০৫:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাতিসংঘে আওয়ামী লীগ যে চিঠি লিখেছে, তাতে কোনো কাজ হবে না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে কারিগরি সহযোগিতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ যে চিঠি দিয়েছে, তাতে কোনো ‘উপকার হবে না’ বলে মনে করছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তিনি চিঠির বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এ ধরনের চিঠিতে কোনো কাজ হবে না। নির্বাচন বাংলাদেশের অভ‍্যন্তরীণ বিষয়।

বাংলাদেশে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নয়’ এমন নির্বাচনে সহযোগিতা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে গত শনিবার জাতিসংঘকে চিঠি পাঠিয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ।

তৌহিদ হোসেন বলেন, জাতিসংঘে পাঠানো আওয়ামী লীগের চিঠি দিয়ে কোনো কাজ হবে না। এর আগে গত শনিবার ঢাকায় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বরাবর পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নয়— এমন নির্বাচনে সহযোগিতা থেকে সরে আসতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের পক্ষে চিঠিটি পাঠিয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

চিঠিতে বলা হয়, অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা জাতিসংঘ এবং ইউএনডিপির প্রতি নির্বাচনী সহযোগিতা স্থগিত, সব রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে জাতীয় সংলাপ ও সমঝোতাকে উৎসাহিত করার এবং যেকোনো নির্বাচনী সম্পৃক্ততার মূলভিত্তি হিসেবে মানবাধিকার ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আর বাংলাদেশে ইউএনডিপির নির্বাচনী সহযোগিতা, ব্যালট প্রজেক্ট এবং আসন্ন নির্বাচনের বিষয়ে সংস্থার প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার বিষয়ে আমরা গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করছি, যে নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলকও নয়, বিশ্বাসযোগ্যও নয়।

‘এই ধরনের সম্পৃক্ততা আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘের মূলনীতি এবং অবাধ, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রসারের ক্ষেত্রে ইউএনডিপির ম্যান্ডেট লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি করে।’

জাতিসংঘকে পাঠানো চিঠিতে আওয়ামী লীগ বলছে, শক্তিশালী নির্বাচনি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার গুরুত্বকে আমরা স্বীকার করি। তবে, এই সহযোগিতা অন্তর্ভুক্তি এবং মৌলিক স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। বর্তমানে বাংলাদেশে নিবর্তনমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে। হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী এবং নাগরিক আটক কিংবা হুমকির মুখে এবং কোনো রাজনৈতিক সংলাপ বা ঐকমত্যের সুযোগ ভেঙে পড়েছে। এখানে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের উত্থান হয়েছে, যেটাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্যরাও সক্রিয়ভাবে প্রচার করছেন। দেশের উদার মূল্যবোধ ও স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়ে গেছে।

আওয়ামী লীগ বলছে, আমরা বাংলাদেশের নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় ইউএনডিপির ভূমিকা জরুরিভিত্তিতে পুনর্মূল্যায়নের আহ্বান জানাই, যাতে তাদের এই সমর্থন কাউকে বাদ দেওয়া বা নির্যাতনের কারণ না হয়। বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য সত্যিকারের সংলাপ, সমঝোতা এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের পুনঃস্থাপন দরকার, যার মধ্যে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি এবং সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণও রয়েছে।

জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের দাবির মুখে গত মে মাসে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

এরপর রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

জাতিসংঘে আওয়ামী লীগ যে চিঠি লিখেছে, তাতে কোনো কাজ হবে না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আপডেট সময় : ০৮:৩৩:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে কারিগরি সহযোগিতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ যে চিঠি দিয়েছে, তাতে কোনো ‘উপকার হবে না’ বলে মনে করছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তিনি চিঠির বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এ ধরনের চিঠিতে কোনো কাজ হবে না। নির্বাচন বাংলাদেশের অভ‍্যন্তরীণ বিষয়।

বাংলাদেশে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নয়’ এমন নির্বাচনে সহযোগিতা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে গত শনিবার জাতিসংঘকে চিঠি পাঠিয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ।

তৌহিদ হোসেন বলেন, জাতিসংঘে পাঠানো আওয়ামী লীগের চিঠি দিয়ে কোনো কাজ হবে না। এর আগে গত শনিবার ঢাকায় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বরাবর পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নয়— এমন নির্বাচনে সহযোগিতা থেকে সরে আসতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের পক্ষে চিঠিটি পাঠিয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

চিঠিতে বলা হয়, অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা জাতিসংঘ এবং ইউএনডিপির প্রতি নির্বাচনী সহযোগিতা স্থগিত, সব রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে জাতীয় সংলাপ ও সমঝোতাকে উৎসাহিত করার এবং যেকোনো নির্বাচনী সম্পৃক্ততার মূলভিত্তি হিসেবে মানবাধিকার ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আর বাংলাদেশে ইউএনডিপির নির্বাচনী সহযোগিতা, ব্যালট প্রজেক্ট এবং আসন্ন নির্বাচনের বিষয়ে সংস্থার প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার বিষয়ে আমরা গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করছি, যে নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলকও নয়, বিশ্বাসযোগ্যও নয়।

‘এই ধরনের সম্পৃক্ততা আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘের মূলনীতি এবং অবাধ, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রসারের ক্ষেত্রে ইউএনডিপির ম্যান্ডেট লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি করে।’

জাতিসংঘকে পাঠানো চিঠিতে আওয়ামী লীগ বলছে, শক্তিশালী নির্বাচনি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার গুরুত্বকে আমরা স্বীকার করি। তবে, এই সহযোগিতা অন্তর্ভুক্তি এবং মৌলিক স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। বর্তমানে বাংলাদেশে নিবর্তনমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে। হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী এবং নাগরিক আটক কিংবা হুমকির মুখে এবং কোনো রাজনৈতিক সংলাপ বা ঐকমত্যের সুযোগ ভেঙে পড়েছে। এখানে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের উত্থান হয়েছে, যেটাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্যরাও সক্রিয়ভাবে প্রচার করছেন। দেশের উদার মূল্যবোধ ও স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়ে গেছে।

আওয়ামী লীগ বলছে, আমরা বাংলাদেশের নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় ইউএনডিপির ভূমিকা জরুরিভিত্তিতে পুনর্মূল্যায়নের আহ্বান জানাই, যাতে তাদের এই সমর্থন কাউকে বাদ দেওয়া বা নির্যাতনের কারণ না হয়। বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য সত্যিকারের সংলাপ, সমঝোতা এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের পুনঃস্থাপন দরকার, যার মধ্যে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি এবং সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণও রয়েছে।

জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের দাবির মুখে গত মে মাসে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

এরপর রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।

এমআর/সবা