জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশে ‘বহু অস্পষ্টতা’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ন্যাশনাল কনসেনসাস পার্টি (এনসিপি)। দলটির বক্তব্য, আদেশটি এমনভাবে জারি করা হয়েছে যে ক্ষমতাবান পক্ষগুলো নিজেদের মতো করে এর ব্যাখ্যা দিতে পারে।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন এসব মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের অনেকগুলো বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম সরকার অস্পষ্টতা দূর করে নির্দিষ্টভাবে জানাবে—জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু এমন অস্পষ্টতা রয়ে গেছে যে এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।”
গণভোটের কাঠামো নিয়ে আখতার হোসেন বলেন, গণভোটকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেখানে সব সংস্কারকে সমান গুরুত্ব না দিয়ে কিছু সংস্কারকে কম গুরুত্বপূর্ণ ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর বিবেচনার ওপর রাখা হয়েছে।
তার ভাষায়, অনেক পক্ষ জুলাই সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ভিন্নমত যোগ করতে চায়। ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলে তারা নিজেদের মতো করে এসব নোটকে প্রাধান্য দেওয়ার সুযোগ পেতে পারে। ফলে গণভোটের মাধ্যমে সমাধান হওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে নোট অব ডিসেন্ট থাকবে কি না—এ বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রয়োজন।
এনসিপি প্রশ্ন তুলেছে, গণভোটে ‘অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান’ বলতে কোনগুলোকে বোঝানো হয়েছে। তিনি জানান, ঐক্যমত্য কমিশনে দুদককে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান করার প্রস্তাব রাখা হয়েছিল, কিন্তু আদেশে তা স্পষ্ট নয়।
উচ্চকক্ষ নিয়ে আখতার হোসেন বলেন, উচ্চকক্ষের প্রতিনিধিদের তালিকা প্রকাশ না করার কথা বলা হলেও পরবর্তী নির্বাচনে প্রকাশ বাধ্যতামূলক হবে কি না—এ বিষয়ে আদেশে কোন নির্দেশনা নেই। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে আলোচনাও আদেশে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়নি।
গণভোটের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে আস্থা ভোট ও অর্থনৈতিক বিল বাদে অন্যান্য সংশোধনী নিয়ে ঐকমত্য হয়েছিল; কিন্তু আদেশ এমনভাবে করা হয়েছে যেন দলগুলো নিজের মতো অনুমোদন দিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী একাধিক পদে থাকতে পারবেন কি না—এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জনমতনির্ভর হলেও রাজনৈতিক দলকে নিজেদের মতো সংস্কার করার সুযোগ দেওয়া যুক্তিসঙ্গত নয়।
আখতার হোসেন অভিযোগ করেন, ফলে জুলাই সনদের পূর্ণ বাস্তবায়নের পরিবর্তে গুরুত্ব ও অগুরুত্বের বিভাজনের মধ্য দিয়ে ‘আংশিক বাস্তবায়নের’ অবস্থা তৈরি হয়েছে। বাস্তবায়ন আদেশে ১৮০ দিনের সময়সীমা উল্লেখ থাকলেও ব্যর্থ হলে কী হবে এবং উল্লিখিত বিষয়গুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে কি না—এ নিয়েও অস্পষ্টতা রয়েছে।
তিনি বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ এমনভাবে করা হয়েছে যে ক্ষমতাবানরা নিজেদের মতো ব্যাখ্যা করতে পারেন। সরকার দ্রুত এই অস্পষ্টতা দূর করবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিনসহ অন্যান্য নেতারা।
এমআর/সবা


























