রাজশাহীর তানোরে গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে মৃত্যুবরণ করা দুই বছরের শিশু সাজিদের জানাজায় আজ হৃদয়বিদারক এক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। পুরো কোয়েলহাট গ্রাম যেন শোকে স্তব্ধ। শুক্রবার সকালে চোখের জলে ভিজে ওঠে গ্রামের মাটিও—অশ্রুসিক্ত মানুষের সারি পেরিয়ে ছোট্ট সাজিদকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় স্থানীয় কবরস্থানে।
মাত্র দুই বছরের শিশুটিকে হারানোর বেদনায় ভেঙে পড়ে তার মা–বাবা, স্বজন, প্রতিবেশী, এমনকি যারা তাকে চেনেন না—তারাও কান্না থামাতে পারেননি। জানাজায় মানুষের ঢল নামে; কয়েকশ নয়, হাজারো মানুষের ভিড়ে কবরস্থানের আশপাশ ভরে যায়। সবাই একসুরে বলছিলেন—এমন মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
৩২ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান—শেষে অসহায় পরিণতি
বুধবার দুপুর ১টার দিকে মায়ের হাত ধরে মাঠে হাঁটার সময় খড় দিয়ে ঢাকা একটি অরক্ষিত গভীর গর্তে পড়ে যায় দুই বছরের সাজিদ। গর্তটি ছিল আগের বছরের পরিত্যক্ত নলকূপের পাইপ, যেটি খোলা অবস্থায় রেখে যাওয়া হয়েছিল। সেই অরক্ষিত গর্তই মুহূর্তে ছোট্ট শিশুটির জীবন কেড়ে নেয়।
ঘটনার পরপরই শুরু হয় ফায়ার সার্ভিসের রুদ্ধশ্বাস উদ্ধার অভিযান। একে একে আটটি ইউনিট যোগ দেয়। মাটির প্রায় ৫০ ফুট গভীরে আটকে থাকা সাজিদকে উদ্ধারে খননযন্ত্রে খনন চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। পুরো দেশ স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল ঘটনাস্থলের দিকে—”বেঁচে ফিরুক সাজিদ!” এ প্রার্থনা করছিল সবাই।
অবশেষে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু মাটির নিচে দীর্ঘ সময় আটকে থাকার কারণে তাকে আর ফেরানো যায়নি। রাত ৯টা ৪০ মিনিটে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বার্নাবাস হাসদাক জানান—হাসপাতালে আনার আগেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছিল।
গ্রামে হৃদয়বিদারক দৃশ্য
মরদেহ বাড়িতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে শোকের মাতম শুরু হয়। বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েন সাজিদের মা-বাবা। গ্রামজুড়ে শোকের স্রোত বয়ে যায়। কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
“এতো ছোট্ট একটা শিশু… কী দোষ ছিল তার?”—এ প্রশ্নে ভেঙে পড়ছিলেন সবাই।
অব্যবস্থাপনার কারণে ঝরে গেল একটি প্রাণ
স্থানীয়রা জানান, নলকূপ স্থাপনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়া একজন ব্যক্তি পাইপটি খোলা অবস্থায় পরিত্যক্ত রেখে যান। কোনো ঢাকনা ছিল না, ছিল না কোনো সতর্কতা চিহ্ন। খড় দিয়ে ঢাকা সেই গর্তই হয়ে ওঠে সাজিদের মৃত্যুকূপ।
চিরবিদায়
আজ শুক্রবার সকালে জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে সাজিদকে দাফন করা হয়। মানুষের ভিড় সামলাতে স্থানীয়দের হিমশিম খেতে হয়। শিশু সাজিদের জানাজা ও দাফন পুরো এলাকাকে যেন আরও গভীর শোকের সাগরে ডুবিয়ে দেয়।
চারপাশে শুধু স্তব্ধতা—একটি প্রশ্নের প্রতিধ্বনি, “এমন মৃত্যু আর কত?”
এমআর/সবা






















