখার জন্য তারা আহ্বান জানাচ্ছেন।

সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে চট্টগ্রামে ২,৪১২ কোটি ৯৩ লাখ টাকার বিনিয়োগ হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে বিনিয়োগ ছিল ৩,৪৫০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। বিপুল এই বিনিয়োগে চট্টগ্রামস্থ কার্যালয় থেকে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হতো। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা মন্তব্য করেছেন, হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগকারীদের জন্য চট্টগ্রামে বিনিয়োগ বোর্ডের কার্যালয় থাকা অত্যন্ত জরুরি।

বিডার অনলাইন ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) এখন কেবল প্রধান কার্যালয় থেকে পরিচালিত হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সেবা দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে নেওয়া যাবে এবং এটি সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম চালাতে সহায়ক। তবে চট্টগ্রামের বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, স্থানীয় কার্যালয় বন্ধ হলে বিনিয়োগকারীদের ফিজিক্যাল সহায়তা কমে যাবে। বিশেষত আঞ্চলিক উদ্যোক্তারা যারা সরাসরি যোগাযোগে অভ্যস্ত ছিলেন, তাদের জন্য এটি বড় ধরনের একটি ধাক্কা।

এমআর/সবা