০২:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সব স্তরেই অর্থপাচারের জাল

  • নানা শ্রেণি-পেশার ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান সম্পৃক্ত পাচারকাণ্ডে
  • গত ১৫ বছরে দেশের বাইরে পাচার হয়েছে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার
  • পাচারের অর্থে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গড়ে তুলেছে স্থায়ী নিবাস
  • ৩০টি মামলা নিষ্পত্তি হলেও ফেরৎ আসেনি অর্থ,রূপ নিচ্ছে মহামারিতে

‘দীর্ঘ বিলম্বের কারণে অনেক সম্পদের মালিকানা আইনগতভাবে সুরক্ষিত হয়ে যাবে, ফলে তা ফেরত আনা আরও কঠিন হয়ে পড়বে’
– ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক, সিপিডি

‘পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর প্রথম ধাপ হলো, বিদেশে থাকা সম্পত্তির মালিকানা আইনগতভাবে বাতিল করা। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, সিআইডি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে’
– আরিফ হোসেন খান, মুখপাত্র, বাংলাদেশ ব্যাংক

দেশ থেকে বিদেশে অর্থপাচার নতুন কোনো ঘটনা নয়, তবে পতিত সরকারের শাসনামলে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প আর ব্যাংক থেকে ঋণ উত্তোলন করে যথার্থভাবে ব্যবহার না করে ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থে বিদেশে অর্থপাচারের ঘটনা নিয়ে জনরোষ রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। সব সময় এই অভিযোগ কেন্দ্রীভূত থেকেছে বিশেষ করে রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীদের দিকে। তবে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, সমাজের সব স্তরে অর্থপাচারের জাল ছড়িয়ে রয়েছে। অর্থপাচারকাণ্ডের এই তালিকায় রয়েছেন- চিকিৎসক, আইনজীবী, আমলা, পুলিশ কর্মকর্তা, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসহ মধ্যবিত্তরাও। দেশের বাইরে পাচার হয়েছে ৭৫ থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার। এ চক্রের অন্তত ৫৭০ জন সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নজরদারিতে রয়েছে। ইতোমধ্যেই ৩০টি মামলার সমাধান হয়েছে। তবে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার নিয়ে বহুবার তদন্তের ঘোষণা ও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত দেশে ফেরত আসেনি এক টাকাও। এর মধ্যেও পাচার করা অর্থে বিদেশে বাংলাদেশিদের বাড়ি কেনা এবং সম্পদের পাহাড় গড়ার হার অব্যাহতভাবে বাড়ছে। সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের মতে, দীর্ঘ বিলম্বের কারণে অনেক সম্পদের মালিকানা আইনগতভাবে সুরক্ষিত হয়ে যাবে, ফলে তা ফেরত আনা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলছেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর প্রথম ধাপ হলো, বিদেশে থাকা সম্পত্তির মালিকানা আইনগতভাবে বাতিল করা। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, সিআইডি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে।
ব্যাংক খাতসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পতিত শেখ হাসিনার সরকারের শাসনামলে টানা ১৫ বছর ধরে উন্নয়নশীল দেশ গঠনের লক্ষ্যে দেশজুড়ে নেওয়া হয় আর্থিক খাতের বড় বড় মেগা প্রকল্প। এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে বিপুল অর্থের অপব্যবহার করা হয়েছে। ব্যাংক খাত থেকে ঋণের নামে হরিলুট করা হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এসব টাকা যথাযথভাবে ব্যবহার না করে নানা কৌশলে বিদেশে পাচার করা হয়। সেই পাচারের অর্থ দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আলিশান বাড়ি-গাড়ি, স্থায়ী নিবাসসহ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। অর্থপাচারকাণ্ডে জড়িতরা দ্বৈত দেশের নাগরিকও। গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনার সরকার পতনের পরই বিদেশে অর্থপাচারকারীরা কৌশলে দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে চলে যান। অন্তর্বর্তী সরকার দ্বায়িত্ব গ্রহণের পর সেই অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু এখনও একটি অর্থও ফেরৎ আসেনি।
আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সম্পদ উদ্ধারের পথে বড় বাধা হয়ে আছে বাংলাদেশের আইনি কাঠামো। বিদ্যমান আইনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, অনুসন্ধান প্রক্রিয়া ও বিদেশে থাকা সম্পদ ফেরত আনার ক্ষেত্রে কার্যকর ব্যবস্থা সীমিত থাকায় অর্থ পুনরুদ্ধার প্রায় অসম্ভব।
‘মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২’ অনুযায়ী, বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে কেবল ফৌজদারি মামলা করা যায়। এতে বিদেশে অবস্থানরত সম্পদ জব্দ বা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের আদালতের অনুমতি নিতে হয়, যা দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া। এই কাঠামো দ্রুত সম্পদ পুনরুদ্ধারের পথে বড় বাধা সৃষ্টি করছে।
যদিও গত ১৪ জুন জারি করা এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে ২০২৫ সালের মধ্যে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ৩০টি অর্থপাচার মামলা সমাধানের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। বাস্তবে বিদেশে থাকা অর্থ উদ্ধারের কার্যকর উদ্যোগ এখনও শুরুই হয়নি।
পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারসের মতো আন্তর্জাতিকভাবে ফাঁস হওয়া নথি একসময় বৈশ্বিক কোটিপতি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। তবে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নথি ভিন্ন চিত্র দেখায়। এসব তালিকায় রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি আছেন আমলা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা, প্রকৌশলী, চিকিৎসক এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও।
সরকারি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ৫৭০ জনের বেশি বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা সন্দেহজনক বিদেশি লেনদেন বা সম্পত্তির কারণে নজরদারিতে রয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেরই কোনও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই। কেউ কেউ আবার প্রকাশ্যে নিজেদের ‘অরাজনৈতিক’ পরিচয়ে পরিচিত। তবু তাদের পরিবারের সদস্যরা প্রায়ই স্ত্রী বা আত্মীয়-স্বজনদের নামে কানাডা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন। এভাবে কানাডায় গড়ে উঠেছে কুখ্যাত ‘বেগম পাড়া’। সেখানে বহু বাংলাদেশি পরিবার অঘোষিত অর্থে বাড়ি কিনে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। সেখানকার অনেকের স্বামী দেশে উচ্চপদে চাকরিতে আছেন। কানাডায় এসব বাড়ি কেনার পেছনে দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও রিয়েল এস্টেট বোর্ড অব কানাডার তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে বহু প্রভাবশালী বাংলাদেশি পরিবার টরেন্টো ও মিসিসাগায় স্থায়ীভাবে বিলাসবহুল বাড়ি-ফ্ল্যাট-গাড়ি কিনেছেন। গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর সম্পদের পাহাড়।
২০২৩ সালের কানাডার সংসদীয় প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশিদের সম্পত্তি কেনার হার সবচেয়ে দ্রুত বেড়েছে। অপরদিকে, মালয়েশিয়ার ‘মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম’ কর্মসূচির মাধ্যমে ২০১০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে অন্তত চার হাজার ৫০০ বাংলাদেশি স্থায়ীভাবে আবাস পেয়েছেন।
সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, নতুন আইন ছাড়া পাচার হওয়া সম্পদ উদ্ধারের কোনও পথ নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানান যায়, পানামা, প্যারাডাইস ও অফশোর ফাঁসের ঘটনায় বহু বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ রয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন- বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং সরকারি কর্মকর্তা। অনেকে বিলাসবহুল বাড়ি বা কোম্পানির মালিক, যা ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, দুবাইসহ বিভিন্ন অফশোর এলাকায় নিবন্ধিত। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর কমপক্ষে ২০০টি অ্যাপার্টমেন্টের তথ্য পাওয়ার পরেও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
২০১৬ সালে দুদক ‘অফশোর কোম্পানি অনুসন্ধান সেল’ গঠন করে। আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন আইসিআইজের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশিদের সম্পৃক্ততা যাচাই শুরু হলেও, বিদেশ থেকে তথ্য না আসায় তদন্ত স্থগিত হয়ে যায়। ২০২২ সালে হাইকোর্টের নির্দেশে ৬৯ জনের নাম আদালতে জমা দেওয়া হলেও এখনও কারও বিরুদ্ধে চার্জশিট দায়ের করা হয়নি। এদিকে, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ২০১৯-২০২৩ সালে ২১০টি সন্দেহজনক লেনদেন শনাক্ত করে, যার বেশিরভাগই বিদেশমুখী।
সরকারি হিসাবে, গত ১৫ বছরে দেশের বাইরে পাচার হয়েছে ৭৫ থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, আইনটিকে দেওয়ানি প্রক্রিয়া (সিভিল প্রসিডিং) ও সমঝোতা অনুমোদন দেওয়া হবে নাকি কেবল ফৌজদারি মামলায় সীমাবদ্ধ রাখা হবে, এ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।
অপরদিকে, ভারত, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সুইডেন ও স্পেনসহ ২৩টি দেশ ইতোমধ্যে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদ উদ্ধার করেছে। বাংলাদেশ কবে এসব ফেরত পাবে, বা আদৌ পাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় বাড়ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইমিগ্রেশন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশিরা বর্তমানে ১০১টি দেশে দ্বৈত নাগরিকত্ব পেতে পারেন। এ তালিকায় আছে আফ্রিকার মিসর, দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া, আলজেরিয়া, সুদান, মরক্কো, ঘানা, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, তিউনিসিয়া, সিয়েরা লিওন, লিবিয়া, কঙ্গো, লাইবেরিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, ইরিত্রিয়া, গাম্বিয়া, বতসোয়ানা ও মরিশাস। এই তালিকায় দক্ষিণ আমেরিকার ১২টি দেশও আছে- ব্রাজিল, বলিভিয়া, কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, সুরিনাম, আর্জেন্টিনা, পেরু, ইকুয়েডর, চিলি, উরুগুয়ে ও গায়ানা।
এছাড়া ক্যারিবিয়ান ও অন্যান্য অঞ্চলের দেশ- কিউবা, ডোমিনিকান রিপাবলিক, হাইতি, বাহামা, জ্যামাইকা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, ডোমিনিকা, সেন্ট লুসিয়া, বার্বাডোস, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রেনাডাইনস, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, এমনকি ফিজিতেও দ্বৈত নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব।
২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে পানামা পেপারস বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এতে দেখা যায় বিভিন্ন দেশের রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অফশোর কোম্পানি গড়ে অর্থ পাচার করেছেন। বাংলাদেশের নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানও এই তালিকায় ছিল। প্রথম পর্যায়ের নথিতে দেখা যায়, বাংলাদেশিরা পানামা, ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, বেলিজ ও সিশেলসসহ বিভিন্ন দেশে কোম্পানি খুলে অর্থ সরিয়েছেন। তালিকায় ছিলেন ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ শাহিদুল ইসলামসহ আরও কিছু প্রবাসী উদ্যোক্তা। সেই বছরের মে মাসে দ্বিতীয় দফায় আরও কিছু বাংলাদেশির নাম আসেÍ যাদের কেউ কেউ পোশাক, নির্মাণ, রিয়েল এস্টেট বা জাহাজ ভাঙা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু তালিকা প্রকাশের পরও দেশে কোনও বড় ধরনের তদন্ত শুরু হয়নি।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, খসড়া আইন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। সময়সীমা দেওয়া যাচ্ছে না, তবে এটি সরকারের অগ্রাধিকার বিবেচনায় রয়েছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) মনে করছে, এটি আইনগত সীমাবদ্ধতার কারণে নয়, বরং রাজনৈতিক আশ্রয়ের কারণে ঘটেছে।
সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমসহ অন্যান্য অর্থনীতিবিদদের মতে, দীর্ঘ বিলম্বের কারণে অনেক সম্পদের মালিকানা আইনগতভাবে সুরক্ষিত হয়ে যাবে, ফলে তা ফেরত আনা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর প্রথম ধাপ হলো, বিদেশে থাকা সম্পত্তির মালিকানা আইনগতভাবে বাতিল করা। তিনি বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, সিআইডি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সব স্তরেই অর্থপাচারের জাল

আপডেট সময় : ০৭:১৯:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নানা শ্রেণি-পেশার ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান সম্পৃক্ত পাচারকাণ্ডে
  • গত ১৫ বছরে দেশের বাইরে পাচার হয়েছে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার
  • পাচারের অর্থে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গড়ে তুলেছে স্থায়ী নিবাস
  • ৩০টি মামলা নিষ্পত্তি হলেও ফেরৎ আসেনি অর্থ,রূপ নিচ্ছে মহামারিতে

‘দীর্ঘ বিলম্বের কারণে অনেক সম্পদের মালিকানা আইনগতভাবে সুরক্ষিত হয়ে যাবে, ফলে তা ফেরত আনা আরও কঠিন হয়ে পড়বে’
– ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক, সিপিডি

‘পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর প্রথম ধাপ হলো, বিদেশে থাকা সম্পত্তির মালিকানা আইনগতভাবে বাতিল করা। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, সিআইডি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে’
– আরিফ হোসেন খান, মুখপাত্র, বাংলাদেশ ব্যাংক

দেশ থেকে বিদেশে অর্থপাচার নতুন কোনো ঘটনা নয়, তবে পতিত সরকারের শাসনামলে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প আর ব্যাংক থেকে ঋণ উত্তোলন করে যথার্থভাবে ব্যবহার না করে ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থে বিদেশে অর্থপাচারের ঘটনা নিয়ে জনরোষ রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। সব সময় এই অভিযোগ কেন্দ্রীভূত থেকেছে বিশেষ করে রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীদের দিকে। তবে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, সমাজের সব স্তরে অর্থপাচারের জাল ছড়িয়ে রয়েছে। অর্থপাচারকাণ্ডের এই তালিকায় রয়েছেন- চিকিৎসক, আইনজীবী, আমলা, পুলিশ কর্মকর্তা, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসহ মধ্যবিত্তরাও। দেশের বাইরে পাচার হয়েছে ৭৫ থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার। এ চক্রের অন্তত ৫৭০ জন সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নজরদারিতে রয়েছে। ইতোমধ্যেই ৩০টি মামলার সমাধান হয়েছে। তবে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার নিয়ে বহুবার তদন্তের ঘোষণা ও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত দেশে ফেরত আসেনি এক টাকাও। এর মধ্যেও পাচার করা অর্থে বিদেশে বাংলাদেশিদের বাড়ি কেনা এবং সম্পদের পাহাড় গড়ার হার অব্যাহতভাবে বাড়ছে। সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের মতে, দীর্ঘ বিলম্বের কারণে অনেক সম্পদের মালিকানা আইনগতভাবে সুরক্ষিত হয়ে যাবে, ফলে তা ফেরত আনা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলছেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর প্রথম ধাপ হলো, বিদেশে থাকা সম্পত্তির মালিকানা আইনগতভাবে বাতিল করা। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, সিআইডি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে।
ব্যাংক খাতসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পতিত শেখ হাসিনার সরকারের শাসনামলে টানা ১৫ বছর ধরে উন্নয়নশীল দেশ গঠনের লক্ষ্যে দেশজুড়ে নেওয়া হয় আর্থিক খাতের বড় বড় মেগা প্রকল্প। এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে বিপুল অর্থের অপব্যবহার করা হয়েছে। ব্যাংক খাত থেকে ঋণের নামে হরিলুট করা হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এসব টাকা যথাযথভাবে ব্যবহার না করে নানা কৌশলে বিদেশে পাচার করা হয়। সেই পাচারের অর্থ দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আলিশান বাড়ি-গাড়ি, স্থায়ী নিবাসসহ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। অর্থপাচারকাণ্ডে জড়িতরা দ্বৈত দেশের নাগরিকও। গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনার সরকার পতনের পরই বিদেশে অর্থপাচারকারীরা কৌশলে দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে চলে যান। অন্তর্বর্তী সরকার দ্বায়িত্ব গ্রহণের পর সেই অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু এখনও একটি অর্থও ফেরৎ আসেনি।
আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সম্পদ উদ্ধারের পথে বড় বাধা হয়ে আছে বাংলাদেশের আইনি কাঠামো। বিদ্যমান আইনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, অনুসন্ধান প্রক্রিয়া ও বিদেশে থাকা সম্পদ ফেরত আনার ক্ষেত্রে কার্যকর ব্যবস্থা সীমিত থাকায় অর্থ পুনরুদ্ধার প্রায় অসম্ভব।
‘মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২’ অনুযায়ী, বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে কেবল ফৌজদারি মামলা করা যায়। এতে বিদেশে অবস্থানরত সম্পদ জব্দ বা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের আদালতের অনুমতি নিতে হয়, যা দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া। এই কাঠামো দ্রুত সম্পদ পুনরুদ্ধারের পথে বড় বাধা সৃষ্টি করছে।
যদিও গত ১৪ জুন জারি করা এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে ২০২৫ সালের মধ্যে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ৩০টি অর্থপাচার মামলা সমাধানের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। বাস্তবে বিদেশে থাকা অর্থ উদ্ধারের কার্যকর উদ্যোগ এখনও শুরুই হয়নি।
পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারসের মতো আন্তর্জাতিকভাবে ফাঁস হওয়া নথি একসময় বৈশ্বিক কোটিপতি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। তবে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নথি ভিন্ন চিত্র দেখায়। এসব তালিকায় রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি আছেন আমলা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা, প্রকৌশলী, চিকিৎসক এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও।
সরকারি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ৫৭০ জনের বেশি বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা সন্দেহজনক বিদেশি লেনদেন বা সম্পত্তির কারণে নজরদারিতে রয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেরই কোনও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই। কেউ কেউ আবার প্রকাশ্যে নিজেদের ‘অরাজনৈতিক’ পরিচয়ে পরিচিত। তবু তাদের পরিবারের সদস্যরা প্রায়ই স্ত্রী বা আত্মীয়-স্বজনদের নামে কানাডা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন। এভাবে কানাডায় গড়ে উঠেছে কুখ্যাত ‘বেগম পাড়া’। সেখানে বহু বাংলাদেশি পরিবার অঘোষিত অর্থে বাড়ি কিনে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। সেখানকার অনেকের স্বামী দেশে উচ্চপদে চাকরিতে আছেন। কানাডায় এসব বাড়ি কেনার পেছনে দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও রিয়েল এস্টেট বোর্ড অব কানাডার তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে বহু প্রভাবশালী বাংলাদেশি পরিবার টরেন্টো ও মিসিসাগায় স্থায়ীভাবে বিলাসবহুল বাড়ি-ফ্ল্যাট-গাড়ি কিনেছেন। গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর সম্পদের পাহাড়।
২০২৩ সালের কানাডার সংসদীয় প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশিদের সম্পত্তি কেনার হার সবচেয়ে দ্রুত বেড়েছে। অপরদিকে, মালয়েশিয়ার ‘মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম’ কর্মসূচির মাধ্যমে ২০১০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে অন্তত চার হাজার ৫০০ বাংলাদেশি স্থায়ীভাবে আবাস পেয়েছেন।
সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, নতুন আইন ছাড়া পাচার হওয়া সম্পদ উদ্ধারের কোনও পথ নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানান যায়, পানামা, প্যারাডাইস ও অফশোর ফাঁসের ঘটনায় বহু বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ রয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন- বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং সরকারি কর্মকর্তা। অনেকে বিলাসবহুল বাড়ি বা কোম্পানির মালিক, যা ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, দুবাইসহ বিভিন্ন অফশোর এলাকায় নিবন্ধিত। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর কমপক্ষে ২০০টি অ্যাপার্টমেন্টের তথ্য পাওয়ার পরেও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
২০১৬ সালে দুদক ‘অফশোর কোম্পানি অনুসন্ধান সেল’ গঠন করে। আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন আইসিআইজের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশিদের সম্পৃক্ততা যাচাই শুরু হলেও, বিদেশ থেকে তথ্য না আসায় তদন্ত স্থগিত হয়ে যায়। ২০২২ সালে হাইকোর্টের নির্দেশে ৬৯ জনের নাম আদালতে জমা দেওয়া হলেও এখনও কারও বিরুদ্ধে চার্জশিট দায়ের করা হয়নি। এদিকে, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ২০১৯-২০২৩ সালে ২১০টি সন্দেহজনক লেনদেন শনাক্ত করে, যার বেশিরভাগই বিদেশমুখী।
সরকারি হিসাবে, গত ১৫ বছরে দেশের বাইরে পাচার হয়েছে ৭৫ থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, আইনটিকে দেওয়ানি প্রক্রিয়া (সিভিল প্রসিডিং) ও সমঝোতা অনুমোদন দেওয়া হবে নাকি কেবল ফৌজদারি মামলায় সীমাবদ্ধ রাখা হবে, এ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।
অপরদিকে, ভারত, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সুইডেন ও স্পেনসহ ২৩টি দেশ ইতোমধ্যে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদ উদ্ধার করেছে। বাংলাদেশ কবে এসব ফেরত পাবে, বা আদৌ পাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় বাড়ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইমিগ্রেশন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশিরা বর্তমানে ১০১টি দেশে দ্বৈত নাগরিকত্ব পেতে পারেন। এ তালিকায় আছে আফ্রিকার মিসর, দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া, আলজেরিয়া, সুদান, মরক্কো, ঘানা, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, তিউনিসিয়া, সিয়েরা লিওন, লিবিয়া, কঙ্গো, লাইবেরিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, ইরিত্রিয়া, গাম্বিয়া, বতসোয়ানা ও মরিশাস। এই তালিকায় দক্ষিণ আমেরিকার ১২টি দেশও আছে- ব্রাজিল, বলিভিয়া, কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, সুরিনাম, আর্জেন্টিনা, পেরু, ইকুয়েডর, চিলি, উরুগুয়ে ও গায়ানা।
এছাড়া ক্যারিবিয়ান ও অন্যান্য অঞ্চলের দেশ- কিউবা, ডোমিনিকান রিপাবলিক, হাইতি, বাহামা, জ্যামাইকা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, ডোমিনিকা, সেন্ট লুসিয়া, বার্বাডোস, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রেনাডাইনস, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, এমনকি ফিজিতেও দ্বৈত নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব।
২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে পানামা পেপারস বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এতে দেখা যায় বিভিন্ন দেশের রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অফশোর কোম্পানি গড়ে অর্থ পাচার করেছেন। বাংলাদেশের নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানও এই তালিকায় ছিল। প্রথম পর্যায়ের নথিতে দেখা যায়, বাংলাদেশিরা পানামা, ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, বেলিজ ও সিশেলসসহ বিভিন্ন দেশে কোম্পানি খুলে অর্থ সরিয়েছেন। তালিকায় ছিলেন ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ শাহিদুল ইসলামসহ আরও কিছু প্রবাসী উদ্যোক্তা। সেই বছরের মে মাসে দ্বিতীয় দফায় আরও কিছু বাংলাদেশির নাম আসেÍ যাদের কেউ কেউ পোশাক, নির্মাণ, রিয়েল এস্টেট বা জাহাজ ভাঙা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু তালিকা প্রকাশের পরও দেশে কোনও বড় ধরনের তদন্ত শুরু হয়নি।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, খসড়া আইন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। সময়সীমা দেওয়া যাচ্ছে না, তবে এটি সরকারের অগ্রাধিকার বিবেচনায় রয়েছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) মনে করছে, এটি আইনগত সীমাবদ্ধতার কারণে নয়, বরং রাজনৈতিক আশ্রয়ের কারণে ঘটেছে।
সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমসহ অন্যান্য অর্থনীতিবিদদের মতে, দীর্ঘ বিলম্বের কারণে অনেক সম্পদের মালিকানা আইনগতভাবে সুরক্ষিত হয়ে যাবে, ফলে তা ফেরত আনা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর প্রথম ধাপ হলো, বিদেশে থাকা সম্পত্তির মালিকানা আইনগতভাবে বাতিল করা। তিনি বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, সিআইডি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে।