০৫:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৭ ডিসেম্বর: নালিতাবাড়ীর মুক্তি—ইতিহাসের এক দীপ্ত দিন

১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর। দীর্ঘ সংগ্রাম ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এই দিনেই পাক হানাদার বাহিনীর দখল থেকে নালিতাবাড়ী সম্পূর্ণ মুক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস, ত্যাগ আর অটল বিশ্বাসে এ দিনটি স্থান পায় স্বাধীনতার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও বয়োজ্যেষ্ঠদের বর্ণনা অনুযায়ী, শেরপুরের সীমান্তঘেঁষা পাহাড়ি জনপদ নালিতাবাড়ীতে টানা দুইদিন দুইরাত তুমুল যুদ্ধ চলে। পাক বাহিনী তখন উপজেলা পরিষদ এলাকা, রামচন্দ্রকুড়া ফরেস্ট অফিস, হাতিপাগার বিডিআর ক্যাম্প, তিনআনী ও আহাম্মদ নগরে শক্ত ঘাঁটি বানিয়ে মুক্তিবাহিনীর অগ্রযাত্রা ঠেকাতে মরিয়া হয়ে ওঠে।

নয় মাসের যুদ্ধজুড়ে পুরো উপজেলায় চলে নির্মম হত্যাযজ্ঞ। নারীদের ওপর নির্যাতন, নির্বিচারে হত্যা—সব মিলিয়ে ভয়াবহ সময় পার করে মানুষ। ৬ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী আকাশ থেকে বোমা বর্ষণের পরিকল্পনা করলেও সাধারণ মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কায় তা স্থগিত করা হয়।

এরই মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিবারুদ ফুরিয়ে আসায় যুদ্ধ কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। সুযোগ বুঝে আলবদর-রাজাকাররা রাতে ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যায়। পুরো এলাকা অচেনা নীরবতায় ডুবে যায়। মানুষের বুক কাঁপতে থাকে—ভোরে কী অপেক্ষা করছে, কেউ জানে না।

অবশেষে ৭ ডিসেম্বর সকালে পূর্ব আকাশে সূর্যের আলো দেখা দিতেই ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করেন। স্লোগানের শব্দ কাছে আসতে থাকতেই মানুষের বুকের শঙ্কা গলে আনন্দে পরিণত হয়। সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে মুক্তির আনন্দে একত্রিত হন। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর জোরালো অগ্রযাত্রায় পাক বাহিনী পিছু হটে—নালিতাবাড়ী পুরোপুরি মুক্ত হয়।

আকাশে উড়তে থাকে লাল-সবুজের পতাকা। মানুষ উপলব্ধি করে—দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তারা পেয়েছে স্বাধীনতার স্বাদ, পেয়েছে একটি মুক্ত দেশের পরিচয়।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

৭ ডিসেম্বর: নালিতাবাড়ীর মুক্তি—ইতিহাসের এক দীপ্ত দিন

আপডেট সময় : ০৪:০৮:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫

১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর। দীর্ঘ সংগ্রাম ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এই দিনেই পাক হানাদার বাহিনীর দখল থেকে নালিতাবাড়ী সম্পূর্ণ মুক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস, ত্যাগ আর অটল বিশ্বাসে এ দিনটি স্থান পায় স্বাধীনতার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও বয়োজ্যেষ্ঠদের বর্ণনা অনুযায়ী, শেরপুরের সীমান্তঘেঁষা পাহাড়ি জনপদ নালিতাবাড়ীতে টানা দুইদিন দুইরাত তুমুল যুদ্ধ চলে। পাক বাহিনী তখন উপজেলা পরিষদ এলাকা, রামচন্দ্রকুড়া ফরেস্ট অফিস, হাতিপাগার বিডিআর ক্যাম্প, তিনআনী ও আহাম্মদ নগরে শক্ত ঘাঁটি বানিয়ে মুক্তিবাহিনীর অগ্রযাত্রা ঠেকাতে মরিয়া হয়ে ওঠে।

নয় মাসের যুদ্ধজুড়ে পুরো উপজেলায় চলে নির্মম হত্যাযজ্ঞ। নারীদের ওপর নির্যাতন, নির্বিচারে হত্যা—সব মিলিয়ে ভয়াবহ সময় পার করে মানুষ। ৬ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী আকাশ থেকে বোমা বর্ষণের পরিকল্পনা করলেও সাধারণ মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কায় তা স্থগিত করা হয়।

এরই মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিবারুদ ফুরিয়ে আসায় যুদ্ধ কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। সুযোগ বুঝে আলবদর-রাজাকাররা রাতে ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যায়। পুরো এলাকা অচেনা নীরবতায় ডুবে যায়। মানুষের বুক কাঁপতে থাকে—ভোরে কী অপেক্ষা করছে, কেউ জানে না।

অবশেষে ৭ ডিসেম্বর সকালে পূর্ব আকাশে সূর্যের আলো দেখা দিতেই ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করেন। স্লোগানের শব্দ কাছে আসতে থাকতেই মানুষের বুকের শঙ্কা গলে আনন্দে পরিণত হয়। সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে মুক্তির আনন্দে একত্রিত হন। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর জোরালো অগ্রযাত্রায় পাক বাহিনী পিছু হটে—নালিতাবাড়ী পুরোপুরি মুক্ত হয়।

আকাশে উড়তে থাকে লাল-সবুজের পতাকা। মানুষ উপলব্ধি করে—দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তারা পেয়েছে স্বাধীনতার স্বাদ, পেয়েছে একটি মুক্ত দেশের পরিচয়।

এমআর/সবা