০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দিনাজপুরে নতুন আলুর আগাম উত্তোলন শুরু, মাঠেই বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকা কেজি দরে

দিনাজপুরে আগাম জাতের নতুন আলু উত্তোলন শুরু হয়েছে। কাঁচা বাজারে দোকানজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে নতুন আলু। চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় কৃষকরা আগাম আলু তুলতে শুরু করেছেন। মৌসুমের শুরুতে ক্ষেত থেকেই প্রতি কেজি ৬৮ টাকায় আলু কিনে নিচ্ছেন পাইকাররা বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

এবার দিনাজপুরে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছে। এখন যে আলু বাজারে এসেছে তা পুরোপুরি পরিপক্ব নয়। জানা গেছে, চলতি বছর ক্ষেত থেকে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে। গত বছর পাইকাররা একই আলু কিনেছিলেন ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা কেজি দরে। বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে, যদিও সাত দিন আগেও নতুন আলু ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। কৃষকদের দাবি, গতবারের তুলনায় এ বছর মৌসুমের শুরুতে আলুর দাম কম।

কৃষকরা জানান, বীজের দাম কম হলেও আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আলুর ফলন খুব ভালো হয়নি। ফলে লাভও কম হবে। আলু উত্তোলন শুরু হওয়ায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা দিনাজপুরে এসে ক্ষেত থেকেই আলু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তারা ৬২ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে আলু কিনে ট্রাকে লোড করে বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন।

চিরিরবন্দর উপজেলার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, “দুই বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষ করেছি। পাইকার এসে ক্ষেত থেকেই ৬৮ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে গেছে। তবে গতবারের তুলনায় দাম কম।”
বীরগঞ্জের কৃষক প্রমোথ রায় বলেন, “৭ বিঘা জমিতে ক্যারেজ জাতের আলু করেছি। ৫৬ টাকা কেজি দরে জমি থেকেই বিক্রি করছি। মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে।”

পাইকার জুয়েল আহমেদ বলেন, “প্রতি কেজি ৬৫ টাকা দরে ক্যারেজ জাতের আলু কিনছি। এগুলো ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করবো।”
আরেক ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম জানান, “এ এলাকায় আলুর চাষ বেশি হয়—তাই জমি থেকেই নতুন আলু নিচ্ছি।”

শহরের বাহাদুর বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল, মাহাবুবুর রহমান ও আব্দুল খলিল জানান, “৭-৮ দিন আগে ১২০ টাকা কেজি দরে নতুন আলু বিক্রি করেছি। এখন ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।”

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মোঃ আনিছুজ্জামান বলেন, “দিনাজপুরে এবার ৪৮ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে, এর মধ্যে আগাম জাত ১১ হাজার হেক্টর। ১৫ ডিসেম্বরের পরে সব আগাম আলু উত্তোলনের উপযোগী হবে। মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টির কারণে কিছু ক্ষতি হয়েছে।”

তিনি বলেন, দিনাজপুরের মাটি আলু চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। কৃষকরা আগাম আলু চাষ করে লাভবান হচ্ছেন, তাই চাষির সংখ্যা বাড়ছে। আগাম আলু তুলে কৃষকরা ওই জমিতে ভুট্টা রোপণ করেন, এতে জমির উর্বরতাও বৃদ্ধি পায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে নারী শ্রমিকরা জমি থেকে আলু তুলছেন—কেউ মাটি খুঁড়ছেন, কেউ ডালায় আলু তুলছেন, কেউ বস্তায় ভর্তি করছেন। ডিজিটাল মিটারে ওজন করার পর ব্যবসায়ীরা আলু বস্তায় ভরে ট্রাকে তুলছেন এবং মূল্য পরিশোধ করে নিয়ে যাচ্ছেন। কৃষকরা আলু তুলে সেই জমিতে ভুট্টা রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

একনেক সভায় ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকার ২২ প্রকল্প অনুমোদন

দিনাজপুরে নতুন আলুর আগাম উত্তোলন শুরু, মাঠেই বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকা কেজি দরে

আপডেট সময় : ০৫:৫২:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫

দিনাজপুরে আগাম জাতের নতুন আলু উত্তোলন শুরু হয়েছে। কাঁচা বাজারে দোকানজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে নতুন আলু। চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় কৃষকরা আগাম আলু তুলতে শুরু করেছেন। মৌসুমের শুরুতে ক্ষেত থেকেই প্রতি কেজি ৬৮ টাকায় আলু কিনে নিচ্ছেন পাইকাররা বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

এবার দিনাজপুরে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছে। এখন যে আলু বাজারে এসেছে তা পুরোপুরি পরিপক্ব নয়। জানা গেছে, চলতি বছর ক্ষেত থেকে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে। গত বছর পাইকাররা একই আলু কিনেছিলেন ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা কেজি দরে। বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে, যদিও সাত দিন আগেও নতুন আলু ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। কৃষকদের দাবি, গতবারের তুলনায় এ বছর মৌসুমের শুরুতে আলুর দাম কম।

কৃষকরা জানান, বীজের দাম কম হলেও আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আলুর ফলন খুব ভালো হয়নি। ফলে লাভও কম হবে। আলু উত্তোলন শুরু হওয়ায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা দিনাজপুরে এসে ক্ষেত থেকেই আলু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তারা ৬২ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে আলু কিনে ট্রাকে লোড করে বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন।

চিরিরবন্দর উপজেলার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, “দুই বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষ করেছি। পাইকার এসে ক্ষেত থেকেই ৬৮ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে গেছে। তবে গতবারের তুলনায় দাম কম।”
বীরগঞ্জের কৃষক প্রমোথ রায় বলেন, “৭ বিঘা জমিতে ক্যারেজ জাতের আলু করেছি। ৫৬ টাকা কেজি দরে জমি থেকেই বিক্রি করছি। মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে।”

পাইকার জুয়েল আহমেদ বলেন, “প্রতি কেজি ৬৫ টাকা দরে ক্যারেজ জাতের আলু কিনছি। এগুলো ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করবো।”
আরেক ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম জানান, “এ এলাকায় আলুর চাষ বেশি হয়—তাই জমি থেকেই নতুন আলু নিচ্ছি।”

শহরের বাহাদুর বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল, মাহাবুবুর রহমান ও আব্দুল খলিল জানান, “৭-৮ দিন আগে ১২০ টাকা কেজি দরে নতুন আলু বিক্রি করেছি। এখন ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।”

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মোঃ আনিছুজ্জামান বলেন, “দিনাজপুরে এবার ৪৮ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে, এর মধ্যে আগাম জাত ১১ হাজার হেক্টর। ১৫ ডিসেম্বরের পরে সব আগাম আলু উত্তোলনের উপযোগী হবে। মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টির কারণে কিছু ক্ষতি হয়েছে।”

তিনি বলেন, দিনাজপুরের মাটি আলু চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। কৃষকরা আগাম আলু চাষ করে লাভবান হচ্ছেন, তাই চাষির সংখ্যা বাড়ছে। আগাম আলু তুলে কৃষকরা ওই জমিতে ভুট্টা রোপণ করেন, এতে জমির উর্বরতাও বৃদ্ধি পায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে নারী শ্রমিকরা জমি থেকে আলু তুলছেন—কেউ মাটি খুঁড়ছেন, কেউ ডালায় আলু তুলছেন, কেউ বস্তায় ভর্তি করছেন। ডিজিটাল মিটারে ওজন করার পর ব্যবসায়ীরা আলু বস্তায় ভরে ট্রাকে তুলছেন এবং মূল্য পরিশোধ করে নিয়ে যাচ্ছেন। কৃষকরা আলু তুলে সেই জমিতে ভুট্টা রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এমআর/সবা